B-60# পাঁচতারা হোটেলে, গিয়েছিলাম সকলে

পাঁচতারা হোটেলে, গিয়েছিলাম সকলে 


সালটা 2008 স্ত্রী কন্যাকে নিয়ে চলেছি দিল্লী, এই প্রথম দিল্লী যাচ্ছি, ভারতের রাজধানী বলে কথা। মনে অনেক উৎকন্ঠা আর আশা নিয়ে চেপে বসলাম শিয়ালদহ দিল্লী রাজধানী এক্সপ্রেসে। ট্রেন ছাড়লো ঠিক বিকেল 4.45 মিনিটে শীত কাল, 


17ইডিসেম্বর, শুনেছি দিল্লীতে এই সময় দারুন ঠান্ডা পড়ে, তাই যথাযথ শীতের বস্ত্র সঙ্গে নিয়ে চলেছি, বিদেশ বিপাকে বলে কথা। ট্রেনে উঠেই  পরিচয় সামনের সিটে  এক ভদ্রলোকের সাথে, সে নানান আলাপচারিতা যেমন টা হয়। ভদ্রলোক দিল্লিতেই থাকেন, আমাদের বলেই বসলেন কোথায় উঠবেন। সমস্ত কথার উত্তর দিয়েছি কিন্তু কোথায় উঠবো এই প্রসঙ্গ উঠলেই এড়িয়ে যেতাম আর বেশ মনে মনে নিজেকে চালাক ভাবতাম, যাক বাবা এড়িয়ে গেছি। বাবা বলে দিয়েছিলেন কোথায় উঠতে হবে আর রাস্তায় কাউকে যেন না বলি কোথায় গিয়ে উঠবো, কি জানি লোকজন কেমন হবে না হবে, বাড়িতে বয়স্ক লোকজন থাকলে আমরা এ শিক্ষা প্রত্যেকেই কম বেশি পেয়েছি, এটা আমাদের সবার জানা ।

বাবা একটা সময় তাঁর বাবার সাথে অর্থাৎ আমার ঠাকুরদার সাথে সেখানেই উঠেছিলেন সেটা অবশ্য চল্লিশ বছর আগে হয়তো হবেই। বাবার সেই স্মৃতির দিল্লী আজ এতো বছর পরে যে আমূল পরিবর্তন হয়েছে সেটা উনাকে কে বোঝাবে। কথার অবাধ্য না হয়ে উঠেছিলাম সেই জায়গাতেই সেই পাঁচতারা হোটেলে।যাক ট্রেনে  রাতের খাওয়ার দাওয়ার পর শুয়ে পড়লাম, সকালে ঘুম থেকে উঠতেই good morning দুজন দুজনকেই, এবার খেজুর আলাপ করতে করতে ভদ্রলোক আবার জিজ্ঞাসা করতে বলেই ফেললাম উঠবো তাজ বেঙ্গল এ।


সে কিছুটা থমকে গিয়ে আপাদমস্তক  আমায় দেখে সেও শুরু করলো সে দিল্লীতে কোথায় থাকে, গাড়ি বাড়ি কত, একেবারে পুঙ্খনাপুঙ্খ তার বিবরণ, আমিও বেশ হজম করলাম সে কথা, দিল্লী এসে পৌঁছলো প্রায় সকাল সাড়ে দশটা তো হবেই। লোকটা আমাদের সাথে বেরোতেই আমি বলেই ফেললাম আচ্ছা দাদা আপনি আসুন, আমার মেয়ে ছোটো তো ও টয়লেট যাবে তাই আমার একটু দেরি হবে। বেশ কিছুক্ষন পরে আমরা একটা অটো নিয়ে রওনা দিলাম আমাদের পাঁচতারা হোটেলের উদ্দেশ্যে,


যাওয়ার সময় দেখি ট্রেনের সেই ভদ্রলোক হেঁটে হেঁটে চলেছেন তার সাত তাঁরা হোটেলের উদ্দেশ্যে।


                  পৌঁছতেই সে কি খাতির দারি, রিসেপশনে পৌঁছতেই সে আমার নাম আর আমার বুকিং ডেট জানতে চাইলো, আমিও যথারীতি আমার বুকিং কাগজ বার করে দেখাতেই  একজন বয় আমার লাগেজ টানতে টানতে নিয়ে গেলো দোতলায় এক বিশাল ঘরে, এতো বড় টানা লম্বা ঘর বিছানা পাতা পনেরো থেকে কুড়িটা তো হবেই।


 মেয়ে ছোটো সে কখনো এই বিছানায় তো আবার কখনো আরেক বিছানায়, সে এতো খুশি যে বলেই ফেলল” বাবা আমরা কি এখন এখানেই থাকবো, কি মজা বাবা বলো, আমরা কিন্ত এখান থেকে কোথাও যাবো না কেমন “। মনে মনে খুব রাগ হচ্ছিলো বাবার উপর কোথায় এসে পৌছালাম। বের হতেও ইচ্ছে করছে না, থাকবো তো,সে রাগ আরো বেড়ে গেলো যখন কিছু কুপন কর্তৃপক্ষ কর্তা নিয়ে এলেন। লাল কুপন সেটা সকাল বিকেলে চায়ের, সবুজ কুপন দুপুর ও রাতের খাবারের, হলুদ কুপন সকালের ব্রেকফাস্ট। মেয়ে ছোটো সবে পাঁচ বছর কর্তৃপক্ষ বলেন তার ও কুপন লাগবে। আমায় কুপন কিনতে হোলো সর্বমোট চারবেলার চারটে করে কুপন মোট বারোটা।


       কুপন নিয়ে পৌঁছতেই মেসের কর্তৃপক্ষ এগিয়ে কুপন নিয়ে বলেই ফেললেন অতিরিক্ত ভাত অতিরিক্ত সবজি, ডাল আলাদা করে আরো কুপন নিতে হবে শুনে চর চর করে মাথাটা গরম হয়ে গেলো, এ কেমন খাওয়ানোর ছিরি, যাক সেদিকে মাথা না ঘামিয়েই খেতে বসলাম। যেমন তরকারি তেমন সবজি, জীবনে কোনোদিন ভাত পাতে উঠিনি, এই প্রথম উঠলাম, বলতে কোনো দ্বিধা নেই এই প্রথম পাতে হয়তো সমস্ত কিছু উগলে দিয়েছিলাম। যাক আধ পেটা খেয়ে সবে একটু ব্যালকনিতে  গিয়ে দাঁড়িয়েছি, মেয়ে বৌ বিশ্রাম নিচ্ছিলো, দেখলাম দুইজন মহিলা একজন বয়স্কা আরেকজন মধ্য বয়সী দুজনেই ঢুকছেন প্রচুর তাদের লাগেজ, আর সমানেই ঝগড়া করতে করতে, প্রথমটা ঠিক ঠাউর করতে পারিনি পরে  দেখি তারাও এলেন আমাদের সেই একই ঘরে।


 মেয়েতো কি খুশি দিদা এসেছে, আর আমার তত রাগে গা হিড় হিড় করছে । আমি কিছু না বলে চুপ করে মেয়ের পাশে গিয়ে শুয়ে পড়লাম। আবার ঝগড়া শুরু,পরে বুঝলাম উনারা ননদ আর বৌদি। আমার স্ত্রী তো সমানেই গল্প জুড়ে দিল এমন মনে হচ্ছিল সে যেন তার নিজের ননদের সাথে কথা বলছে। বিকেল হতেই সেই বিখ্যাত কুপন নিয়ে সোজা গেলাম চা খেতে, সে আরেক কাহিনী একেবারে কয়েদিদের মত লাইন পড়েছে চায়ের, মনে মনে রাগটা কেমন যেন হাসিতে পরিবর্তন হয়ে গেলো মন বলছে Mr. সেন জীবনে সবকিছুর অভিজ্ঞতা হওয়ার প্রয়োজন আছে। ঘরে এসেই দেখি ননদ বৌদির সেই রাগারাগি থামার নয়, আরো বেড়েই চলেছে, একটু বিরক্ত হয়ে এগিয়ে এলাম তাদের রাগারাগির রহস্য উদ্ঘাটন করতে। এতই সামান্য ছিল, যেহেতু তাঁরা দেরিতে এসেছেন কুপন থেকে তাই বঞ্চিত। আমিও এই কুপন গুলোর একটা বিহিত করতে চাইছিলাম, উনাদের তা দিয়ে আমি একটু স্বস্তি পেলাম। বিকেল হতেই বেড়িয়ে পড়লাম বৌ মেয়েকে নিয়ে দিল্লী ভ্রমণে, একেবারে রাতের খাওয়া দাওয়া সেরে ফিরলাম বেশ রাত্রি করে। মনে মনে ঠিক করে নিলাম পরের দিনের পরিকল্পনা, ইচ্ছে একটা দিল্লী ভ্রমণ করবো। পাঁচতারা হোটেলের কর্তৃপক্ষ কর্তা এসে বলেন আপনারা যদি ঘুরতে চান তাহলে তাদের বাস আসবে ঠিক সাতটায়। যাক খুব সকাল সকাল উঠে পরি। যেমনি বাসে উঠেছি দেখি সেই ননদ বৌদি, দেখেই চক্ষু ছানাবড়া। সেই হোটেলের বাসের সম্বন্ধে আর বলার অপেক্ষা রাখে না,উঠলাম কোথায় বাস ঠেলতে ঠেলতে সারাদিন গেলো আমার দিল্লী ঘোরার স্বাদটা অপূরণই রয়ে গেলো।


 প্রসঙ্গত বলি সেই পাঁচতারা হোটেলটির নাম “ দিল্লী কালীবাড়ি”।



Comments

sadamata101.blogspot.com

B-47#বিশ্বকর্মা_পূজো

সন্তোষ ঢাকি

B-71#GANESH_PRASADAM. ( গনেশজির ভোগ নিবেদন মোদক ও পূরণ পুলি)