B-25#ABROAD( বিদেশ). (শুভ সুমেধার অষ্টম পর্ব)

বিদেশ 
মা কি গো তোমরা কোথায় ,( ঘুম থেকে উঠে কাউকে না পেয়ে অবাক লাগছে) আরে ওঠ তো বাবা!! কত রাত পর্যন্ত গোছগাছ করেছো তোমরা? আচ্ছা কি আশ্চর্য আমায় ডাকতে পারতে? এভাবে মাটিতেই শুয়ে পড়েছো, কত গুলো ব্যাগেজ হয়ে গেলো বল তো? এত দেখছি প্রায় নয় খানা।
                       মলি জানিস তোর বাবা প্রত্যেকটা লাগেজ ওজন করে করে প্যাক করেছে। বলছিলো ইন্টারন্যাশনাল ফ্লাইটে নাকি পনেরো কেজির উপর হলেই বাতিল করে দেয়, তাই ওজন মেশিন দিয়ে সবকটা ওজন করে করে রেখেছে। আর নিজের সাথে সাত কেজি রাখতে পারে। কি গো ওঠো অনেক তো বেলা হয়ে গেলো? আমি তো না পেরে রাত প্রায় দুটোর সময় লাগেজ গুলোকেই বালিশ বানিয়ে শুয়ে পড়েছি, খেয়ালই নেই, কখন ঘুম চলে এসেছে। তা তুমি কখন ঘুমোলে শুনি?
          ঐ তখন প্রায় পাঁচটা হবে, বাইরে কাক ডাকছিলো, আমি ওগুলো করে, একটু লিকার চা খেয়ে, তারপর শুয়েছি। এখনো তো লেবেলিং হয় নি কার ভিতরে কি আছে, শুধুই নাম্বার ট্যাগ লাগিয়ে রেখেছি। আচ্ছা একটু চা দাও দেখিনি,খেয়ে বাজার থেকে ঘুরে আসি, মলি তুই ওগুলোতে হাত দিস না বাবা,আমি আসি তারপর সব ঠিক করে দেবো ক্ষণ।আর শোনো, আজ একটু কাতলা মাছ নিয়ে আসি, কাতলা মাছের মাথা ভারী শুভ, মলি ওটা খাস বাবা। মেয়ে বিদেশ যাচ্ছে বলে কথা তাও আবার পড়তে। একেবারে চার বছরের জন্যে, তা যদি চাকরি জোগাড় করে নেয় তাহলে তো আমরাও পরবর্তী জীবনটা সেখানেই কাটিয়ে দেবো,কি বল?
             এই নাও চা,  আচ্ছা হ্যাঁ কি কথা বোলবে বলছিলে না মেয়েকে, তা বলেই ফেলো না, চা খেতে খেতে, আচ্ছা আমিই শুরু করি। মা রে দেখ বিদেশে বিপাকে যাচ্ছিস জীবনে এত প্রলোভন পাবি সে দেশে সে  গুলো একটু সমঝে চলিস মা। অনেক স্বপ্ন নিয়ে তোকে পাঠাচ্ছি, আর তোর ও সেদেশে পড়াশুনো করে  settled হওয়ার ইচ্ছে তাই তোর বাবা আর আমি কখনোই বাধা দেবো না। অনেক আমোদ প্রমোদের প্রলোভন পাবি হয়তো সে দেশে করার, সেটা ওদেশের স্বাভাবিক জীবনযাপন হয়তো কিন্ত আমাদের মত মানুষদের সে সব ভাবাও দুরস্ত। একটু সমঝে চলিস, মাথায় রাখিস সে দেশে তুই একা, আর আমরা প্রতিটা মুহূর্তে তোর দিকে তাকিয়ে। আর বেশি কিছুই বলার নেই, সবই হয়তো বুঝিস।
            আরে বাবা তোর মা এত মিউমিউ করে বলে না এযেন রবীন্দ্রনাথের মিনির মা, শোন্ প্রলোভন বলতে কি বলে, আরে ডিস্কো থেক, বার ড্যান্স, মানে একেবারে রঙ্গিন দুনিয়া যা যা হয় সেসব থেকে যতটা পারবি নিজেকে গুটিয়ে রাখার চেষ্টা করিস। বাবা একবার নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে ফেল দেখবি এগুলো হাতের মুঠোয় থাকবে আগামীদিনে তোর কাছে, সবই করিস খারাপ টা না দেখলে ভালোটা বুঝবি কি করে বলতো। , মানে ভাবিস,যেটাই তোর কমফোর্ট সেটাই, অর্থাৎ সহজ প্রাপ্য বা সহজ লভ্য তোর জীবনের সেটাই কষ্টের হতে পারে তা থেকে দূরে থাকিস। কষ্ট করে পাওয়ার একটা আনন্দ আছে জানিস মা, আর সে আনন্দ সারাটা জীবন থাকে। আর যেটাই সহজলভ্য সেটা বুঝিস থাকবে না চলে যাবে। তবে হ্যাঁ, জীবনে যে কাজ করতে যাবি তা যদি অতি সহজেই পেয়ে যাস বুঝিস ঈশ্বরের ইচ্ছেই সেটা হয়েছে। আর যেটা হবে না বা বারবার শুরুতেই বাধা বুঝিস পরমেশ্বরের সে পথে সায় নেই। আচ্ছা দেরি হয়ে যাচ্ছে আমি চলি, এসে বাদবাকি কথা না হয় বলবো।
     কিরে শুনলি বাবা যা বললো মাথায় রাখিস কথা গুলো, এতটা স্কলারশিপ পেয়েছিলিস বলেই না তোর যাওয়া হচ্ছে। সেটা অবশ্য তোর ও চেষ্টা কম ছিল না। আচ্ছা কানাডা যেতে কতক্ষন লাগবে রে? আমি আর তোর বাবাতো আজ সারা রাত ঘুমোতে পারবো না, যতক্ষণ তোর উড়োজাহাজ টা মাঝ আকাশে থাকবে।
আর শোন্, বাবা চাদর দিয়েছে ওটা ভালো করে জড়িয়ে নিস বুঝলি, ঠান্ডা লেগে যেতে পারে । ওদের চাদর নিস না যতই পরিষ্কার হোক না কেন। কত বিদেশীরা ঐ চাদর ব্যবহার করে, আবার ধুয়ে দেয়, সেটাই ব্যবহার করবি কি দরকার। মলি ছোটবেলায় মনে আছে সেই মামার বাড়িতে প্রায় বাইশ দিনের মত ছিলিস স্কুলের গরমের ছুটিতে তাতেই তোর বাবার কি অবস্থা। এখন তো প্রায় চারবছরের জন্য যাচ্ছিস, কি করে যে থাকবো আমরা দুজনে, যাক মনকে তো মানাতেই হবে। আচ্ছা মলি কোন কোন দেশের উপর দিয়ে প্লেনটা যাবে রে, আর কত দূরে চলে যাবি তুই?
     মা কি সব বলছো একি ট্রেন নাকি, যে  চাদর দেবে আমায়। হ্যাঁ মা আমারও খুব কষ্ট হবে তোমাদের ছেড়ে থাকতে। সেটা তো করতেই হবে মা ভালো কিছু করতে গেলে নিজেকেও তো তার প্রমান দিতে হয়, ভুলে গেলে একটু আগেই তো বাবা একই কথা বললো।কলকাতা থেকে দূরত্ব কত জানো বলছি দাড়াও 11,147 km ঐ google ম্যাপ যা বলছে। যাক অনেক স্বপ্ন নিয়ে যাচ্ছি মা, তোমার বাবার আশীর্বাদ ছাড়া সেটা সম্ভব হত না, আমি তো শুধুই চেষ্টা করেছি, সে সঙ্গে যেটা ছিল সেটা তোমাদেরও ইচ্ছে। 
যাক স্নানটা করে নি বেশ বেলা হয়ে গেলো, মা আজ তোমার সাথে আমিও ঠাকুর ঘরে গিয়ে পূজো করবো কেমন, তাই আমিও কিছু খাবনা এখন।
           কি গো কোথায় গেলে, এই শোনো মাছটা কোথায় রাখি, আর হ্যাঁ দই এনেছি,আস্তে আস্তে বলছি মলি তো স্নানে গেছে, ওরা এসব মানেনা তাই বলছি  অল্প কেশর ও ধানও এনেছি ওটা দই দিয়ে মেয়ের কপালে লাগিয়ো দিয়ো বুঝলে, শুভ তো তাই বললাম আর কি। দেখি এবার ব্যাগ গুলোর নম্বরিং এ কোনটাতে কি আছে লিখে ফেলি চট করে তাহলে ওর অসুবিধে হবে না। আচ্ছা হ্যাঁ মুড়ির, খৈ, পাতলা চিড়ে, আর কেজি তিনেক  গুড় এনেছি ওগুলো দাও তো? দশ নম্বর ব্যাগটা তে শুধুই খাবার রেখেছি, যাক সেটার  লিস্টটা দেখলেই ও বুঝতে পারবে।
আমি গাড়ি ঠিক করে এসেছি দুটোর সময় আসবে বলেছে, এমনিতেই তিন ঘন্টা আগেই রিপোর্টিং, কিন্তু কি দরকার আমরা পাঁচ ঘন্টা আগেই পৌঁছে যাবো, তাতে তো কোনো দোষ নেই তো, তাই না?

          উফফ বাবা কি সব করছো, এত কিছু কেন আনলে বলতো, আমি বাথরুম থেকে সব শুনছিলাম, সেখানে তো মেস আছে, সবই তো পাবো, কি সব করছো, তবে হ্যাঁ বেশ হাসি পাচ্ছে ভাবলেও কেশবের মুড়ি আর চিড়ে হয়তো পাবো না সেখানে। কেশব বাবুর উচিৎ ছিল আমাকে স্পন্সর করা, মুড়ি চিড়ে টা অন্তত, তাঁকে নিয়ে আজ আমি বিদেশে পাড়ি দিচ্ছি।
          কত দেরি হয়ে গেলো বলতো, তোমাদের বাপ্ মেয়ের কথা শুনতে শুনতে, মাছটা রান্না করে ফেলেছি, একটু দৈমাছ করে আমিও যাই স্নানটা সেরে আসি, হাতেতো আর মাত্র দেড় ঘন্টা সময় আছে, তারমধ্যে পূজো আছে, খেতে দেওয়ার আছে আবার বাসন গুলোকে ধুয়েও রাখতে হবে, আজ মিনতি দি আসেনি, কতো করে বললাম আজ অন্তত এসো দিদি, মেয়েটা বাইরে যাবে, কাল ভুলই করেছি মাইনা টা আগে ভাগে দিয়ে, যাওয়ার সময় সে বলেও  গেলো বৌদি আজ গা টা বেশ ম্যাচ ম্যাচ করছে, তখনি বুঝেছি আগাম জানালো সে কয়েকদিন আসবে না।
            যাক আমার কাজ শেষ সব রেডি, শুধু পাসপোর্ট, ভিসা, আর দরকারি কাগজগুলো একটা পার্সে রেখে দিলেই কাজ শেষ।
আমিও তাহলে স্নান টা সেরে নি। শোন্ বাবা ভুলে যাবো তাই বলি কাল বোধহয় ভোর বেলায় দুবাই পৌঁছবে তোর ফ্লাইটটা, সারাদিনের খাবার টা ওখান থেকেই উঠবে যা শুনেছি। তুই এককাজ করিস তোর নিজের সাথে যে সাত কেজির লাগেজ টা থাকবে ওখানে দু প্যাকেট মুড়ি, আর আড়াইশো গ্রাম চিনি রেখেছি, আর হ্যাঁ একটা বাটি আর চামচ আছে। বিমান সেবিকা কে ডেকে জল নিয়ে মুড়ি চিনির জল খাস, ওতে পেটটাও ঠান্ডা থাকবে, আর ঐ সব ছাইপাশ থেকে খাস না, কি সব দেবে জানিস না, ওতে জাত যাবে বুঝলি।
         কি গো হোলো তোমাদের বকর বকর, এবার তো স্নানে যাও, আর মলি শোন্ চল আমার সাথে ঠাকুরঘরে, পূজো টা সেরেই খেতে দেবো। তুমি কিন্তু স্নান সেরে আর ঘরের কাপড় পরো না, একেবারে তৈরী হয়ে থেকো এসেই একসাথে খাবো।
          মা, বাবা এসব কি করছে বলতো, এত মুড়ি, চিড়ে আমি তো ওসব মুখেও দেবো না, বাবাকে বলতেও পারছি না, বললেই রেগে যাবে, যাওয়ার দিন আর রাগিয়ে, মনে কষ্ট দিয়ে লাভ কি। আচ্ছা মা, বাবারা কি বয়স হলেই অবুঝ হতে শুরু করে, প্রতিবাদ ও করতে পারিনা, আবার মানতেও পারিনা, আটকাতে গেলেই রাগ হয়। ছোটবেলায় মনে আছে দাদু দিদা যখন বেঁচে ছিল, তারাও বাবার সাথে এই একই জিনিস করতো, বাবার রাগ হত, মাঝে মাঝে দু একটা কথা বলতো, কিন্তু চুপ হয়ে যেত। যাক ধূপকাঠি দিয়ে পুজোটা সেরে নি, হে কুলদেবী, হে ঈশ্বর মঙ্গল কর, সকলের মঙ্গল কোরো , সকলকে সুস্থ রেখো।
          কি গো হোলো আমি তো জামা কাপড় পরে তৈরী তোমাদের দেরি থাকলে আমি সমস্ত লাগেজ গুলো নিচে রেখে আসি একটা একটা করে, এতে সময় বাঁচবে, হাতে তো মাত্র আর একঘন্টা সময় আছে।
যাক সব তৈরী এবার বেরোলেই হোলো, উফফ গাড়িওয়ালারা কখনোই সময় করে আসে না, দেখেছো কি কান্ড, দেখি একটু ফোন করি। কি মুশকিল গাড়িটার সেলফ নিচ্ছে না বলে, ধূর কেন যে আগে ভাগে রেডি করে রাখে না, পুইপুই করে বললাম, সময়ে আসতে, হোলো যাক একটা ওলা বুক করি। ভাগ্যে পেলাম কাছাকাছি আছে দেখছি চলো চলো নিচে নামি।
       মলি কই দেখি একটু দইয়ের ফোঁটা দিয়ে দি, দে বাবা আজ না করবি না তোর বাবা কষ্ট পাবে, ধান দিয়ে একটু আশীর্বাদ করো মেয়েকে কোথায় গেলে? কে কার কথা শোনে অমনি লাগেজ গুলো নামাতে শুরু করলো।
 কই দাও, বাবা অনেক স্বপ্ন নিয়ে সে দেশে চললি, তোর মা আর আমি কত স্বপ্ন দেখেছি তোকে নিয়ে, আজ জানিস বাবা তোর দাদু দিদা দুই পিসি বেঁচে থাকলে কত খুশি হত, তোর ছোটো পিসি তো সবসময় বলতো মলির মধ্যে কিছু আছে ভাই, দেখিস একদিন ও নিশ্চয় বিদেশ যাবে পড়তে, তোর এই মেয়েই তোকে পৃথিবী চেনাবে। পিসির কথাগুলো আজ অনেকটাই সত্যি হতে চলেছে। জীবনের এই মূল্যবোধ গুলো কোনোদিন ও ভুলিস না যার থেকে যতটুকুই পেয়েছিস। চল চল দেরি হয়ে গেলো। মনে রাখিস মা এই যে বাড়ির বাইরে পা রাখলি, শুরু হোলো তোর জীবনের একা চলার পথ, এরপর থেকে তোকে পাবো ঠিকই কিন্তু খুবই অল্পসময়ের জন্য,
 প্রতিষ্ঠিত হয়ে তোকে পাত্রস্থ করবো, যেটা মা বাবার কর্তব্য। এক অর্থে জানিস মা তুই আজ থেকেই কিন্তু আলাদা হয়ে গেলি পাত্রস্থ না করলেও। যাক কথা বলতে বলতে পৌঁছেও গেলাম এয়ারপোর্টে।
বেশ কিছুক্ষন পর মলি এসে মাকে প্রণাম করে বলে, মা আমার বোর্ডিং পাশ দেবে বলছে, লাগেজ চেক ইন হয়ে গেছে, এবার ঢুকলে আর বেরোতে দেবে না, কিন্ত বাবা কোথায় গেলো একটু ফোন করো তো, বাবাকে নিয়ে আর পারি না।
আরে এনকোয়ারীতে গিয়েছিলাম তোর সামনের পাশের লোকের নাম জানতে, শুনলাম দিল্লী থেকে একটি মেয়ে উঠবে নাম শুনে মনে হোলো গুজরাটি, আর হ্যাঁ তোর সামনের দুটো সিটে বিদেশী দুই ছেলে। শোন্ বাবা মেয়েটি কিছু দিলে খাস না কি বলে না ধোকলা, থেপলা। যাক আয় মা, ভালো থাকিস, আর প্রণাম করতে হবে না।




Comments

sadamata101.blogspot.com

B-47#বিশ্বকর্মা_পূজো

সন্তোষ ঢাকি

B-71#GANESH_PRASADAM. ( গনেশজির ভোগ নিবেদন মোদক ও পূরণ পুলি)