B-16# INSUFFICIENT FUND (অর্থ - বিভ্রাট). (শুভ সুমেধার তৃতীয় ভাগ)
অর্থ -বিভ্রাট
শুভ কেমন আছো? একি কাঁদছো কেন? দুচোখ দিয়ে তো সমানে জল গড়িয়েই যাচ্ছে, কি ব্যাথার জন্য কাঁদছো নাকি আসতে দেরি হলো বলে কাঁদছো? আরে বাবা visiting hour না হলে কি করে আসি শুভ? একে তো emergency তিনজনের বেশি allow করে না। আচ্ছা বুঝেছি, অনেক রাগ অভিমান লিখে রেখেছো তাই না? দেখি দেখি কি লিখে রেখেছো ডায়েরীতে, এতো হতাশ হয়ে পড়ছো কেন শুভ? আরে বাবা improvement তো হচ্ছে, আগের থেকে তো ভালো আছো। ডাক্তার নিজেই বলেছেন heart এর অবস্থা আগের থেকে অনেক improve করেছে, তবে হ্যাঁ সবকিছু ঠিক থাকলে সামনের সপ্তাহে বোধহয় vocal chord এর একটা minor অপারেশন করবেন, আশাকরি তাতেই আবার করে তুমি কথা বলতে পারবে। আচ্ছা দেখি সারাদিন একা একা বেডে শুয়ে শুয়ে কি কি লিখে গেছো সমানে, বাবা এ তো অনেক কথা লিখেছো দেখছি।
সুমি, আমি কি আবার করে কথা বলতে পারবো? আচ্ছা কোনো কিছু লুকিয়েl না, সারাটা শরীর এমনিতেই ব্যাথা, কত যে শরীর টাই প্লাস্টার করেছে, একটা জায়গাও বাদ দেয়নি মাথাটুকু আর ডান হাতটা বাদে, আচ্ছা fracture টা কি সারাটা শরীর জুড়ে হয়েছে সুমি?। হ্যাঁ আর শেষ দুটো কথা লিখছি সুমি, ডাক্তার কি বলেছেন আমি ফিরতে পারবো ? আমার এখনো পর্যন্ত খরচ কত গেলো? প্রায় বারোদিন তো হলো, কতদিন আরো থাকতে হবে? সুমি বাদবাকি খরচ কোথা থেকে জোগাড় হবে? একটুকুও লুকিয়েl না সুমি, সত্যিটা বোলো আমায়।
শুভ দেখো, আগেই বলেছি সামনের সপ্তাহেই তোমার গলার অপারেশন হবে। তোমার পুরো শরীরটায় fracture, শুভ কোনো জায়গাতেই প্রায় বাদ নেই। আর টাকাপয়সা সে আর ভেবে কি করবে, এখনো পর্যন্ত পনেরো চলে গেছে, মেডিক্লেম বারো লাখ দিয়েছে বাদ বাকি আমি দিয়েছি। ডাক্তার বলছেন আরো হয়তো দিন কুড়ি থাকতে হতে পারে তাতে হয়তো আরো সাত, আট মতো লাগবে, দেখা যাক ন কাকিমা বলেছেন চিন্তা করিস না তোর কাকু তোর জন্য পনেরো ফিক্সড করে রেখেছে, প্রয়োজনে তা দেবেন বলেছেন। শুনলে তো সবই, এবার শান্তি তো, আবার কি লিখছো শুভ?
ভাবতেই পারছি না, এতগুলো টাকা ওনারা তোমায় দেবেন বলেছেন সুমি, যাক একটু আশ্বাস পাওয়া গেলো। ন কাকুকে তো দেখছি সমানে ভেন্টিলেশন এ আছেন সেই কবে থেকেই, জানো রোজ সকালে আয়া মাসি আমার জন্য ফুলের bouquet নিয়ে এসে আমার মাথার কাছে রাখে, আমি ইশারায় বলে দি ন কাকুর সামনা সামনি রাখতে, জানো সেটা ন কাকু বোধহয় বোঝেন হয়তো গন্ধে, তাই মিচকি হাসেন, আর কি যেন বলতে চান সেটা বেশ ভালো করেই বুঝি।
শুভ, আয়া মাসি কে ন কাকিমাই তো বলেছেন , তোমাদের দুজনকেই দিতে, সে কি কাকুকে দেয় না শুভ? জানো রোজ কাকিমা অগ্রিম ওনাকে আলাদা করে পয়সা দেন কেনার জন্য। আচ্ছা শুভ একটা কথা বলো তো আফসোস হচ্ছে? তোমায় খুব চিন্তিত আর বিষন্ন দেখাচ্ছে, নিজেকে খুব দোষী ভাবছো তাই না? মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বা নাতে সম্মতি জানিও। মানে তোমায় ন্যাড়া ছাদে ঘুড়ি ওড়াতে না করা সত্ত্বেও তুমি ওড়াতে গিয়েছিলে তাই তো? হ্যাঁ বুঝেছি শুভ। আরে বাবা এতে আফসোসের কিছুই নেই শুভ এটা ভবিতব্য জানো। এতটা বছর কেটে গেছে আমাদের বিয়ে হয়েছে কৈ কখনো তো তুমি যাও নি ঐ পাইকপাড়াতে ঘুড়ি ওড়াতে, সেই সখ জাগলো একেবারে বিশ বছর পরে আমাদের বিবাহবার্ষিকীর দিনেই । আচ্ছা ভাবো ঐ দিনেই তো হতে পারতো, কই সেটা তো হয়নি শুভ বরং আমরা সারাটাদিন কত আনন্দ করলাম ঐ ঘুড়ি নিয়ে, জানো সব কিছুই যেন তোলা থাকে, একেবারে পূর্বপরিকল্পিত তাই তার রেশ টেনে নিয়ে এলে বাড়িতে।
তা বলে তোমায় দোষ দিচ্ছি না শুভ, ঘুড়িটা ছিল একটা হেতু ন কাকুর বিপদের খবর তো সেই সকালে এসেছিলো, সেটা তুমি উপেক্ষা করেও ঘুড়ি ওড়াতে গেলে। আসলে যা বিধান লিখে রাখেন উপরওয়ালা তার এক চুল এদিক ওদিক হয় না এ যেন প্রত্যেকটা মানুষের জীবনের একটা ক্যাসেট আগের থেকেই করা থাকে, আর আমরা শুধু সমানে সেইমতো ঘুরতে থাকি।
আচ্ছা শুভ আমরা তো দেখি সারাক্ষন আমাদের পারিপার্শিক পরিস্থিতি অনেকের ক্ষেত্রে স্বামী বা স্ত্রীর মধ্যে একজন অকালেই চলে যান, অথচ প্রচুর অর্থের ভান্ডার, এই দুঃখ আর প্রাচুর্য্যর মধ্যে তাদের সন্তান বড়ো হয়। আবার অনেকের ক্ষেত্রে অভাবই অভাব তার মধ্যে স্বামী বা স্ত্রীর দুরারোগ্য ব্যাধি, তাদের অর্থাভাবে কেউ একজন কে চলে যেতে হয় , তাঁদেরও দিন ফেরে শুভ, কে ফেরায়? হ্যাঁ তাঁদের সন্তান। আচ্ছা বেশি দূর যেতে হবে সামান্য ন কাকিমাকেই দেখো নি:সন্তান , অথচ প্রচুর টাকা। ন কাকিমা, ন কাকু দুজনেই চাকরি করতেন, তাও আবার সেন্ট্রাল গভর্নমেন্ট। প্রচুর অর্থ অথচ ভোগ করার লোকই নেই। এই তো কাল ইমার্জেন্সিতে বসে কত কথা বললেন ন কাকুর সম্পর্কে, উনি তো ধরেই নিয়েছেন যে ন কাকু আর খুব সামান্য দিনের জন্য আছেন। উল্টো আমায় সমানে বলে চলেছেন সুমেধা আমাদের দুজনের তো অনেক দিন একসাথে পথ চলা হোলো কিন্তু তোদের তো আরো অন্তত পনেরো টা বছর চলতে হবে।
আমার জানিস তোর ন কাকুর থেকেও শুভ কে নিয়ে চিন্তা হয়, আমি জানি ভবিতব্য টা কি, তাই আজকাল ইমার্জেন্সি তে ঢুকতেও ইচ্ছে করে না। কি যাবো? যে মানুষটা সারাক্ষন হেসেখেলে বেড়াতো, সে এখন ভেন্টিলেশনে, শুধু নিথর দেহটা পড়ে আছে আর তো কোনো সাড়া নেই। তাই এখন ওর সাথে কাটানো ভালো সময়গুলো সমানে মনে করি, একান্তে। আসলে শুভ, ন কাকিমা এতো মনের জোর কোথা থেকে পান জানো, সেটা হোলো উনি দীর্ঘদিন spastic সোসাইটির সাথে যুক্ত। বিকলাঙ্গ শিশুদের নিয়ে সারাক্ষন তার সময় কেটেছে এতকাল।
শুভ আমাদের কিন্ত এর মধ্যে একটাও নয়। জোগাড় তো হয়ে যাচ্ছে, আচ্ছা ধরো যেটা নিয়ে তুমি ভাবছো- মানে টাকা পয়সা, আরে বাবা আমাদের সন্তানও তো আছে, ও তো কিছু ভাগ্য নিয়ে এই পৃথিবীতে এসেছে নাকি? জানো এতক্ষন একটা কথা বলতে চাইছিলাম না শুভ, তাও বলি তুমি ওখান থেকে পড়ে যদি পুরোটাই..... .,.... তাহলে তো আমরা চিকিৎসার ও সুযোগ পেতাম না শুভ । ধন্যবাদ দাও সেই ঈশ্বর কে যিনি তোমার হয়তো কোনো বাজে কর্মফল কে এভাবে দোষমুক্ত করলেন, যেটা হয়তো তোমার অগোচরে কোনো না কোনো ভাবে ভুল হয়ে গেছে। যা হয়তো মনেও নেই তোমার, যদি মনে আসে তাহলে কাল থেকে না হয় লিখে রেখো, দেখবে সময় ও কাটবে, মনে জোর ও পাবে আর কোনো বাজে চিন্তা মাথায় আসবে না। যাক ভিসিটিং hour শেষ, আসি শুভ, ভালো থেকো। কাল আবার বিকেলে আসছি আর হ্যাঁ পারলে ভালো কিছু লেখার চেষ্টা কোরো, আর সেটাও না আসলে, আমি বলে যাচ্ছি ডাক্তারকে এমনিতেই বলেছিলেন তোমায় শিফট করবেন কেবিনে। এখন তো আর কোনো অপারেশন এর বালাই নেই যদি কাল সকালে কেবিনে দেয় সেখানে স্মার্ট টিভি আছে সেটা না হয় দেখো, এমনিতেই তোমার youtube দেখার বরাবরের অভ্যেস ছিল। আমি আসি কাল বিকেলে আবার দেখা হচ্ছে।
পরের দিন বিকেলে
শুভ, কি ব্যাপার, আজ তোমায় বেশ ফ্রেশ লাগছে দেখে, যাক কেবিনে দিয়েছে ভালোই হোলো। বাবা আজও তো আরো কতকিছু লিখেছো অনেক পাতা ধরে কি গল্প লিখেছো নাকি সারাদিন ধরে, দেখি দেখি পড়ে তো দেখি, আচ্ছা জোরে জোরে পড়ছি তাহলে তুমিও শুনতে পারবে কি লিখেছো। যদি বানান ভুল থাকে সেটা না হয় শুধরে দেবো।
“জানো সুমেধা, (বাবা আজ আর সুমি নয়, একেবারে রোমান্টিক মুডে আচ্ছা আচ্ছা দেখি আগে কি লিখেছো ) আজ youtube এ অরুনিমা সিং নামে একটি মেয়ের আত্মজীবনী দেখছিলাম,
মেয়েটিকে কিছু দুষ্কৃতী রাতে ট্রেন থেকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়, অপর প্রান্তে আসা আরেকটা ট্রেনে তার দুটো পাই কেটে যায়, এভাবে সারারাত তার পায়ের উপর প্রায় কুড়িখানা ট্রেন চলে যায়, পরের দিন সকালে সে সংকল্প করে ঈশ্বর যদি তাকে এতো প্রতিকূলতার মধ্যেও বাঁচিয়ে রাখেন, নিশ্চয় বিশ্বাস ও আশা র বীজ ও তার মধ্যে বপন করেন। জানো সুমেধা তোমার গতকালের কথার সাথে আমি মেল খুঁজে পায় অরুনিমার কথায় । যাই হোক সে মনে মনে দৃঢ সংকল্প করে হিমালয় জয়ের , আবার সেটা পূরণ ও হয় তার ক্ষেত্রে। দ্বিতীয়জন হোলো Nick Vujicic,
একজন Australian যে জন্ম থেকেই বিকলাঙ্গ যার দুটো হাত ও নেই আবার কোনো পা ও নেই। আমি তো সারাদিন ধরে ওর অনেক গুলো সিরিজ দেখে ফেললাম, আসলে nick হোলো একজন motivational speaker, ওর দুটো কথা জানো আমায় একেবারে নাড়িয়ে দিয়েছে। প্রথমত Faith, fully attention in the heart, আর দ্বিতীয় টা হোলো Hope, Highly Opportunity Possibility with Emotion, সুমেধা আমি একান্তে যখন আরো গভীরে চিন্তা করলাম, আমায় যেন আরো ভাবিয়ে তুললো, বিশ্বাস করো আমার সেদিনের নীল আকাশে ওড়ানো ঘুড়ি টা গোত্তা খেয়ে এখন সাময়িক ভাবে হাসপাতালে, ঠিক মতো কাহ্নি দিলে, আমি নিজেও জানি, সেটা আর কখনো বেসামাল হবে না। যেখানে আশা আর ভরসা আছে আবার করে সে ঘুড়ি উড়বে সুমেধা, আর কোনোদিন ভোকাট্টা হবে না “।
শুভ ঠিকই বলেছো দেখবে এরপর জীবনের ঘুড়িটা আর কোনোদিন টাল মাটাল হবে না। এই এবার আবার আমার visiting hour শেষ হয়ে গেলো যে শুভ, এবার আবার করে আমাদের বাস্তবে ফিরতে হবে শুভ। আচ্ছা যাওয়ার আগে তোমাকে আরো একটা কারেন্ট দিয়ে যায়, শোনো শসা টা ওই কারেন্ট দিয়ে খেয়ে নাও দেখিনি চটকরে। আরে বাবা ভয় পেলে? কারেন্ট নুন, মনে নেই?
তুমিই তো কতবার বলেছো ছোটবেলায় স্কুল গেটের বাইরে চার আনার ওই নুন শুধু জিভে ঠেকালেই ব্যস ,
সারাটা মুখ, দাঁত কেমন টোকে যেত, আর এক অদ্ভুত মুখের বিকৃতি হত, কই দেখি এদিকে তাকাও? আরেকবার তাকাও প্লিস? এই তো তোমার আমার সেলফি নিলাম। শুভ এই ছবিটাও জানো তোমার আমার বাঁধিয়ে রাখার মতো হবে।
Comments
Post a Comment
always