B-14 #ACCIDENT ( এক্সিডেন্ট). শুভ সুমেধার দ্বিতীয় ভাগ

অ্যাক্সিডেন্ট 
 শুভ, এই শুভ,  বাবা কথাটা কানেই যাচ্ছে না তোমার দেখছি, একমনে সমানে ফেইসবুক আর হোয়াটস্যাপ করে চলেছো,  চা টা খাবে তো নাকি, ঠান্ডা হয়ে গেলো তো?  কি হোলো,  ধূর এতই মশগুল, বুঝেছি তোমার বিবাহবার্ষিকী, ঘুড়ি ওড়ানো, ওগুলো তোমার প্রয়োজনে আমায় মন ভোলানোর জন্য, নেকামি আর দেখিয়ো না,  কাল তো যা আবেগ দেখলাম, ভাবলাম যাক অন্তত কুড়িটা বছর পর  আমায় বুঝলে, আমায় সময় দিলে শুভ। 
        কি হয়েছে বলো বলো, sorry ,  কি যা তা বকে যাচ্ছ সুমেধা,  বহুদিন পর ফেসবুকে একজন ছোটবেলার বন্ধু কে খুঁজে পেলাম কাল,  আমায় friend request পাঠিয়েছিল, তাই একটু chat করছিলাম আর  কি।
                                                   আরে আমার ডান চোখটা সমানে ধূর , আমার  মোবাইলটা আবার বাজছে, দাঁড়াও ধরি গিয়ে এসে বলছি। হ্যালো ন কাকিমা, বলো কি হয়েছে, এখান থেকে এখানে ফোন করলে কেন? আসতেই পারতে, আরে কাঁদছো কেন?  সকাল সকাল কি হয়েছে বলবে তো নাকি, হ্যাঁ কাকুর কি হয়েছে বললে,  আরে বল না শুনতে পারছি না একটু জোরে বল হ্যালো,    কি?  হাত মুখ বেঁকে গেছে, কি করে হলো, দাঁড়াও দাঁড়াও আসছি রাখো ফোন টা।  আর শোনো আমি ILS এ ফোন করছি, ওরা এক্ষুনি  অ্যাম্বুলেন্স পাঠিয়ে দেবে।  একেবারে সোজা নাগেরবাজার আসো, আমি এপাশ থেকে যাচ্ছি,  ওখানে আমার ডাক্তার বন্ধু আছে, বলে দিচ্ছি কেমন, আর শোনো আমি স্ক্যুটি নিয়ে পৌঁছে যাচ্ছি, বাকি সব লেখালিখির কাজ করে রাখছি,  ন মা আমারও যে হাতপা কাঁপছে খবর টা পেয়ে, আরে আমরা আছি তো নাকি? রাখো। শুভ শিগগির ফোন করো ILS এ অ্যাম্বুলেন্স পাঠাতে বল, ন কাকিমার Address লিখিয়ো,  আর হ্যাঁ Dr. Sribastav কে ফোন করে বলো emergency তে বেড খালি রাখতে, শোনো আগে ফোন টা তো করো আমি সব পরে  বলছি। আমি ready হয়ে আসছি।
                                                  শুনলাম তো সবই,  ইসস ওনাদের ছেলেপুলেও নেই, তুমিই তো তাদের একমাত্র অন্ধের যষ্ঠি সুমি,  তুমি যাও।  জানোই তো আমার আবার হাসপাতালের নাম শুনলেই ভয় হয়, কেমন থাকেন আমায় জানিয়ো, আমি না হয় দুপুরে আসছি। এদিক টাও তো দেখতে হবে।  আচ্ছা হ্যাঁ ফোন টা করি,  কি বলবো একটা বেড খালি রাখতে নয়ন দত্তের নামে তাই তো, আর ambulance টা পাঠাতে? 
তোমায় সকাল থেকে কতবার বললাম একটু আসো আমার ডান চোখটাতে কিছু পড়লো কিনা দেখো? , ঘুম থেকে ওঠার পর থেকে তো কেঁপেই যাচ্ছে সমানে,  তখনই বুঝেছি একটা খারাপ  কিছু হতে চলেছে । 
                             উফফ তোমরা মেয়েরা সমানে একটার পর একটা কুসংস্কার বার করতে থাকো তাই না?   আর যদি লেগে গেলো তাহলে তো কথাই নেই সুমি।  আচ্ছা ছাড়ো আর কথা বাড়িয়ে লাভ নেই,  তুমি আসো।
                            মা, কি হয়েছে যা শুনলাম সত্যিই?  বিছানা থেকে সবই তো শুয়ে শুয়ে শুনছিলাম, আসলে কাল রাতে ঘুমোতে একটু দেরি হয়েছে ভাবলাম খবর টা দেবো, আচ্ছা তুমি আসো, বিকেলে না হয় বলবো। 
                            এই বল কি হয়েছে, শুনেই যাই।  ভালো কিছু হয়নি তাই তো, জানতাম আমার চোখ কাঁপতেই বুঝেছি,  কি রে আমি তো রেডি, দেরি হয়ে যাচ্ছে,  বল না কি হয়েছে? 
         মা যত সব ডিসগাস্টিং, তোমার এই সেকেলে চিন্তাভাবনা গুলো একটু ছাড়বে,  এখনো কি কাঁপছে মা তোমার ডান চোখটা?  আচ্ছা ছাড়ো বিকেলে সময় নিয়ে বলবো। 
                           কি হলো সুমি,  যাক তোমার বিশ্বাস নিয়ে তুমি থাকো, আমিও আসছি তবে হ্যাঁ একটু ঘুড়িটা আজ ওড়াবো ভেবেছি,  এমনিতেই গতকাল আকাশে বেশ কিছু ঘুড়ি উড়ছিল দেখেছি,  আজ তাই ভাবছি !  ন কাকুর খবর টা পৌঁছেই আমায় ফোন কোরো,  তারপর না হয় আমি ছাদে যাবো । 
                           এই শোনো এমনিতেই আমি থাকবো না, তারমধ্যে আবার ন্যাড়া ছাদ,  তুমি বাপু ছাদে টাদে যেও না, না শুনলে যা ইচ্ছে কোরো আর কি বলি। 
                           ব্যস, হলো আবার মায়ের একই ডায়ালগ, মা দুগ্গা দুগ্গা করো, বেশি চিন্তা করতে নেই, জানি তুমি সংসারটাকে আগলে রেখেছো, তাবলে তুমি রবীন্দ্রনাথের মিনির মা হয়ে যেও না,  চলো bye আসো। বাবা ভিতরে চলো তোমায় দুধ গরম করে দিচ্ছি, তুমি আর  আমি আজ না হয় দুধ মুড়ি খেয়ে নি কেমন?    তারপরে না হয় আমি স্নানটা সেরে ফেলবো। 
                        বাবা তুই একটু গ্যারেজের চাবিটা দে আমি গাড়িটা বার করে রাখি, আমাদের ও তো হাসপাতালে যেতে হবে ন কাকুকে দেখতে, আর হ্যাঁ সেদিন, তুই তো জানিস না যাসনি বলে,  আমার গাড়িতে লাটাই আর ঘুড়ি আছে ওগুলো নিয়ে ছাদে যাচ্ছি ,  এই কার ফোন রে ধরতো, আচ্ছা আমায় দে?  হ্যাঁ বোলো,  কেমন আছেন?  উনারা পৌঁছে গেছেন তো ?  কেমন দেখছো, ডাক্তার কি বললেন?  আচ্ছা আমি দুপুরের মধ্যেই আসছি। 
                        না মানে,  এখনো কিছুই বোঝা যাচ্ছে না, তবে হ্যাঁ মুখটা একেবারেই বেঁকে গেছে, ICU তে নিয়ে গেছে,  তুমি দুপুরেই এস, রাখি,  ডাক্তার ডাকছেন।

 বাবা টেবিলে এসো খেতে দিয়েছি, আচ্ছা দে আমি ছাদে ওগুলো রেখে দিয়ে আসি।

 ঠিক আছে, কি গো অমনি ঘুড়ি ওড়াতে শুরু করলে নাকি ?  
                      আরে আসছি রে বাবা, তুই টেবিলে রাখ খাবার টা খেতে শুরু কর আমি এই এলাম বলে।  দেখ একটা পেটকাটি ঘুড়ি আসছে আমায় দেখে,  একটু  কেটে নি তারপর আসছি বাবা, মাঞ্জা টা যা আছে না আজ অনেককে ভোকাট্টা করতে পারবো। 
                        বাবা কি হলো, কিসের আওয়াজ এতো জোড়ে?  পড়ে গেলে নাকি? সাড়া দিচ্ছ না কেন?  ( বাইরে কারা চীৎকার করছে, দেখি তো বাইরে গিয়ে )
                        ধর ধর শুভদা কে,  এ বাবা একেবারে ছাদ থেকে ড্রেনে, ইসস সব শেষ হয়ে গেলো বুঝি, মলি মলি দেখ তোর বাবার কি হয়েছে পড়ে গেছে তো ?
                        বাবা,  কি গো কথা বলছো না কেন?  ইসস মাথা, পীঠ, পা সবজায়গায় থেকেই তো রক্ত বেরোচ্ছে।  বাবা কতবার বললাম শুনলে না। 
                          মলি কোথায় নিয়ে যাওয়া যায় বল? তোর মা কোথায় গেলো রে? 
                          কাকু মা তো বাড়িতে নেই, সেই সকালে গেছে ILS  ন কাকুদাদুর স্ট্রোক হয়েছে,  সকাল থেকেই তো ওখানে। 
                              ঠিক আছে চল এক্ষুনি,  ILS এই না  হয় নিয়ে যাই, মাকে কিছু বলিস না, ফোন করতে হবে না। যা হবে ওখানে গিয়েই দেখা যাবে। 
                             বাবা, খুব  কষ্ট হচ্ছে, কথা বলো , বাবা ঠিক হয়ে যাবে, কিছু বলবে? তোমার দুচোখ দিয়ে সমানে জল গড়াচ্ছে কেন?  দাঁড়াও মুছে দিই।  বাবা বাজে চিন্তা কোরো না?  এই তো ILS ঢুকছে, ওই দেখো কাকু, মা দাঁড়িয়ে আছে?  গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছে।  মা, মা, মাগো শিগগির আসো বাবার...... ?
                                             কে কে আমার মলি না? ( বলতে বলতে মায়ের হাতের চায়ের ভাঁড়  মুহূর্তে মাটিতে পড়ে যায় – ছুটে আসেন গাড়ির দিকে )।  কি হলো মলি , এ তো দেখছি তোর বাবা, বল কি ভাবে হলো, আরে বলবি তো নাকি  ?  আমার হাতপা যে কাঁপছে মলি , আমায় যে শক্ত হতে হবে, কি গো কথা বল,  কথা বলছো না কেন?  ইমার্জেন্সি তে লাইনে দাঁড়া মলি, আমি রেজিস্টার এ fill up  আর এডমিশন টা করি ততক্ষনে।  কি রে নিয়ে গেলো তোর বাবাকে ICU তে যা না সঙ্গে, আমি এখানে বসছি। আমি আর কিছুই চিন্তা করতে পারছি না মলি,  সব এলোমেলো হয়ে গেলো রে। 
                                        হ্যাঁ, ICU তে ডাক্তার দেখছে , ঢুকতে দিচ্ছে না, বললো ইমার্জেন্সি তে বসুন, প্রয়োজনে announce করবে মাইকে। 
                                       বাবা,  কতবার বলেছি বিস্বাসই করিস না মাকে, ভাব কিছু যদি হয় তোর বাবার কি করে থাকবো আমরা দুজনে ।  কাল এই সময় তোর বাবা কত আনন্দ করেছিলো ঘুড়ি নিয়ে পাইক পাড়াতে গিয়ে, আজ সেই মানুষটাই একই ঘুড়ি নিয়ে ইমার্জেন্সিতে। ইসস আজ সকাল সকাল মানুষটাকে কত বাজে কথাই না  বললাম, চা খেতে খেতে, কি করে বুঝি রে মলি এভাবে পাশা পাল্টে যাবে, নিজেই বললো আমি দুপুরে এসে ন কাকু কে দেখে যাবো, সে এভাবে ILS  এ আসবে এতটা কে ভাবতে পারে বল। আসলে ঈশ্বর বোধহয় খুব আনন্দ দেন কোনো হারিয়ে যাওয়া জিনিস নিয়ে,  আবার তাতেই দুঃখ দেন একইভাবে। 
                                     মা এখন এসব বলার সময় নয়, আমি যাই ICU থেকে ঘুরে আসি। খবরটা নিয়ে আসি কি বলছেন ডাক্তার। 

ANNOUNCEMENT :- your attention please :- শুভজিৎ চ্যাটার্জীর বাড়ির লোক যদি কেউ  থাকেন immediately ICU তে যোগাযোগ করুন। 
Your attention please :- নয়ন দত্তের বাড়ির লোক যদি কেউ  থাকেন immediately ICU তে যোগাযোগ করুন। 
                                          কার হয়ে ICU তে যাবো ন কাকিমা তুমিই বল?   , ন কাকু,  না শুভর জন্য,  দুজনেই serious কি অদ্ভুত একই সাথে দুজনের নামই announce করছে সমানে । আর পারছি না হে ঈশ্বর।  জানিনা কি শুনব আমি আজ,  পুরোপুরিই শেষ। 
                                       আসুন  শুভজিৎ বাবু কে হন আপনার?  কি করে হলো? 
                                        আমার স্বামী ! ঘুড়ি ওড়াতে গিয়ে ছাদ থেকে... 
দেখুন আমরা যথা সাধ্য চেষ্টা করছি,  উনার vocal chord injured highly affected তাই কথা বলা বন্ধ হয়ে গেছে , কিন্তু তার ও বেশি heart ভালো রকমের injured। নিঃস্বাস নিতেও বেশ কষ্ট হচ্ছে, brain এর injury  কতটা তা CT SCAN  না হলে বোঝা যাবে না। আর পুরো শরীরে fracture probably spinal chord,  ulna পুরোপুরি dislocation, femur এ ভালোই চোট, এখন যা অবস্থা আমরা heart নিয়ে বেশি চিন্তিত ওটা আগে যদি একটু stability দিতে পারি, বাকিটা পরে দেখা যাবে। 
                           আর   হ্যাঁ শুনেছি নয়ন দত্ত ও আপনার কাকু হন তাই তো নাকি?  একই দিনে একই বাড়িতে strange এরকমটা এই প্রথমে দেখলাম?  তবে হ্যাঁ উনার আবার একটা স্ট্রোক হয়ে গেছে,  ventilation দেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় ও নেই  দেখা যাক কি করতে পারি, আপনি emergency তে থাকুন প্রয়োজনে ফোন করবো। 
সুমেধা হসপিটালে লাগোয়া মন্দিরে গিয়ে সন্ধ্যা আরতি দেখে আর একমনে ইষ্টদেবতাকে বলে হে প্রভু, বুঝিনা, কিছুই বুঝতে পারছি না তাই আমি তোমার কাছে নিজেকে উৎসর্গ করলাম, তোমার বিধান আমি মেনে নিয়েছি, এবার উপায় তুমিই বল কি করি। এখুনি সব নিভিয়ে দিও না,  আরো যে বেশ কিছু পথ চলতে বাকি শুভর। কিছু ইচ্ছে আজও যে অধরা রয়ে আছে ওর।  হে ঈশ্বর ওগুলো পূরণ কোরো।  ন কাকু তো কিছুই পেলো না অন্তত যাওয়াটা....। 
                            মলি মায়ের হাত ধরে -  মা সত্যিই তোমার মূল্যটা মাঝে মাঝে বুঝি না,  তাই তোমার ঐরকম পরিস্থিতে হেসে ছিলাম, যদি বুঝতাম তাহলে হয়তো বাবার এই অবস্থা আজ দেখতে হত না। না মা আর কখনো তোমার বিশ্বাসকে ছোটো করবো না, তোমার বিশ্বাস নিয়ে তুমি থেকো,  তা না হলে সেটাকে অসম্মান করা হবে।  মা, সন্ধ্যা আরতি শেষ হয়েছে তুমি বসো আমি না হয় একটু আশীর্বাদের ফুল আর চরণামৃত  নিয়ে আসি। ফুলটা দেখি বাবার আর নকাকু দাদুর
কপালে ছুঁয়ে দিয়ে আসি।


Comments

sadamata101.blogspot.com

B-47#বিশ্বকর্মা_পূজো

সন্তোষ ঢাকি

B-71#GANESH_PRASADAM. ( গনেশজির ভোগ নিবেদন মোদক ও পূরণ পুলি)