B-28#LOVE. (শিশু- প্রেম -মনে পরে আজও চোঁ চোঁ)


                                            শুভ গণেশ চতুর্থীর প্রীতি ও শুভেচ্ছা

                                                                       





শিশু প্রেম চোঁ চোঁ 
(এক সত্য ঘটনার অবলম্বনে)

মা আমায় বিয়ে দেবে না?  কালই তো বলেছিলে।  মহিম  তুই বড় হলে তোর বিয়ে দেবো, বাড়িতে বৌ আসবে,তারপর আমার সব কষ্ট চলে যাবে, আমার সংসারের খাটাখাটনি কমে আসবে,  আমি পায়ের উপর পা রেখে তারপর সারাটাক্ষন বিশ্রাম করবো। তারপর তোর ছেলে মেয়ে হবে তাদের দেখে,  একটু বড় করে,  আমি দুচোখ বুজবো আর আমি চলে যাবো। মাঝে মাঝে আসবো যদিও তোদের দেখতে, ছাদে এসে দাঁড়াস,  আমায় ডাক দিস আমি নিশ্চয় আসবো। 
                    মা,সত্যিই  তুমি যেখানে চলে যাবে আবার আসবে তো মা ? আচ্ছা মা আমার বিয়ে হবে?  কে আমার বৌ হবে মা? আর যে বৌ হবে,  সে কোথা থেকে বাচ্চা গুলোকে আনবে? বলো না মা তুমি তো সব কিছুই জানো তাই না ? শোনো না বললে আমি আজ খাবোই না । মা আমার বৌ কে হবে আমি জানি,  আমি বলি তোমায়? মা আমার বৌ হবে চোঁ চোঁ। কি ভীষণ যে ভালো লাগে মা ওকে তোমায় বোঝাতে পারবো না। তোমারো তো ভালো লাগে তাই না?  দেখেছো তোমার যা ইচ্ছে আমারও তো একই ইচ্ছে মা,   চোঁ চোঁ ই আমার বৌ হবে।


                           এই মহিম , কি যা তা বলছিস বাবা? চোঁ চোঁ কোনোদিন এবাড়ির বৌ হতে পারে নাকি? তোকে নিয়ে আমার কত স্বপ্ন, ঐ সব মুখেও আনিস না বাবা।  আমাদের সমাজ বলে তো একটা জিনিস আছে তো নাকি। এই শোন্ এরপর আমাদের নাক যে কাটা যাবে বাবা। শোন্ মহিম চোঁ চোঁ একে তো রিকশাওয়ালার মেয়ে, তারুদের বারান্দায় শোয়, না আছে ওদের ঘর দুয়ার, দেখিস তো ওরা মা মেয়ে রিকশাতে শোয়, আর ওর বাবা বারান্দার মাটিতে।




মহিম  এই সব ভুলভাল জিনিস নিয়ে মাথা খারাপ করিস না, নিজের পড়াশুনা টা তো কর ঠিক করে, বড় হলে তারপর না বিয়ে। এই শোন্ এমনিতেই তোর বাবা মাস দুয়েকের মধ্যে বদলি হয়ে যাবে, এই পাকুড় থেকে, তখন আর কোথায় চোঁ চোঁ কে পাবি। 
          মা কি বলছো?  চোঁ চোঁ কেন আমার বৌ হবে না, তাহলে কে হবে বলো?  হোক না মা ওর বাবা রিকশা চালায়, তাতে কি হয়েছে?  টাকাতো আনে?  সে তো আমার বাবাও টাকা আনে,  এবার বলো?  শোনো মা, পরশু বিকেলে কি ঝড় বৃষ্টি হচ্ছিলো, আমি তো কাঠের জানলার লোহার শিখ দিয়ে পা দুটো বার করে, উল্টো দিকে তারুদের বাড়ির নিচে, চোঁ চোঁ কে ডাকছিলাম।  রিকশায় চুপ করে বসেছিল ওর মা বাবার সাথে। আমি তো কত বললাম চোঁ চোঁ আমাদের বাড়িতে চলে আয়,  তুই ভিজছিস, আর ভিজলে যে তোর জ্বর হয়ে যাবে, রাতে ঘুমোবি কোথায় , সারা  রাস্তা জলে ভরে গেছে, আরো বৃষ্টি হবে, চোঁ চোঁ কথা শোন্, মাকে বলছি  দরজা টা খুলে দেবে।  আমি দেখলাম চোঁ চোঁ দিদির মত  ঘটি হাতা জামাটা রিকশার বাইরে, আর চোঁ চোঁ সমানে ভিজে যাচ্ছে, মাঝে মাঝে বাজ পড়ছে বলে ও চমকে উঠছে, আর নালার পাশে কোলা ব্যাঙ গুলোর আওয়াজে ও ভয়ে আরেক হাত দিয়ে মাকে ধরে আছে ।


মা এতো ডাকলাম , চোঁ চোঁ শুধু হাত দেখালো আমাকে আর ওর বাবা যেন বকলো চোঁ চোঁ কে, ও আর তাকালোও না আর হাত ও নাড়লো না। জানো মা আজ সকালে ভোলাকাকুর বাগানে আমি আর চোঁ চোঁ গিয়েছিলাম  পাকা পেয়ারা আর জামরুল পাড়তে, তখন  গাছে উঠে  পড়ে গিয়েছিলাম, তোমায় বলা হয়নি ভয়ে, এই দেখো আমার পা কেটে কি অবস্থা। চোঁ চোঁ সঙ্গে সঙ্গে দেখে ওর ছেঁড়া সেই জামাটা আরো ছিঁড়ে আমার পায়ে বেঁধে দিয়েছিলো আর কি একটা গাছের পাতা আমার পায়ে ঘষে দিয়েছিলো,  ব্যস তারপর থেকে রক্ত বন্ধ। চোঁ চোঁ তখন অমনি গাছে ওঠে পেয়ারা আর জামরুল গুলো পেড়ে আমার পকেটে ঢুকিয়ে বলেছিলো,মহিম বাড়িতে গিয়ে বলিস না যে তুই আমার সাথে ছিলিস। আমি তো ব্যাথায় হাঁটতে পারছিলাম না, সেই দেখে ও কি কাঁদছিলো জানো।


আচ্ছা মা, রোজ সকালে যে এতো শিউলি ফুল নিয়ে আসি, কে দেয় জানো?  চোঁ চোঁ। কত শুয়ো পোকা থাকে শিউলি গাছে, ও তো কাঠি দিয়ে দিয়ে ওগুলো কে সরিয়ে তারপর গাছে উঠে আমায় ফুল পেড়ে দেয় মা, আমি তো শুধুই নিয়ে আসি আর তুমি সেই ফুল দিয়ে ঠাকুর ঘর সাজাও। আচ্ছা মা সমাজ মানে কি?  যেখানে বাসু, বিমল, তারুকাকু, শ্যামলী কাকিমা,  আর আমরা থাকি,  তাই তো নাকি?  আর চোঁ চোঁ রাও তো একই জায়গায় থাকে আমাদের সাথে তাই না?  ওদেরকে ও  তো সবাই চেনে ?  না চিনলে অসুবিধে ছিল। আচ্ছা বাবার বদলি হবে  মানে? আমরা আর কখনো পাকুড়ে আসবো না তাই তো? তাহলে তুমি ঠিকই বলেছো মা ! বড় হয়ে চোঁ চোঁ আর আমার বৌ হবে না।
ঠিক দুমাস পরে :-
চোঁ চোঁ আমরা চলে যাচ্ছি রে পাকুড় ছেড়ে,  ওঠ  ঘুম থেকে, কোনোদিন এতক্ষন তো ঘুমোস না? এই দেখ টম টম গাড়িটা চলে এসেছে, আরে উঠবি তো ঘুম থেকে?


বাবা যে বদলি হয়ে গেছে, আমরা অনেক দূরে চলে যাচ্ছিরে ঘাটশিলাতে। তুই ও জানিস না আমিও জানি না কোথায় কতদূর পাকুড় থেকে।  কাকু আমি কিন্তু তোমার রিকশায় যাবো,   আর হ্যাঁ, আমি আর চোঁ চোঁ বসবো তোমার রিকশার পেছনে,  কাকু চলো না স্টেশনে, মা বলেছে আর কখনো দেখা হবে না তোমাদের সাথে, কাকু জানো চোঁ চোঁ আর আমার বৌ হবে না কখনো,সেটাও মা বলেছে।
এতদিনে মহিম ও তার সংসার পেতে প্রায় মাঝ বয়সে পৌঁছয়।  প্রায় তিরিশ বছর পর সে আবার করে স্মৃতি চারণায়  ফিরে  পেতে  চায় তার হারিয়ে যাওয়া দিনগুলো। তাই একেবারে নিজের গাড়িতে করে  বেরিয়ে পড়ে - গন্তব্য পাকুড়। 


 গাড়ি এসে থামে একেবারে তারুর বাড়ির সামনে,মহিম  বিন্দুমাত্র কালবিলম্ব না করে নিজের জম্ম ভিটে অর্থাৎ সেই বাড়ির জানালা, কখনো পুরো বাড়িটা, সমানে সে ফটো তুলতে থাকে।  মায়ের হাতের সোনার আংটি টা এককালে, মহিম  জেদের বশে এই সেই জানলা দিয়ে ছুঁড়ে দিয়েছিলো,  আবার কখনো বা  চোঁ চোঁ র উদ্দেশ্যে শিশু মনের নিস্পাপ প্রেম। 


এতক্ষনে পাড়ার লোকজন ভিড় করে ফেলেছে এই মানুষ টাকে চেনার জন্য, তারই মাঝে তারু ও এসে দাঁড়ায়। 
                                                        আপনি মানুষ টা কে গো?  কোনোদিন আগে তো দেখিনি এই পাকুড়ে?  দাদা,হ্যাঁ আপনাকে বলছি, একটার পর একটা ছবি তুলে যাচ্ছেন, আমরা তো এই বাড়িতে প্রায় পঁয়তাল্লিশ বছর ধরে আছি, কই কখনো তো দেখিনি?  কোনো শুটিং স্পট খুঁজছেন নাকি?  এমনিতেই আপনার গাড়ি কলকাতার গাড়ি,  তা তো দেখলেই বোঝা যাচ্ছে। কি হোলো দাদা,সমানে বলে চলেছি,কিছু তো বলবেন?
                 হ্যাঁ হ্যাঁ, sorry বলছি,   কিছু যদি মনে না করিস একটা কথা বলি এই বাড়িতে জন্ম থেকে আছিস তাই তো?  আমাদের ছোটবেলায় একটা রিকশা থাকতো তোদের বারান্দায় তাই তো, সেখানে সেই বাচ্চা মেয়েটা তার মা বাবার সাথে থাকতো ওর নাম ছিল চোঁ চোঁ তাই তো?  এবার বল আমায় চিনলি কিনা। 
                 মানে মহিম ,   তাই তো নাকি?  ঠিক বলেছি?  উফফ ভাবা যায় এতবছর পরে কি আশ্চর্য, কোনোদিন যে দেখা হবে ভাবিনি রে?  চল তোকে সব পাকুড়টা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখায়।  আর হ্যাঁ তার আগে চল প্রথমে একজনের বাড়িতে নিয়ে যায়, দেখি তো চিনতে পারিস কিনা?  চল। 
                 এই চোঁ চোঁ দেখ কে এসেছে?  কি রে বেরিয়ে আয় চিনতে পারছিস কিনা দেখ ? 
বিশাল লোহার গেটওয়ালা বাড়ি, বাড়ির সামনে গোটা চারেক গাড়ি, গেটের ভিতর তিনটে বাচ্চা সমানে খেলে চলেছে, অবাক হয়ে দেখছিলাম ঐ বাচ্চা গুলোকে কোথায় যেন নিজেকে খুঁজে পাচ্ছিলাম, অবশ্য বাচ্চা গুলো তাদের মধ্যে হিন্দিতে কথা বলে চলেছে। বুঝতে বিন্দুমাত্র দেরী হয় নি যে ওর  স্বামী নামক মানুষটা বিহারী। অবশেষে যে সামনে এসে দাঁড়ালো বেশ স্বাস্থ্যবতী এক মহিলা, কালো গড়ন, গলায় মঙ্গল সূত্র, একপেশে লম্বা চুল অত্যন্ত আধুনিকা, পায়ে তোড়া, পুরো সিঁথি জুড়ে সিঁদুর, দুই হাত ভর্তি কাঁচের চুড়ি, বুঝতে বিন্দুমাত্র দেরী হোলো না, এই সেই চোঁ চোঁ। 


যাকে নিয়ে আমার দিদিরা সমানে বড় হয়ে আমায় রাগাত, আমায় চোঁ চোঁ বলে ডাকতো বহুদিন এমনকি আমার বিয়ের আগে পর্যন্ত।  মনে মনে রাগ হত খুব,  শিশু মনে এই চোঁ চোঁ কেই তো  চেয়েছিলাম আমার বৌ হিসেবে , সে এখন আমার সামনে দাঁড়িয়ে।  জিজ্ঞেস করাতে সে বলে “ পেহচানা নেহি কৌন হে যে আদমি তারু “। আমি ও আর জোর করে তাকে নিজের পরিচয় জানাতে চাইছিলাম না, কেবলই মনে হয়েছে,হয়তো তার ছোটবেলাটা ছিল তার বিস্মৃতি তাই সেটা সে আর মনেও রাখতে চায় না । আমি নিজেও মনে মনে খুব খুশি হয়ে পাকুড় থেকে কলকাতায় ফিরে আসি, আসার সময় প্রায় সারাটা রাস্তা ভেবেছি – এটাই তো চেয়েছিলাম চোঁ চোঁ সুখী হোক, স্বামী নামক মানুষটার প্রচুর আর্থিক সঙ্গতি হোক, তাই সে তার ছোটবেলার কষ্টের দিনগুলো আর মনে রাখে না,  আমি কিন্তু আমার হারিয়ে যাওয়া প্রেম খুঁজে পেয়েছি, যা আমি চেয়েছিলাম  একেবারে ছোটবেলায়, চোঁ চোঁ আর কোনোদিন দুঃখে থাকবে না, আমি আমার বৌ হিসেবে পাই নি তাতে কি, সে তো কারোর স্ত্রী। পাকুড় গিয়েছিলাম একরাশ আশা নিয়ে ফিরছি এক গাড়ি ভর্তি প্রেম নিয়ে।  মা বলতেন যে সয় সেই ই রয়, যে না সয় সে শুধুই বয়,  আজ এককথা বেশ বুঝি, চোঁ চোঁ রা সয়ে ছিল বলেই সব চোঁ চোঁ রা জীবনে সুখী হয়।  তুই ভালো থাকিস রে  চোঁ চোঁ। 

07.06.2020 


এভাবে প্রতিনিয়তই আসবো ঠিক আপনার উপকারে কথা দিলাম কমেন্টস সেকশনে আপনাকে উত্তর দেওয়ার জন্য। আমার এই ব্লগে এখন থেকে থাকছে নিজের লেখা ছোটো গল্প, কবিতা, রান্নাবান্নার খুঁটিনাটি, অত্যাধুনিক টেকনোলজির Updated সমস্ত খবর যা আপনার প্রয়োজনীয়, আর থাকছে হারিয়ে যাওয়া কুটির শিল্পের নানান তথ্য, পোশাকের এক বিপুল সম্ভার, কিছু software  যা আপনারও  লাগতেও পারে সহজ কাজের সন্ধানে।বলবো আমি, উত্তর ও মতামত দেবেন আপনারা একেবারে ব্লগে।
আলাপচারিতায় আমি পেশায় ব্যবসায়ী দেবপ্রিয় সেন, বর্তমানে ব্লগার তাই আপনার মোবাইলে বা ল্যাপটপে টাইপ করুন -
www.sadamata101.blogspot.com, একই ছাতার তলায় আমি এসেছি অনেক কিছু নিয়ে আপনাকে উৎসাহিত করতে, আর আপনার মতামত শুনতে,আর দিনের শেষে থাকবো আপনার সাথে আড্ডায় আপনার কমেন্টস ও শেয়ার করার মাধ্যমে একেবারে সরাসরি। ভালো থাকবেন,আর ভালো রাখবেন সকলকে আদান প্রদানের বিনিময়ে ।

Comments

sadamata101.blogspot.com

B-47#বিশ্বকর্মা_পূজো

সন্তোষ ঢাকি

B-71#GANESH_PRASADAM. ( গনেশজির ভোগ নিবেদন মোদক ও পূরণ পুলি)