B-34#স্মৃতি চারণা (শুভ সুমেধার দশম পর্ব)

                  স্মৃতি চারণা

দেখো সুমি,মলি এই তো সেদিন হোলো,দেখতে দেখতে কত বড় হয়ে গেলো । আজও মনে পড়ে হসপিটালে অপারেশন থিয়েটারের সামনে  অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলাম বাইরে, কি জানি কি খবর আসবে  ছেলে না মেয়ে। নার্স ডেকে পাঠালো, ডাক্তার এগিয়ে এসে বললেন মেয়ে হয়েছে, সে কি আনন্দ মনে মনে। মনকে বললাম “আচ্ছা শুভবাবু বুঝলেন আপনি বাবা হয়েছেন”,
মুহর্তে কিছুটা হলেও মনে মনে বিষম খেয়ে, আয়া মাসি আমায় আবদার করে বললেন মেয়ের মুখ দেখাতে পারি, কিন্ত খুশি না করলে তো দেখানো যাবে না। সঙ্গে সঙ্গে পঞ্চাশ টাকার একটা নোট বার করে দেখাতেই প্রথম দেখলাম মেয়েকে, কি যে সে অনুভূতি বাবা হয়ে, একেবারেই সেকেন্ডে বাবা হয়ে কত স্বপ্নের জাল মুহূর্তে বুনতে শুরু করলাম। একেবারে শরতের আকাশে খন্ড খন্ড  পেঁজা তুলার মত সেদিন মেয়ের আগামী জীবনের চলার পথের সিঁড়ি মনে মনে বানিয়ে ফেলেছিলাম। আয়া মাসি এসে বললেন,মেয়ের জন্য জামা কিনে নিয়ে আসুন সুতির কিনবেন, কিনতে গিয়ে সে কি আনন্দ এই আমার টাকায় মেয়ের প্রথম কাপড়,
কেউ দেখে বললো মায়ের মত, আবার কেউ বললো বাপের মত, আবার অনেকে বললো টাকলা হবে নাকি, মাথায় তো এতোটুকুও চুল গজাইনি, মায়ের মাথায় এতো চুল, শুনে ছুট্টে গেলাম সত্যি কিনা  দেখি। তুমি তখন ও প্রায় অচৈতন্য একটু একটু জ্ঞান আসছে যাচ্ছে, আমি গিয়ে পাশে বসতেই হাতটা ধরে বললে, শুনেছ তো মেয়ে হয়েছে, তুমি খুশি? আমি কিছু বলার আগেই আবার তুমি ঘোরের মধ্যে চলে গেলে। আমি মাথা নেড়ে সম্মতি জানাতেই দেখলাম মেয়েকে তোমার পাশে এনে রাখলো। 
         কি গো আজ থেকে শুরু হোলো মেয়ের জন্য মন খারাপ করা তাই না, 
আমারও তো সেই দিনটার কথা মনে পড়ে যাচ্ছে, তুমি বলাতে। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েই বাপের বাড়িতে গিয়ে উঠলাম, প্রায় মাস দুয়েক। ততদিনে মলি একটু বড়, কি সমানেই পা ছুঁড়তো, বাবা বলতেন ও বাউ দেবতাদের সাথে খেলছে, ওর আগের জন্মের সব কথা মনে পড়ছে তাই মাঝে মাঝে হাসছেও।
আর তুমি যা করতে মেয়ের সাথে সে আর বলার নয়। যখনই পা নাড়তো তুমি ছোটো ছোটো পা গুলো ধরে আটকে দিতে আর মলিকে কাঁদানোর জন্য বলতে “ ও ও “, আর সে কি কান্না মেয়ের, আবার যেই পাদুটো ছেড়ে দিতে বেচারি আবার করে খেলতে শুরু করে দিত।
 তবে হ্যাঁ মলি যা জ্বালিয়েছিলো তখন সারাটা রাত জেগে থাকতো, আমার পায়ের উপর, সমানেই দুলিয়ে যেতাম যেন শুয়ে পড়ে, ঘুম তো ছিলই না উপরন্তু আমি বিছানার ছত্রীর উপর মাথাটা ঠেকিয়ে কোনো কোনোদিন শুয়েই পড়তাম। একদিন তো কি অবস্থা আমার খুব চোখ বন্ধ হয়ে আসছে, মাথাটা ঐ ভাঙা ছত্রীর উপরে গিয়ে ঠক করে লাগতেই, বিছানার সব কটা ছত্রী মশারির সাথে এক হয়ে তালগোল পাকিয়ে মুহূর্তে আমায় ঢেকে দিলো, আমি সামনেই ঘুমিয়ে রয়েছি বিছানার পাশে কাঠের আলমারিতে হেলান দিয়ে। এতজোর শব্দ হয়েছিল, মা পাশের ঘর থেকে ছুটে এসে আমাকে দেখে অবাক, আর মলি বিছানার সাথে গোঁজা মশারির ফাঁকে আটকে আছে
আর খেলেই চলেছে এক মনে, এসব কথা মা বলেছে পরের দিন সকালে। তোমাদের কি আর কষ্ট শুভ, এদিকে সিজারের ব্যাথা আর ওদিকে মেয়ের সাথে সারারাত জাগা, সকালে উঠে সংসারের কাজ করতে করতে মাথাটা সমানেই টোলতো। একটা সময় তো ঠিকই করেছিলাম ওর সাথেই ঘুমোবো দিনের বেলায় আর রাতে জেগে থাকবো, সেটাও করেছিলাম বহুদিন। কেমন যেন একটা অভ্যাসে পরিণত হয়েছিল। আটমাস যেতে না যেতেই মেয়ে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরেছিল, আমার তখন বেশ কষ্ট হয়েছিল। এসব পুরোনো কথা, স্মৃতি চারণা করে কি লাভ শুভ। কি গো কথা বলতে বলতে তো বেশ বেলা হয়ে গেলো বাজারে যাবে না? কিচ্ছু সবজি নেই,এখন গেলে তো কিছুই পাবে না। দেখি তাহলে চালে ডালে বসিয়ে দেই, এমনিতেই শনিবার শনির দশা কাটবে, ঘি আর পাঁপড় আছে, সঙ্গে না হয় আলুভাজা করে দেবো, রাতে কি করবো সেটা নাহয় পরে দেখা যাবে, কি গো শুভবাবু চলবে তো নাকি? এখনো মেয়ের ঘোরে আছো তাই না। 
                   না ভাবছি, সুমি জানো জীবনটা আসলে একটা বাস্তবিক অর্থেই সিনেমা, প্রত্যেকটা মানুষেরই ছোটো থেকে বড় হয়ে ওঠার একটা কাহিনী আছে, সেখানে উঠানামা আছে, সংসারের টানাপোড়েন আছে, দুঃখ আছে অনেকটাই বেশি, আনন্দটা অনেকটাই কম, সেটা অবশ্যই জোর করে খুঁজে নিতে হয়।
এযেন রুপোলি পর্দার অনেকটা সিন পরিবর্তনের মত। মানুষ যদি চায় লিখে রাখতে গল্পের আকারে সেটাও একদিন সিনেমা হবে। সিনেমা বলো, টিভি সিরিয়াল বলো  সবই তো তোমার আমার ঘটনা নিয়ে আর তাতেই মানুষ পয়সা খরচা করে দেখতে যায়, আনন্দ পাওয়ার জন্য। এখন থেকে সুমি ভাবছি, আমিও সব লিখবো, আমার কথা লিখবো,অনেক লেখা মনে পড়ছে, অনেক কথা বলার আছে, একেবারে জীবনের নানান মূল্যবোধের লেখা এক সহজ সরল ভাষায়, ভাবছি প্রকাশনায় পাঠাবো, যাঁরা পড়বেন, তাঁরা নিজেরাই বলবেন এতো আমার আপনার কথা।
বিভূতিভূষণ, শরৎচন্দ্র উনারা তো একই কথা লিখেছেন, কেউ দৈন্য দশার কথা কেউ বা অরণ্য নিয়ে তাই না। আমি কিন্তু লিখবো সম্পর্ক নিয়ে, জীবন নিয়ে।
    তা বেশতো, লেখো দিখি এতে তোমার আমার দুজনের সময় ও কাটবে আর একটা সৃষ্টির প্রকাশ ও ঘটবে। শুরু করো তোমার ছোটবেলা থেকে বুঝেছো একেবারে তোমার গ্রাম্য জীবন থেকে মলির বিদেশ যাত্রার অভিজ্ঞতার কথা। তবে হ্যাঁ কথা দিলাম এর পর তুমি আগে যাও বা আমি আগে যাই, কেউ তো একজন বেঁচে থাকবো, সেটা না হয় কেউ শেষ করবো বাকি পরিচ্ছদটা। দেখবে মলি সেটা নিয়ে তার মধ্য বয়সে প্রকাশ করবে, প্রকাশনার মাধ্যমে পাঠকের কাছে, সেদিন হয়তো কেউ থাকবো না আমরা দুজনেই কিন্তু যেটা থাকবে সেটা হোলো এক জীবন কাহিনী এর মূল্য সন্তানের জন্য সোনাদানা, ঘরবাড়ির থেকেও কয়েক গুন বেশি। শোনো তুমি স্নানটা করে পূজো দিয়ে দিও আমি রান্নাটা শেষ করেই তোমাকে খেতে দিয়ে স্নানে যাবো, কারণ আজ একটু দেরি হবে।
                                 
               ঘন্টা তিনেক পর 

                   কি গো ঘুম ভাঙলো তোমার, আমি তো ঘুমোচ্ছ বলে আর ডাকলাম না তোমায় চা বানিয়ে নিয়ে ব্যালকনিতে এসে বসেছি। আসবে নাকি সুমি? চা যে ঠান্ডা হয়ে গেলো, এদিকে মেয়ের ফোন করার সময়ও হয়ে যাবে। আচ্ছা শোনো, আসার সময় বিস্কুট আর গীতবিতান টা এনো তো দেখি একটা গান বেশ মনে পড়ছে, একটু করবো ভাবছি, আর হ্যাঁ তুমি একটু কবিতা পাঠ করবে সেই “ নির্ঝরের স্বপ্ন ভঙ্গ “ ভালোই তো করতে ঐ কবিতাটা।
আসলে কি বলতো আজ ঘুমটাও ভালো হয়েছে, মনটাও উরু উরু করছে, গল্প লিখতে বসবো তো তাই লেখার ক্লাইমেক্স আনতে চাইছি। আজ জানো দুপুরে একটা স্বপ্ন দেখলাম তাই চা বানাতে বানাতে মনে পড়েছে আর সমানেই হেঁসেই চলেছি। বসো বসো,
তোমার মনে পরে সুমি, আমাদের সেই প্রথম গাড়িটার কথা, মারুতি 800 তাও আবার সেকেন্ড হ্যান্ড, অবশ্য প্রায় প্রতিটি ভারতবাসীর একই গাড়ি থাকে, এটা কিন্তু দেখা গেছে প্রতি দশজনের মধ্যে আটজনই একই পথের যাত্রী।
যাক সে কথা আমরা দীঘা গিয়েছিলাম মনে পড়ে, মলি তখন অনেক ছোটো, একেবারে একজন আরেকজনের কোলে প্রায় ন জন, কি যে মজা হয়েছিল, অদ্ভুত সে স্মৃতি, মনে কত অহংকার যে নিজের গাড়িতে যাচ্ছি, আমি গাড়ি চালাচ্ছি, এদিকে আশে পাশের লোকজন যে আমাদের দেখে কত টিটকিরি মারছে তাতে কিচ্ছু এসে যাইনি সেদিন। সবে নন্দকুমার পৌঁছেছি গাড়ির কাঁচ নামাতেই একজন তো বলেই বসলো “ দাদা, একটু ডিকিটা খুলুন তো দেখি ওখানেও কেউ আছে নাকি”, লোকটার কথা শুনে তুমি কি তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলে মনে পড়ে সুমি?, আচ্ছা হ্যাঁ সারাটা রাস্তা কাঁচ বন্ধ করে ac চালিয়ে এলাম কিন্তু মজার ব্যাপার নামেই ac, শুধু blower চলছিল, সে কি আওয়াজ, ন কাকিমা তো সমানে হাত পাখা দিয়ে সবাইকে হাওয়া করে যাচ্ছিলো, মেজদি যেই একটু গরমে কাঁচটা নামিয়েছে, অমনি ন কাকিমা বলে উঠলো শিগগির গাড়ির কাঁচ টা বন্ধ কর তা না হলে  পাশের গাড়িটার থেকে লোকে ভাববে , এতগুলো লোক গাড়িতে কিন্তু  ac নেই । আমারও অবশ্য গরম লাগছিলো,সত্যি কথা বলতে কি, কিন্তু সে গরম কিছুটা ম্লান হয়েছিল নিজের গাড়ি থাকার গরমে, আর মনের ভিতর এক দেমাগে,সেদিন কাউকে বুঝতে দিই নি, আজ ঠিক এটাই স্বপ্নে দেখছিলাম জানো সুমি আর ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে কত হাসছিলাম । মধ্যবিত্তের কিন্তু একটা জায়গায় বেশ অহংকার আছে, হোক না সে বস্তা পচা জিনিস, বাড়িতে যে কোনো জিনিস পা রাখলেই হোলো তার যা যত্ন হয়, যেকোনো পয়সাওয়ালার বাড়িতে সেই যত্ন সে কিন্তু পায় না, কি ভুল বললাম, আরে বিষম খাবে যে, এতো হাসছো একটু জল খাও।
                 আরে না,হাসছি আরেকটা কারণে, মনে পড়ে গেলো, তখন সবে বিয়ে হয়েছে নতুন বৌ হয়ে এসেছি, ঠিক বিয়ের তিন চারদিন পরে দেখি তোমাদের সেই সেমি ওয়াশিং মেশিনটাতে বাবা সমানেই বালতি কে বালতি জল ঢেলেই যাচ্ছেন, আর মা মুঠো মুঠো সার্ফ উপর থেকে দিয়েই চলেছেন, কি না পুরোনো মশারি আর নোংরা চাদর ধোঁয়া চলছে, এমনিতেই এতো লোকজন এসেছিলো বিয়েতে,আমি দেখে মনে মনে মিচকি মিচকি হাসছি এ আবার কি রকম ওয়াশিং মেশিন সবই তো ম্যানুয়ালি করছো, তুমি আমার মুখ দেখে বুঝতে পেরে বেশ গম্ভীর হয়ে বললে পুরোনো হয়ে গেছে তো তাই জল আর সাবানটা ম্যানুয়ালি দিতে হয়।
উপায়ন্তর না দেখে আমিও লেগে পড়লাম শ্বশুর মশায়ের সাথে জল ঢালার কাজে, মা ওয়াশিং মেশিনের উপরের ভাঙা ঢাকনাটা খুলে কি বুঝলেন কি জানি আবার সার্ফ ঢেলে সুইচ টা দিতেই ঘ ঘ করে চালু হোলো তোমাদের সেই বিখ্যাত সেমি ওয়াশিং মেশিন। শেষ টা আর হাসি চাপতেই পারলাম না, কি একটা সুইচ দিলেন শোকানোর জন্য অমনি কিছুক্ষন পর দেখি ওয়াশিং মেশিন টা একেবারে ব্রেক ডান্স করতে আরম্ভ করলো, এতো কাঁপানি যে কোনো মেশিন করতে পারে, তা ধারণার বাইরে, মেশিনটার কাঁপুনি রোগ হয়েছে,সে এগোতে এগোতে এতটা এগিয়ে গেলো, সামনেই মিনতিদি বাসন মাজছিলো সজোরে নাচতে নাচতে ধাক্কা মারলো মিনতি দি কে, সে তো হুমড়ি খেয়ে পড়লো বাসনের উপরে মা এসে গম্ভীর হয়ে বললেন, আসলে শুকোনোর সময় ওকে ধরতে হয় না হলে ও এগিয়ে যায়, ধন্যি ছিল সেই ওয়াশিং মেশিন। মধ্যবিত্তের কিন্ত একটা জিনিস আছে, যতই খারাপ হোক attitude  এ কিন্তু full confidence থাকে, পারলে শেষ অব্দি লড়াই করে।এর কিছুদিন পরেই তুমি fully automated washing মেশিন কিনলে, কিনতে গিয়ে আমার কি হাসি, যেই ছেলেটা ডেমো দেখাচ্ছিল, যে মুহূর্তে সুইচ দিয়েছে,অমনি তোমার পুরোনো অভ্যেস আর যায় কোথায়? সঙ্গে সঙ্গে তুমি ওকে ধরে দাঁড়ালে মানে ওয়াশিং মেশিন টাকে। আসার সময় তো না পেরে, বলেই বসলে আচ্ছা কাঁপবে না তো। 
যাক পুরোনো কে বিদেয় দিলে, সেদিন আমারও খুব কষ্ট হয়েছিল, এক ফেরিওলাকে পাঁচশোটাকায় বাবা বিক্রি করেছিলেন, নিয়ে যাওয়ার সময় সে ঠেলাগাড়িতে উঠিয়ে কত অযত্ন করে নিয়ে গেলো, আমি, তুমি, বাবা মা অবাক হয়ে ব্যালকনি থেকে দেখছিলাম, বেশ কষ্ট হয়েছিল সেদিন। 
      যা আজ আর গানটাও করা হোলো না আবার তোমার আবৃত্তিটাও শোনা হোলো না, এই দেখো একেবারেই  একটা অজানা নম্বর, এটা বোধহয় মলির হবে, সকালে ও বললো না,হোস্টেল সুপারের মোবাইল থেকে ফোন করছে, এতক্ষনে হয়তো কলেজ থেকে দেওয়া সিম ও পেয়ে গেছে, ধরো ধরো ফোনটা না হলে কেটে যাবে তো। 
            
                  

Comments

sadamata101.blogspot.com

B-47#বিশ্বকর্মা_পূজো

সন্তোষ ঢাকি

B-71#GANESH_PRASADAM. ( গনেশজির ভোগ নিবেদন মোদক ও পূরণ পুলি)