B-99# পিতৃহারা মাধু (শুভ ও সুমেধার সপ্তদশ অধ্যায়)


পিতৃহারা মাধু (শুভ ও সুমেধার সপ্তদশ অধ্যায়)

মাধু ও তার ভাই এই নিয়ে তাদের অনিশ্চিতের  পরবর্তী জীবন শুরু। কতোটুকুই  বা তাদের বয়স যেখানে ভালোবাসা চলে যায় সেখানে ছিবড়ে হয়ে পড়ে থাকা ছাড়া আর কি উপায় আছে। মা বাবার ভালোবাসা,স্নেহ, আদর থেকে তো কবেই বঞ্চিত ছিল তারা দুই ভাই বোন। অনেকটা আখের লাঠির মত তাদের জীবনটাকে  পিষতে পিষতে জীবনের বেঁচে থাকার রস টাও ছিনিয়ে নিয়েছে পরিস্থিতি।

এখন তারা ছিবড়ে হয়ে বসে আছে বাবার ট্রেনে কাটা পড়া দুটুকরো হওয়া দেহটার পাশে। মাধু কখনো স্বাভাবিক আবার কখনো কিংকর্তব্যবিমূড় হয়ে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে এক কোণে। ভারী অদ্ভুত লাগলো এই হেদুয়াকে দেখে, মাধুর কাছে কত শুনেছি ওর কথা পোষ্য বলেই হয়তো সব পরিস্থিতি ও বোঝে। আপোস করে চুপ করে বসে আছে মাধুর পাশে একেবারে মুখটা মাটির সাথে টান টান করে শুয়ে শেষ যাত্রায় সে ও হয়তো সামিল হয়েছে।

     ন কাকিমা, গাড়িতে বসে কি লিখে চলেছো? নিশ্চয় মাধুর সম্বন্ধে। জানো এই তো কটা দিনের আলাপ তারমধ্যে তার ভালোবাসা, উচ্ছাস, আনন্দ ছোটো ছোটো ব্যাপারে মাতামাতি বাড়িতে কান ঝালাপালা হয়ে উঠতো। মলি বিদেশ যাওয়ার পর থেকেই ও হয়ে উঠেছিল আমাদের একটা গল্প করার সঙ্গী।

জানতাম সে দুঃখী তাই চেষ্টা করেছি তাকে সুখ, খুশি দেওয়ার তা আর হোলো কই আবারও জীবনে দুঃখ নেমে এল।  জানো তো শুভ, এরা জীবনটাকে এমন করে মেনে নেয়।হাসি তামাশা করে, তাই বোঝারই উপায় নেই এত কষ্ট লুকিয়ে থাকে এদের ভিতরে।

এদের ভালোবাসাতে কোনো খাদ নেই যখন দেয় তখন ষোলো আনায় দিয়ে ফেলে,কিছু অবশিষ্ট রাখে না নিজেদের জন্য। মাধুকে কোনোদিন কাঁদতে দেখিনি কিন্ত ওদের মনটা পড়ে বুঝতে পারি, এক নির্বিকার ফ্যাল ফ্যালে চেহারার কোণে সে দুঃখ চাপা আছে ।

 কেনই বা পরিচয় হয়েছিল তা না হলে তো এতটা কষ্ট আমাকেও পেতে হতো না। আচ্ছা শুভ তুমি টাকাটা দিয়েছিলে মাধুর হাতে যখন গাড়িতে উঠছিলে?
            এই রে কোথায় আর দেওয়া হোলো একেবারেই ভুলে গেছি, ঠিক আছে বেশি দূর তো আসিনি চলো গাড়ি ঘুরিয়ে দিয়েই আসি। আরেকবার মেয়েটি কে দেখা হয়ে যাবে ভালোই হোলো। প্রয়োজনে আজ রাতটা না হয় থেকেই যাবো কোথাও।

        বড়মা আমি জানতাম তোমরা ফিরে আসবে,মন বলছিলো। তাই দূর থেকে তোমাদের মোটর টা আসতে দেখেই ভেবেই নিয়েছি তোমরা সবাই আজ আমাদের বাড়িতে থাকবে। বাপ টা ভারী পাজী ছিল গো কষ্ট হচ্ছে তবে ভালোই হয়েছে, তোমাদের মত মানে মলি দিদির মত বাপ কি আর পেলাম বড়মা এজীবনে । মা বলতো ওটা ভাগ্য করতে হয়। যে যতটা নিয়ে এসেছে তত টাতেই চলতে হয়, বাকিটা কাজ করে পেতে হয়।আচ্ছা কাল তোমরা বাড়িতে গিয়ে মলিদিদি কে বোলো মাধুর বাপটা টেরেনে গলা দিয়েছে, তাই মাধু আর কাজ করবে না তোমাদের বাড়িতে।

আমি দিদির সাথে ঐ তালদি স্টেশনে পরোটা বানাবো, খদ্দের ধরবো, অনেক টাকা বানাবো আর ভাই কে ডাক্তার দেখিয়ে ওর ব্যামো টা ঠিক করবো। আমার আর চিন্তা কিসের ভাই ঠিক হয়ে গেলে সেও টাকা রোজগার করবে। অনেক টাকা হবে, আমাদের বাড়ি হবে, ভাইকে বিয়ে দেবো। কি রে ভাই বিয়ে করবি তো? দেখো তারে শুধালে কেমন হাসে।তবে তখন যদি বাপের মত গিলেছে দেখবে বড়মা মেরে তাকে আবার আগের মত করে দেবো, আমার রাগ জানেনা আমি “মাধু”।

কষ্ট দেখেছি বড়মা  সে কথা কোনোদিন তোমাদের বলিনি আর এই সদাইটা ও ওমন হলে আমি চলে যাবো। আচ্ছা দাও দেখিনি কিছু টাকা তোমাদের জন্য খাবার কিনে নিয়ে আসি।
              মাধু শোন্ তোকে কোথাও যেতে হবে না খাবার কিনতে, এই নে ধর হাজার পাঁচেক টাকা এটা রাখ। তোর আগামী দু মাসের টাকা দিলাম, বড়বাবা আসবে আবার সামনের মাসে তখন তোকে আরো কিছু দিয়ে যাবে। তুই ভাবিস না মাধু প্রতি মাসে তোকে আমরা নিজে এসে টাকা দিয়ে যাবো। আর ভাইয়ের জন্য ডাক্তারের সাথে কথা বলবো তুই চিন্তা করিস না সদাই ঠিক হয়ে যাবে।

আজ আর থাকবো না রে তোর দিদি তো আছে, আরো লোকজন আছে বাড়িতে আমরা দেখবি ঠিক আসবো। আর হ্যাঁ তোর হোটেল টা চালু হোক একদিন দেখবি আমরা খদ্দের হয়ে খেতে আসবো সেখানে, সেদিন তোর হাতে বানানো মচমচে পরোটা খাবো, তোর বড়বাবা  ওটা খেতে খুব ভালো বাসে।চলি রে মাধু ভালো থাকিস, ভাইকে ভালো রাখিস। আমরা কিন্তু তোর ভালোর জন্য বাকি জীবনটা তাকিয়ে থাকবো। 
          ন কাকিমা কি হোলো আবার কাঁদছো তুমি? তোমাকে তো কোনোদিন কাঁদতে দেখিনি এ ভাবে।

         না রে সুমি দেখবি মেয়েটার চোখে মুখে যা তেজ দেখলাম মনে হোলো সাক্ষাৎ মাচণ্ডী তাকে ভর করেছে। ও একদিন অনেক বড় হবে, বড় ব্যবসায়ী হয়ে উঠবে, সত্যি সত্যি অনেক টাকার মালিক হবে।জীবনে না পাওয়ার স্বাদ গুলো মিটোবেই মিটোবে। লক্ষ্য টা এদের অনেক বড় তাই দৃষ্টি টাও বড্ডো  মায়াবী। তবে কি জানিস এরা আবার সেই টাকার পিছনেও ছুটবে না। জীবন সম্বন্ধে এমন এক সুস্পষ্ট ধারণা ছোটো থেকেই, তাই  যেটা বলে সত্যি বলে। হতে পারে অন্যের খারাপ লাগে,তাতে গায়ে মাখে না। তোষামোদ মাধুদের জীবনে হয়তো কোনোদিনও আসবে না। জীবন সম্বন্ধে পরিণত ধারণার নামই হয়তো মাধু।


























































Comments

sadamata101.blogspot.com

B-47#বিশ্বকর্মা_পূজো

সন্তোষ ঢাকি

B-71#GANESH_PRASADAM. ( গনেশজির ভোগ নিবেদন মোদক ও পূরণ পুলি)