B-77#মাধু – দ্বিতীয় ভাগ(শুভ সুমেধার চতুর্দশ অধ্যায়)


মাধু – দ্বিতীয় ভাগ(শুভ সুমেধার চতুর্দশ অধ্যায়)

মাধুর সেই করুন কাহিনী, চরম দারিদ্রতার মধ্যে লড়াই, তার মধ্যেও যে একটুখানি আনন্দ পাওয়া যায়, সেই ছোটবেলা থেকেই মাধুরা তা বুঝতে পেরেছিলো। জীবনে সেই শেষ ভালোবাসার একমাত্র সম্বলটুকু মা, তাও  হারিয়ে গেলো। সে খুঁজে পেতে চায় তার শৈশবকে ,আবার করে ভাঙা গড়ার জীবন টাকে। মাত্র এই দুদিনে সে সুমেধা, শুভর মধ্যে একটা ভরসা খুঁজে পায়, একটা স্বপ্ন গড়ে তোলে, পাড়ার বাচ্চারাও মাধুকে একটা সঙ্গী হিসেবে আপন করে নিতে চায়। যেখানে দারিদ্রতা চরম সেখানে বোধহয় শুধুই সমঝোতা, নিজের ভুলকে হয়তো মেনে নেওয়া, আর শুধরে নেওয়া, একটা আপোষ যেটা হয়তো ব্যক্তিগত জীবনে করা হয়ে ওঠেনি মাধুর ক্ষেত্রে।

              সুমি,আজ চায়ের টেবিলে তোদের সাথে বসে একটা অভিজ্ঞতার সাক্ষী হলাম, এই বয়সে এসেও জীবনটা একটা নতুন মোড় নিলো কিছুই জানলাম না। যাক আজ আর সেই পাসপোর্ট নিয়ে কাজটা এগোনো গেলো না। তবে শোন্ কাল আবার আসবো, সংগে সব কাগজপত্র তৈরী করে রাখিস। আচ্ছা মাধু তোর তো রেশন কার্ড আছে তাই না? সুমি দে দেখি,ওটা  কি করতে পারি। ভাবছি সঙ্গে মাধুও যাবে আমাদের সাথে দেরি হোক ক্ষতি নেই, কিন্তু ওকে নেবোই, ও আমাদের সাথে যাবে।
            ন কাকিমা যা বলেছো, ওর সব কাগজপত্র আছে, রেশন কার্ড কেন, ওর আধার কার্ড ও আছে। ওর বড়দি সেসব করে রেখেছে, আমার কাছে তার ফটোকপি আছে। তবে ন কাকিমা একটা কথা এটা কি ঠিক হবে ওকে নিয়ে যাওয়া, বিদেশে বিপাকে, আমাদের কাছেই প্রথম তার উপরে ও, দাঁড়াও ওর বড়দিকে জিজ্ঞাসা করে নি রাজি হবে কিনা তারা।
                        কি বলছো বড়মা রাজি হবে মানে, তোমাদের সাথে ঘুরতে যাবো, দিদি রাজি না হলে আমাকে এখানে কাজে পাঠাতো? আমি তো যাবোই। ট্রেন দেখেছি কিন্তু চাপা হয়নি,
ঐ যে আমার দিদি যার পরোটার দোকান আছে তালদি স্টেশনে একদিন গিয়েছিলাম সে দোকানে। দিদি নিয়ে গিয়েছিলো। কি জোরে চলে গো, আর ভেঁপুর আওয়াজটা আমি তো ভয়ই পেয়ে গিয়েছিলাম। কি জোরে ছোটে বাপ্ রে বাপ্।
           মাধু, তোর ট্রেনে চাপতে ইচ্ছে করে? চল তোকে নিয়ে দুদিনের জন্য ঘুরে আসবো, আমাদের স্কুলের বাচ্চাদের নিয়ে সামনের সপ্তাহতেই যাবো ট্রেনে করে টাকি। একদিন থেকে আবার পরের দিনে ফিরবো ট্রেনে করে, যাবি তো? 
শোন্ তোর বড়মা আমরা যেখানে যাবো সেটা টেরেনে নয়, একেবারে পেলেনে।
           কি টেরেনে করে যাবো? শুনেছি ওটাতে বাড়ির মত বাথরুম আছে, দৌড়াদৌড়ি করা যায়, ছুয়াছুয়ি খেলা যায় তাই না বড়মা?

পেলেন তো অনেক উঁচু দিয়ে যায়, ধোঁয়া ছাড়ে আকাশে। আমাদের মরা পোড়া গ্রামের উপর দিয়ে যায় রোজ বিকেলে,জানো ঠিক চারটের সময়, আমরা তো রোজ দেখতাম।

সে তো রকেট? আমি কিন্তু চেপেছি জানো ছোটো পেলেনে। আমাদের গাঁয়ে মেলায় আসে, একটা পেলেনে একজন করে বসে, যা জোর ঘোরায় গোল করে, নেমেই কেমন মাথা টা ঘুরতে থাকে।

আচ্ছা তুমি যে রকেট পেলেনের মধ্যে চাপাবে বলছো ওটা তো সারা আকাশ গোল করে ঘুরবে, তাই না? আমি বাবা দেখলেই ভয় পেয়ে যাবো উঠবো না। দিদি ভাইদের ছেড়ে অতটা উপরে উঠবো না, মরে গেলে ওরা তো জানতেই পারবে না। আকাশেই মরে পরে থাকবো।
মাধু হয়েছে সে কথা আগে যাওয়া হোক না,তারপর না হয় দেখা যাবে । তুই এক কাজ কর ছাদ থেকে আমার কাপড় গুলো নিয়ে আয়, দেখিস আবার খেলতে শুরু করিস না যেন।
          জানো ন কাকিমা আমি যখন গিয়েছিলাম মাধুকে আনতে গাড়ি নিয়ে চোখ দিয়ে সমানে জল নেমেছিল সেদিন, মানুষ এতই গরিব হয় স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি। একদিকে ওর মায়ের ছোট্ট একটা ছবি সঙ্গে কোলে ওর ভাই আর হাতে খুব সম্ভবত মাধু।
একটা চৌকির একপাশে ওর বাবা নেশা করে ঘুমোচ্ছে, ভাইটা বড়জোর পাঁচ ছয় বছর হবে মাধু তাকে কোলে নিয়ে খাইয়ে যাচ্ছে, একটা মালসায় সামান্য ভাত না বলে  খুদই বলা যায়, সঙ্গে কলা সেদ্ধ বোধহয়, সেটা জল দিয়ে মেখে মাধু খাইয়েই চলেছে ভাই কে। প্রথমটা বুঝতেই পারিনি, ওর দিদি না বললে বুঝতেই পারতাম না ওটাই যে মাধু। আমার বড্ডো কষ্ট হচ্ছিলো মেয়েটিকে এভাবে বাড়িতে আনতে, আমি তো দেখেই রাজি হয়নি, কেবলই ভাবছিলাম একেবারে কোলের শিশুটিকে যাকে মাধু মাতৃস্নেহে বড় করছে, আমি সেই মাধুকে ছিনিয়ে নিয়ে যাচ্ছি আমার নিজস্ব বাড়ির কাজে এটা ঠিক করছি না। আমার সে কথা শুনে মাধুতো বলেই উঠলো-
বড় বাবা আমায় নিয়ে না গেলে আমার ভাইটা না খেতে পেয়ে মরেই যাবে, ইট ভাটায় আজকাল কাজ হয় না ,
হলেও মাঝে মাঝে তা পয়সাই দেয় না বাবুরা, তিনদিন কাজ হলে একদিনের পয়সা দেয়, আর পয়সা আনতে আনতেই শেষ দেখছো না বাপটা মদ গিলে শুয়ে পড়ে আছে। তুমি কাজে না নিলে আমরা তো মরেই যাবো গো। ভাইটার কথা ভাবছো তো?সে দিদি নিয়ে যাবে। তালদি স্টেশনে দিদির পরোটার দোকান আছে ওখানে ও শুয়ে থাকবে এক কোনায় ও তো ঠিক মত উঠে বসতে পারে না, ছোটবেলায় বাবা ওকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিলো তখন থেকেই ওর মাথায় লেগেছে, আমি কাজ করে টাকা না আনলে ও আর কোনোদিনও তো উঠতে পারবে না বড়োবাবা। কে দেখবে বলো?
           জানো কাকিমা জীবনের চরম সত্যটা মাধুরা বোঝে, আপোস করতে হয় মাধুদের প্রতিটা ক্ষনে ক্ষনে সেখানে ভাই কে ছেড়ে যাওয়ার মায়া মমতা বিন্দুমাত্র কাজ করে না, ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে মাধুদের দৃঢ় সংকল্প, একেবারে স্বচ্ছ জলের মত এইটুকু বয়সেই বুঝতে পারে। আসার সময় সঙ্গে একটা জামা প্লাস্টিকে নিয়ে আমায় বলে -
         চলো বড়োবাবা আমি যাবো। ভাইকে ঈষৎ চুমু দিয়ে বললো ভাই দিদির কাছে থাকিস আমি যাচ্ছি, প্রতি মাসে আসবো তোকে দেখতে। আর শোন্ তোর মাথাটার জন্য অনেক টাকা লাগবে ঠিক করতে, তাই আমি কাজে যাচ্ছি। বাবা ও বাবা ওঠো আর ঐ সব খেয়ো না, অবশ্য টাকা কোথায় পাবে, এতদিন তো আমিই তোমাকে সে টাকা দিয়েছি, আমি চললাম বড় বাবাদের বাড়িতে কাজ করতে।
         তার বাবা উঠলো ঠিকই কিন্তু কি বুঝলো জানি না আবার ওপাশ ফিরে শুয়ে পড়লো। মাধু গাড়ির পিছনের সিটে বসে, দেখলাম চোখটা তার ছল ছল করছে। কিন্তু সে চোখে জল গড়িয়ে পড়ছে না। দেখি মাধু ঘুরেঘুরে তার ভাইকে দেখছে । ভাই দিদির কোলে আমার গাড়িটাকে হাত নেড়েই চলেছে সমানে, আমি নিজেও সামলাতে পারিনি সেদিন।  কাকিমা তুমি এক কাজ কোরো ওকে বিদেশ নিতে হবে না, তুমি বরং ওর ভাইয়ের চিকিৎসার জন্য সে অর্থ দিয়ো, এতে মাধুও খুশি হবে, আর বাচ্চাটাও আগামী জীবনে উঠে দাঁড়াতে পারবে।







Comments

sadamata101.blogspot.com

B-47#বিশ্বকর্মা_পূজো

সন্তোষ ঢাকি

B-71#GANESH_PRASADAM. ( গনেশজির ভোগ নিবেদন মোদক ও পূরণ পুলি)