B-83# মাধুর – চতুর্থ ভাগ – রুপা ও সদাইয়ের আবির্ভাব(শুভ ও সুমেধার ষষ্ঠদশ অধ্যায়)

মাধুর – চতুর্থ ভাগ – রুপা ও সদাইয়ের আবির্ভাব(শুভ ও সুমেধার ষষ্ঠদশ অধ্যায়)

গরিবের হয়তো পদে পদে ঠোকর খেতে হয়, কি কুক্ষনে যে মানুষ গরিব হয়, হয়তো বা গতজন্মের কোনো  পাপ কাজ সে করে থাকে, তাই হয়তো সে এই পরিণতির স্বীকার হয় । একটু মাথা তুলে দাঁড়ানো তো দুরস্ত আরেকটা বিপদ দরজায় এসে কড়া নাড়ে, ভালো কিছু ভাবতে না ভাবতেই যেন সজোরে মাজা ভেঙে দেওয়া হয়। দুঃখ যেন মাছির মত তাদেরই ঘরে সারাটাক্ষন ভনভন করে। এতদিনে মাধু একটু হাসির মুখ দেখেছে বড়মার বাড়িতে ভালো খাওয়া, ভালো পড়া, সবেতেই সে খুশি, শিশুমন কত রংতুলি দিয়ে ভালো ভালো স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে, মা মারা গেছে একটা বছরও তো হয়নি, সে  দুঃখ তাঁর গভীর অন্তরে, কোনোদিন তা প্রকাশ করেনি আমাদের কাছে।

     গরমকাল এদিকে কারেন্ট ও নেই একটা হাতপাখা নিয়ে সে চিলেকোঠায় বসে মনের আনন্দে একবাটি কুল ও তেঁতুলের আচার নিয়ে মনের আনন্দে খাচ্ছে সঙ্গে ভেদুয়া হয়তো কখনো তাকে সে মড়াপোড়া গ্রামের কথা বলছে,আবার কখনো তার পিঠে উঠে ঘোড়া  ঘোড়া খেলছে।

এটাই মাধুর বর্তমান খুঁজে পাওয়া আনন্দের জীবন। মানুষের শত দুঃখেও থাকলেও যে আনন্দ খুঁজে নিতে হয় তা মাধুর কাছ থেকেই শিখতে হয়। প্রায় বিকেল হয়ে এসেছে ন কাকিমা ও সুমেধা বসে চা খাচ্ছেন , অমনি সদর দরজায় গেটের আওয়াজ। 

মাধু চিলেকোঠার সিঁড়ি দিয়ে পড়িমরি করে নামে কে এসেছে এই নতুন অতিথি তা দেখার, সবেতেই তার অফুরন্ত মনের উচ্ছাস, যিনিই আসবেন আগে মাধুর কাছে তার পরিচয়, তারপর ফটক খোলো। খিড়কির ফুটো দিয়ে সে প্রথমটা ঠাউর করতে পারিনি, চোখ যেন তার বিশ্বাস করছে না, এটা কি ভাবে সম্ভব, অপরপ্রান্তে কাকে দেখছে সে। তাই ছুট্টে গিয়ে বড়মা কে বলে মনে হচ্ছে ভাইকে কোলে নিয়ে দিদি তাই সে বড়মাকে দরজা খুলতে বলে।

        ও মা রুপুদি আর সদা দেখছি, দিদি কি হোলো গো ভাবতেই পারছি না তুমি আসতি পারো, সঙ্গে সদা কেও আনিছ, বুঝেছি আমারে দেখতি আসিছ, আমি কেমনে আছি, আসো আসো রুপুদি, একবার দাও দেখিনি সদা কে। কি রে সদা এতো রোগা হয়ে গেলি কেমনে? খাতি পাসনি বল, জানিস যখনই ভালো কিছু খাই তখনই সদা তোর কথা মনে পড়ে। রুপুদি সদার ঠান্ডা লাগলো কি করে গো? দেখ দেখিনি নাক দিয়ে সিকনি বাইরাইতিছে, দেখি মুইছা দি।

বড় নমা, আমার ভাই সদাই ওরে আমি ভালোবেসে সদা বলে ডাকি। এতো বড় হয়েছে বসতে পারে না বড় নমা, দেখি ওরে একটু মাটিতে শুইয়া দি। দেখো কি ভাবে দেখতিছে আমারে যেন কতদিন দেখে নাই। আর ও হোলো মেজদি মানে রুপুদি তালদি টেশনে পরোটার দোকান। তা দিদি বাড়ি চিনলে কি করে গো, ভালো দি তোমারে কইছে না? আমার বড়দি খুব ভালো, মাকে কত টাকা দিত, তাই মা বৈলতো তোর বড়দি খুব ভালো। তাই তো ছোট থেকে তারে ভালোদি বলে ডাকি। তা রুপুদি আইলা কেমনে, কিসের জন্য কইবা তো নাকি। ও সদা, সদা আজ জানিস মাংস হয়েছে এ বাড়িতে দাঁড়া তরে কোলে করে মাংস ভাত খাওয়াই, কতদিন তো তরে খাওয়াইনি।
 অদৃষ্টই হয়তো জানে আগামী সময়টা মাধু খবর পেলে যখন জানবে সে কি করবে, পারবে তো সে সামলাতে? হয়তো পারবে, জীবনের তো সকল প্রতিকূলতা তাকে নোয়াতে পারেনি এখনো ও হয়তো পারবে সে খবর শুনে।ঈশ্বর হয়তো এটাই শেষ পরীক্ষা নিচ্ছেন মাধুর,তাই আগামী দিনগুলো যেন আর এভাবে তাকে পরীক্ষা দিতে না হয়। জীবনে যদি খুব খুশি নাও জোটে কিন্তু খুব দুঃখী ও না হয় সে।
           মাধু তুই বরং সদা কে নিয়ে ভিতরে যা কিছু খাইয়ে দে, আমি তোর বড়মার সাথে দুটো কথা কই। এখনই আবার জাতি হবে, মাধু শোন্ তরেও জাতি হবে তৈরী হও গা,তালদিতে অখোনি যাবো গিয়া, বুঝলি, দরকারের লাইগাই তরে লইতে আসছি।
রুপা কি জানি চা খেতে খেতে ফিস ফিস করে শুভ সুমেধা ও ন কাকিমাকে সেকথা বলেই ফেললে এক হাতে চায়ের কাপ আর এক হাত দিয়ে সে চোখের জল মুছেই চলেছে। বাড়ির সকলে তা শুনে মাথায় হাত। 
           রুপুদি দেখ না খুব খিদা পেয়েছিলো সদাটার মনে হয়, সে কিভাবে যে খাইলো, আমার কোলে শুইয়া একবার আমার লগে দেখে আবার খাইতে চাই, আসলে বুঝছি মেলা দিন কোলে খাই নি তো তাই এমন করতাসে। রুপুদি কাল সকালে যদি যাই, চল না, খুব ভোরে ভোরে না হয় যাবো গিয়া। আচ্ছা চল, কি রে, বাবা বোধহয় এখন আর নেশা ভাং করে না বল তুই টেকা দিসনি দিদি কখনো আর, তারে কইলেই তো ধইরা মারে, তা না হলে সদা টার ওমন হয় নাকি। আচ্ছা বড় মা যাই, কাল বিকাল বিকাল চলে আসবো ক্ষণ। আর হ্যাঁ ভেদুয়া কে ছাদে থুইয়া রাখসি, সকালে ছাইড়া দিও।

      মাধু দাঁড়া, তোর বড়মা ন কাকিমা সবাই যাবে আমি গাড়ি বার করছি, সবাই এক সাথে যাবো। সুমি শোনো একটু ভিতরে চলো। আমরা ওর পাশে না দাঁড়ালে মাধুটা যে মরে যাবে। বেশ কিছু টাকা ভাবছি হাজার বিশেক টাকা দেবো, যা হয়েছে সে আর কি করার অন্তত ওরা বেঁচে গেলো। ওর ভাইয়ের যা অবস্থা দেখলাম টাকাটা হাতে দেবো না অবশ্যই, কিন্তু ওর ভায়ের যদি চিকিৎসা করাতে হয় করাবো, আগে সব কিছু মিটে যাক। প্রয়োজনে যত টাকা লাগবে দেবো এই সময় মেয়েটার পাশে না দাঁড়ালে ঈশ্বর ও আমাদের ক্ষমা করবেন না। চটপট তৈরী হয়ে নাও, আমি তৈরী হয়ে গাড়ি টা বরং বার করে নি। কি রে মাধু কোথায় গেলি আয় আয়, গাড়িতে বোস।
           চলো চলো বড্ডো দেরি হয়ে গেলো দেখছি রাতে তো আবার ফিরতেও হবে, মাধু তোদের ওখানে কোনো থাকার মত হোটেল আছে কি? তুই ও বা জানবি কি করে তুই তো ছোটো। ঠিক আছে দেখা যাক আগে তো পৌঁছয়। ন কাকিমা কি ভাবছিলে কি হলো, আরো কি হবে দেখো । কি রে মাধু চলে এসেছি না এই তো তালদি স্টেশন।
         হ্যাঁ বড়মা ঐ তো আমাদের মড়াপোড়া গ্রাম, কিন্তু রুপুদি আমাদের বাড়ির সামনে এতো ভিড় কেন গো, গাঁয়ে কোনো কিছু হয়েছে নাকি?
আবার কে মরলো, জানো বড়মা পাড়া গাঁ তো কেউ মরলে এতো ভিড় হয় সবাই বেড়িয়ে আসে, তা বলে আমাদের বাড়িতে কেন আমরা তো সবাই বাইরে। হয়তো মোটর দেখে ভিড় করেছে, বুঝেছি।
         মাধু শোন্ না, আজ দোকানে ভালো খদ্দের হয়েছিল, আমি সদাকে কোনোরকমে একটা রুটি খাইয়েছি, খেতে খেতে সে কোলেই ঘুমিয়ে পড়লো। আর তুই বাবা কে তো জানিস সে দোকানের সামনে সকাল থেকে এসে দাঁড়িয়েই আছে, তখনও বউনিও হয় নি। ক্যানিং লোকালের খদ্দের কে খেতে সবে দিয়েছি, ওদিকে ট্রেনের খবর হয়েছে বালিগঞ্জ ছেড়েছে। খাওয়াবো নাকি তাদের থেকে টাকা নেবো, দুই জন তো টেকা না দিয়েই চলে গেলো ধরতে পারলাম না। আর  বাবা টেকার জন্য মাথা খারাপ করে দিচ্ছে।
ততক্ষনে ট্রেন ও ঢুকে গেছে টেশনে, খদ্দেররা টেকা দিয়ে ছুটছে সে টেরেন ধরতে, তারপর দেখি সে নাই ভাবলাম রাইগা গেছে ওখুনি আসবে বুঝি, রোজ তো একই তার নাটক।
আমি বিশটা টেকা হাতে থুইয়া বইসা আছি, বেশি টেকা দেখালেই তো সব লইয়া যাইবো চুল্লু খাইতে। যাক ক্যানিং লোকালটা সবে ছাড়সে দেখি সবাই চীৎকার করে হাই রে গেলো গিয়া, গলা দিসে বোধহয়। অমনি রতনের মা ছুইটা আইসা কই রুপু তোর বাবা লাইনে গলা দিসে, শিগগির দেখ।

                   রুপুদি কি.............. বাবাও মইরা গেসে। কি কস?

মাধুর সেই অবাক আর বিস্মিত মুখখানি দেখে মনে হোলো হয়তো তারাও রেহাই পেলো। একটা থম মেরে সে দাঁড়িয়ে রইলো বেড়ার গেটের কাছে। কখনো সে হেদুয়া কে আদর করে অতি যত্নে আবার ছোটো ভাইয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে অভয় দেয়, আমি আছি সদা। সেদিন সেই মাধুর কালো মুখখানি দেখে মনে হয়েছিল সাক্ষাৎ এক দশভূজা মা, একটা নির্লিপ্ত দৃষ্টি, একটা টাইফুন এসেছে বটে, বোধহয় তাও সে উৎরে যাবে। জীবনে হয়তো মাধুরাই পারে আমাদের কাছে একটা উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরতে, তারা খুব সহজেই বুঝে নেয় এটাই হয়তো জীবন ।



   

Comments

sadamata101.blogspot.com

B-47#বিশ্বকর্মা_পূজো

সন্তোষ ঢাকি

B-71#GANESH_PRASADAM. ( গনেশজির ভোগ নিবেদন মোদক ও পূরণ পুলি)