B-20#লবটুলিয়া থেকে রাতমোহনা (শুভ সুমেধার ষষ্ঠ পর্ব)

লবটুলিয়া থেকে রাতমোহনা 
কি ব্যাপার সুমি, এতো সকাল সকাল কোনোদিন তো তুমি আসো নি আমায় দেখতে, আর এমনিতেই আমি আগের থেকেও অনেক সুস্থ, কথাও বলছি,  তবে কষ্ট হচ্ছে। আরে বোলবে তো নাকি তোমায় বেশ বিধ্বস্ত দেখাচ্ছে, চোখ দুটো বেশ লাল হয়ে গেছে। এই কিছু লুকোচ্ছ ?  আচ্ছা বসো দেখি,  কিছু তো হয়েছেই,  শোনো বুঝেছি তুমি বোলবে না, আমি তোমার চোখ দুটো দেখলেই বুঝি, বলবো – ন কাকুর কিছু হয়েছে তাই তো?  আমি আগেই টের পেয়েছি পাশের ঘরে কাল বেশ মাঝ রাতেই ইমার্জেন্সি তে ডাক্তাররা বেশ ছুটোছুটি করছিলেন, কি জানি বলছিলেন কানে এসেছিলো ঠিকই, কিন্ত পরক্ষনেই ভাবলাম ইমার্জেন্সি তে তো সারাটাক্ষন টা অমন হয়,  সেটা যে ন কাকু....... 
                                   হ্যাঁ শুভ ঠিক ধরেছো কাল রাতেই 1.40 মিনিটে, ন কাকিমা কিন্ত বেশ মানসিক ভাবে শক্ত, এতটুকুও চোখের জল নেই,  আমরা তো রাত তিনটে থেকেই হাসপাতালে।  কি অদ্ভুত জানো শুভ,  গতকাল বিকেলেই তোমার ডিসচার্জ লেটার দিয়ে দিয়েছেন, আমরা তখন থেকেই ব্যস্ত ছিলাম ন কাকুকে নিয়ে, তাই বলেও ছিলাম তোমায় কাল নিয়ে যাবো। আমি তো ভাবলাম তোমায় চমক দেবো সকালে এসে।  কিন্তু কি অদ্ভুত দেখো তুমি আর  ন কাকু একই দিনে এসেছিলে, দুজনেই হাসপাতাল থেকে বিদায় নিলে একই দিনে- একজন মৃত আরেকজন সুস্থ, বিধির বিধান বুঝলে শুভ ও আর কি করার।  
নাও দেরি কোরো না চটপট তৈরী হও আমি রিসেপশনে বাকি টাকাটা চুকিয়ে এখুনি আসছি।  ন কাকিমা জীবনের এতো গুলো একসাথে কাটানো বছর স্মৃতিচারণা করেই চলেছেন এখন তারই অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন নিথর দেহটাকে শেষ বিদায় জানানোর উদ্দেশ্যে। 
কি আশ্চর্য্য ন কাকিমার চোখে এতটুকু জল ও নাই। একেবারে ন কাকুকে রীতিমতো যেন সেদিনের মত নতুন গৃহবধূ হয়ে প্রায় সাষ্টাঙ্গে প্রণাম করছেন। যে মানুষটা এতটা কাল স্বামী ছিল আজ তার উদ্দেশ্যে একটার পর একটা ঘটনা বলেই চলেছেন। 
দুদিন পর একদিন দুপুরে
              ন কাকিমা :-  সুমি প্রথম যেদিন বৌ হয়ে আসি তখন আমার বয়স প্রায় একুশ বছর। কলকাতা থেকে একেবারে ভাগলপুরে, বাবা তড়িঘড়ি করে বিয়ে দিয়ে দিলেন সাতদিনের মাথায়। স্বামী নামক মানুষটা চাকরি নিয়ে ভাগলপুরে থাকেন, আমিও এসে পড়লাম একেবারে অজ পাড়াগ্রাম যাকে বলে। কি সব ভাষা মৈথিলী সে ভাষা বোঝাও মুশকিল, বলতে পারাতো দুরস্ত। তবে হ্যাঁ তোমার ন কাকু বুঝতেন কিন্ত বলতে পারতেন না।   সমানে কেঁদেছি কোথায় কলকাতার ব্যস্ততার জীবন, সেখান থেকে একেবারেই সমস্ত কিছুই বিপরীত- মানুষজন, রাস্তাঘাট, খাওয়াদাওয়া,  চালচলন, এ যেন জীবনের এক নির্মম পরীক্ষা। 
আমি গল্পের বই পড়তে ভালোবাসতাম একদিন দেখি তোমার ন কাকু কোনো এক লাইব্রেরি থেকে একটা বই নিয়ে হাজির, আমায় বললেন এটা পড়ো, এটা পড়লেই তোমার এ জায়গার সম্বন্ধে একটা সুস্পষ্ট ধারণা হবে। যদিও আমার আগে এই বইটা  পড়া হয়ে ওঠেনি দেখি বিভূতিভূষণের আরণ্যক। যাক কাজের ফাঁকে ফাঁকে শুরু হয় বইটা পড়া একটা সময় সেটা শেষও করি। একদিন তোমার কাকুকে নিয়ে হাট দেখতে যায় একটু পাঠার মাংস খাবো বলে।  খুব বেশি প্রয়োজন নেই দুজন মানুষের আর কত খুব জোর সাড়ে সাতশো ওমা দেখি এক ছোটো কচি পাঠা নিয়ে গ্রামের একজন মহিলা ছুটে আসে আমার দিকে,  সে জানায় বাবু আপনি এককিলো নিন না পুরোটাই কেটে দেবো গেলো হাটেও কোনো বেচাকেনা হয়নি। বাড়িতে দু দুটো বাচ্চা কোনোরকমে খুঁদ খেয়ে বেঁচে আছে,  আপনি কিনলে সে  পয়সা দিয়ে চাল আর সবজি নিয়ে বাড়িমুখো হব। যাক পোয়াতি মহিলা দেখে বেশ কষ্ট হোলো কথাটা ফেরাতে পারিনি সেদিন, মাংস কাটতে কাটতে  সে শুনিয়েছিল তার গ্রামের কথা লবটুলিয়ার গ্রাম বড়ই হতদরিদ্র তারা। 

বিভূতিভূষণের অরণ্যক সে তো এই জায়গারই কথা বলেছেন,  এই লবটুলিয়ার গ্রাম তাঁর লেখায় বার বার ফুটে উঠেছে।  মহিলাটির নাম ভিমানী শাহ, সবাই তাকে আদর করে ভিমু বলে ডাকে , তাই আমিও তাকে ভিমু বলা শুরু করি। এযেন আমার সেই ভাগলপুরের প্রতি একটা টান, ভিমুর প্রতি ভালোবাসা জন্মে গেলো। কোথাও যেন বিভূতিভূষণের ভাগলপুরের প্রথম দিকের জীবনের সাথে নিজেকে খুঁজে পেলাম।  একদিন তো ভিমুর সাথে সেই লবটুলিয়ার গ্রাম দেখতে যায়, খুঁজেও পাই সেই সহজ সরল জীবনগুলো, একটা অভাব আজও আছে, ঘনজঙ্গলের মধ্যে আজও যেন সেই জমিদারি প্রথার সাক্ষী হিসেবে  বহন করে চলেছে সেই পোড়ো বাড়ি গুলোর স্মৃতি।  কি জানি এখানেই হয়তো উনি একাধারে বসে লিখেই চলেছিলেন তাঁর সৃষ্টির উপন্যাস আরণ্যক। যাক দেখতে দেখতে জায়গাটার উপর যেমন মায়া হয়েছিল তার থেকেও বেশি দাগ কেটেছিল মানুষ গুলোর উপর তাদের সহজ সাপটা জীবন ধারণ। সুমি জানিস তোর ন কাকুর যেদিন বদলির খবর আসে গ্রাম কে গ্রাম লোক আসে দেখা করতে,  ভেট হিসেবে নিয়ে আসে কেউ  আস্ত মুরগি,  ডাল,  ঘানির তেল,  আবার কেউ ঘি।  ওরা নিজেরাই এতো গরিব টাকা দিতে চেয়েছিলাম পা ধরে এতো কেঁদেছিলো, বলেছিলো “মাইজি শরমিন্দা মত করো হাম যো দেতে হ্যাঁ ভেট নহি মাইজি প্যার কা এক নিশানি – আপ তো চলে জায়োগে লেকিন ছোড় রাখি আপকি প্যার,  এধারি জিন্দেগি জিনা কঠিনায় ছে মাইজি, পর প্যার কাছু ছোড়না আউরু কাঠিনায়, ই তোরা নাইহার হ্যাঁ মাই, জব কাছু মন চাহি আ গাইলোন বা, হাম ভাই বহন কো কভি মত ভুলি “। 
সেদিন বেশ কষ্ট হয়েছিল চোখের জল সমানেই বেড়িয়ে যাচ্ছিলো। যাক পরের দিন বিকেলে ট্রেন,  আমি ট্রেনের জানলায় বসে আছি এমন সময়  ভাগলপুর স্টেশনে একজন লোক চীৎকার করে  ট্রেনের প্রতিটা বগির সামনে বলেই চলেছে ভিমু মাইয়া ভিমু মাইয়া। প্রথমটা বুঝিনি কারণ লোক টাকে চিনিও না যখন ও ভিমুর নামটা বললো আমি জিজ্ঞাসা করি কি গো কি হয়েছে আমিই তো ভিমু মাইয়া?  সে হাঁফাতে হাঁফাতে আমায় জানলা দিয়ে করজোড়ে বললো মাইজি আমি লবটুলিয়া গ্রাম থেকে আসছি, একটা খবর দিতে। আপনি তো চলে যাচ্ছেন এদিকে ভিমুর বাচ্চা হতে গিয়ে ও মারা যায় তাই খবরটা দিতে এলাম।  তাকে কিছু বলার আগেই ট্রেন টা একটা ঝটকা দিয়েই এগিয়ে গেলো ব্যস ঐ টুকুই বাকি ছিল,  একটা ঝটকা ও দুঃখ নিয়ে আমি আর তোর ন কাকু ভাগলপুর ছাড়লাম।  
এসেছিলাম একটা সময় নতুন বৌ হয়ে প্রথম থেকেই অপছন্দ আজ এই  জায়গাটাকে ছাড়তেও সে কি কষ্ট। 


তোমার ন কাকুর বদলি হয়েছিল ঘাটশিলায়, বিভূতিভূষণ যেন বিয়ের দিন থেকেই আমার সাথে সাথে চলেছেন, সেখানে গিয়ে আমি তো সেই রাতমোহনা,  আমায় নদী সবটাই পেয়েছিলাম, যেমন গল্পে তেমন প্রতক্ষ্যেও।  মানুষগুলো কিন্তু ভাগলপুরের মত নয়। যাক ন কাকুর রিটায়ারমেন্ট আবার কলকাতায় ফেরত। যেখান থেকে জীবনের শুরু সেখানেই ঘুরে এসে জীবনের শেষ টা। যাক সব কিছু মিটে গেলে চল সুমি তুই আর শুভ আমরা কাছাকাছি কোথাও থেকে ঘুরে আসি। 
                                        
                      ঠিক বলেছো চলো, আমার এক বান্ধবী বলছিলো কাছাকাছির মধ্যে ঝাড়গ্রাম রাজবাড়ী যাওয়া যেতে পারে, ওখানে দারুন ব্যবস্থা এমনিতেই শীতকাল, শুনেছি নাকি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য দারুন তার উপর আবার বিকেলে সাঁওতালী নাচ উফফ দারুন। 

                                শুভ হঠাৎ করে শুনে বলে ওঠে -  এই শোনো তুমি গেলে যাও আমি তো মোটেই যাবো না, জায়গাটার নাম শুনলেই আমার প্রাকৃতিক ডাকের কথা মনে পরে। কি যে হয়েছিল সে আর বোলে লাভ নেই, জায়গাটার উপর দিয়ে যখনই গেছি আমার ছবির মত ভাসে সে সব কথা মনে পড়লে। 
                             শুভ বলোই না শুনি এতটা বছর বিয়ে হয়েছে কই কোনোদিন তো সেকথা বলোনি, কি সুন্দর জায়গা কি অপরূপ তাঁর পারিপার্শ্বিক পরিবেশ,  শাল পিয়ালের ঘেরা সে দৃশ্য,  কেন্দু গাছের ছড়াছড়ি চতুর্দিকে – যা দিয়ে শুনেছি বিড়ি শিল্প,  ইউক্যালিপ্টাস গাছের সারি কে সারি জঙ্গল, লাল মাটির রাস্তা, কাছেই সিংভূম জেলা তাই রাস্তা গুলো শুনেছি কখনো চড়াই বা কখনো উৎরাই, দূরে বিস্তীর্ণ পাহাড় যেন হাত ধরাধরি করে দাঁড়িয়ে আছে। আবার রাতের দৃশ্য শুভ আরও সুন্দর শুনেছি পাথরে পাথরে ঘষা খেয়ে সারাটা পাহাড় জুড়ে আগুনের রেখা, শুকিয়ে যাওয়া পাতা গুলো দাউ দাউ করে জ্বলে, আর বন্য প্রাণী গুলোর প্রাণ ভয়ে ছুটোছুটি। শুনেছি আদি সম্প্রদায় এক অর্থে সাঁওতালি, তারা গোল করে মাদলের সাথে হাতে হাতে ধরাধরি করে নৃত্য করে ,  শুনেছি এরা নাকি ওল, মুন্ডা শ্রেণীর সম্প্রদায়। বছরের একটা বিশেষ দিনে নাকি ওরা রাতে শিকারে যায়।  জংলী জানোয়ারদের শিকার করে সূর্যোদয়ের আগেই ফিরে আসে নিজের ঘরে । শুভ, ওদের ঘর গুলো দেখতে তো যাবোই,  শুনেছি মাটির বাড়ি, প্রত্যেকটা বাড়ির সামনে লম্বা টানা দালান এতটাই চওড়া যে পাশাপাশি দুজন শুতেও পারবে, দেওয়ালের গায়ে নানান দেবদেবীর সেই ছবি আঁকা, ঘরের ভিতরেই ঢেঁকি শাল সেখানেই নাকি ওরা চাল ভাঙে সব মহিলারা মিলে, তাও আবার একসাথে নাচ গান করতে করতে। উফফ ভাবা যায় কি মিল ওদের, এ জীবন আমাদের যদি হত শুভ কি ভালোই না হত। চলো না গো, আচ্ছা শুনি,  তোমার সে কাহিনী যাতে তোমার এতো আপত্তি।
             শোনো সুমি বলি,  তুমি যা যা বললে সে সব কথা আমার অজানা নয়। যাক যার জন্য আমি নিজে নিমরাজি সে এক দারুন হাসির কাহিনী ঝাড়গ্রাম কে নিয়ে। বোধহয় তখন ক্লাস নাইনে পড়ি,  আমার জেঠতুতো দিদি কোলকাতা থেকে ঝাড়গ্রামে যাবে নিজের মামার বাড়ি বাছুরডোবা বোলে একটা জায়গায়। দিনটা ছিল রবিবার আমারও ছুটি তাই দিদিকে নিয়ে ভোরের লোকালে ঝাড়গ্রাম পৌঁছয়, কথা ছিল আমিও থাকবো পরের দিন দিদির সাথে আবার ফেরত। যাক উনাদের বাড়িতে গিয়ে প্রচুর আতিথেয়তা পেলাম।  বাড়ির সামনে ডালিম গাছের বাগান, জামরুল গাছ,  সফেদা গাছ, নারকেল গাছ, আবার বেনারসি পেয়ারা গাছ ( যার ভেতর টা একেবারে লাল ),  প্রচুর ফুল গাছ নাম বিশেষ একটা জানা নেই, তবে বেশ মনে আছে পুরোবাড়িটাই ফল ফুলে ঘেরা।  যাক একটার পর একটা ফল পেড়ে খাচ্ছি, আঁকশি দিয়ে একটার পর একটা পেয়ারা, জামরুল সমানে খেয়েই চলেছি, গাছ থেকে টাটকা ফল পেড়ে খেতে সে কি যে আনন্দ বলার অবকাশ রাখে না।  
দুপুরে ডাক আসে খাবারের, বেশ মনে পরে কচি পাঠার মাংসের সোনালী ঝোল , মুসুরির ডাল,  পোস্তের বড়া, মোচার পাতুরি,  জলপাইয়ের চাটনি, পায়েস, আর কাঁচাগোল্লা একটাও ছাড়া নেই, দেখেই জিভ লকলক করেছিলে। যাক গান্ডেপিন্ডে তো খেলাম, সবে একটু বিশ্রামে গেছি ঘন্টা দুয়েক ঘুমিয়েও ছি, ঘুমের মধ্যেই পেটে মোচড়, জীবনে এতো মোচড় আজ ও হয়নি বোধকরি। যথারীতি ডাক বড় ঘরের,  দৌড়ে গেলাম বেশ হাল্কা লাগছিলো এসে,  মিনিট পনেরো শুয়েছি আবার বড় ঘর একটা সময় তো মনে হয়েছিল এখানেই থাকি বেশ আছি। খাও দাও আর ছেরাও। যাক বেরিয়ে এসে বলেই ফেললাম আমার বধ হজম হয়েছে, পেটের ব্যামো সেটা বলতে বেশ লজ্জা করছিলো কারণ সে বাড়ির মেয়েটি হয় আমার বয়সী বা আমার থেকে ছোটো তাই বমির অভিনয় শুরু করি। বাড়ির গৃহকর্তা আমায় কিছু হজমের ওষুধ দিয়েছিলেন, খাওয়ার ইচ্ছে ছিল না। হজম তো এমনিতেই সবটাই করে ফেলেছি আর বাকি কি রেখেছি,  অগত্যা লজ্জার খাতিরে সেটাও খাই, কিন্তু পরবর্তী সময় আমার জন্য যে আরো বাজে কিছু অপেক্ষা করতে চলেছে তাই সিদ্ধান্ত নি বিকেলে ফেরার যা হবে পথে দেখা যাবে। অনেক অনুনয় বিনয়ে ছাড়া পাই দিদিও আসে ঝাড়গ্রাম স্টেশনে আমায় পৌঁছতে, আমার মত ছিল না যাক ট্রেন আসার আগেই তাদের ফিরে যেতে বলি কারণ একটাই আবার মোচড়, স্বস্তি একটাই আমি এখন নিজে একা। যাক টিকিট কেটে দৌঁড়োতে থাকি ঝাড়গ্রাম স্টেশনের ঠিক বাইরে বেশ কিছু কটা রেলওয়ে কোয়ার্টার সেখানে গিয়ে অনুমতি চাই বড় ঘরের যাওয়ার অনেক কাকুতি মিনতি করেও কাজ হোলো না।
অগত্যা কোয়ার্টারের বাইরে কিছু বড় বড় জলের পাইপ সেখানেই ঢুকে পড়ি, পাইপের অপর প্রান্তে বেশ কিছু কুকুর তার বাচ্চাদের নিয়ে আশ্ৰয় নিয়েছে কারণ বাইরে বেশ গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি পড়ছে আমায় দেখেই তারা সমানে চীৎকার করেই চলেছে। যাক পেট খারাপের একটা আওয়াজ হয় সেটা বড় বড় জলের পাইপের ভিতরে প্রতিধ্বনি হয়ে আরো জোরে আমার কানে বাজছিল তাতে কুকুর গুলোর কাছে সেটা বন্ধুকের গুলির মত যে পৌঁছোচ্ছিলো তাতে কোনো সন্দেহ নাই।
 যাক সব শেষে ধীর গতিতে স্টেশনে এসে কোনোরকমে অপেক্ষায় লোকালের এই বুঝি আসলো,  নিজেকে হাল্কা আর একেবারে তরতাজা লাগছিলো। স্টেশন মাস্টারের রুমের বাইরে পাথরের বেঞ্চের উপর বসে অপেক্ষমান ট্রেনের জন্য, টিম টিম লাইট জ্বলছে, মুহূর্তে সেটাও চলে গেলো, কিন্ত যেটা আবার করে ফিরে এল সেটা মোচড় , উপায়ন্ত না দেখে সোজা স্টেশন মাস্টারের ঘরে, সেখান থেকে চাবি নিয়ে একেবারে ফার্স্ট ক্লাস ওয়েটিং রুমে ঢুকে সোজা বাথরুমে। বাথরুমের যা ছিরি ঢুকেই লোহার ফ্লাশের সাথে কপালে সজোরে সংঘাত, কারণ কারেন্ট ছিল না,  যাক কোনোরকমে কাজ সেরে স্টেশন মাস্টার কে চাবি দিয়ে যথাস্থানে গিয়ে বসি ট্রেনের অপেক্ষায়।  
 ট্রেন ও আসে মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই বসে আছি বেশ ফাঁকা কিন্তু ট্রেন ছাড়ে না। এবারে শরীর টা বেশ ক্লান্ত। হাল্কা হাল্কা চাপ পেটে,  শার্ট টা আর প্যান্টে গোঁজা নেই পুরোপুরি বিধ্বস্ত নিজে, পেটের কাছে হার মেনেছি। যে সব হকার আসছে ঝালমুড়ি, চানা তাদের দেখলেই মনে হচ্ছে ট্রেন থেকে নামিয়ে দি, আবার কাঁচাগোল্লার লোকটা এলুমিনিয়ামের বড় পাত্রে শালপাতার ডোঙায় মুখের সামনে এসে যখন ধরছে, মন বলছে হায় রে কাঁচাগোল্লা তোর এতো শক্তি দেখে দেখে হেসেই চলেছি মনে মনে,  ট্রেন আর ছাড়ে না প্রায় আধঘণ্টা হয়ে গেছে,  এদিকে সময় হোলো আবার করে যাওয়ার বাথরুমে। গিয়ে দেখি সে কি বিদঘুটে গন্ধ,  লাইট নেই যাক এবার মনস্থির করি আর বেরোচ্ছি না একেবারে গন্তব্যে পৌঁছলেই তবেই বের হবো। বেশ মনের সুখে বসে আছি, প্যান্টের পকেট থেকে কি জানি একটা কাগজ পরে গেলো বুঝলাম না একেবারে গর্ত দিয়ে রেলওয়ে লাইনে। পরে বুঝেছিলাম আমার পিসবোর্ডের টিকিট সে প্রসঙ্গে পরে আসছি। যাক বাইরে কি একটা এনাউন্সমেন্ট কানে এল কিন্ত বুঝলাম না, কারণ মাইকের আওয়াজ ওতো প্রখর ছিল না। ট্রেন ছাড়লো কিন্তু কিছুটা গিয়েই একটা জঙ্গলের পাশে দাঁড়িয়ে পড়লো।
 বেশ কিছু পরে RPF পুলিশ এসে বাথরুমের বাইরে আওয়াজ দিলো কই হে অন্দর?  ভয়ে কোনো আওয়াজ না দিয়ে চুপ করে বসে আছি। পুলিশ গুলো তখন বাথরুমের বাইরে থেকে খিল দিয়ে দিয়েছে। বেশ খানিক পরে বুঝি ট্রেনে একটাও লোক নেই এই ট্রেনটা যাবে না তাই সাইডিং এ নিয়ে গেছে । ইতিমধ্যে লোকজনের কথা শুনি স্টিল এক্সপ্রেস আসছে, কিন্ত আমায় কে বাঁচাবে, কে খিল খুলে দেবে। বাথরুমের জানালা দিয়ে সে কি আর্তনাদ, যাক শেষমেশ এক হকারের দৌলতে আমি ছাড়া পাই। দৌঁড়োতে দৌঁড়োতে ট্রেনে উঠি সেখানে গিয়েই দূর থেকে দেখি চেকার আসছে,  পকেটে হাত দিয়ে দেখি টিকিট নেই সেটা আগের ট্রেনে বাথরুমে পড়ে গেছে। যথারীতি আবার বাথরুমে ঢুকি কিন্তু এবারে পেটের চাপ নয়, চেকারের ভয়ে। যাক ঝাড়গ্রাম আমার ক্ষেত্রে দুঃসপ্ন ছিল আজও সেখান দিয়ে গেলে সে স্মৃতি বার বার মনে পড়ে। 


Comments

Post a Comment

always

sadamata101.blogspot.com

B-47#বিশ্বকর্মা_পূজো

সন্তোষ ঢাকি

B-71#GANESH_PRASADAM. ( গনেশজির ভোগ নিবেদন মোদক ও পূরণ পুলি)