B-143#আমার বায়ুসেনার দিনগুলি (দ্বিতীয় ভাগ)

আমার বায়ুসেনার দিনগুলি (দ্বিতীয় ভাগ)


ভাবতে ভাবতে একটা সময় মন ক্লান্ত হয়ে দুচোখ বুজে এলো, জানালার পাশে শরীরটা এলিয়ে গেলো,ঘুমিয়ে পড়লাম ঘুম ভাঙলো প্রচন্ড ঘটর ঘটর শব্দে, চোখ খুলে দেখি একটা প্রকান্ড সেতুর উপর ট্রেন চলেছে ধীরে ধীরে হয়তো সেটা কৃষ্ণা বা কাবেরী হবে এই মুহূর্তে সেটা মনে পড়ছে নাভূগোলে বরাবরই কাঁচা ছিলাম আজও আছি কিন্তু নতুন জায়গার সম্বন্ধে আজকাল উৎসাহ টা অনেকটাই বেশি সেটা হয়তো বা বয়সের আর অভিজ্ঞতার সাথে সাথে বেড়েছে নদী পার হতেই পাহাড়, একের পর এক এতই কাছে মনে হয় দৌড়ে গিয়ে আবার করে এসে ট্রেনে বসি সেও বাংলায় পড়া সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়ের পালামোর পথেমনে পড়লো পাহাড় যতই কাছে মনে হোক যাইতে গেলে সেটি দশ বারো ক্রোশ তো হইবেই মনের ভ্রম ভাঙলো সেও যে ছোটো বেলার শিক্ষার থেকে পাওয়ার অভিজ্ঞতা


একটা ছোটো স্টেশনে এসে ট্রেন দাঁড়ালো সিগন্যাল নেই হয়তো বা স্টপেজ আছে এখানেদেখি একদল মধ্যবয়সী মহিলা তড়িঘড়ি উঠে পড়লো, প্রত্যেকের কাঁধে একটা ঝোলা, পরনে শাড়ী, মাথা ভর্তি চুল বেশিরভাগের, চপচপে তেল লাগানো চুলে, মাঝখানে সিঁথি যেটা মুহূর্তে নাকে এসে লাগলো তা তাঁদের ব্যবহৃত তেল,এমন বোটকা উগ্র গন্ধ মুহূর্তেই কোম্পার্টমেন্টে মো মো করে উঠলো সেটাকে কিছুটা হলেও প্রশমিত করলো তাঁদের মাথায় লাগানো জুঁই বেলির টাটকা সুবাসে


একজন কে বলেই বসলাম এটা আর্মি কম্পার্টমেন্ট,নেমে যান এটা সাধারণ মানুষের জন্য নয়  কে কার কথা শোনে আকার কথার ভঙ্গিমায় তাঁরা বুঝিয়ে দিল তাঁরা স্কুলে চাকরি করে পরের দুই স্টেশনে তাঁরা নেমে পড়বে ইতিমধ্যেই তাঁরা আলাপ জমালো কিন্ত বাঁধ সারলো ভাষার, না বোঝে হিন্দি, না বোঝে ইংরাজি, দেখি তাঁদের তামিল ভাষায় হাত নাড়িয়ে যা বলছে সেটা কিছুটা হলেও ঠাওর করা গেলো, আমি বাংলায় তাঁরা তামিলে আলাপচারিতার বিষয়বস্তু বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা দেশের হাল শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে তাঁদের কথায় হ্যাঁ না করে চালালাম কারণ আমি নিজেই কত শিক্ষিত! সবে উচ্চমাধ্যমিক ছাড়িয়েছি আর দেশের কাজে যোগ দিতে চলেছি শুনেছি দক্ষিনীরা অতি শিক্ষিত হন, তাই একটু চুপ করে গেলাম দেশের হাল  নিয়ে কি আলোচনা করবো আমার মাত্র কুড়ি বছরে কতটুকুই বা জ্ঞান, এতটা বলতে পারি এই মুহূর্তে আমার নিজের মানসিক হাল খুবই বাজে কি করে বোঝাই তাদের, সে ক্ষমতাও নেই,তামিলে তাঁদেরকে নিজের মনের ভাব যদি বোঝাতে পারতাম, তাই বোকা হয়ে শুধুই মাথা নেড়ে গেলাম তখনই বুঝেছি বাইরের সমাজের সাথে চলতে গেলে নিজের জ্ঞানের পরিধি আরো বাড়ানোর প্রয়োজন আছেদেখলাম তাদের গন্তব্য আসতেই তাঁরা নেমে পড়লেন কিছুটা হলেও সময় কাটলো আবার করে লিখতে বসলাম দিদিকে চিঠি, তাই দেখে নিক্সন আমার থেকে ইনল্যান্ড লেটার নিয়ে  বসে পড়লো চিঠি লিখতেলিখতে আর পারলাম না মনটা ভার হয়ে এলো তখন সময় প্রায় সাতটা ছুঁই ছুঁই,মনে হোলো দিদির বিদায়ের সময় নিশ্চয় হয়ে গেছে, মা বাবা বাকি দিদিরাও হয়তো এতক্ষনে কান্নায় ভেঙে পড়েছেমনটাকে একটু অন্য দিকে নিয়ে গেলাম, দেখি আমাদের কুপের দুই তিনটে কুপের পরে বেশ সহকর্মীদের জটলা, দেখি একজন বেশ স্বাস্থ্যবান  ছেলে,প্রায় মিশমিশে কালো বলা চলে, আস্তে আস্তে কিশোরকুমারের গান করছে আর তাকে ঘিরে বাকি বন্ধুরা সে গানের উপভোগ করছে কিন্ত মনে মনে বেশ হাসি পেলো ছেলেটি গানের সাথে সাথে মুখে music দেয় কেমন রে বাবা গানটা ভালোই সুরে করে, গলা আছে কিন্তু কি আশ্চর্য, মনে ভাবলাম দক্ষিনী ছেলেরা হয়তো গান এভাবেই গায় গানের পরে পরিচয় হয় তার সাথে নাম সোহম রায়, বাঙালী থাকে বাগুইহাটিতেসে দেখি বাকি ছেলেদের সাথে অধিকাংশই বাংলা মেশানো হিন্দিতে কথা বলে ছেলেটিকে বাঙালী হিসেবে মনে ধরলো কিন্ত মন এগোলো না তার থেকে নিক্সন অনেক বেশি প্রখর যে টুকু কথা বলে বেশ সামঞ্জস্যপূর্ণ বুদ্ধি রাখে  পরবর্তীকালে নিক্সনের সাথে আমার দীর্ঘ  বন্ধুত্বটি থাকে,একটা সময় সে আমি একই  বিলেটে (যেখানে সেনাবাহিনীরা থাকে) পাশাপাশি  বেডে থাকতে শুরু করিরাতে তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়ি তাও ঘুম আসেনা শুনেছি খুব ভোরেই ট্রেনটা মাদ্রাজে পৌঁছবে ভোর বেলা ঘুম ভাঙতেই জানালার পাশে গিয়ে বসলাম দেখি MRF(MADRAS RUBBER FACTORY) ফ্যাক্টরির প্রায় পাশ দিয়ে ট্রেন ধীরে ধীরে এগিয়ে চলেছে বুঝলাম মাদ্রাজ সেন্ট্রাল আসতে বিশেষ দেরি নেই মুহূর্তেই ব্যাগ, চাদর গুছিয়ে দাঁত মেজে একেবারে তৈরী ততক্ষনে ট্রেন ঢুকে পড়েছে প্লাটফর্মে আমি আর নিক্সন নেমে দাঁড়ায় দেখি এয়ারফোর্সর এক অফিসার এগিয়ে এলেন, সঙ্গে সঙ্গে আমাদের সাথে যিনি ছিলেন তিনি উনার সাথে করমর্দন করলেন শুরু হোলো রোলকল


বুঝলাম আমাদের উনার কাছে সমর্পন করলেন, আগের জনের ডিউটি শেষ তাঁর পর্যন্তই ডিউটি ছিলআমরা সকলে গিয়ে উঠলাম বাইরে এক অপেক্ষমান বড় মিলিটারি কালারের লরি বা ট্রাকে


চলেছি পথ আর শেষ হয়না প্রায় ঘন্টা দেড়েক তো বটেই, একটা সময় ট্রাক এসে দাঁড়ালো বিশাল এক গেটের সামনে আর আমাদের ট্রাক থেকে নামতে বলা হোলো দেখি গেটে বড় বড় অক্ষরে লেখা “WELCOME TO THE AIRFORCE STATION TAMBARAM”


বিশাল সিকিউরিটি বাহিনী দাঁড়িয়ে আছে তাঁরা একে একে আমাদের প্রত্যেকটা ব্যাগ তন্ন তন্ন করে যার যা আছে ব্যাগে কারো সিগারেটের প্যাকেট, গুটখা, খৈনি, ম্যাগাজিন, এমনকি বই পত্র সমস্তটাই নিয়ে নিল বুঝলাম আমন্ত্রণটা ভারী সুখকর, আমাদের আরেক গাড়িতে গিয়ে উঠতে বললো আমি নিশ্চুপ হয়ে একটা  দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে পরবর্তী গাড়িতে গিয়ে উঠলাম বড্ড খারাপ লাগছিলো কি সব হচ্ছে, দেখি নিক্সন তখনও আসেনি তার চেক ইন চলছে কিছুপরে গাড়ি ছাড়লো,চললাম আমাদের থাকার ঘরে সেও প্রায় বহু দূর মেইন গেট থেকে পাঁচ ছয় কিলোমিটার তো হবেই মাঝে গাড়ি এসে দাঁড়ালো এক রানওয়ের পাশে,গেট বন্ধ দেখি ফাইটার প্লেনের কান ফাটানো আওয়াজ একটার পর একটা নেমেই চলেছে শেষ আর হয়না


অবশেষে গেট খুললো গাড়ি গিয়ে দাঁড়ালো গান্ধী বিলেটের সামনে ঈষ মিচকি হাসলাম, কারণ একটা সময়ে আমি স্কুলে এই গান্ধী হাউসের ক্যাপ্টেন ছিলাম, মনটা কিছুটা হলেও ভালো লাগলো

            

 https://sadamata101.blogspot.com/2021/01/b-144.html

                                                  ক্রমশঃ.......

 

Comments

sadamata101.blogspot.com

B-47#বিশ্বকর্মা_পূজো

সন্তোষ ঢাকি

B-71#GANESH_PRASADAM. ( গনেশজির ভোগ নিবেদন মোদক ও পূরণ পুলি)