B-80#অভিনয় ও তার পার্শ্ববর্তী আর্থিক মূল্যায়ন


অভিনয়  ও তার  পার্শ্ববর্তী আর্থিক মূল্যায়ন


কিছুদিন যাবৎ বহু নামিদামি লেখক ও বুদ্ধিজীবীরা সমানেই বলে চলেছেন অভিনয় যা মানুষকে বিনোদন দেয় সেটা আদৌ কি ঠিকঠাক মূল্যায়ন হয়, নাকি একদল সংবাদ মাধ্যম তার পৃষ্ঠপোষক হয়ে ওঠেন তাই তার ক্ষেত্রে সাফল্য হয়ে ওঠে, আর তাতেই জনগণ ভিড় করেন। 
                        তার আগে জেনে নেওয়া অতি অবশ্যই প্রয়োজন অভিনেতা বা অভিনেত্রী কতটা সক্ষম সেই চরিত্র কে একেবারে ফুটিয়ে তোলার ক্ষেত্রে, বা নিজেকে আত্মস্থ করতে পেরেছেন কিনা । বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় যিনি অভিনয় করছেন তার ডায়ালগ বা সংলাপ এতটাই স্পর্শ কাতর যা দর্শক কে সুড়সুড়ি দেয়, আসনে বসে তালি মারার জন্য বাধ্য করেন।এমনকি এমনও অভিনেতা আছেন যাঁরা ডাবিং  এর মাধ্যমে আজকাল গান ও গেয়ে চলেছেন একেবারে নিজের গলায়। আদৌ এনারা শিল্পী যাঁদের কে নিয়ে আমরা এতো মাতামাতি তে নেচে উঠি।আমরা জনগণ শুধু নিছক একটা আনন্দ বা নাচানাচি তে মেতে উঠি বক্স অফিসে সুপার ডুপার হিট বলে আখ্যা দেই আর কয়েকশো টাকা দিয়ে টিকিট কেটে  তাঁদের মুনাফার অঙ্কটা বাড়িয়েই চলি সমানে । আচ্ছা একবার ভাবুন তো আমরা কতজন হল থেকে বেরিয়ে মূল্যায়ন করি বইটার সম্বন্ধে বা তার গুণগত মান নিয়ে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় আমরা অভিনেতা বা অভিনেত্রীদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ, কি করেছে একেবারে ফাটাফাটি। আদৌ কি ফেটেছে, ফেটেছে কিন্তু সত্যিই একজনের সেটা হোলো প্রোডিউসারের। কারণ যে মুহূর্তে একজন অভিনেতা বা অভিনেত্রীর সুনাম হয় তার ক্ষেত্রে সেটা আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ আর পরবর্তী কালে উনিই হয়ে ওঠেন দর কষাকষির উর্দ্ধে, মুস্কিলে পড়েন প্রোডিউসার আর গাল ভরা এক নাম অত্যন্ত বড় বাজেটের ছবি প্রকাশিত হতে চলেছে, কিন্তু কে বোলবে, কাকে বোলবে এই বড় বাজেটের ছবির অর্ধেকের বেশির ভাগ টাতেই থাবা মেরেছেন সেই কেউকেটা যাঁর কোনোদিন শৈল্পিক নৈপুণ্যনতা ছিলই না, যাঁকে জনগণ মাথায় তুলে সমানে নেচেই চলেছেন। অভিনয় টা হোলো একটা শেখার জিনিস যেটা না জানলেও আয়ত্তাধীন করতে হয়, পড়াশুনা করে, কিংবা তা একটা অনুশীলনের মাধ্যমে যাকে বলা হয় ফিল্ম ইনস্টিটিউট। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখবেন যাঁরা টলিউড বা বলিউড দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাঁরা সে অর্থে এই সকল ফিল্ম ইনস্টিটিউট কে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ দেখিয়ে কোনোরকম তোয়াক্কা না করেই এগিয়ে চলেছেন। তার একটাই মূল ও প্রধান কারণ “দর্শক তো আমায় নিচ্ছেন তাতে অসুবিধে কি আমার গ্ল্যামার আছে, দেখতে সুন্দর, খুব মেপে মেপে কথা বলতে পারি হোক না বয়স হয়েছে, গালে ভাঁজ পড়েছে , শরীর সম্বন্ধে রীতিমতো ফিট, জিমেও তো প্রতিনিয়ত যায়, এটাই তো দর্শক চায়” । যেটা বলার ভেবেই নিয়েছেন “ পহেলে দর্শনধারী, গুণ বিচারী তো বাদ মে” পরের টা তো স্টেজে মেরে দেবো, এটাই হয়েছে একজন শিল্পীর কাল। অভিনয় না শরীর এরই মধ্যে দ্বন্দ্ব। শিল্পীরা হয়তো শিল্পী সত্বা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এই একমাত্র কারণে, হিন্দি সিনেমা জগতে তো আরো রমরমা শরীর দেখাও,  হুড়কো দিয়ে " দাবাং দাবাং " কোরো তাতেই  কেল্লাফতে, এই অভিনয়ে উনার নাকি বর্তমান মূল্য ষাট কোটি টাকা। একটা সিনেমাতে বহুবার আলোচিত হয় যে কোনো সোশ্যাল মিডিয়ায় লক্ষ্য করবেন তাঁদের সেই শুটিং এর কষ্টের কাহিনী। মানুষ গেলেন সে কথা আহা আমাদের ভগবান রুপী মানুষটার না জানি কত কষ্ট করতে হয় এই শুটিং এ, অর্থ রোজগার কি এতই সহজ নাকি উনারা কষ্ট করেন তাই এতো পান সেটা একশো শতাংশ হকের । থুড়ি একটু দাঁড়ান কথাগুলো পুরোটাই গলদঘর্ম করবেন না,বুঝি আপনার গুরুদেব তাই সেন্টিমেন্টে আঘাত লাগছে। যা বলছেন উনি একটু syllable ভাগ করে কথা গুলো ভাবুন আর শুনুন নিজের যুক্তি দিয়ে তা অনুধাবন তো করুন। Diegene খাবেন ঠিক আছে হজম করার জন্য কিন্তু আদৌ কি কথাগুলো হজম করা যায়। ঠিক আছে আরেকটু ভেতরে সে প্রসঙ্গে আশা যাক। ধরুন আপনি কোথাও ঘুরতে গেছেন, ধরে নেওয়া যাক শিল্পী জগতের লোকেদের মত আপনি নিজেও switzerland গেছেন আপনার মনটা তো একটু না একটু ফুরফুরে ভাব তো হবেই, তখন cable car এ বসে আপনি নিজেকেও উন্মুক্ত আকাশে মেলে দেবেন বিনা দ্বিধায় আর আপনার অপরপ্রান্তে ভিডিওগ্রাফির লোক যদি থাকেন আপনি হয়তো গেয়েই ফেলবেন “ জাদু তেরি নজর খুসবু তেরা বদন” মুহর্তে আপনিও নিজেকে শাহরুখ ময়ূর খান ভাবতে বিন্দুমাত্র দ্বিধাগ্রস্ত হবেন না। তার উপর আপনি যদি সুন্দর বা সুন্দরী হোন তাহলে তো কোনো কথাই নেই, সোনেপে সুহাগা। একটু হাসি লাগছে তাই তো, ভাবুন আপনার এই cable car journey তে যদি একশোটা টেক হয় তখন তো আপনার আর ভুল হওয়ার কথাই নয় প্রযোজক যা চাইছেন।

ব্যস শুধু এতটুকুই আপনার পরিশ্রম। তার বিনিময়ে আপনি কি দাবি করছেন লাঞ্চটা যেন সময় মত হয়, ইউনিটের সকলে যেন সমীহ ও সন্মান ব্যবহার করে চলে আপনাকে, আপনার vanity van যেন শুটিং স্পটের কাছেই থাকে, যখন তখন প্রয়োজন অপ্রয়োজনে আপনি সেখানে বিশ্রাম নিতে যেতে পারেন।একটু পান থেকে চুন খসলেই হোলো শিল্পীর তখন মুডের গোঁসা। প্যাক আপ সারাদিনের জন্য প্রযোজকের মাথায় হাত কারণ তাঁকে টাকা গুনতে হবে এই বাড়তি দিনের জন্য। এবার আশা যাক আসল কথায় সারাদিন উনি হয়তো একটানা ষোলো ঘন্টা শুটিং এর সেটেই আছেন তারমধ্যে কাজ করেছেন টানা হয়তো সর্বসাকুল্যে ছয় ঘন্টা বা বড়জোর সাত ঘন্টা, বাকিটা সময় গেছে সেট রেডি করতে, মেকআপ করতে, খাওয়াদাওয়া তো আছেই, একবার ভাবুন ধরে নেওয়া যাক উনি ষোলো ঘন্টায় কাজ করেছেন কিন্তু পারিশ্রমিক হিসেবে কতটা আবদার করছেন ঘন্টা প্রতি কয়েক লক্ষ্ টাকা। নিজস্ব প্রতিভা বা এযাবৎ আয়ত্ব করা কোনটা করেছেন?বেশির ভাগ শিল্পীর ক্ষেত্রে একটা সৌষ্ঠব শারীরিক গঠন, কিন্তু অভিনয় করতে যেটা প্রয়োজন অর্থাৎ অভিনয়ের অনুশীলন সেটা কি করেন সেক্ষেত্রে তো বেশির ভাগই লবডঙ্কা। ভাবসাব কিন্তু বিশাল,একটু কম কথা বলা, শুটিং দেখতে আসা মানুষজনের কাছে একটু গা এড়িয়ে চলা একেবারে এব্যাপারে সিদ্ধহস্ত, সামনে পিছনে দেহরক্ষী কারণ নিজেরাই জানেন যা অভিনয় করেন তাতে এরাই বাঁচাবে, মানুষকে বোকা বানিয়ে তো টাকার কেল্লা তৈরী করছেন প্রতিনিয়ত ।

           এবারে বলি ঠিক বিপরীত কথা এই অভিনেতা বা অভিনেত্রীদের একমাসের জন্য কোনো বেসরকারী বা আধা সরকারী জায়গায় কাজ করতে বলুন তো। ধরে নেওয়া যাক উনাকে প্রথম দিন থেকেই উচ্চপদস্থ সংস্থায় নিযুক্ত করা হোলো, পারবেন না একেবারেই হলফ করে বলে দিতে পারি, কাজ করতে । যাঁরা চাকুরে জীবি তাঁদের ক্ষেত্রে এমনকি কোনো কোনোদিন lunch পর্যন্ত skip ও করতে হয়।যোগ্যতাই সে এই ধরণের সাধারণ লোকেদের ধারে কাছে আসতে পারবেন  না । মাসোহারা একটা উচ্চপদস্থ কর্মচারী টানা দশ ঘন্টা খেটে যা রোজগার করেন সেটা যদি ঘন্টা হিসেবে ধরা হয় তাহলো শো তে বিবেচিত হয়, অথচ ইনারা লক্ষ পেয়েও সন্তুষ্ট নন। প্রতিটা ক্ষনে তাঁদের সিনেমার সাফল্যের পরে যে কথাগুলো বলেন সেগুলো হোলো মানুষজনকে ইমপ্রেস করার বা এক অর্থে বোকা বানান আর আমরা সেগুলো গামর্দন করি। আরেকটা কথা প্রায়শই শোনা যায় স্বদেশের সিনেমা নিয়ে বিন্দুমাত্র আলোচনা ইনারা করেন না প্রসঙ্গ উঠলেই জাপানের Akira Kurosawa, বা বিদেশী নামীদামী শিল্পীদের  নিয়ে এমন বলা শুরু করবেন যেন সত্যজিৎ রায়, মৃনাল সেন উনাদের ধারে কাছে আসেন না, এবং যাঁরা বলছেন তাঁরা অভিনয় সম্বন্ধে হয়তো পুরোটাই বুঝে ফেলেছেন I অথচ এই Kurosawa 1975 সালে সত্যজিৎ রায় সম্বন্ধে যা বলেছিলেন  …” I feel that he is a “giant” of the movie industry. Not to have seen the cinema of Ray means existing in the world without seeing the sun or the moon".  কই সে ধরণের মন্তব্য তো বিশেষ একটা শোনা যায় না উনার প্রতি।উপরন্তু বলিউডের সম্ভ্রান্ত তারকারা যাঁদের আমরা তোল্লা দিয়ে রেখেছি কি করেই চলেছেন সমান তালে , দেশটাকে একটা মাদক দেশ বানিয়ে ফেলেছেন এতটুকুও লজ্জা বোধ কাজ করে না ইনাদের। দেশটাকে শুধু বিকিয়ে দিতে বাকি, দোষ করবেন, আবার উঁচু গলায় কথা বলতেও ছাড়বেন না যেন সব দোষ জনগণের উপর বর্তায়। আচ্ছা বিকাশ রায় কে মনে পরে সেই বেঁটেখাটো রোগাটে গড়নের মানুষটা, কোনোদিন তো জিম করেন নি বা শুনিনি গেছেন কিনা, দেড় কিলোর muscle ও উনার ছিল না, কি করেছিলেন অভিনয় শিল্পে সেই” বিয়াল্লিশ” নামক সিনেমাটিতে যাতে লোকজন মারতে এসেছিলেন তাঁকে মনে পড়ে? ইনারা হলেন জাত অভিনেতা যেমন পাত্রে ফেলবেন ঠিক তেমনটারই আকার ধারণ করবেন এটাই তো শিল্পী। একটা খুব প্রচলিত কথা আছে old is Gold , আমার ব্যক্তিগত ধারণা but present is platinum , আগের দিনে সবই ভালো ছিল এমত পোষণ করি না, বর্তমান  অনেক বেশি সুযোগ সুবিধে কিন্তু তার ব্যবহার যেভাবে হয়ে চলেছে সিনেমা জগতে সেখানে আপত্তি আছে।  যেভাবে ভারতীয় সিনেমা হোঁচট খেয়ে চলেছে মাদকাসক্তিকে আসক্ত হয়ে, সেদিন আর বেশি দেরি নেই, হুমড়ি খেয়ে মুখ থুবড়ে পড়তে। আসলে আমাদের দেশে  আইন বড়ই শিথিল, তা না হলে একজন মাদকাসক্ত বা ধর্ষক ব্যক্তি দোষী সাব্যস্ত হলে প্রথমেই একজন আইনজীবী কি ভাবে তার রক্ষী হয়ে দাঁড়ান শুধুমাত্র পয়সার বিনিময়ে মিথ্যে কে সত্যি প্রমান করতে,  এখানেই তো বিচারের প্রথম ভুল। ভাবলেও অবাক লাগে। আসছি আমার পরবর্তী লেখায় "status গুলো cactus" এ পরিণতি হয়েছে, জীবনের কাঁটা পথ তা বেছে নিতে বিন্দুমাত্র দ্বিধাগ্রস্ত নন ফিল্মি দুনিয়া হয়তো, সেটাই তাঁদের status,জানেন যে টাকা থাকলে উকিলের চিঠিতেও তাঁরা ভীত নন।

কিছুদিন আগে এক ব্যঙ্গ কৌতুকে ভরা আমরাই কবিতা তাই আপনাদের আবার করে শেয়ার করলাম, কবিতাটির নাম -

ঢিঙ্কা চিকা 


বারো মাস আমি , বারো রকম ভাবে,
                              তোমায় ভালোবাসবো,
ঢিঙ্কা চিকা, ঢিঙ্কা চিকাই,
         আমরা তো নাচবো, দেশকেও  নাচাবো।

Abcd আর পড়বো না আজ,
                   ভাবছি ওসব যত বাজে কাজ,

বুলি আউড়ে, স্লোগান উড়িয়ে,
                      করবো শুধুই দেশ বাজিমাত।


মন্ত্রী গুলো যন্ত্রী হয়েছে,
                      তা দেখেই সব উচ্ছন্নে গেছে,


ওরা যেটাই ঠিক ভাবে আজ,
                            কুলুপ এঁটে নেই প্রতিবাদ।

সেলিব্রিটি হলে এটাই মজা,
                       ওঠার সিঁড়িটা বড্ডো সোজা।

নন্টে ফন্টের ভারী দুঃখ আজ,
                         নাচিনি কেন তাই ,
 কপালে আজও  ভারী দুশ্চিন্তার ভাঁজ।






Comments

sadamata101.blogspot.com

B-47#বিশ্বকর্মা_পূজো

সন্তোষ ঢাকি

B-71#GANESH_PRASADAM. ( গনেশজির ভোগ নিবেদন মোদক ও পূরণ পুলি)