B-58#বৃন্দাবন

                                                                               বৃন্দাবন 
সালটা 2009,  স্ত্রী কন্যা কে নিয়ে গিয়েছিলাম দিল্লি,  সেখান থেকে তাজমহল, ফতেহপুর সিক্রি, জয়পুর, আর মথুরা বৃন্দাবন এই ছিল আমার বেড়ানোর ছোট্ট তালিকা প্রায়  যাওয়া আসা মিলে দশদিন। সমস্ত জায়গাগুলো  বেশ উপভোগ করেছিলাম একটা আনন্দের স্মৃতি নিয়ে, শেষ দিনটা ছিল মথুরা বৃন্দাবন, ফতেপুর সিক্রি, আর আগ্রা ফোর্ট। 
যাক সকাল সকাল উঠে স্নান, ব্রেকফাস্ট করে বেড়িয়ে পড়েছিলাম বহু চর্চিত ধর্মস্থান বাপ্ ঠাকুরদাদের থেকে শোনা কৃষ্ণের জন্মস্থান মথুরা, ও পরে তাঁর লীলাক্ষেত্র বৃন্দাবনের উদ্দেশ্যে, দিন শুরু হল ব্রজবাসী কৃষ্ণের নাম করে,  যথাসময়ে গাড়ি এসে দাঁড়ালো হোটেলের সামনে, সাতটার মধ্যে হোটেল ছেড়ে রওনা হলাম প্রথমে বৃন্দাবনের উদ্দেশ্যে, পৌঁছলাম দেবভূমি প্রায় দশটা নাগাদ  । 

মুহূর্তে মনটা বেশ পবিত্রও হয়ে গেলো, তাই মনে মনে সংকল্প করলাম ব্রজভূমির মাটিতে পা রাখবো একেবারে খালি পায়ে, ব্রজভূমির ধুলো পায়ে মাখবো বলে।  গাড়িতে জুতো মোজা ছেড়ে রীতিমতো হাতপা ধুয়ে শুরু হল দর্শন, ইতিমধ্যে এক ব্রজবাসীর সাথে পরিচয়, উনিই নিয়ে চললেন একটার পর একটা জায়গায়, প্রথমে সোনার তালগাছ, তারপর তুলসীতলা, অবশেষে কৃষ্ণের কালিয়া দমনের স্থান।

যেহেতু আমি পুরোদমে আস্তিক, ঈশ্বরের প্রতি অগাধ ভরসা আছে, গায়ে বেশ কাঁটা দিচ্ছিলো এই সেই কালিয়া দমনের স্থান যা মা ঠাকুমাদের মুখে শোনা কথা,  আর হারিয়ে গিয়েছিলাম এক অলৌকিক শক্তিকে স্মরণ করতে যাঁর নাম শ্রী কৃষ্ণ, মনে হচ্ছিলো   আমি এই মুহূর্তে  সেই পরম দেবতার একেবারে সান্নিধ্যে বসে। 

যাক আরেক ব্রজবাসী আমাদের নিয়ে গিয়ে বসালেন তাঁর ঘরে , হঠাৎ দেখি এক বিশাল খাতা বার করে আমার নাম জিজ্ঞাসা করলেন,  ও লিখেও ফেললেন আমার নাম আর ও অনেক কিছু জানতে চাইলেন , যেমন পূর্বপুরুষদের আদি বাস্, গোত্র বাকিটা বিশেষ অবশ্য কিছু মনে নেই, তারপর দেখি উনি বেশ জোড়ে জোড়ে আমার পিতামহ, প্রপিতামহ সকলের নাম বলতে থাকলেন, বেশ ভালো লাগছিলো, কৌতূহল ও হচ্ছিলো কি ভাবে উনার খাতায় এতগুলো তথ্য নথিভুক্ত তাও আবার সঠিক । আমি পুরোটাই সন্তুষ্টি পেলাম মনে মনে, কিছুক্ষন পরে সেই ব্রজবাসী দেখি বলেন আপনার নামে আমরা ফলক তৈরী করবো, আর আপনার অনুদানের বেশ কিছু অর্থ ব্যবহৃত হবে ব্রজবাসীর সেবায়, আর হ্যাঁ এই খাতায় নাম লেখা মানে শ্রী কৃষ্ণের কাছে নাম পৌঁছে যাওয়া । শুরু হল অঙ্ক কষাকষির টানাপোড়েন আমার নামে ধার্য করেছিলেন দশহাজার এক টাকা , আমি তাতে বিন্দুমাত্র কর্ণপাত না করে ভাবছি কি হতে চলেছে, এদিকে মুহূর্তে বচসা এতটাই বেড়ে গেলো যে ব্রজবাসী বলেই ফেলেন আপনার নাম আর অর্থমূল্য যেহেতু লেখা হয়ে গেছে খাতায় সেটা কোনোভাবেই খাতায়  কেটে দেওয়া সম্ভব নয়  । আমি বিন্দুমাত্র না ভেবে একশো এক টাকা বের করে প্রণামী বাক্সে রেখে উঠে আসি।

 উনি এতটাই ক্ষিপ্ত হলেন যে আমায় খাতাটা দেখিয়ে বলেন আপনার উপর ধার্য অর্থমূল্য ও নাম  আমরা কেটে দিতে বাধ্য হলাম, কৃষ্ণের ভূমিতে এসে আপনার নাম উনার কাছে পৌঁছলো না।  ঠিক একই কারণে শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভু নদিয়ায় স্থান না পেয়ে এই বৃন্দাবনে আশ্রয় নিয়েছিলেন । সেদিন কথাটা বেশ কানে লেগেছিলো।বেশ অবাক হয়ে শুনছিলাম উনার উক্তি গুলো, এতটাই অবিবেচক ও যুক্তিহীন মনে হয়েছিল শেষমেষ মন্তব্য না করে থাকতে পারলাম না। এধরণের মানুষদের জন্যই হয়তো একটা জায়গা কলুষিত হয়, এনাদের ভুল যুক্তির জন্যই হয়তো সেই জায়গাটির মাধুর্যতা হারায়। 
যাক আসার সময় বলে এসেছিলাম আমার তাঁর কাছে নাম পাঠানোর আপনি কে,  আমার নাম কিন্ত উনার কাছে সত্যিই পৌঁছে গেছে যদি আপনার এই খাতা সত্য হয়।  কারণ ঈশ্বর হেতু চান, যেহেতু উনি নিজে প্রকট হন না, তাই আপনার মারফত আমার নাম সত্যি সত্যিই উনার কাছ অব্দি চলে গেছে, আর আপনি যতই কাটুন সেটা তো আপনার লালসা, যেটা আপনি পেলেন না, বিশেষ করে ঈশ্বর আপনাকে ব্যবহার করেছেন আমার নাম টা লেখার জন্য। 
শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভুর কথা না বাড়িয়ে, চলে এলাম।

 বাধ্য হলাম, অবশেষে ফতেহপুর সিক্রি দেখলাম, কিন্তু সময়ের অভাবে যে ভালো লাগাটার স্বাদ সেটা অপূরণ রয়ে গেলো। ফতেহপুর সিক্রি যেন এক জীবন্ত শৈলী যা আজও বহন করে চলেছে সেই অতীত ইতিহাস।

আহা কি অপূর্ব  মনে হচ্ছে আজও তানসেন বসে আছেন গান ধরেছেন রাগ মেঘ মল্লার, এই বুঝি বৃষ্টি নামলো, যোধাবাই সে রাগ শুনছেন, আর আকবর তাঁর পারিষদদের নিয়ে বসে আছেন।সে উপলব্ধি আর কল্পনায় আমি ও আমার পরিবার চুপ করে ফিরে গেছি সেই ঐতিহাসিক মুহূর্তে।

আগ্রা ফোর্ট তো এক বন্দী দশার ছবি মনে হচ্ছে ঔরঙ্গজেবকে বন্দী করি সে কল্পনায় আর মুক্ত করে দি শাহজাহানকে।
উনি অন্তত দুচোখ দিয়ে এতটা বছর পরে বেগম মুমতাজ কে  আবার করে যেন  দেখতে পান, দেখতে পান যেন তাঁর সেই স্মৃতিসৌধ তাজমহল যাঁর সেই বহুমূল্য কোহিনূর হারিয়ে গেছে চোর ব্রিটিশদের হাতে।

শাহজাহান পারবেন সে কোহিনূর আবার করে ফিরিয়ে আনতে এক যোদ্ধার হুঙ্কারে ডঙ্কা বাজিয়ে, ফিরিয়ে আনবেন ব্রিটিশদের থেকে ।

Comments

sadamata101.blogspot.com

B-47#বিশ্বকর্মা_পূজো

সন্তোষ ঢাকি

B-71#GANESH_PRASADAM. ( গনেশজির ভোগ নিবেদন মোদক ও পূরণ পুলি)