B-94#বৃদ্ধার পুজোর সাজ

বৃদ্ধার পুজোর সাজ
সকালে উঠে চুল কাটতে গিয়েছি বিশাল লাইন। নম্বর পেলাম পাঁচ। সকলে ব্যস্ত পুজোর স্পেশাল ছাঁট দিতে। কেউ প্রায় অর্ধেক মস্তক মুন্ডন করছে। দেখে মনে ভাবলাম পিতা মাতা যাওয়ার হাল্কা পূর্বপ্রস্তুতি নিচ্ছেন আগের থেকেই অল্পবিস্তর।আবার কেউ কালো ঝুলপিতে একদিকটা সাদা আরেকদিকটা সোনালী রং করছে। দুই কানে দুল তবে ছোটো নয় একেবারে ঝুমকো, এটাই বোধহয় 2020 দুর্গো পুজোর সাজ মনে মনে ভাবলাম। আবার কেউ নানান ভঙ্গিমায় দেখছেন চুলের সাজ আয়নার সামনে, কেমন করলে, দেখতে কতটা সুন্দর লাগবে। আজকাল হেয়ার কাটিং সেলুনগুলো আগের মত নয়। পুরোটাই ঝাঁ চকচকে এতটা অতিরঞ্জিত মনেই হবে না এটা সেলুন নাকি পার্লার।

আগেকার দিনে সেলুন ছিল যত্র তত্র নাপিত ভায়া একটা পিঁড়ি, একটা ভাঙা আয়না হাতে নিয়ে ঘুরতো আর চীৎকার করে বলতো “ চুল কাটাও”,বেশ দ্বিধা হতো মনে মনে তাই বাইরে গিয়ে দেখতাম কে এসেছে। রাজি হলে সঙ্গে সঙ্গে সে তার ডাক্তারি নাপিত বাক্স থেকে বার করতো কাঁচি, তিন চারটে একেবারে পুরোনো চিরুনি, আর থাকতো কেটে গেলে জ্বালা দেওয়ার ও রক্ত নিবারণ পাথর যার নাম ফিটকিরি। কাটতো অতি অবশ্যই বিশেষ করে ঘাড়ের দিকে। মা দেখে রেগে গিয়ে বাবাকে বলতেন আর বাবা বলতেন ও কিছু হবে না ফিটকিরি দিয়ে দিয়েছে। একই ফিটকিরি যে কতজনের রক্ত শোষণ করেছে কে জানে। চুল কাটতে কাটতে আরেকজন লোক প্রবেশ করতেন ও পাড়ার মাসিমারা তখন বেরিয়ে আসতেন  প্রায় সমার্থক ডাক শুনে “শীল কাটাও “। 
একটা ছোট্ট ভূমিকা দিলাম সেকালের চুল কাটার ফিরিস্তি।
আসা যাক একালের চুল কাটার একটা অভিজ্ঞতা যা আমি সকলের সাথে শেয়ার করছি। আমি বসে আছি বিনোদনের মাত্রার পুরো মজা নিচ্ছি গান বাজছে, এসি চলছে অপেক্ষায় কখন আমার সময় আসবে। এমন সময় প্রায় সত্তোর ছুঁই ছুঁই এক মাসিমা এসে কাঁচের দরোজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করলেন। পরনে সুন্দর একেবারে পাট করা সিল্কের শাড়ি, নতুন জুতো, আঙুলে সুসজ্জিত নেল পালিশ,এসে ঠিক আমারই পাশে বসলেন। উনি আসতেই আমি আমার পাশের চেয়ারটি বাড়িয়ে দিলাম উনার দিকে। মনে মনে ভাবলাম ভুল জায়গায় এসেছেন।
      কিছু বলার আগেই উনি বলেই ফেললেন লেডিস পার্লারে সেরম কিছু একটা লাইন নেই কি বলুন। আমি একটু মিচকি হেসে বললাম দিদি টিকিট টা বুক করুন তা না হলে আপনাকে বসতে হবে অনেকক্ষন। উনি বললেন তা গত সপ্তাহেই বুক করা হয়ে গেছে,আমার কাছে নোটিফিকেশন ও চলে এসেছে এইতো আর আধঘন্টা পরেই আমার ডাক। 
       আমি ভাবলাম ভদ্রমহিলা কত অ্যাডভান্স সমস্ত কিছুই জানেন। একালের কিনা তাই সব নখদর্পনে।এদিকে দেখি ঠুক ঠুক করে হোয়াটস্যাপ ও করছেন। আমার সাথে কথা ও বলছেন আবার হোয়াটস্যাপ এ কোনো লেখা আসলে তা উত্তর ও দিচ্ছেন। ভারী চমৎকার লাগছিলো উনাকে দেখে। কথা বলতে বলতে উনি বলেই ফেলেন,-
        এই একটু পেডিকিউর, মেনিকিউর, ফেসিয়াল আর চুলটা স্টেপ করবো। ভালো লাগলো শুনে মনে মনে ভাবলাম ভালোই তো।
   বয়সের কি এসে গেলো বৃদ্ধার শখ হয়েছে এজীবনে তা মিটিয়ে নিক।  এতক্ষনে বৃদ্ধা বলেন তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের কথা। কথার তেজ যেমন আছে বলার ভঙ্গিমা ও অসাধারণ যেমন ভাবে কথা বলছেন আশেপাশের বেশ কিছুলোকজনও বৃদ্ধার কথা মন দিয়ে শুনছেন।
গেলো বছর ঠিক এই পুজোর আগে আগেই আমার স্বামী গত হন, আমরা দুজনেই ঠিক করেছিলাম কলকাতার ঠাকুর দেখবো একসাথে,সেই টুরিস্ট বাসের সাথে কিন্তু তা আর হোলো না। কাকু বাজার থেকে ফিরছিলেন, সেই সময় একটা সজোরে বাসের ধাক্কা তারপর হাসপাতাল, আমাকে ডেকে পাঠানো হোলো প্রাণটা আছে তা দেখলুম, ডাক্তার বললেন অবস্থা খুবই শোচনীয়। 

বুঝলুম আর কিছুক্ষন,তারপর সব শেষ। ছেলে,বৌমা এল নিউজিল্যান্ড থেকে মাস খানেক পর,তারপর তারাও চলে গেলো - ব্যস সবশেষ। বয়সকালে বুঝলেন সব চট জলদি হয়,এটা বুঝবেন আরেকটু বয়স হোক আপনার তখন। এই একাকিত্ব জীবন কারো ক্ষেত্রে আগেভাগে আসে, আবার কারো ক্ষেত্রে দেরিতে আসবে তো বটেই।তবে হ্যাঁ সবটাই মেনে নিতে হয়। না মানলে চলবেন কি করে। এরপর তো আরও বাধা, বিধবা বলে লোকের ভুরু কোচকানো,কটূক্তি আরও কত কিছু। আর বৌ আগেভাগে চলে গেলে পুরুষদের কষ্ট টা আরও বেশি,ওরা তো সারাটা জীবন বৌদের উপর দিয়ে চালায় তাই এই অভ্যেস টা রপ্ত করতে বড়ই কষ্ট।এই রে লাইনটা চলে এল বোধহয় দেখি একটু অনুরোধ করে,যদি পরের নম্বরে ডাকে। আপনাকে পুরোটা তো বলাই হোলো না।
          মনে মনে ভাবলাম উনি আর কিই বা বললেন প্রায় সবটাই তো বলে ফেলেছেন। দেখি আসুক আর কি বলবেন শুনেই যাই জীবনে সমস্ত অভিজ্ঞতা জানাও জরুরি, আজ সপ্তমী বিশেষ কাজ ও নেই তেমন। কাল হবে না আমার বাল্যকালের বান্ধবী আসছে আমাদের বাড়িতে এই প্রথম, তাই চুলটা কেটেই যাই।
     যাক কোনো রকমে ম্যানেজ করে ফেললাম। হ্যাঁ কোথায় ছিলাম বেশ,আচ্ছা হ্যাঁ জীবনের ইতিবৃত্তান্ত বলছিলাম। উনি চলে যাওয়ার পর আমি মাস খানেক পর থেকেই সকালে মর্নিং ওয়াক শুরু করে দি কাছেরই একটা মাঠে। বাড়ির গলির মুখে এক অতি বৃদ্ধ বয়সটা উনারও সত্তর ছুঁই ছুঁই মুখার্জী বাবু ফ্ল্যাটে থাকেন। বিমলা আমার কাজের মেয়ে সে মুখার্জী বাবুর বাড়িতেও কাজ করে, উনার ও স্ত্রী বিয়োগ হয়েছে শুনেছি দশ বছর। একদিন, এই মাস তিনেক হবে দেখি মর্নিং ওয়াক করতে গিয়ে মুখার্জী বাবু বেশ হাঁফাচ্ছেন একটা বাঁধানো সিমেন্টের চেয়ারে চুপ করে

বসে আছেন। 

আমি চিনতাম কিন্তু কথা বলিনি কোনোদিন,সামনে যেতেই উনি ইশারায় পাশে বসতে বললেন। একটা সময় বলেই ফেললেন আসলে ওষুধ টা খাওয়া হয়নি তো তাই আর কি। ঠিক হয়ে যাবে। এরপর প্রত্যেকদিন দেখা হয় হাল্কা হাসি বিনিময় আবার উনিও চলে যান আর আমিও। গেলো মাসে আমার সেই পুরোনো ইচ্ছে জেগে উঠলো আগামী বছর থাকি কি না থাকি তাই বলেই ফেললাম মুখার্জী বাবুকে যাবেন নাকি বাসে করে ঠাকুর দেখতে উনি শুনে ভারী খুশি। তবে অদ্ভুত একটা আবদার করে বসলেন আমার কাছে।

          যেতে পারি কিন্তু আপনাকে ফিটফাট হয়ে যেতে হবে,একেবারে পার্লার থেকে তৈরী হয়ে। কিছু যদি মনে না করেন, সেই টাকাটা আমি দিলে অসুবিধে যদি না হয়।
  আমি মিচকি হেসে বললাম ঠিক আছে অষ্টমীতে যাবো আপনার অর্থে আমি সাজবো নিপুন ভাবে আর আমার  স্বামীর দেওয়া গতবছরের সেই রুপোলি কাতান সিল্কটা যেটা পড়া হয়নি সেটা পড়ে মা কে দর্শন করবো, তবে ঠিক নাকছাবি( মাস্ক) টা কিন্তু পড়বো না আপনি ও না “ জো হোগা মাতা জগদম্বা কে নাম দেখা জায়গা  “।

         


Comments

sadamata101.blogspot.com

B-47#বিশ্বকর্মা_পূজো

সন্তোষ ঢাকি

B-71#GANESH_PRASADAM. ( গনেশজির ভোগ নিবেদন মোদক ও পূরণ পুলি)