B-38# বাস্তব_কল্পনা_REALITY

                                  বাস্তব কল্পনা 
সোহম আজ দুপুরে বাড়ি গিয়ে লাঞ্চ করে যেই না ঘুমিয়েছি,  এমন একটা অদ্ভুত দুঃসপ্ন দেখলাম জানো?  একবারে টানা  দেড়ঘন্টার, যদিও ঘুমটা হয়েছিল প্রায়  দুঘন্টার। অ্যালার্ম দেওয়ার ছিল ঠিক সাড়েচারটায় তাই ধড়পড়িয়ে উঠে পড়েছি।    জানো অটো তে আসতে আসতে  সেই গল্পটা অবাক হয়ে ভাবছিলাম !! কি দেখলাম।  সেই ভোর চারটেতে উঠেছি,রান্নাবান্না সকাল সকাল সেড়ে,  তাই আর পারছিলাম ও না,  ভাবলাম একটু গা মোড়া দি, ওমা কখন গভীর ঘুমে চলে গেছি মনেও নেই। কি হোলো,  আমি কার সাথে কথা বলে চলেছি, বাথরুম থেকে বেরিয়ে এসো? চা পকোড়া তো ঠান্ডা জল হয়ে গেলো।  নাকি আবার বসের খিঁচুনি খেয়েছো,  তাই পকোড়া আর খাবে না।                        
                               মুন, তোমার তো আবার  সেই বিদঘুটে গল্প তাই না?  বলো দেখি শুনি, আচ্ছা সারাটাক্ষন আজব জিনিস কিভাবে তোমার মাথায় ঘোরে? সরি, বলো দেখি কি আরব্য রজনী রহস্য,  নাকি শার্লক হোমস?  ডিটেক্টিভ হলে শুনতে রাজি। 
                                   ধূর সোহম  মুডটাই নষ্ট করে দিলে থাক আর শুনে লাভ নেই। তোমার তো সারাদিনের পরে ঐ এক পেনপেনানি কথা বস টার্গেট বাড়িয়েছে, এবারে achieve না করলে হোলো, বলে দিয়েছে no increment, no promotion  একেবারে demotion।  তারপর শুক্রবার আসলেই হোলো বোলবে আজ leg pulling মিটিং taj বেঙ্গলে রাতে রান্না কোরো না।  ঝাড় ও খাবো খুব, আর  মিটিং শেষে ফেরার  সময় বসের সাথে একেবারে খেয়ে দেয়ে ঢিস।
 গলা জড়িয়ে চললো জয় আর বিরু । মিটিং শেষ হলেই তোমার ফিরতে ফিরতে রাত দুটো।  বোলবে বসকে বাড়ি পর্যন্ত ছেড়ে দিয়ে এলাম, হাটতেই পারছিলো না এতো খেয়েছিলো,  আর নিজে তো সাধু পুরুষ, বললেই বোলবে ঐ একটু আর কি অফার রাখার জন্য খেতে হয়। শেষে বসের কমিটমেন্ট গাড়িতে you are the most talented wanted achiever in our company carry on my bro, তুমিও খুশ বস ও খুশ। সোহম  শোনো তোমাদের ঐ  একই আরব্য রজনীকাহিনী সে তো কবে থেকেই শুনে আসছি।  পরের দিন বসের চেম্বারে ডেকে পাঠাবে আর বলবে তোমার টার্গেট থেকে তুমি অনেক দূরে আছো, ব্যস ফুঁস, আবার পনেরো দিনের জন্য সাপে নেউলের মনোমালিন্য আর  সন্ধ্যে তে বাড়ি ফিরলেই হোলো বেড়ালের মত লেজ নাড়তে নাড়তে বোলবে কি রান্না করেছো খেতে দাও মুড ভালো নেই, ঘুম ও পেয়েছে ।
                       মুন আচ্ছা  বলো দেখি শুনি তোমার আরব্য রজনী গল্পটা।  দেখি পরের দিন রিভিউ মিটিংয়ের পর বস কে বলবো, দেখি কি বলে।                       
            ঠিক বলছো?  পরে শুনে আবার হাসাহাসি করবে না তো?   আচ্ছা শোনো তাহলে বলছি -   সবে শুয়েছি,  ঘুমটা লেগে এসেছে ও মা ! দেখি তুমি আর আমি একেবারে পগার পাড়? ছেলেমেয়েরা দিব্যি গুমোচ্ছে। 
                 মানে?       
                 আরে বাবা আমরা দুজনেই মা বাবাদের জায়গায় চলে গেছি, আর তোমার বাবা মা দিব্যি দেখছি  বলা নেই কওয়া নেই,  কি ভাবে যে ছাদে এসে নামলেন, বুঝলাম না , তারপর থেকে দিব্যি দেখছি দুজনেই গটগট করে ছাদ থেকে সিঁড়ি দিয়ে নামলেন, এসে বসলেন পাশের ঘরে খাটের উপর। বাবা যা করতেন আর কি মায়ের সাথে। 
                                    মুন একমিনিট interrupt করছি, গল্পটা তো মনে হচ্ছে শার্লক হোমসের দিকে এগোচ্ছে,  শোনো আগে থেকে বলে দিচ্ছি কোনো সল্যুশন করতে পারবো না কিন্ত?  Sorry sorry বলো আগে কি দেখলে? 

                           শোনো পরমা?  বৌমা শুয়ে পড়েছে,  বেচারি সারাটা দিন খাটাখাটনি করে বাচ্চা গুলোদের নিয়ে ঘুমোচ্ছে, তাই আর ঘুম ভাঙিয়ে লাভ নেই, সোহম কে তো দেখতেই পারছি না কোথায়?  আচ্ছা !তুমি না হয় একগ্লাস জল নিয়ে এসো? তেষ্টায় গলা শুকিয়ে যাচ্ছে, এমনিতেই ব্যাংকে যা ভিড় তার উপর life certificate জমা দেওয়ার লম্বা লাইন। আর শোনো রাস্তাঘাটে লোকজন পেলেই হোলো যেখানে বসালাম তোমায়, গিয়ে দেখি দিব্যি যথারীতি নেই সেখানে , এসে দেখি লাইনটাও গেলো চলে,  আচ্ছা বকবক করতে করতে মহিলাটির সাথে একেবারে ব্যাংকের গেট পর্যন্ত নামলে, বলি ওটা কি তোমার বাড়ি যে তাকে see off করার জন্য নেমেছিলে? 
                 শোনো রান্নাঘর খোলা আছে, পা টিপেটিপে যাও নিজে একগ্লাস গড়িয়ে খাও দেখিনি, আর হ্যাঁ,  আসার সময় আমার জন্যও এক গ্লাস জল নিয়ে আসার সময় , আমি আনতে গেলেই তো বোলবে এক কাপ চা বানিয়ে নিয়ে এসো,  আশার সময়,  প্রায় চারটে তো বাজেই। এই শোনো আমি বসলাম খাটে আর উঠবোই না কাপড়ও এখন ছাড়তে পারবো না, তা যতই আমাদের বিবাহবার্ষিকী হোক না কেন। আচ্ছা শোনো life certificate এ আমার সই করালে না যে?
            তা তোমায় পাই কোথায়? তাই জমা দিয়েই চলে এলাম, ম্যানেজার বললেন,  পরে একদিন ভিড় কমলে তোমায় নিয়ে গিয়ে সই টা করিয়ে আনতে । এমনিতেই তো কত দেরী হয়ে যাচ্ছিলো? একে তো  বিবাহবার্ষিকী বলে, তোমার আবদার মেটাতে শোভাবাজার ভজহরি মান্নাতে খেতে যেতে কত দেরী হয়ে গেলো। 
       আরে আসতে কথা বলো বৌমা ঘুমোচ্ছে যে? আর এই সব শুনলে তার চক্ষু চরকে উঠবে।  শোনো বুঝেছি তা বিবাহবার্ষিকী হোক আর যাই হোক নিঃশ্বাসের  কোনো বিশ্বাস আছে?  কাল তুমি চোখ বুজলে আমার ছেলে বৌমার সংসারে ঠাঁই হবে? তাও আবার বিনা পেনশনে , দূর দূর করে তাড়িয়ে দেবে।  এই শোনো তুমি এখনই চলো?  আমি ঐজন্যই তো কাপড় ছাড়েনি। আর শোনো চায়ের দরকার নেই, বাইরে গিয়ে খেয়ে নেব। 
             আরে আজ ছাড়ো না, আমরা না হয় কাল সকাল সকাল বের হবো, এমনিতেই তো কোনো কাজ নেই retire life আমিও আজ শরীরে পারছি না,  ঠিক আছে কথা দিলাম কাল অতি অবশ্যই বের হবো। 
            এই শোনো, তোমার মানি ব্যাগ টা কই দাও তো? ওখান থেকে এক হাজার টাকা দাও । আর হ্যাঁ একটা রিকশা ডেকে দাও নাতি নাতনীর জন্য কি জানি বলে বেশ, হ্যাঁ মনে পড়েছে ডোমিনোস থেকে একটা মাংস ওয়ালা পাউরুটি কিনে নিয়ে আসি, ওদের তো খুব পছন্দ।
            ঠিক আছে দিচ্ছি, একটু চা টা করে দাও, তাহলে টাকাটাও দিচ্ছি  আর রিকশাটাও ডেকে  দিচ্ছি।  চিতল মাছের মুইঠ্যা টা কিন্তু ভজহরি ভালোই করে কি বলো, তাই না?  আমি তো এখনো স্বাদটা ভুলতেই  পারছি না।
        হ্যাঁ তা  আর বলতে,  আচ্ছা আরো পাঁচশো টাকা দাও দেখি বৌমার জন্য একটা ব্যাগ কিনবো শোভাবাজার থেকে,  হ্যাঁ,  রিকশা চলো ঐ ষ্টার থিয়েটারের পাশে যাবো, একটু অপেক্ষা কোরো কেমন আবার তোমার সাথেই আসবো? 
        এই তো চলে এসেছি হ্যাঁ এই দোকানটা। তুমি পাশেই থাকো বুঝলে আমি এই এলাম বলে।  
        Yes please, very good evening, how can i help you? 
        আচ্ছা বুঝেছি, বাবা আমাকে  দুটো  মুরগি দেওয়া গোল বেশ বড় পাউরুটি দাও তো। আর হ্যাঁ ওর মধ্যে কি যে বলে ধূর ছাতার মাথা এই ভয়েই তো এসব দোকানে ঢুকি না, হ্যাঁ মনে পড়েছে চীজ, মাখন ভালো করে বেশি করে লাগিয়ে দিও,  আমার নাতি নাতনিরা খুব ভালো খায় । 
          মাসিমা একটু বসুন , এক্ষুনি দিচ্ছি,  আর কিছু? আচ্ছা হ্যাঁ টাকাটা ওখানে দিন আপনার দুটো মিলে হোলো 799/-, আপনি টাকাটা দিতে দিতেই আমি আপনার পিজ্জাটা প্যাক করে দিচ্ছি। 
         আচ্ছা বাবা শোনো না, আরে একটু কাছে এসো কানে কানে বলি?  কি যেন বলে একটা আইসক্রিম তার উপর গরম চকলেট না কি ঢেলে দেয় না?  বেশি না, একটা, দুশো টাকার মধ্যে হবে?  আসলে কি বলতো?  তোমার মেসোমশায়ের খুব পছন্দ,  গেলো বার বিবাহবার্ষিকীতে আমায় খাইয়েছিল? আজ আবার আসলে আমাদের বিবাহবার্ষিকী না? তাই বললাম,  আর কি?
আস্তে কথা বলো বড় লজ্জা করে আর পয়সা নেই তো তাই,  আশেপাশের লোকেরা যদি শুনে ফেলে কি লজ্জা কি লজ্জা । 
        মাসিমা, হয়ে যাবে  দেবো কি?  বাড়ি কতদূর নিতে নিতে কিন্ত গলে যাবে? দেখছি দাঁড়ান। 
         দাও তাহলে বাপু, নিয়েই যায়, আমি বসছি। 
        কি হোলো একটু ধরো আমি রিকশতে উঠি আর হ্যাঁ শোভাবাজারে বৌমার জন্য একটা ব্যাগ কিনবো।  ও টা রিকশাতে বসে বসেই হয়ে যাবে বুঝেছো, তারপর বাড়ি। চলো এই তো...... চলে এসেছি বাড়ি ।
        কি গো চা খেয়েছো? বাবা বৌমা এখনো ঘুমোচ্ছে? শোনো চটপট এটা খাও দেখিনি তোমার জন্য,  গেলো বছর আমায় খাইয়েছিলে, তাই এবছর আমি খাওয়ালাম তোমায়। আচ্ছা দাঁড়াও নাতিগুলোর জন্য যেটা এনেছি, ওটা রান্নাঘরে গিয়ে রেখে দি বৌমা ওঠার আগে। 
        বাহ্, দারুন খেতে তো, শোনো তোমার জন্যেও রেখেছি, খেয়ে তাহলে  চলো এবারে।  অনেক তো হোলো। 
         জানতাম তুমি রাখবে?  কোথায় যাবে ছাদে তো? চলো চলো। 
         আসলে কি বলতো? দেখতে এসেছিলাম ওরা কেমন আছে, আর আমার একাউন্ট এ তো  দুহাজারই ছিল, খোকার, তোমার আমার জয়েন্ট একাউন্ট ছিল তো, তাই ব্যালান্স maintain করতে হবে, তা না হলে খোকা যে বিপদে পড়বে তাই পাঁচশো রেখে দিলাম। চলো তুমি কোনদিকে যাবে?  তুমি যেদিকে যাবে আমিও সেই দিকেই যাবো পরমা ।
          আমি তো উত্তরে যাবো, যেদিকে কৈলাস আছে, আমি আবার শিব ভক্ত কিনা তাই ওটাই আমার যাত্রাপথ,  তুমি আমার সাথে যেও না,  কেন বলতো?  এমনিতেই তোমার আমার তো কোনোদিন সাংসারিক জীবনে খুব একটা মিল ছিল না, ঐ মাঝেসাঝে,  তুমি এককাজ করো তুমি দক্ষিণে যাও, পরের জন্মে কুচকুচে কালো হয়ে এসো?  আমি তোমায় দেখে ঠিক চিনতে পারবো, কেন বলতো পেনশনের  সই টা তো করাই হোলো না, শুধুই nominee হয়েই থাকলাম, যাক পরের জন্মে ওটা আগেভাগে করে রেখো কিন্ত। 
          কি গো যাওয়ার সময়ও অভিমান, আমার উপর?     
          আরে বোকা সংসার জীবনটাই তো তাই, প্রথম জীবনে শুধুই তুমি আমি, আমি তুমি,তারপর খটাখটি, আবার ভালোবাসা আর শেষ বয়সে দোষারোপ আর মান অভিমানের পালা,তবে বেশ ভালোই লাগলো বলো বিবাহবার্ষিকীর দিন এসে,  দেখে তো গেলাম ওরা কেমন আছে। 
          ঠিক বলেছো পরমা ? তবে হ্যাঁ খোকার সাথে দেখা হোলো না, ওটাই আফসোস রয়ে গেলো দেখা হলে ঠিক বলতাম -খোকা পারলে তোর মা আর আমার পিন্ডিটা গয়াতে গিয়ে দিয়ে আসিস। তা না হলে মুক্তি যে পাবো না, আবার ও তো আসতে হবে  তাই না?
           খোকাকে বিরক্ত কোরো না আর পিন্ডি চটকে লাভ নেই। 

কি গো কোথায় হারিয়ে গেলে?  কিছু সমাধান করতে পারলে আমার স্বপ্নটার। 
হ্যাঁ পেরেছি,   কালই অফিসে গিয়ে বসকে গিয়ে বলি তোমার স্বপ্নটা ,  আর বসের মুড বুঝে ছুটির দরখাস্তটা দিয়ে দেবো।   মা বাবার পিন্ডি টা দেওয়াই হয়নি, গয়াতে গিয়ে  দিয়ে আসবো।  
            এই শোনো আমার স্বপ্নটা  আরব্য রজনী হোক, আর শার্লক হোমস হোক যায় হোক না কেন, রোজ বাজার থেকে এসে, কাঁড়ি কাঁড়ি বাজার করে ফেলে দিয়েই তো খালাস। কোনোদিন ভেবেছো তোমাদের মুখের টার্গেট টা এই মেয়েরাই কি ভাবে fulfill করে,  তাও আবার তোমাদের সময় টাকে মাথায় রেখে। আমাদের তো কই কোনো মাথা থাকে না আমাদের টার্গেট  বেঁধে দেওয়ার জন্য। আসলে তোমরা জীবনে মাত্র ঐ  একটা টার্গেট নিয়েই চলো,  আর মেয়েরা  এতো টার্গেট নিয়ে চলে যে, ওদের কাছে টার্গেট ও ঘেঁষতে ভয় পায়। 
         




Comments

sadamata101.blogspot.com

B-47#বিশ্বকর্মা_পূজো

সন্তোষ ঢাকি

B-71#GANESH_PRASADAM. ( গনেশজির ভোগ নিবেদন মোদক ও পূরণ পুলি)