B-120#বিয়েবাড়ির সেকাল একাল (শেষ ও চতুর্থ পর্ব )

বিয়েবাড়ির সেকাল একাল  (শেষ ও চতুর্থ পর্ব )
বাহারি খাওয়াদাওয়া – খাওয়াদাওয়ার এত বাহার -একই মেনুর প্রায় পাঁচরকমের ভেরিয়েশন। নাম শুনলেই দাঁত ভেঙে যায়, যেরকম জায়গা সেই বুঝে মেনু। এ নাম শুধুমাত্র একালের বিয়েবাড়িতেই পাওয়া সম্ভব।  শুরু হোক স্টার্টার দিয়ে। একালের স্টার্টার মানে অতিথি এসেছেন, কি খাবেন আত্মীয়স্বজনদের সাথে গল্প করতে করতে, ধরুন পনির পাকোড়া কোথাও আবার ক্যাটারার বুঝে নাম বদল “পনির খাস কাবাব”, বয়স্করা না বুঝে কানে ফিসফিস করে বলেন কোনো মাংস আছে নিশ্চয়, খাবো না বাবা।
জুসের রঙবেরঙি বাহার, বোর হচ্ছেন তার ও ব্যবস্থা আছে একদিকে অর্কেস্ট্রা একটার পর একটা গান গেয়েই চলেছেন তাতেও মুড যদি ঠিক না হয় দুটো চুমুক দিয়ে আসতে পারেন এক পেগ বা দুচার পেগ। একালের বিয়েতে এগুলো কোনো চোখের আড়ালে নয় একেবারে সবার সামনে। কেউ একটু বেশি নিলেই হোলো ও কিছু নয় হাল্কা ড্রিঙ্কস করেছেন তাই ভদ্রলোক একটু বেসামাল।
সেকালেও কি খেত না,খেত একটু সমঝে, তাও আবার লুকিয়ে,বেশি খেলেই হোলো “ব্যাটা মাতাল,সর সর এক্ষুনি বমি করবে না হয় এই পড়লো বলে-কি করে পারে গলা পর্যন্ত গিলে খেয়ে বিয়েবাড়িতে আসতে ”। স্টলের নাম "বাহারি নেশা", তাই এখানেই নেশার শেষ নেই ঠিক তারই পাশে আছে “হুক্কা বার” তাও আবার নানান স্বাদে mango, pineapple , লিচি, গোলাপ যত বাহারি নাম তত বাহারি মো মো গন্ধ। এত গেলো স্টার্টার, এরপর  মেইন কোর্স সেখানে কেউ আজকাল বলে না “আপনাকে দেবো আপনাকে দেবো” ওখানে বলেই থাকেন তাড়াতাড়ি খেয়ে নিন এরপর বরযাত্রী আসলেই হোলো ভিড় হয়ে যাবে। আর খাওয়াদাওয়া সব ঠান্ডা হয়ে যাবে। প্রয়োজনে খেয়ে দেয়ে গল্পে মাতুন। [জানেন তো না যা অর্র্যাঞ্জমেন্ট আছে একটু পরে আপনাকে নিয়ে অন্যেরা মাতবেন।]

আগের দিনে লাল শাক  প্রথম পাতে পড়তো মনে পড়ে। সেটা একালের বিয়েতেও পড়ে কিন্তু একটু উন্নত ভাবে স্যালাডের সাথে,এতই দৃষ্টি মনোরম যেই আপনি প্লেটটা বাড়ালেন পাবেন ঝুড়ি ঝুড়ি করে কাটা গাজর,লেটুস পাতা,বাঁধাকফি,বিট,পুঁদিনাপাতা,গোটা লেবু, শসাকুচি, ধনেপাতা  এমন ভাবে প্লেট ভর্তি করে নিলেন যেন আপনি নিজেও প্রতিদিন এ খাওয়ার খান বাড়িতে।
বড়জোর দুই চামচ জাবর কাটতে না কাটতেই এগিয়ে গেলেন বিকৃত মুখ নিয়ে, বেক কাশ্মীরি পটেটো রোস্ট ও সুইডিশ কুলচা আনতে, জানেন তো কথায় আছে “ঘ্রানেন অর্ধ ভোজনেন ” আপনি কিন্তু ঘ্রান না পেয়েই “দৃষ্টিতেই উদরপুরোনং” করে চলেছেন। ভাবছেন এত ফ্যাশনাবল নাম আপনি একা বোকা হচ্ছেন, প্লেট থেকে মুখটা তুলে দেখুন সবারই থতোমতো অবস্থা,মহৎ  উদ্দেশ্য কিন্তু একটাই,এসেছি যখন সব কটা খাবো। যাক পরের খাবারের পুরোটা কিন্তু পারলেন না আলুর অর্ধেকটা খেলেন, আর সুইডিশ কুলচার শুধু উপরের চামড়াটা।
এরা দুজন বেচারা এরপর লেটুসপাতার সাথে মাখামাখি করে চুপ করে বসে আছে প্লেটের একদিকে।আপনার পেটের স্টমাক নামে বস্তুটি  অবাক সে লিভারকে বলছে" কি রে গুরু কি কি সব খেয়ে নিচে পাঠাচ্ছে বিশ্বাস কর জীবনে কোনোদিন ঢোকেনি এই স্টমাকে আগে বুঝি তারপর না হয় হজম করতে এগোবো”। আপনি আবারও ছুটলেন
নাইজেরিয়ান স্টিম রাইস সঙ্গে মিক্সড ফিস আনতে। ভাবলেন বাঙালী মাছে ভাতে মানুষ এই আইটেমটা নিশ্চয় ঠকাবে না। দেখলেন পাশের ভদ্রলোক কি কি সব লাল ভাত নিয়ে এলেন দেখতে চমৎকার নাম “জারো”। ভাবছেন মনে মনে নোবো কি নোবো না ভয়ে জিজ্ঞাসাও করতে পারছেন না কারন মুখ দেখে মনে হচ্ছে বাঙালী নন শুনেছি এই বিয়েতে নাগাল্যান্ডের লোকজন ও এসেছেন, উনি কিন্তু দিব্যি সাঁটিয়ে যাচ্ছেন।খেতে গিয়ে মনের সাথে যে প্রতিটা ক্ষেত্রেই দ্বন্দ্ব কি খাবেন কি খাবেন না সেটা একালের বিয়েতেই সম্ভব।
           লোভ হোলো মাছের ছয় সাতটা ভেরিয়েশন দেখে ছুটলেন সেদিকে, অবশেষে পেলেনও প্লেট ভর্তি করে আনলেন পেটটা তো ভরাতে হবে।তাই নয় নয় করে গলদাচিংড়ি তিন চারটে নিয়ে বসে গুছিয়ে খাচ্ছেন। চোখ ঘুরছে শুধু এদিক আর ওদিক পাশের লোক কি খাচ্ছেন,যেই দেখলেন ইলিশমাছ ভাপা,কে দেখে?নিজের থেকেই পরিচয় করে নিলেন পাশের ভদ্রলোকের সাথে, উদ্দেশ্য একটাই পজিশন জানার “আচ্ছা দাদা ইলিশ মাছটা কোনদিকটা বলুন তো”।
এবার আপনার প্লেটের গলদাচিংড়ির রং টা লাল হয়ে গিয়েছে, সেই ঘিয়ে কালারের রং আর নেই সারাটা গায়ে বিট মেখে বসে আছে গলদাচিংড়ি। পাশের ঠাকুমা তো খাসির মাংস ভেবে না বুঝে lamb নিয়ে বসে পড়েছেন ফোকলা দাঁতে,ভাঙা গালের নরম মাংস আর lamb এর মাংস চুষেই চলেছেন ,মাংস আর টেনে ছিড়তে পারছেন না। বহু কষ্টে ভাপা ইলিশ আনলেন কিছুটা খাচ্ছেন আবার কিছুটা আঙ্গুল দিয়ে কাঁটা বার করে প্রস্তুত হচ্ছেন গুছিয়ে খাবো বলে।
গোপের মধ্যে আপনার অজান্তে ঐ সুক্ষ কাঁটা কখন যে আটকে পড়ে আছে আপনি নিজেও জানেন না। ক্যামেরাম্যান আপনাকে না আপনার গোপকে কভার করছেন, আপনি খুশি মনে মনে তাই না খেয়ে তাকিয়ে আছেন ক্যামেরার দিকে আরো পরিষ্কার যেন বোঝা যায় ইলিশ মাছের কাঁটা।দুজনেই হাসছেন উনি হাসছেন উদ্দেশ্য নিয়ে আর আপনি হাসছেন উনি হাসছেন কেন তা দেখে। খেতে খেতে আপনি হারিয়ে গেছেন বহু আগেই আপনাকে বাড়ির লোক এতক্ষনে দেখে ফেলেছেন জায়ান্ট স্ক্রিনে তাই ছুটে এসে বলেন “ কি করেছো তুমি তো কন্টিনেন্টাল ডিশের দিকে ঢুকে পড়েছো, চলো চলো ওদিকে ইন্ডিয়ান ডিশ আছে”।
আপনি নিজেও জানেন ভুল করেননি কিছুই, তাই সম্মতি জানালেন আর কিছুই ঢুকবে না পেটে। একটু ডেজার্ট  নেবেন, মিষ্টির বাহারি আপনাকে থমকে দিয়ে আরেকটা প্লেট নিয়ে গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে নিয়ে চললো সন্দেশের  দিকে, গোটা পাঁচেক সন্দেশ, হট গোলাপজামুন তিনটে, ছোটো দুয়েক অতি আধুনিক রাবড়ির খুঁড়ি, আর একটা ফালুদা সহযোগে এলাচি  মালাই সঙ্গে এক লিটরের বিসলেরির বোতল নিয়ে ভিড় ঠেলে বেরিয়ে এলেন। দাঁড়িয়ে খাওয়া আর চলবে না হাতের কনুই ব্যাথা করছে তাই কখনও ডানহাতে কখনো বাম হাতে প্লেট নিয়ে লোভের ম্যাজিক শো করছেন মুখে।
সব শেষ মেয়ের বাবাকে হেসে জানালেন “দারুন আয়োজন যা করেছেন ভাবা যায় না” তা শুনে বিগলিত হয়ে মেয়ের বাবা কানে কানে বললেন “ওদিকটা যান এখনই তো মজা করবেন এই তো শুরু ”। কিছু না বলে টয়লেটটা সেরে সবার অলক্ষ্যে পৌঁছে গেলেন “এই বেয়ারা চালাও ফোয়ারা”। মুখে শুরু হোলো কেবলই ইংরাজি ভাষ্য  whisky is very risky, soda with lemon একটু দিয়ো মেরেই দেখি দুই পেগ চুসকি। “Excuse me sir you can have Hukka, cigarette is strictly prohibited this zone” oh why not sure। এবারে মজেছেন নেশায় পা টলেনি মাথাটা উরুউরু  “No lime no soda only two peg whisky please, with five to six pieces ice cubes and some peanuts।
“দাদা হয়ে গেছে অনেক মনে হচ্ছে একটু নেচে ক্যালোরি ঝরিয়ে আসুন আবার এসে খাবেন কি হয়েছে”।
             Off course dance is my passion, I dance only when I am in risky means whisky, Mr. Chatterje you arranged a awesome party, I have not seen before, can I have some peanuts please “jaha teri najar hain waha meri khabar hain"।
         এই শোনো No peanuts, খবর আমি দেখাচ্ছি বাড়ি চলো বিয়ে শেষ।
আজকালকার বিয়েতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় পুরুষেরা ঢোকেন এতই ভদ্র যেন কিছুই বোঝেন না যেই পেটে পড়লো ফেরার সময় আরেক ছবি। গলার টাই টা, মাফলার হয়ে গিয়েছে, পায়ের কালো পালিশ করা জুতো জোড়া নাচতে নাচতে যেন ধূলায় পালিশ করে এসেছেন, জামায় চিকেন পাকোড়ার হলুদ ঝোল, আর পরের দিনে প্যান্টের পকেটে, কোর্টের পকেটে অজস্র সেই বিখ্যাত peanuts।
স্বামী স্ত্রী গাড়িতে যখন ফেরেন শুধুই ঝগড়া স্ত্রী বলেন-কোনো কথা বোলো না গাড়িতে চুপ করে বসো। স্বামী ততই শুরু করেন- “forgive me my sweet❤heart, you are the only queen Victoria in my life, let me tell you the morality of life” একটু চুপ করবে তা না হলে আমি গাড়ি থেকে ঝাঁপ দেবো। you can’t, you can’t, surely you can’t ।
সেকালে যে মানুষটা লাঞ্ছনার স্বীকার হয়েছিলেন "ব্যাটা মাতাল" বলে,একটু খুঁজলে এখন তাঁকেও পাবেন ঐ একই বিয়েবাড়িতে হয়তো আশির উর্ধ বয়স তাঁর। এক কোনায়  বসে মিচকি মিচকি হাসছেন আর ভাবছেন সেকালে আমি একাই ছিলাম, একালে দেখছি সবাই মাতাল শুধু ভাষাতেই পার্থক্য " Drunker" ।
সবেতেই উন্নতি যুগের সাথে, সেটা হওয়ার ও প্রয়োজন। হারিয়ে গেছে তলিয়ে ভাবার আর মূল্যবোধের।
যেখানে সাবেকি আনা ষোলো আনা সেখানে না পারে নিম্ন মধ্যবিত্তেরা পৌঁছতে আর মধ্যবিত্তেরা যখন অনুকরণে পৌঁছন ততক্ষনে বড়লোকি আনারা  আরো উর্ধে উঠে যান তাই ধরতে না পেরে শুধুই মনের কাছে দ্বন্দে এগোতে থাকেন। 







Comments

sadamata101.blogspot.com

B-47#বিশ্বকর্মা_পূজো

সন্তোষ ঢাকি

B-71#GANESH_PRASADAM. ( গনেশজির ভোগ নিবেদন মোদক ও পূরণ পুলি)