B-46#বৌ_ভাত(বড়দি গল্পের তৃতীয় অধ্যায়)

বৌ ভাত (বড়দি গল্পের তৃতীয় অধ্যায়)
আজ বড়দির বৌভাত, প্রায় ভোর বেলার থেকেই গ্রামের নানান লোকের আনাগোনা বাড়িতে। সারাটা গ্রামের লোক জড়ো হয়েছে একই বাড়িতে, এযেন তাদের বাড়ির বৌভাত, প্রত্যেকে ব্যস্ত, কেউ সবজি আনছে ক্ষেতের থেকে আবার কিছুলোক ব্যস্ত পুকুরে জাল দিয়ে মাছ ওঠাতে। ছোটো মাছ হলে আবার ছুঁড়ে ফেলে দিচ্ছে পুকুরে, এক একটা মাছ নয় নয় করে পাঁচ কিলোর উপরে।
 কচি পাঠার সারি দাঁড়িয়ে একেক করে। কিন্তুবৃষ্টি অঝোরে হয়েই চলেছে সে থামার নাম নেই। ভোর বেলায় টিপটিপ করে, বেলা বাড়তেই আরো জোরে হয়েই চলেছে। সারাটা গ্রাম জলে থৈ থৈ, কোনটা রাস্তা কোনটা পুকুর বোঝার উপায় নাই। সকালের দিকে পেটটাও গুড় গুড় করছে, একবার ভাবছি যাবো, পরক্ষনেই ভাবছি না। গতকাল রাতেই দেখে এসেছি সে বাথরুমের অবস্থা। তিনটে দিক কোনোভাবে ঢাকা শুধু ঢোকার জায়গাটা একটা পর্দা দেওয়া আর একটা কাঠের দরোজা, শুধু ফ্রেম টুকুই আছে বাদ বাকিটা ফাঁকা, তাকে আটকাচ্ছে ঐ ঝুলন্ত পর্দা যা হয়তো এতকাল আঁটকেছে, এখন আর সম্ভব নয়,কারণ বৃষ্টির জলে সেও চুপসে দলা পাকিয়ে কাঠের ফ্রেমের এক পাশে আঁটোসাঁটো একটা দড়ি হয়ে ঝুলছে।
যাক সে ইচ্ছেয় ইতি টেনে, বৃষ্টি একটু নামতেই চলে গেলাম মাঠে যেদিকে লোকজন পালা করে যাচ্ছে। গ্রাম দেশে একটা মজার ব্যাপার আছে যখন ভোর বেলায় তাঁরা যান একটা দলগত ভাবে যান, আর আমি ভাবি উনারা কখন আসবেন, যাবো তো একাই একসাথে কোনোমতেই সম্ভব নয়।
কলকাতা থেকে আমার জেঠতুতো দাদা, আমার মেজদি ও ছোড়দি আসছে এই বৌভাতে যোগ দিতে। কি ভাবে আসবে জানা নেই এতো দূরের পথ, প্রকৃতি ও সাই দিচ্ছে না আজ। গ্রামের লোকেদের মুখে শুনলাম হেঁড়িয়া থেকে মাধাখালীর বাস আজ একটাও আসবে না। গ্রাম দেশে মাঝে মাঝেই এরকম খামখেয়ালিপনা হয়, তাবলে আজকের দিনেই হোলো। হেঁড়িয়া বাসস্ট্যান্ডে গ্রামেরই একজন গেছে তাদের আনতে সেই দুপুর একটাই, এখন প্রায় চারটে বাজে এখনো আসার নাম নেই। এদিকে দিদির শ্বশুর মশায় আরেক কান্ড ঘটিয়েছেন, উনি দুপুর থেকেই নাছোড়বান্ধা আজ বৌভাত কোনোরকমে সম্ভব না। তা দেখলাম দাদার সাথে একটা বচসা ও চলছে সঙ্গে গ্রামের বেশ কিছু প্রবীণেরা কেউ হ্যাঁ তে হ্যাঁ মেলাচ্ছেন আবার কেউ নিমরাজি। গ্রামের মানুষ একবার গোঁ ধরলে কারো পক্ষে সম্ভব নয়,না কে হ্যাঁ করানোর, সে যা হবে হোক এটা উনাদের ব্যাপার। একদল কচিকাঁচা বাচ্চাদের আওয়াজ আসছে অনেক দূর থেকে ধীরে ধীরে সেটা প্রখর ও হচ্ছে ঐ বুঝি ওরা চলে এসেছে, যাক বাবা একটা স্বস্তির নিঃস্বাস ফেলা গেলো।
সামনে আসতেই দেখি ছোড়দি কাদা মেখে প্রায় লেপটে গিয়েছে, আর ছোড়দার এক হাতে জুতো, বাকিটা সেই বিলে হারিয়ে গেছে। গ্রামের বাচ্চারা বলেছে ওরা একটু পরে এনে দেবে, তাই ছোড়দার হাতে একটাই জুতো, সারা জামা প্যান্টে কাদা ঝুলছে।
মেজদির হাতে বৌভাতের জন্য রজনীগন্ধার মালা, সে মালা আর সাদা নেই, এঁটেল মাটির ও প্রলেপ পড়েছে সে মালায়। মাঝে মধ্যেই সেও  ওক তুলছে সমানে, প্রথমটা বুঝতে পারিনি, জিজ্ঞাসা করাতে সে বলে বাসে নাকি একজন মহিলা তার গায়ে বমি করেছে সেই দুপুরে আর সেই গন্ধ যখনই নাকে আসছে তখনই সে ওক উঠাচ্ছে, ভাগ্যে রজনীগন্ধার মালাগুলো ছিল। হোক না সে কাদা মেখে কাদায় লেটপেত হয়ে গেছে তাও গন্ধ তো আছে।
ছোড়দা দেখি বলেই ফেলল আমি যাই সামনে পুকুর কোথায় স্নান করে আসি, আমার পুকুরে স্নান করার অভ্যেস আছে। যাক সে একজন লোক কে নিয়ে স্নান করতে গিয়ে আরেক বিপদ একেবারে পা টা কেটে সমানেই রক্ত পড়ছে, একজন লোক গেঁদা ফুলের পাতা লাগিয়ে কোনো ভাবে তা বন্ধ করেছে। ছোড়দাও দেখি সেই প্রবীণদের দলে যোগ দিয়েছে বৌভাত হবে কি হবেনা। বড়দি কিন্তু সমানে তাঁর শাশুড়ীমার সাথে হেঁসেলে যোগ দিয়েছে, অল্প বিস্তর কাঠের উনুনের অভিজ্ঞতা নিতে। ভাত রান্নাতে দেরি হওয়াই সে বিয়েতে পাওয়া প্রেসার কুকার দিয়ে কি ভাবে চটপট রান্না করা যায় তা শেখাচ্ছে।
যেমনি প্রেসার কুকারের হুইসেল পড়েছে, শাশুড়ি মা তো ভয়ে দৌড় দিয়েছেন, কি জানি কোনো অঘটন ঘটলো না তো, উনার চীৎকার শুনে সবাই ছুটে গেছে হেঁসেলের দিকে, প্রত্যেকে উনার অবস্থা দেখে সে কি হাসি। বড়দির শ্বশুর মশায় ছুঁতো পেলেন আজ যখন এতই বাধা তাহলে সত্যি সত্যি বৌভাত হবে না, তাই উনি কারো কথা না শুনে চললেন সারা গ্রামকে না করতে সঙ্গে আমার ছোড়দাকে নিয়ে। এদিকে আমার মেজদি বসে আছে এককোনায় হাতে রজনীগন্ধার মালা নিয়ে, গ্রামের কোন লোক নাকি তাকে বলেছে, কার একটা পাকাবাড়ি আছে সেখানে নিয়ে যাবে তাকে, তাঁদের নাকি ভালো পাকা বাথরুম ও আছে। শুনলাম আমাদের আরেক দল আসছে কলকাতা থেকে তারা প্রায় জনা ছয়েক হবে, জানিনা কত রাতে তারা এসে পৌঁছবে, আদৌ আসতে পারবে নাকি কাল সকালে এসে পৌঁছবে।
রান্নার লোকেরা সমানে রান্না করেই চলেছে, কেউ তাদের বারণ ও করছে না, একজনকে জিগ্যেস করাতে সে বললো কোনো অসুবিধে হবে না, আগামীকাল তো লোকজন খাবে একদিনে নষ্ট হয় নাকি।

দিদির বৌভাত সেদিন আর হোলো না, কোনোভাবে কিছু টগর ফুলের মালা বানিয়ে সেদিন কাটানো গেলো। পরের দিন সকালে আবার করে সেজে উঠলো দিদির শ্বশুরবাড়ি বৌভাতের খাওয়া দাওয়াতে। এদিন নিমন্ত্রিত অতিথিরা দুপুরেই এলেন, একেবারে লম্বা করে পাত পেড়ে খাওয়া, একেকজনের সে খাওয়া দেখলে চক্ষু চড়কে উঠার উপায়,শুনেছি এক প্রবাদ “ দেখতে রোগা কিন্তু পেটে দারোগা “ সে প্রবাদের আজ সত্যতা পুরোটাই প্রমাণিত হোলো।


Comments

sadamata101.blogspot.com

B-47#বিশ্বকর্মা_পূজো

সন্তোষ ঢাকি

B-71#GANESH_PRASADAM. ( গনেশজির ভোগ নিবেদন মোদক ও পূরণ পুলি)