B-90 #সংরক্ষণ ও চৈতন্ হেমব্রম

              সংরক্ষণ  ও চৈতন্ হেমব্রম 
পৃথিবীর সবথেকে দীর্ঘ ধারা এই ভারতীয় সংবিধান। যখন রচনা হয়েছিল তখন 395টি Article , 22 parts , ও 8 টি schedule ছিল। এই মুহূর্তে 448 Article, 25 parts, ও 12 টি  schedule আছে। যার মধ্যে 104 টি ধারা সংশোধন করা হয়েছে। 25th January 2020 তে, তা দলিত সম্প্রদায়ের  অর্থাৎ SC ও ST দের  সংরক্ষণের ক্ষেত্রে সময়সীমা বাড়ানোর জন্য লোকসভায় তা পেশ  করা হয়  আগামী দশ বছরের জন্য।দেশের আইন আছে, নিয়মকানুন ও আছে ,সব কিছুই সংরক্ষিত ও নথিভুক্ত। কিন্তু কতজনই বা পায় আবার কতজনই বা জানেন বিশেষ করে দলিত সম্প্রদায়ের লোকেরা।
সরকারের এই নিয়মকে সাধুবাদ জানাই অন্তত প্রচেষ্টা তো আছে। প্রথমেই বলি দলিত সম্প্রদায় একটা এঁটে দেওয়া তকমা বহু পূর্বের। একটা অস্পৃশ্য জাতি বলে ভুল ধারণা নিয়েই মানুষের মধ্যে বিভেদের একটা টানা বলিরেখা। আদৌ কি অস্পৃশ্য ম্লেচ্ছ বলে কিছু আছে। তাঁরা ও তো মানুষ, তাহলে এই বিভেদের সুস্পষ্ট কারণ কি? এতই যদি বিভেদ হয় তাহলে কি সংরক্ষন করে, সরকার মহাশয় কি প্রমান করতে চান? দলিত সম্প্রদায় কি রয়েল বেঙ্গল টাইগার যে সংরক্ষণ করতে হবে। সংরক্ষণ ভালো কিন্তু ecosystem যদি ব্যাহত হয় তাহলে এই টাইগার ও একদিন মানুষ্য জাতিকে সমূলে বিনষ্ট করবে।দেশ স্বাধীনতা পেয়েছে প্রায় সত্তর বছর অতিক্রান্ত, এখনো যদি চলে এই একই সংরক্ষণ তাহলে কি ভারতবর্ষের ecosystem পুরোপুরি পাল্টাবে না। বহু মানুষজন এখন তো ধরেই নিয়েছেন এটি তার হকের পাওনা।ভারতবর্ষের প্রায় বহু নামি দামি জায়গায় তাঁরা স্থান পেয়েছে মেধা তালিকায় নয়, সংরক্ষণের তালিকায়, এ আমার আপনার প্রত্যেকের জানা।

এবারে বলি চৈতন হেমব্রম কেন আমার এই লেখার মধ্যে উঠে এসেছে, সেও তো সেই একই সম্প্রদায়ের, পদবি দেখে আশা করি পুরোটাই বুঝতে পারছেন।
চৈতন আমার একেবারে বাল্যকালের  স্কুলের সহপাঠী। বড্ডো সুন্দর তার হাতের লেখা, একেবারে গোটা গোটা। একবার ক্লাস নাইন এ সে বাংলায় সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছিলো। আমাদের বাংলা শিক্ষিকার নাম ছিল পিসিমনি। অত্যন্ত বৃদ্ধা ও শিক্ষা দীক্ষায় পারদর্শী উনি এসে খুব জোর দিয়ে উৎসাহের সাথে ক্লাসে বলেছিলেন  “চৈতন্ আমাদের গর্ব, সে এত সুন্দর লিখেছে তার চিঠি লেখা, রচনা লেখা অনেক কিছুই ভাবায়, ভাষার ও চিন্তাশক্তি সত্যিই প্রশংসার অধিকারী”। খুব ভালো ফুটবল খেলতো সে, পায়ের কাজ ও ছিল যথেষ্ট।
এবারে বলি এক অন্য প্রসঙ্গ, গতবছর আমারই আরেক সহপাঠীর স্ত্রী বিয়োগ হয় এক দুর্ঘটনায়, তাই আমরা সকলে গিয়েছিলাম সে শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে যোগ দিতে। আমরা এসেছি খবর পেয়ে চৈতন ও এসেছিলো আমাদের সাথে দেখা করতে, প্রায় পঁয়ত্রিশ বছর পর দেখা। একটা জরাজীর্ণ জামা আর একটা কালো রঙের প্যান্ট পরনে। চৈতনের গায়ের রং মিশমিশে কালো। মাথায় সাদাকালো অল্প বিস্তর চুল। পায়ে খুব সম্ভবত হাওয়াই চপ্পল। সে একটা জায়গায় কাজ করছিলো খবর পেয়ে ছুটে আসে দেখা করতে। আমরা প্রত্যেকে কে কি করি- মত বিনিময় করছিলাম, এতটা বছর পরে দেখা। কার কয়টি ছেলেমেয়ে এই সব হাল্কা মেজাজের আলাপচারিতা। চৈতন্ কে জিজ্ঞাসা করাতে সে যা উত্তর দিয়েছিলো এই মুহূর্তে আমার লিখতে লিখতে গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠছে। বুকের পাটা না থাকলে কেউ সে কথা বলতে পারে না। আমরা তো সকলে একটা আবরণ ও প্রলেপ দিয়ে চলি জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে। কেনই বা সর্বসমূক্ষে তা প্রকাশ করবো। নিজেকে ছোট করে দেখানোর চেয়ে বড় করে দেখানো অনেক বেশি শ্রেয়, এটা আমাদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে গেছে। সেদিন চৈতন্ থেকে শিখেছিলাম কি করে আসল সত্যি টা বলতে হয়, চৈতন্ “ বাড়ি রং করে ”। যে প্রচন্ড আত্মবিশ্বাস ও জোর গলায় সে বলেছিলো সেদিন তার কর্মের কথা,  বন্ধু হলেও বলতে পারি চৈতনের হাওয়াই চপ্পলের পাশ দিয়ে বেরিয়ে থাকা পরিশ্রমী পায়ের বড় বড় আঙ্গুল গুলো, আর ফেটে যাওয়া গোড়ালি দেখে সেদিন মনে হয়েছিল ছোট বেলায় এক পাঠ্যের কবিতা “ওরা কাজ করে “।  মনে মনে সেই পা দুটোকে প্রণাম করতে বিন্দুমাত্র দ্বিধাগ্রস্ত হইনি সেদিন। জড়িয়ে ছিলাম চৈতন্ কে বুকে আগলে আমার পরনে ছিল সেদিন কচি কলা পাতার বড়লোকি জামা আর গ্যালাস দেওয়া জিন্স এর প্যান্ট। চৈতনের জামায় ও প্যান্টে লেগে ছিল ছিটে ফোঁটা রং। বেশ কিছুক্ষন জড়িয়ে ছিলাম একেবারে সজোরে। আলিঙ্গন করার সময় মনে পড়েছিল সেই রবীন্দ্রনাথের বিখ্যাত গান “ রং যেন মোর মর্মে লাগে, আমার সকল কর্মে লাগে, রাঙিয়ে দিয়ে যাও যাও..... ”। মনোরঞ্জন ব্যাপারী এই নাম টা google এ গিয়ে টাইপ করুন উনি নিজেই একজন দলিত সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি,পরবর্তীকালে উনি কিন্তু মহেশ্বতা দেবীর কৃপা প্রার্থী। কি সাংঘাতিক তাঁর পান্ডিত্য, বহু বই লিখেছেন। কিন্তু আজও মিডডে মিলের খাওয়ার তৈরী করে চলেছেন। সরকার মহাশয় এখনো কি বধির নাকি ধরেই নিয়েছেন কোনোরূপ কর্ণপাত করবেন না। আপনার আমার আসে পাশে বহু উদাহরণ রয়েছে যাঁদের সত্যিই দলিত তাঁদের তোলার বিশেষ প্রয়োজন।
চৈতন্ তো দলিত সম্প্রদায়েরই একজন, কই তাকে তো বিন্দুমাত্র ছোটোর চোখে দেখিনি কারণ একটাই সে শিক্ষিত ও আমার বন্ধু। কেন চৈতন্যের মতো ভুঁড়ি ভুঁড়ি লোক বেরোজগার। সরকার মহাশয়ের এই সংরক্ষণ কেন চৈতনের মনে উপযুক্ত প্রতিষ্ঠার রং ছড়ায়নি। ভারতবর্ষের সংবিধানে কি এর কোনো প্রতিকার আছে? সরকার কি ভাবেন এঁদের নিয়ে। একটু ভাবলেই কিন্তু সুরাহা হয়। যেমন বেশ কয়েকটি দৃষ্টান্ত হতে পারে এই দলিত মানুষ গুলোর জন্য যেমন ধরুন –
1. যাঁরা পঞ্চাশউর্ধ প্রথমেই তাঁদের একটা পেনশন চালু করা বিশেষ জরুরি,এটা তাঁদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য যাঁদের কোনো ধরণের দলিত হয়েও সেই সার্টিফিকেট নেই ।
2. পেনশনের থেকে গচ্ছিত অর্থের কিছুটাও যদি তাঁরা বাঁচাতে পারেন তাহলে সেক্ষেত্রে ব্যাংক মারফৎ সেভিংস এ তাঁদের সুদ 12% থেকে 15% একমাত্র তাঁদের জন্যই বহাল হোক।
3. Income Tax ফাইল যাঁদের বছরে পঞ্চাশ হাজারের নিচে তাঁদের ক্ষেত্রে আরও কিছু বাড়তি সুবিধে।
4. যাঁরা শিক্ষিত তাঁদের বিকেলের দিকে অবসর সময়ে অন্যকে পড়ানোর জন্য অবৈতনিক স্কুল ও খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা করা।
5. যাঁরা একেবারেই অশিক্ষিত অথচ কর্মঠ তাঁদের জন্য বৃক্ষ রোপন, গৃহনির্মাণের কাজ, মিউনিসিপালিটি তে কাজ, জঙ্গল সাফাইয়ের কাজ। 
6. কোনো রকমেই কোনো কন্ট্রাক্টর মাধমে নয় । পড়াশুনোর ক্ষেত্রে সরকারী স্কুলের প্রধান শিক্ষক বা অন্য শিক্ষকের হাতে তুলে দেওয়া দায়িত্ব,একেবারে হাজিরা ভিত্তিক স্কুলের পরে। অন্যান্য কাজের ক্ষেত্রে ব্লক বা গ্রাম পঞ্চায়েত কে তুলে দেওয়া। যাঁরা কাজ করছেন প্রতিদিনের হিসেব রাখা ও তার  বেতন বা অর্থ সপ্তাহান্তে ব্যাংক থেকে সেই পরিষেবা পাওয়া। ব্যাংক মারফৎ হলে টাকার কারচুপি অনেকটাই কমবে। প্রয়োজনে atm ব্যবহার করা ও তাঁদের শেখানো কি করে ব্যবহার করতে হয়।
7. একাজের দায়িত্বে যাঁরা থাকবেন কোনো ভাবেই তাঁরা যেন কোনো ধরণের দলের লোক না হন বা তাঁদের তকমা থাকুক দলের।
8. প্রয়োজনে যে সমস্ত sc বা ST এখন উচ্চ কর্মে প্রতিষ্ঠিত দিনের শেষে তাঁদের কে এই কাজের ভার দেওয়া।
9. এমনকি আলাদা ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠা করা একমাত্র তাদেরই জন্যে।
আরও অনেক কিছুই হতে পারে যা হয়তো পরবর্তী কালে ক্রমশ প্রকাশ্য। দেশের ইঞ্জিনীরিং সংস্থা, ডাক্তারি সংস্থা, post and telegraph সংস্থা, IAS , IPS , IFS সংস্থা, ব্যাঙ্কিং সংস্থা, INDIAN CUSTOM, BSF , প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে অমেধাবী লোকজন ভর্তি। এভাবে যদি দিনের পর দিন চলতে থাকে সেক্ষেত্রে প্রতিটি সংস্থার ক্ষেত্রেই একটি গন্ডমুর্খ সংস্থা তৈরী হবে। আর যারা সত্যিকারের মেধাবী তারা বিদেশে তো পাড়ি দেবেই কোনোভাবে চেষ্টা চরিত্র করে। যা বিগত দশ বছর ধরে হয়েই চলেছে। সরকার মহাশয় যখন ভাষণ দেন সেই একই কথা বলেই চলেছেন সেই দেশ স্বাধীন হওয়ার দিন থেকে উনারা কি করেছেন। ছাত্রেরা যেন বিদেশ না যায় এর জন্য তারা এখন সোচ্চার, তাই অনেক ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছেন। তাতে কি আদৌ কোনো সুবিধে হয়েছে একেকটা ছেলেমেয়েকে সে শিক্ষা দিতে মাথাপিছু খরচ 40 থেকে 50 লক্ষ টাকা মা বাবারা হিমশিম খেয়ে উঠছেন সে অর্থের যোগান দিতে।
শ্রদ্ধেয় কালাম সাহেব বলেছিলেন ও বুঝেও ছিলেন, তাই একটা কথা অত্যন্ত সন্তর্পণে বলেছিলেন দেশের আগামী দিনের হাল অবস্থা দেখে। উনি বলেছিলেন উচ্চ শিক্ষা করতে বিদেশ যেতে পারো তাতে অসুবিধে নেই কিন্ত সে শিক্ষা পাওয়ার পর যেন দেশের প্রতি ব্রতী হন সমস্ত ছাত্র ছাত্রীরা তবেই তো দেশের উন্নতি। কিন্তু একথাও বা কতজন মনে রাখেন বা ভাবেন। একবার যেতে পারলেই হোলো আর ফেরা নেই কারণ তারা জানে সেদেশে যোগ্য লোক যথার্থ সম্মান পান। স্বয়ং অমর্ত্য সেন উনি তো আগা গোড়ায় বিদেশে পড়াশুনো সেখানেই প্রতিষ্ঠিত ও সেখানেই তাঁর বাস। আসতে চাননি তা ঠিক নয়, যতবারই এসেছেন অনেকে তাঁর মতামত ঠিক হজম করতে পারেননি। পারবেনই বা কি করে কারণ যিনি উনাকে মাপছেন তাঁর নিজস্ব যোগ্যতাই  বা কত সুদূরপ্রসারী। আপেলের সাথে আপেলের তুলনা চলে, তরমুজ বা জামরুলের সাথে তুলনা কি চলে। রবীন্দ্রনাথ বা আইনস্টাইন দুজনেই দেখা হওয়ার পর কি কি কথোপকথন হয়েছিল তা আমাদের অজানা নয় কারো কাছে। যোগ্য লোক যোগ্য জায়গায় স্থান পাক এতেই দেশের ও দশের উন্নতি। সেটা যে দেশ বুঝবে তাঁর উন্নতি অবশ্যম্ভাবী।



Comments

sadamata101.blogspot.com

B-47#বিশ্বকর্মা_পূজো

সন্তোষ ঢাকি

B-71#GANESH_PRASADAM. ( গনেশজির ভোগ নিবেদন মোদক ও পূরণ পুলি)