B-111#শিশুকালের খেয়ালে, বয়সকালের দোলায় (শুভ সুমেধার অষ্টাদশ অধ্যায়)

শিশুকালের খেয়ালে, বয়সকালের দোলায় (শুভ সুমেধার অষ্টাদশ অধ্যায়)
ক্ষীরদা না থাকলে কোনির অস্তিত্ব কোথায়। একজন সাঁতারুর জীবনে তো কান্ডারি হয়ে ক্ষীরদাই এসেছিলেন, তা না হলে কোনি তো ভেসেই যেত তার অভাবের সংসার  ঠেকা দিতে দিতে । সাঁতারু হয়ে ভাসতে ভাসতেও যে একটা তীর  পাওয়া যায়, আর সেখান থেকেই যে একজন চ্যাম্পিয়ন  সাঁতারু হওয়া সম্ভব, বাস্তব পথটা যে  একটা লড়াই- “fight kony fight”, এটা তো অনেক বড় পাওয়া একজন পথপ্রদর্শক  হিসেবে ক্ষীরদার থেকে । শুধুই কি দেখে যাবো সুমি, মাধুর প্রতি কি  কোনো কর্তব্য নেই আমাদের?
তাহলে কি শিখলাম বল, এটাই তো কোনি ক্ষীরদার থেকে পাওয়া একটা শিক্ষা । গরিবের সারাটা জীবনই তো প্রতিকূলতার মধ্যে লড়াই করে বেড়ে ওঠা,শুধুই অভাব,তাদের জীবনটাকে কি এভাবে বয়ে যেতে দেওয়া যায় সুমি? নিশ্চয় মাধুর মধ্যেও  সে স্বপ্ন আছে, ভয় টা কোথায় জানিস? সেটা অভাবের জীবনের তাড়নার ভয়, একটা দ্বন্দ্বের ভয়, যে আঘাত সে এত ছোটবেলায় পেয়েছে সেটা বুঝতেও সময় লাগবে ।একেবারে উপলব্ধিতে আনতে  মাধুর ঠিক কি প্রয়োজন জানিস  ক্ষীরদার মত একজন প্রশিক্ষক, আর বেশির ভাগ ক্ষেত্রে  সেটা পায়  না বলেই প্রায় সব মাধুরা অর্থের অভাবে ভেসে যায়  । তাই এখন থেকে মাধু ও তার ভাইয়ের প্রশিক্ষক হিসেবে আমরা কি দাঁড়াতে পারি না ওদের পাশে শুভ? ।
        যাক আজকে আমিও কিছু খাবো না ভাবছি জল খেয়েই শুয়ে পরি, দেখি একটু চেষ্টা করি জানতে পেটের জ্বালাটা কেমন হয়। সে ও তো দিনের পর দিন না খেয়ে কত হাসিমুখে দিন কাটিয়েছে,কি জানি আজ রাতটা কি ভাবে কাটছে ওর।বেচারির উপর কত চাপ মা বাবা রেখে গেছে, ছোটো ভাইটাকে মানুষ করতে হবে, রোজগার করতে হবে, দুজনের পেট চালাতে হবে। হে ঈশ্বর মাধুকে শক্তি দিও ।
                                     মাধু যখন ভেদুয়াকে নিয়ে খেলতো কত কথা সে বলতো জানো সুমি?আমি বারান্দায় বসে তেল মাখছি এমন সময় দেখি মাধু ভেদুয়াকে বলছে “ভেদুয়া তোকে আমি যখন এনেছি দেখবি তোকে খাবারের কষ্ট পেতে হবে না । রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতি হবে না, শুধু রাইতের বেলায় কাউরে  দেখলে চিল্লাবি ব্যস তাতেই পেট পুড়ে খাইতে পারবি । ভেদুয়া বাবুর বাড়িতে বেজায় খাবার” ।এমন করে সেদিন কথাগুলো বলছিলো মনে হোলো ওর পালিত ভেদুয়া সব যেন বুঝতে পারছে। শিশুমন তো যেটাই বলে অনেক ভিতর থেকে বলে বলেই হয়তো অনেকটাই সত্যি মনে হয়,তাই অবাক হয়ে চুপ করে শুনি। সেদিন আরেকটা কথা তো বলাই হয়নি তা শুনে আমার কি হাসি। ভেদুয়াকে গলা জড়িয়ে সে বলছে “ভেদুয়া দেখতে পারছিস কাকু তেল মাখছে তোর কাকুর তেল মাখা হলে সিনান করবে তার খাওয়া হলে তুই খাওয়ার পাবি। সেদিন মনে মনে খুব হেসেছিলাম সুমি অনেকেরই কাকু আমি,কিন্তু তা বলে ভেদুয়ার কাকু – যাক ভেদুয়া আমাকে কাকু বলে স্বীকার করলো কিনা জানিনা আমি কিন্তু হাসতে হাসতে তাও মেনে নিলাম।
                            শুভ তুমি মুহূর্তে এই কথাগুলো বলে এমন হাল্কা করে দিলে বেশ ভালো লাগলো। শিশুকাল হোলো এমন এক নিস্পাপ সময় যে সে তার খেয়ালে এমন কিছু করে যা আজীবন স্মৃতিতে দোলা দেয়।মাধুতো চলে গেছে ওকে আবারও ফিরিয়ে আনবো তবে পরিচারিকা হিসেবে কখনোই নয় সে ও তার ভাই  বেড়ে উঠবে অনেকটা আমাদের সন্তানের মত।
সুমি মাধুর নামে একটা অবৈতনিক স্কুল করবো বুঝলি নাম হবে “মাধুরী” । তাই ভাবছি আর মলির সাথে দেখা করার বিদেশ যাওয়ার সেই ইচ্ছেটা  না হয় এবছরে থাক, আমার গচ্ছিত প্রায় অনেকটাই অর্থ এই “মাধুরী” শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য না হয় ব্যবহৃত  হবে।
শুধু পড়াশুনো নয় তার পাশাপাশি তৈরী করবো একটা রোজগারের পথ। যেমন ধর কোনো বাচ্চা যদি খেলাধুলোয় ভালো তাকে আরও সুযোগ, রান্না বান্না শেখানো সেখান থেকেই তাদের  একটা মেস চালিয়ে রোজগার। হাতের কাজ শিখিয়ে রোজগার, মেধাবী বাচ্চাদের আরও ভালো স্কুলে পড়াশুনোর সুযোগ করে দেওয়া।
                   বাবা! ন কাকিমা তুমি তো কত স্বপ্ন দেখছো, পারবে তুমি?যদি পারো আমিও আছি। আগামী জীবনটা না হয় সেখানেই পুরোপুরি সপেঁ দেবো নিজেকে। ঠিক বলেছো আমারও একমত এবছরে কোনো দরকার নেই বিদেশ যাওয়ার। মলিও শুনে খুবই খুশি হবে। আমি বলি কি নাম টা একটু ছাড়া ছাড়া লাগছে আরেকটু ভালো কিছু কি হতে পারে। যেহেতু এটা একটা চেষ্টা, তাই এই চেষ্টাটা অনেক কিছুরই হতে পারে তাই না ভাবছি “মাধুরী -প্রয়াস” নামটা কেমন হয়।
                উফফ সুমি কি সুন্দর তোর চিন্তাধারা,ভারী চমৎকার নামটা। জানিস আমাদের এই সামান্য চেষ্টায় ঈশ্বর হয়তো সহায় আছেন তাই হয়তো আমাদের নাম আর চেষ্টা মিলে দেখবি একদিন এই প্রতিষ্ঠান দাঁড়াবেই দাঁড়াবে। সব মাধু সদাইয়েরা এখানে বড় হবে চ্যাম্পিয়ন হবে কোনির মত । আমরা না হয় প্রয়োজনে ঘটিবাটি বেঁচে ক্ষীরদার মত একজন প্রশিক্ষক হয়ে থাকবো সবার চোখে।
বাকিটা উনি আছেন সামলে নেবেন। চল আগামী কালই শুরু হোক আমাদের চেষ্টার একধাপ এগিয়ে ট্রেড লাইসেন্স ও ব্যাঙ্ক একাউন্ট করে “মাধুরী -প্রয়াস”।


Comments

sadamata101.blogspot.com

B-47#বিশ্বকর্মা_পূজো

সন্তোষ ঢাকি

B-71#GANESH_PRASADAM. ( গনেশজির ভোগ নিবেদন মোদক ও পূরণ পুলি)