B-141#বোকা, চালাক, হিংসুটে
বোকা, চালাক, হিংসুটে
গতকাল অর্থাৎ 26শে জানুয়ারি সারাটাদিন কেটেছে হয় লেখালিখি আবার কখনো কোনো বন্ধুর সাথে হাল্কা মেজাজের আলাপচারিতায়, আর সন্ধ্যার পর থেকে ইউ টিউব ঘেঁটে নানান মানুষের জীবনকাহিনী শোনা।একটা সময় ক্লান্ত হয়ে হাঁটতে বের হলাম কারণ একটাই একটু নিজের সাথে নিজে একা থাকা যেটারও বিশেষ প্রয়োজন আছে। ঘন্টা খানেক ঘুরে এসে আবারও চিরাচরিত নিয়মে ইউ টিউব ঘাঁটতে বসলাম। ঘাঁটতে ঘাঁটতে এমন এক অদ্ভুত বিষয় চোখে পড়লো, ভাবলাম দেখি তাহলে, ভারী মজাদার তো বিষয়টা “বোকা চেনার ছয়টি সহজ উপায়”। প্রথমেই যেটা মাথায় আসে সেটা হোলো শুনি তো আমিও কি এই একই বোকার দলে, তাই লজ্জায় হেডফোন লাগিয়ে শুনলাম পাছে স্ত্রী কন্যার কাছে ধরা না পড়ি। দেখবেন অধিকাংশ সময়ে পুরুষেরা স্ত্রীর কাছে সবথেকে বোকা মানুষ। একটা তকমা স্বামীর মাথায় সেই বিয়ের তিন বছর পর থেকে লেগে যায় , আর তাতেই স্বামীরা স্ত্রীর সামনে মুখ খোলেন না আবার করে “তুমি কত বোকা”এই উপাধিটা পাওয়ার জন্যে । আচ্ছা বলুন তো এই পুরুষ শাসিত সমাজে কোন স্বামী স্বেচ্ছায় বোকা হতে চায়। সে চালাক ও স্মার্ট হয় ঠিক সামনের বাড়ির আরেকটা বৌয়ের কাছে, তাই পুরুষেরাও যদি জানতে পারে সামনের বাড়ির মহিলা তাঁকে চালাক ভাবেন তাই তাঁকে দেখলেই হোলো দূর থেকে এমন attitude দেখান যেন মনে হয় খুব চালাক চালাক ভাব, এখানেও আবার বোকা হোলো, কেন জানেন নেপথ্যে ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে আছে আপনারই স্ত্রী সে আপনাকে মেপেই চলেছে সমানে যা আপনি জানেনই না, আপনি তো ব্যস্ত ঐ মহিলাকে দেখাতে আপনি কত স্মার্ট । স্ত্রী ভাবেন আসুক আজ বিকেলে দেখাচ্ছি।
বোকার তকমাটা ওঠে কখন জানেন মানুষটা গত হলে, তখন তকমাটা একটু অন্যরকম স্থান পায়- বড্ড সাধাসিধে। কোনো সাতেপ্যাঁচে থাকতো না বাড়ি আর অফিস।
যাক প্রসঙ্গে আসা যাক বোকা চেনার সহজ উপায়। প্রথম ফর্মুলা খুবই কম বা অতিরিক্ত কথা বলা ওটা বোকার পরিচয়।
শুনে মনটা ভারী খারাপ হোলো আমি খুব বেশি কথা বলি তাহলে কি আমি বোকা। এবার নিজের মনকে প্রশ্ন করলাম কেউ কি সেধে বোকা হতে চায় ।পরের ফর্মুলা অতিরিক্ত বা কম কথা বলা লোকেদের কাছে কোনো নির্দিষ্ট যুক্তি বা উত্তর থাকে না তাই তাঁরা বোকা বলে পরিচিত। এবারে নড়েচড়ে বসলাম মনটা হালকা হোলো আমার মত মানুষ কত যুক্তি আর উত্তর আছে, যাক বাবা পাশ করেছি আমি বোকা নই।
তিন নম্বর ফর্মুলা বোকারা এমন করে এক্সপোস করে সবার কাছে যেন সে অতিরিক্ত সরল আদৌ তা নয় সে হোলো আস্ত একটা বোকা। সোজা হয়ে বসে থাকা শিরদাড়াটা একটু বেঁকে গেলো মনে মনে বললাম একথা টা বৌয়ের কাছে তো সবসময় শুনি, ও তাহলে ঠিকই বলে এবার আমি বুঝেছি যা এতকাল বুঝিনি যে আমি একটা বোকা।
চার নম্বর ফর্মুলা আর ইচ্ছে করছে না শুনতে যদি আবার বোকা প্রমাণিত হয়। একটু pause করে টয়লেট থেকে ঘুরে আবারও মন চাইলো শুনেই ফেলি কি বলছে। আপনি কি খুবই হাসিখুশি প্রতিটা কথাই হাসেন, ওটা না বুঝে হাসা সেটা কিন্তু জেনে নিন বোকার লক্ষণ। এইবারে পেয়েছি একটা আর হাসছি মনে মনে সেটা আমি নই আমার বৌ সবেতেই সে হাসে সত্যিই ও বড্ড বোকা, বলবো না পুরোটা শুনি তারপর জোরে ভলিউম বাড়িয়ে চালাবো, বলতে হবে না ওঁর মনোসংযোগ ঘটবেই ঘটবে এ এমন এক টপিক্স।
পঞ্চম ফর্মুলা যেচে যেচে লোকের সাথে কথা বলা একই পুরোনো কথায় মনে মনে হাসা আরেক বোকার পরিচয়। এখানেও আমি পাশ ওটা আমার স্ত্রী করে খুব বেশি তাহলে ও নিশ্চয় বোকা। আচ্ছা শেষটা শুনি আর একটাই তো বাকি আছে। কেউ প্রশংসা করলেই হোলো গদগদ হয়ে তার কাছে হড়হড়িয়ে সব বলে ফেলা, ইনিই হলেন শেষ বোকা। যে বুকটা চত্রিশ ইঞ্চি ফুলে উঠেছিল মুহূর্তেই সেটা চব্বিশে এসে ঠেকলো আমি পুরো ফিউস। একথা তো আমার স্ত্রী আমায় সারাক্ষন বলে। তাহলে উপসংহার টা কি “এই শহরে আমি একা একটু চালাক একটু বোকা”।
কিছুক্ষন পরে চালিয়ে দিলাম রূপকথার ছয়মন্ত্র। দেখলাম বৌ খুবই বিরক্ত কারণ সে বই পড়ছে শ্রীকান্ত, এমনিতেই অনেক রাত হয়েছে, পাশের ঘরে মেয়ে পড়ছে ওর পড়ার ব্যাঘাত হবে। কিছু করার নেই শুনতেই হবে কিছুক্ষন পরে দেখি মেয়ে পাশের ঘর থেকে বলেই ফেলল বাবা তিননম্বর পয়েন্টটা কি বললো গো? মনে মনে বুঝলাম কেউ বোকা হতে চাই না প্রত্যেকে পরখ করে নেই নিজের সাথে মেয়েরই বা দোষ কোথায়। আসলে যিনি বলছেন সম্পূর্ণটা মনগড়া কোনো বৈজ্ঞানিক যুক্তি নেই, আমার আপনার প্রতিনিয়ত একটা ঘটনা ও পারিপার্শ্বিক অবস্থান দেখে একটা সুক্ষ্য লাইন টেনে দেন আর তাতেই আমরা শুনি।
ইউ টিউবের একটা মজা হোলো আপনি যেটা শুনছেন কিছুক্ষন পর তারই আনুসাঙ্গিক আরেকটা টপিক্স চলে আসে দেখলাম “চালাক ও হিংসুটে লোক চেনার সহজ উপায়”। সেটা আর খুলিনি কারণ ভুলভাল যুক্তিতে ভর্তি কিন্তু একটা জিনিস অত রাতে সময় তো কেটেছে।
Comments
Post a Comment
always