B-135#রাস্তাঘাটের রোজ নামচা

রাস্তাঘাটের রোজ নামচা

 

সেদিন মাদার ডেয়ারি বুথের এক লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে আছি, বেশ কিছু কথা কানে ভেসে এলো দুই বন্ধুর । তাঁদের বয়স বোধকরি আমারই বয়সী পঞ্চাশ বা তার একটু বেশি কানপেতে অবাক হয়ে শুনছিলাম আর মনে মনে হাসছিলামআজকাল হাসার একটা সুবিধে আছে যেহেতু মাস্ক পরা থাকে তাই পেছনের লোকের বোঝার উপায় নেই

             এক বন্ধু আরেক বন্ধুকে বলছে, আচ্ছা আজকাল দিনগুলো কেমন যেন পাল্টে গেছে ছেলেরা বাবার পকেট থেকে  চুরি করে না তেমনআমাদের সময়ে আমরা কত করতাম বাবার মানিব্যাগ থেকে আটআনা,এক টাকার আধুলি হামেশাই চুরি করতাম, কারণ একটাই সিগারেট বিড়ি খেতে হবেতবে খেতাম কিন্তু অনেক দূরে গিয়ে মাঠের এককোনায়, একটা সিগারেট চারজন ভাগ করেসেটা শেষ হলে পেয়ারা পাতা চিবোনো, না হয় কোলগেট দিয়ে মুখ ধুয়ে বাড়ি ঢুকতাম


             শুনে বেশ অবাক হয়ে ঘুরে দেখলাম আর মনে মনে হাসলাম, কোনো উত্তরই দিই নি ভাবলাম এত আমারই কথা, টপিক্স টা কিন্তু জম্পেশ, জানি পেছনের লোক ঠিক অংশগ্রহণ করবে, কেন জানিনা  মন বলছিলো

      দাদা বড্ড ভাগ্যবান আপনি যে আপনার সন্তান এমন হয়নিএইতো আমার পাশের বাড়ির ছেলেটা বিশ্বাস করুন বললে অবাক হবেন আর হাসবেনছেলেটির বাবা শিক্ষক নদীয়া জেলায় বাদকুল্লায় একটা সরকারী স্কুলের তাও আবার বাংলার শিক্ষকসেদিন দেখি বাবার কাছে টাকা চাওয়াই, বাবা অস্বীকার করলো আর ব্যস ছেলে ভিতর থেকে দরজা বন্ধ করে হাতের মুঠোয় একটা হেলে সাপ নিয়ে বাবাকে চমকাচ্ছেবাপ তো খাটের উপর দাঁড়িয়ে ভয়ে চীৎকার- সাপ সাপ বলেআমরা ছুটে গেলাম গিয়ে দেখি ভেতর থেকে বন্ধভাবলাম ছেলে যখন ভিতরে আছে নিশ্চয় বাবাকে বার করে আনবেবুঝলেন দাদা আমরা সন্তু সন্তু বলে বাইরে থেকে চেঁচাচ্ছি, অমনি ছেলে তারস্বরে চেঁচিয়ে বললো ধূর বাবা আমিই তো সাপটা নিয়ে এসেছি বাবাকে শায়েস্তা করবো বলে


          এবার আর থাকতে না পেরে মাস্ক খুলে হাসলাম কারণ মুখের গরম ভাপটা চশমাকে বড্ড ফ্যাকাসে করে দেইআমি নিজেও সামিল হলাম তাঁদের গল্পেআমাকেও কিছু বলতে হয় তাইঠিক আমার বাড়ির পিছনে মা, বাবা, ছেলে তিনজনেই পাগল তাঁদের সকাল শুরু হয় গালাগাল দিয়েএকটা ছোট্ট নমুনা দিয়ে শুরু করা যাকযেকোনো গৃহস্থের বাড়িতে চাল শেষ হয়ে গেলে বাড়ির মহিলা বলেন চাল বাড়ন্তএনারা কিন্তু এসবের তোয়াক্কা করেন নামহিলা তার স্বামীকে বলছেন চীৎকার করে বলছেন যখন উনি সাইকেল নিয়ে অনেকটা দূরে চলে গেছেন, বলছেন শুনছো চাল শেষ না আনলে আজ ভাত জুটবে না, চাল না আনলে ভাত কিনে নিয়ে এসো কিন্তু”। উনারা এতই জোরে জোরে কথা বলেন পাড়ার প্রত্যেকটা লোক উনাদের হাঁড়ির খবর জানেনএকদিন উনার ছেলে কোথা থেকে একটা মেয়েকে পটিয়েছে তার সাথে আবার ভিডিও কলে কথা বলছে, এতটাই জোরে আশেপাশের প্রত্যেকে শুনতে পারছেছেলেটি মেয়েটিকে বলছে বলো “ I LOVE YOU” না তোমায় বলতেই হবে, আমি ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শুনছি আর হাসছিমেয়েটিও অগত্যা ছেলেটির চাপে পরে আস্তে আস্তে বলছেমেয়েটি তো জানে না কোন পাগলের পাল্লায় পড়েছে সে যে কানে কম শুনে

 

আমারই ঠিক সামনের বয়স্ক এক ভদ্রলোক হাসতে হাসতে লুটোপুটি অবস্থাউনি থাকতে না পেরে তো বলেই ফেললেন দেখুন আজকের দিনে তো বোঝারই উপায় নেই কে কার প্রেমিক বা প্রেমিকাএকটি মেয়ে দুইটা ছেলে মেয়েটা আবার বাইকের মাঝে বসে জড়িয়ে ধরে থাকে সামনের ছেলেটিকে আর পেছনের ছেলেটি মেয়েটিকে নাও এবার বোঝো ফেলুদা পর্যন্ত ফেল হয়ে যাবে এই  রহস্যের সমাধান করতেআরে বাবা আগের দিনে ছেলেমেয়েরা যখন প্রেম করতো হাঁটতে হাঁটতে এগিয়ে যেত সাইকেল নিয়ে, কেউ বয়স্ক দেখলে দূর থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিতো,কিন্তু এখন আপনি তাকাবেন আর ওরা বোলবে দেখো আমি বাড়ছি মামী”।


          দাদা এটা কি বলছেন বাইক চালানোর হিড়িক টা বলুন এমন ফেটফেট আওয়াজওয়ালা বাইক বেরিয়েছে যে চালাচ্ছে সে প্রায় শুয়ে আর স্পিড সে তো বলারই নয় দেখে যেন মনে হচ্ছে স্বয়ং যমদূত বলছে ঠিক ঠিক একদমই ঠিক আসছিস আরেকটু এগিয়ে আয়, বাকি রাস্তাটা আমি ঠিক সামলে নেবো। আমায় কষ্ট করে মর্তে আসতে হবে না, যা স্পিড ধরেছিস স্বর্গের সিঁড়িটা এমনিতেই পেয়ে যাবি যা কেউ এতকাল পায়নি


Comments

sadamata101.blogspot.com

B-47#বিশ্বকর্মা_পূজো

সন্তোষ ঢাকি

B-71#GANESH_PRASADAM. ( গনেশজির ভোগ নিবেদন মোদক ও পূরণ পুলি)