B-49#সঙ্গে চলতে হয়

                              সঙ্গে চলতে হয়
 ক্লাস এইট হাফ yearly পরীক্ষা হয়ে গেছে রেজাল্ট ও বেড়িয়ে গেছে. ছোটবেলা  সবে পেরোচ্ছি, মা বাবাদের প্রতিনিয়তই সমানে বলা আর কতদিন ছোট থাকবি, বিশেষ করে সন্ধে বেলায় পড়তে বসার সময় আর কতদিন এই তো আর গুনে গুনে ছয় মাস ও নেই অ্যানুয়াল পরীক্ষা, ব্যাস ক্লাস নাইন দেখতে দেখতে চলে যাবে তার পরেই ম্যাট্রিক, এমন করে বলতেন এ যেন এখনকার দিনের শতাব্দী এক্সপ্রেস বা গীতাঞ্জলি, বসতে না বসতেই পৌঁছে গেলাম গন্তব্যে।কথাটা যখন বলতেন তখন পাত্তা দিতাম না, মনে মনে বলতাম ও বাবা এখনোও  তো আড়াই টা  বছর, সে তো অনেক দেরি।অর্থাৎ দুই রকম ভয় ঢুকিতে দেওয়া হতো এক  বড় হয়ে গেছিস আর দুই এই তো একেবারে সামনে ম্যাট্রিক।
পরের দিন যখন স্কুলে যেতাম হাঁটাচলা গুলো মুহূর্তে বদলে গিয়েছিলো বেশ ঠাউর করতে পারতাম, বিশেষত মা বাবা যখন মাথায় ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন, তার উপর আবার প্রত্যেকটা ছেলেদের লক্ষ্য করতাম তাদের ও প্রায় একই রকম অভিরুচি ইম্প্রেশন জমাতে হবে তাও আবার ক্লাসের মেয়েদের কাছে।সেটা যদি এক ক্লাস উঁচুতে হয় তাতেও আপত্তি নেই, কিন্তু আমরা কোনো ছেলে বন্ধু কখনো আলোচনা করতাম না, বুজতাম এটা আলোচনা করাও  ভূল বা নিজের কাছে নিজে ছোটো হয়ে যাওয়া।তাই ইম্প্রেশন জমানোর জন্য টিফিন টাইম এ স্কুলের মাঠে বোঁ বোঁ করে সাইকেল চালাতাম আর মাঝে মাঝে আড় চোখে মেয়েদের দেখতাম।
মেয়েরাও কিন্তু দেখতো বেশ বুঝতে পারতাম, আর ওরাও যে আমাদের নিয়ে কিছু বলছে সেটাও বুঝতে পারতাম।এ তো গেলো ছোটবেলার বোকা বোকা বাহাদুরির কথা।আজগের দিনে ছেলেরা এই ধরনের বাহাদুরি দেখায় না বরং যাকে পছন্দ একেবারে byke এ বসিয়ে পগার পাড়, সেটা অবশ্য সব ছেলে মেয়েদের মধ্যে নয় কারণ এ প্রজন্ম অনেক বেশি বোঝদার ক্যরিয়ার নিয়ে অনেক কিছু ভাবে।যাক এ তো গেলো মাথার মধ্যে হঠাৎ করে বড় হয়ে যাওয়া ঢোকানোর ভূল interpretation এক  কাহিনী।বয়স বারার সাথে সাথে এখন বুঝি। কিন্তু পরের কঠিন গল্পটা কি হবে যা মা বাবা মাথায় গেথেঁ দিয়েছেন “ ঠিক আর আড়াই বছর বাকি “, এখানে তো আর সাইকেল নিয়ে কেরামতি দেখালে চলবে না বাপু, চলো কিছু করে দেখায়,করতে হবে, তাই উপায়ান্ত না ভেবে চলো শুরু করি একসাথে পথ চলে গিয়ে একেবারে সরাসরি ইস্ট দেবী কে ভেট।ঘাটশিলায় ইষ্টদেবী হলেন মা রুক্মিণী।
একেবারে আমাদের বেশ কিছু বন্ধু আমি, তমাল, আশীষ, বাপ্পা, জহর, পঙ্খী (মৌভান্ডারের ), আর শান্তনু ঠিক করলাম ক্লাস এইটের রেজাল্ট বের হওয়ার পরের দিনেই আমরা যাবো জাদুগোড়া রুনকিনী মন্দিরে মা কে ভেট দিতে।
কারণ মাধ্যমিক বলে কথা সবাই বলে এটার উপরেই নাকি সারাটা জীবন দাঁড়িয়ে। তাই যেমন সংকল্প তেমন কাজ রেজাল্ট বের হলো কি একসাথে সাইকেল নিয়ে যাওয়া শুরু, পরের দিন। যাওয়া টা ছিল এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা ভোর বেলায় উঠে স্নান করে একেবারে উপোস থেকে সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়তাম ঠিক সাড়ে ছ টার মধ্যে বাবার সাইকেল টা নিয়ে ফুলডুঙরির পাস দিয়ে উঠতাম লালডি লেবেল ক্রসিং সেখান থেকে ডাউন ধরে সোজা তমালের বাড়ি।
তখনো তমালের বাড়ির কেও ঘুম থেকে উঠতো না, শুধু কাকুকে দেখতাম এক হৃষ্ট পুস্ট মানুষ দাঁড়িয়ে আছেন বোধহয় গরুর দুধ দোয়াচ্ছেন, হাতে ব্রাস বা নিমের লাঠী সজোরে দাঁত মেজেই  চলেছেনl খানিকক্ষণ পর তমাল বেরিয়ে আসতো,  আমার এক সাথে সাইকেল চালাতে চালাতে পৌঁছতাম বাপ্পার বাড়িতে কাকিমা বলতেন পড়াশুনা করবি না আর চললি মা রুক্মিণী কে ভেট দিতে।  আমরা সমানেই কাকিমার কথাই হাসতাম। এভাবেই শুরু হতো আমাদের যাত্রা। সুবর্ণরেখার ও পাশে আমায় নগরে গিয়ে উঠতাম, সেখান থেকে শর্টকাট পথ ধরে UCIL কে বাঁ হাতে ফেলে, পৌঁছে যেতাম জাদুগোড়া রুনকিনী মন্দির প্রায় আটটার মধ্যে।
শুদ্ধ চিত্তে করজোড়ে মাকে বলতাম “মা সামনে ক্লাস টেন আর ঠিক আড়াই বছর, পাড় করে দিয়ো মা কথা দিচ্ছি প্রতিবার আসবো “।
 পুজো শেষ ফেরার পালা মারাত্মক খিদে পেতো, সোজা সাইকেল নিয়ে জাদুগোড়া বাজারে, কারণ তমাল বলতো ওখানে ভালো ঘুগনি পরোটা পাওয়া যায়।পুঁজি প্রত্যেকের নিজস্ব মাথা পিছু দশ টাকা, যা বাঁচতো তাই দিয়ে এক্সট্রা পরোটা বা বড়জোর চা,মনে মনে বলতাম যাক আসছে বছর আবার হবে।
প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখি ম্যাট্রিক পাস করার পর আমার আর যাওয়া হয়ে ওঠেনি কারণ পরীক্ষার পরের দিনই আমার কলকাতায় ফেরা।বাবার ইতিমধ্যেই ট্রান্সফার হয়ে গেছে, তাই বাধ্য হয়ে আমায় চলে আসতে হয়. 
আজ থেকে ঠিক সাতমাস আগে আমি যখন ঘাটশিলা যায় তখন মেয়ে ও সস্ত্রীক গিয়েছিলাম, সেটাও আবার মেয়ের মাধ্যমিকের রেজাল্ট বেড় হওয়ার পড়ে, একেবারে চৌত্রিশ বছর পর, যাক বাবা আর মেয়ের একসাথে পাশের ভেট নিলেন মা।বুঝেছিলাম মা কে করা সংকল্প উনি নিজেই আমায় দিয়ে করিয়ে নিয়েছিলেন।
আসার সময় জাদুগোড়া বাজারে দাঁড়ালাম কিছু পুরোনো স্মৃতিচারণা করতে, সারাক্ষণই মনে মনে বলতে থাকলাম কি করে সে সময় পারতাম এতটা দূর তাও প্রায় বিশ কিলোমিটার তো হবেই , কোথায় এতো শক্তি পেতাম, কে যোগাতো এতো শক্তি।
আজ বুঝি একসাথে একভাবে চললে কোনো দূর ই দূর নয় সবাইকে “একসাথে সঙ্গে চলতে হয় “.সেটা পারিবারিক হতে পারে বা কর্ম সূত্রেও হতে পারে।









Comments

sadamata101.blogspot.com

B-47#বিশ্বকর্মা_পূজো

সন্তোষ ঢাকি

B-71#GANESH_PRASADAM. ( গনেশজির ভোগ নিবেদন মোদক ও পূরণ পুলি)