B-78#মাধুর - তৃতীয় ভাগ – হেদুয়া ভেদুয়া ( শুভ সুমেধার পঞ্চদশ অধ্যায়)

মাধুর – হেদুয়া ভেদুয়া ( শুভ সুমেধার পঞ্চদশ অধ্যায়)

আয় আয়,আয় আয়, এই হেদুয়া আসবি আমাদের বাড়ি, কি রে বসে আছিস কেন? জানিস আমাদের মরা পোড়া গাঁয়ে তোর একটা দাদা আছে ওর নাম ভেদুয়া, তুই তো খুব ছোটো ভেদুয়ার থেকে তাই তোকে হেদুয়া বলেই ডাকবো। বুঝলি? কি রে চুপ করে মাটিতে মুখটা বাড়িয়ে শুয়ে আছিস কেন? খেতে দেয়নি বুঝি তোকে তোর মালিক। চলে আয় এখানে,আমাকে জানিস এরা পেট ভরে খেতে দেয়, বড় মা বড় বাবা খুব ভালো এখানে অনেক খাওয়ার। আর হ্যাঁ শোন্ আমাকে যা খেতে দেয় খেয়ে শেষ করতে পারিনা, কি আছে তুই ও খাবি আমার সাথে রাতে আমার সাথে ঘুমোবি। জানিস ভেদুয়াটা এখন খেতে পারছে না বোধহয়। আমরা এমনিতেই গরিব তার উপর নিজেদেরই অর্ধেক দিন খাওয়া হতো না তো গাঁয়ে। জানিস যেদিন খাওয়া হতো না আমরা দুজন দুজনের গলা জড়িয়ে শুয়ে পড়তাম। 


কি আছে হয় ,এগুলো তো আমাদের গাঁয়ে ঘরে ঘরে কত লোক যে খেতে পায় না।  তুই আসবি কি তাহলে দরজাটা খুলে দেবো?
             মাধু এই মাধু ছাদে কার সাথে কথা বলেই চলেছিস। তোকে তো ছাদে পাঠানো বড়ই মুশকিল, এখানে চিনিস না জানিস না কাউকে, সবে এক সপ্তাহ হয়েছে, অমনি সবার সাথে যেচে আলাপ করেই চলেছিস, নিচে নেমে আয় বলছি। দাঁড়া তোকে স্কুলে ভর্তি করে দেবো তাহলে আর তোর ছাদে যাওয়া বন্ধ হবে।

              বড়মা কারো সাথে না গো ঐ হেদুয়াটার সাথে কথা বলছিলাম, সারাদিন ও বোধহয় খায়নি জানো। বড়মা একবাটি মুড়ি দেবে সঙ্গে একটু বাতাসা, আচ্ছা ঠিক আছে কাল থেকে আমায় দিতে হবে না, আমার ভাগের টা ওকে দিলেই হবে। বেচারাটা কিছু বলতে পারেনা তো তাই, দেখো রাস্তার মাঝখানে শুয়ে আছে। আমি জানি ওদের খিদে পেলে ওরা ওমন করে, আমার ভেদুয়া টাও একই জিনিস করতো। যেদিন বাড়িতে খাওয়ার হতো জানো বড়মা আমি না খাওয়া পর্যন্ত ও খেতই না, খুব বোঝে গো আমার ভেদুয়াটা আসলে মেয়েতো তাই। শোনো না, একবাটি দাও দেখিনি এখুনি দেখালেই চলে আসবে। আমি রাখবো তোমার কোনো ভয় নেই বরং রাতের বেলায় ও পাহারা দেবে এ বাড়িতে দেখবে তখন একটা চোর ও আসবে না।

             আরে কি শুরু করলি আমি যত অপছন্দ করি ততই দেখি আমার উপর পেয়ে বসে এসব জিনিস। মলিটাও চেয়েছিলো রাখতে আমি রাজিই হয়নি। এবার তুই আরম্ভ করলি। এই শোন্ এটা ছেলে না মেয়ে। মেয়ে হলে কিন্তু রাখবো না এক্ষুনি তাড়াবো। অনেক ঝামেলা এমনিতেই পারছি না তার উপর মেয়ে হলে তো কথাই নেই সব কটা ছেলে এসে হামলে পড়বে। না বার করলেই ব্যস চীৎকার অশান্তি করে আমার বাড়িতে ওদের ঝগড়ায় দক্ষ যজ্ঞ বেঁধে যাবে, তুই পারবি তো সামাল দিতে মাধু? ঐ দেখ নির্ঘাত এটা মেয়ে কতগুলো সদর দরজায় দাঁড়িয়ে পড়েছে চীৎকার করছে। ও মা দেখো দিখি কান্ড এতো ছেলে, সত্যিই কলিকাল এখন ছেলেগুলোর পেছনে দেখছি মেয়ে গুলো আসছে। 

সর্বনাশ এই মাধু তুই দরজাটা লাগাবি এদের চিৎকারে কানে তো শুধুই ঘেউ ঘেউ ছাড়া কারোরই কথা শোনা যাচ্ছে না। দেখ ফোন বাজছে নির্ঘাত মলি, যা বলেছি কি রে মাধু তোর হেদুয়া টাকে চুপ করাবি আমি তো কথাই বলতে পারছি না।

         মা তুমি কি গো কতবার ফোন করেই চলেছি এই নিয়ে তিনবার, আমি তো ভয় পেয়ে গেলাম কি জানি কি হোলো। বুঝেছি আমি যেটা চাইতাম করতে দাও নি এবার বোঝো তোমার মাধুই আমার সে শখ মেটাচ্ছে, বাবা কি আওয়াজ শুনেই বুঝতে পেরেছি, এটা মাধুরই কাজ। জানো মা কি হাসি পাচ্ছে তুমি নিশ্চয় লাফাচ্ছ এখন আওয়াজে, বাবা তো কানে কম শুনে তাই রক্ষা। দুপুরে দেখো না যা চেচাবে না ঘুমোতেই পারবে না, বাবার অবশ্য অসুবিধে হবে না নাক ডেকে ঘুমোবে, কানের মেশিন টা খুলে দিলে তো কথাই নেই। দাও দেখিনি মাধুর সাথে একটু কথা বলি।

                       দিদি বাড়িতে হেদুয়া কে এনেছি, ও খুব ভালো জানো, দাঁড়াও না দুপুরে ওকে স্নান করিয়ে দেবো, বড়মা বুঝতেই পারবে না ওকে দেখে, কতদিন স্নান হয়নি তো তাই সারাটা শরীর ওর নোংরা জমে আছে । আমাকে যে সাবানটা দিয়েছে ওটা দিয়ে ওকে ভালো করে স্নান করিয়ে তারপর একসাথে আমরা খেয়ে দুপুরে ঘুমাবো। রাতে দেখবে না যা চীৎকার করবে না,একটা চোর ও আসবে না। ওকে তো আমি দুদিনেই মোটা করে দেবো। এই নাও বড়মার সাথে কথা বলো, হেদুয়াটা পালাতে চাইছে আবার রাস্তায়।

          এই শোন্ মাধু এসব নোংরামি করবি না ওর জন্য আলাদা থালা দিচ্ছি ওটাতেই ওকে খেতে দিস। মলি কি ঝামেলায় পড়েছি রে মাধুটাকে নিয়ে কোনো কিছুতেই আটকাতে পারি না।বকতেও পারিনা, অভাবী মেয়েটা তবে কথাবার্তা খুব ভালো গুছিয়ে কথা বলে। জানিস তোর বাবা কাল স্নানে গেছে আমি পূজো করছি অমনি একটা ফোন এসেছে তোর বাবার মোবাইলে, মাধুতো ছুট্টে গিয়ে বাথরুমের পিছন থেকে গিয়ে জাফরী দিয়ে তোর বাবাকে বলেছে বড়োবাবা তোমার ফোন। তোর বাবার কি লজ্জা কাল আমায় বলছিলো, মাধুটাকে বলে দিতে এভাবে আর সে না করে।


         বেশ হয়েছে তোমাদের শিক্ষা হয়েছে, তবে তোমাদের কিন্তু ভালোই সময় কাটছে বলো। এক মেয়ে বিদেশে গেছে আরেক মেয়ে এসেছে। যাক মা আমিও নিশ্চিন্ত, তোমাদের ওকে নিয়ে কেটে যাচ্ছে। নামটা কিন্তু ভালোই দিয়েছে হেদুয়া, মা শোনো না, একটা সেলফি পাঠিও তো তোমার বাবার আর হেদুয়া কে নিয়ে।যাক রাখি পরে কথা বলবো।
           ঠিক আছে রাখ, পরে ফোন করিস এবার তোর বাবার সাথে তো কথাই হোলো না। জানিস ন কাকিমা বলছে মাধুকে নিয়ে যাবে তোর ওখানে। ন কাকিমা তো জানে না সঙ্গে হেদুয়া জুটেছে, এবার কি করে দেখি। আচ্ছা রাখি, দেখি ওটা কি করছে আমার কাজ আরো বেড়ে গেলো। এখন কোথাও যাওয়ার ও উপায় নেই এটাকে ছেড়ে।
            শোন্ হেদুয়া যা বলবো তাই শুনবি,একটু যদি উল্টোপাল্টা করেছিস না দেখবি। বড় হও, তোকে আমাদের গাঁয়ে নিয়ে যাবো ওখানে তোর বৌ আছে ভেদুয়া তার সাথে তোর বিয়ে দেবো। 

আজ আমার সাথে খেতে বসিস জানিস এরা মানে বড়মা আজ মাছ রান্না করেছে। কি লোভ লাগছে শুনে কতদিন খাইনি, তুই ও নিশ্চয় খাসনি বল? খালি তো লোকের বাড়ির মাছের কাঁটা খেয়েছিস আর ভাত ডাল সেটাও মাঝে মাঝে। ইসস তোর পেটটা কত ঢুকে গেছে রে হেদুয়া। মা বলতো স্নান করলে খুব খিদে পায়,যাক তোর ও নিশ্চয় পেয়েছে আর কষ্ট হবে না। আমরা এতকাল খেতে পাই চাই না পাই, তুই তো পাচ্ছিস, আমি তাতেই খুশি। খেয়ে ওঠ তোর গলায় একটা লাল কাপড় পরিয়ে দেবো কেউ যেন নজর দিতে না পারে তোর উপর।

জানিস হেদুয়া, ভেদুয়াটার জন্য কষ্ট হচ্ছে কি জানি কেমন আছে না খেতে পেয়ে মরেই গেলো বোধহয়। বা হয়তো রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছে একে তো খেতে পাবে না খিদার জ্বালায় সে চীৎকার করবে, তার চীৎকার শুনে লোকে তো বুঝবে না, না বুঝে বেচারাকে ঢিল খেয়েই মরে পরে থাকতে হবে  রাস্তায়। জানিস আসার সময় সে আমাদের গাড়ির পিছনে ছুটতে ছুটতে তালদি স্টেশন পর্যন্ত এল। কার কার জন্য কাঁদবো রে হেদুয়া বাড়িতে ভাই ওটা কথাও বলতে পারে না, আর ভেদুয়ার ও একই অবস্থা। যাক তুই আর আমি নতুন এবাড়িতে আমরা ভালোই থাকবো কি বলিস। চল চটপট খেয়ে নি বিকেলে তুই আর আমি দৌড়োতে যাবো।



Comments

sadamata101.blogspot.com

B-47#বিশ্বকর্মা_পূজো

সন্তোষ ঢাকি

B-71#GANESH_PRASADAM. ( গনেশজির ভোগ নিবেদন মোদক ও পূরণ পুলি)