B-19#RELATION (সম্পর্ক). (শুভ সুমেধার পঞ্চম পর্ব)

                                                                    সম্পর্ক
এ বাবা এখনো ঘুমোচ্ছ শুভ,  কত বেলা হয়ে গেলো ওঠো?  দেখো দিখি সঙ্গে মলি ও এসেছে,  ইসসস চা দিয়ে গেছে,  সে তো একেবারেই ঠান্ডা জল হয়ে গেলো ।  আরে ওঠো, কি স্বপ্ন দেখছিলে নাকি? সমানে হাত পা নাড়ছিলে?  ওঠো দেখি, আমি মুখটা ধুয়ে দি,  তারপর না হয় চা টা খাও?  পারবে তো নিজে নিজে উঠতে, এই তো।  বাবা ! রাতে ঘুম হয়নি বুঝি?  বালিশের নিচে কত্ত বড় চিঠি, কাকে নিয়ে লিখেছো দেখি , এতো সম্পর্কের বাঁধন?  বুঝলাম, অনেক অভিমান হয়েছে?  আচ্ছা চা টা খাও তারপর সব উত্তর দিচ্ছি তোমার লেখার একটার পর একটা।  কই দেখি এই নাও চা টা প্লেটে ঢেলে দিয়েছি চুমুক দিয়ে দিয়ে খাও দেখিনি। দেখি তোমার প্রথম প্রশ্ন 
                                    সম্পর্ক গুলো কি সত্যি সত্যিই হারিয়ে গেছে সুমি , নাকি অর্থের প্রতি দৌড়োতে দৌড়াতে  সম্পর্ক গুলো আর পাল্লা দিয়ে পেরে উঠছে না?
                 জানো শুভ অনেকটাই তাই,  প্রতিনিয়ত মানসিক দ্বন্দ আর টানাপোড়েনের মাঝে সম্পর্কগুলো হারাতে বসেছে, শুভ তোমায় ঘুড়ি আর লাটাইয়ের সম্পর্ক দিয়েই বলি। ওটা হয়তো আরো সহজ হবে, তোমার আমার ক্ষেত্রে বোঝার বা আলোচনায়।  যতক্ষণ তুমি ঢিল ছাড়ছো, ঘুড়িটা তার নীল আকাশে প্রশস্তি পাচ্ছে ততই বেশি, যখন তুমি মাঞ্জা দিয়ে আকাশে ছেড়ে দিচ্ছ, তখনই তার শুরু হচ্ছে একটা অহংকার, বা প্রতিশোধ নেওয়ার লড়াই। যখনি সে মাঞ্জা দিয়ে আকাশে উড়ছে, আমরাই লাটাই মারফৎ  বলে দিচ্ছি, পেটকাটি নে প্রতিশোধ নে,  আজকের জন্য তুই ই কেবল রাজা হয়ে থাক আকাশে।  তাই সে শুরু করে,  আমি এই নীলাকাশে একাই থাকবো,  যে আসবে আমি নিমেষেই কেটে দেবো ,  মাঞ্জাটা হলো অনেকটা আর্থিক অহংকারের বহিঃপ্রকাশ, যা সম্পর্কের ভাঙ্গন শেখাই অনেক ক্ষেত্রে ।
যেদিন সে আকাশে থেকে  প্রতিহিংসার কথা না ভেবে, নিজের মত সবাইকে উড়তে শেখাবে, সুযোগ দেবে ,সেদিন কিন্ত আকাশের ছবিটাও পাল্টে যাবে।  এক অর্থে সে সম্পর্ক গড়তে চায়, রাখতে চায়, মিলমিশ হয়ে নীলাকাশে উড়তে চায়। আমরাই তো তার হিংসার বীজ বপন করি শুভ?  কি বোঝাতে পারলাম? একটু খেয়াল করে দেখো,  যখন ঘুড়ি প্রায় মাঝ আকাশে থাকে,  তখন লাটাই আর ঘুড়ির মাঝখানের সুতোটা কখনোই সোজাসুজি থাকে না, সুতোটা অনেকটাই বেঁকে থাকে, এক অর্থে তখনো সে চাই ঝুঁকে থাকতে।
আজকের দিনে সম্পর্ক ভেঙে যাচ্ছে  অনেকটা তোমার আমার কত প্রতিপত্তি আছে, কে কাকে কতটা টেক্কা দিতে পারছে, অনেকটা অন্যের সম্পত্তি আর নিজের বুদ্ধি সবসময় বেশি এই চিন্তাভাবনা নিয়ে, কি তাই না?  আচ্ছা শুভ,  তোমার আমার ছোটবেলার দিনে একটু ফিরে যাও পুতুল খেলার দিনগুলোতে, সেখানে প্রতিটা মুহূর্তে শিশুমনে একটা গড়া বা সৃষ্টির স্বপ্ন ছিল, রান্নাবাটি খেলতে খেলতে একটা বোধের স্বপ্ন ছিল,
একটা সম্পর্ক গড়ে উঠতো, সেখান থেকেই তো সই, বেলির পাতানোর সৃষ্টি, আজকের যুগে সেটা কিন্ত প্রায় বোকা বোকা হয়তো অনেকের কাছে , আর চালাক চালাক কোনটা জানো?  সেটা হলো ভিডিও গেম, পাবজি আরো নানান ধরণের অত্যাধুনিক সরঞ্জাম, যার যোগান দিতে মা বাবারা প্রায়ই  হিমশিম খাচ্ছেন, আর যুগের সাথে অনেকেই পা পিছলে পড়ে যাচ্ছেন।  
সেটাও মানলাম, তাতে হয়তো বুদ্ধির বিকাশ হয়, যতক্ষণ নিজের মধ্যে থাকে।  কিন্ত যখনি সেটা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পৌঁছয়,  মনের গভীরে, দ্বন্দ্বের বিকাশ ও তো কম হয় না শুভ? তবে হ্যাঁ, তোমার পরে অর্থাৎ সম্পর্ক গুলো থাকবে কিনা, সেটা নিয়েই তোমার সংশয় তাই তো?  কিন্তু যা তুমি দেখতে পাবে না তা নিয়ে এতো ভেবে কি লাভ আছে শুভ?  তুমি তো reformer নও শুভ? বড়জোর তুমি নিজেকে চেঞ্জ করতে পারো,  তার বাইরে কখনোই নয়,  যা দিয়ে তুমি আবদ্ধে রাখতে চাইছো সবাইকে,  কে তোমার মূল্য দেবে শুনি? 
শুভ, নিজেকে নেপথ্যে রেখে এমন কিছু একটা সৃষ্টি করো  যা দেখে মানুষ একটা সস্তির দীর্ঘ নিঃস্বাস ফেলে বলে হ্যাঁ, এটাই তো চেয়েছিলাম, যা হারিয়ে গেছে বহুকাল আগেই, কারণ দৌড়ের সাথে পাল্লা দিতে গিয়ে মানুষ আজ বড়ই অসহায়, হারিয়ে গেছে নিজেকে নিজের কাছেই, আর সেদিনই  তোমার সেই সৃষ্টির জয়।
                                    
                              আজকাল বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ছেলে মেয়েরা,  বড়োদের সম্পর্কে যে সম্মোধন, সেটা আপনি থেকে তুমি তে এসে দাঁড়িয়েছে, এটাকে তুমি কি বোলবে?  একটা আপন করে নেওয়ার সদিচ্ছা, নাকি “আপনি” টা ব্যাকরণ থেকে বাদ দেওয়ার একটা তোড়জোড়। 
                             দেখো শুভ,  আমি কিন্তু এ ব্যাপারে তোমার সাথে একেবারেই একমত।  আপনি তে যেটা আছে সেটা হলো পুরোটাই বিনম্র একটা শ্রদ্ধা,   আর ওটা মুখে আনতেই মনে হয়, একজনের আশীর্বাদ আর আরেকজনের ভক্তি। যেমন ধর আমার বাবা ও জ্যাঠামশাই যখন কথা বলতেন, বাবা সমানে জ্যাঠামশাই কে আপনি সম্বোধনে কথা বলতেন, কি যে ভালো লাগতো, কথা গুলোর মধ্যে একটা শ্রদ্ধা  তো ছিলই , আনুগত্য ও কিন্তু কম ছিল না তাই না ? আজকের দিনে সেটা “তুমি” তে আসার পরে কেবলই মনে হয়, সম্পর্কটা অত্যন্ত কাছের কিন্ত কোথাও যেন একটু শ্রদ্ধা ভক্তির অবমাননা ঘটেছে, অন্তত সেটা বড়দের ক্ষেত্রে  তো বটেই ।
 তুই, তুমি,  আপনি এই তিনটে কথার উচ্চারণেই কিন্ত পরিষ্কার হওয়া যায়, একজন আরেকজনের বয়সের ফারাক কতখানি বা, কে কার সাথে কথা বলছে, সেটা না দেখে,  কানে শুনলেই, কিন্ত বেশ ঠাউর করা যায়। সবথেকে বেশি কানে লাগে যখন একজন ছাত্র বা ছাত্রী তার শিক্ষকের সাথে তুমি সম্মোধোনে কথা বলছে। এটা কি কাছের সম্পর্ক না কি অবমাননার একটা পূর্ব পরিচিতি? তার থেকেই কি সৃষ্টি পাচ্ছে  সমানেই শিক্ষকদের ঘেরাও,  তাঁদের গায়ে হাত তোলা, পারলে গালিগালাজ করা, স্কুল কলেজে পার্টি, সেখান থেকে সমস্ত দায়িত্ব নিজের হাতে নিয়ে স্কুল চালানো, আর শিক্ষকেরা পুতুলের মত তাঁদের হ্যাঁ তে হ্যাঁ মিলিয়েই চলেছেন সম্পর্ক রাখার জন্য নয়,  সম্মান বাঁচানোর জন্য। আর সমান তালে রাজনৈতিক নেতাদের উস্কানি তে দুঃসম্পর্ক গুলো আরো ফুলে ফেঁপে উঠছে দিনের পর দিন। আসলে প্রতিটা ক্ষেত্রেই একটা প্রতি হিংসার রেশ থেকেই চলেছে সমান তালে।
যেমন ধরো, একজন ডাক্তার বা রোগীর সম্পর্কটা কি আদৌ মধুর?  বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই একজন ডাক্তার ভাবেন, আমাকে সংবেদনশীল নয়,  আমাকে অনেকটাই reserve  থাকতে হবে, তা না হলে, বর্ধিত ফিস এর অঙ্কটা কোনো অর্থেই justify হবে না। তাতে রোগীর ঘাড়ে ওঠার প্রবৃত্তি অনেকটাই কম হবে। আর রোগী ভাবে দিনের পর দিন ডাক্তারবাবু তাঁর টাকার অঙ্কটা সমানেই বাড়িয়েই চলেছেন,  এখনো রোগের প্রতিকার এখনো হচ্ছে  না , বার বার সমানেই আটকে রাখছেন, আর ফিস গুনেই চলেছেন , এটা কি উনার কোনো ফন্দি নয় তো?   এটা কি একধরণের দ্বন্দ, প্রতিদ্বন্দ্বের সম্পর্ক নয়। আচ্ছা আরেকটু সহজ ভাবে বলি একজন অটো রিকশার চালক ও যাত্রী দুজন দুজনের প্রতি কি ধরণের মত পোষণ করে।  যাত্রী ভাবে, অটো থেকে নেমেই একশোটাকার নোট ঠেকিয়েই বলবো খুচরো নেই, তাই অধিকাংশ ক্ষেত্রে করেন ও , আসলে আগে ভাগে চালাকি করে খুচরো করে রাখা। আর অটোচালক ভাবেন ,কি অসভ্য রে বাবা,  যখন থেকে গাড়িতে উঠেছে চিৎকার করে সমানে কথা বলে চলেছে, এতে আমার গাড়ি চালাতে মনোসংযোগ তো বিঘ্ন ঘটছেই, এমনকি এক্সিডেন্ট ও হতে পারে। 
এই যে ভেবে নেওয়া আগের থেকেই একে অন্যের প্রতি প্রতিকূল মানসিকতার একটা পূর্বপরিকল্পিত রূপরেখা আমরা সমানেই টেনে চলেছি, এটা কি সম্পর্কের একটা নেতিবাচক দিক নয়। 
                শুভ আজ আমরা মা মেয়ে কেন এসেছি জানো, আজ যে তোমার গলার অপারেশন টা হবে?  দেখবে আবার করে সব ঠিক হয়ে যাবে । তুমি আগের মত কথা বলতে পারবে।
                 
















                         
                                               

Comments

sadamata101.blogspot.com

B-47#বিশ্বকর্মা_পূজো

সন্তোষ ঢাকি

B-71#GANESH_PRASADAM. ( গনেশজির ভোগ নিবেদন মোদক ও পূরণ পুলি)