B-8 #REUNION (রিইউনিয়ন) 1985 GHATSILA

                                                                       REUNION (রিইউনিয়ন) -1985
                   GHATSILA


শুভজিৎ ও সুমেধা  তারা  যেন ছোটবেলা থেকেই হরিহর আত্মা, যখনই স্কুলে যেত প্রায় একই খাঁচা গাড়িতে, যেদিন শুভজিৎ  যেত না, সুমেধা  কিন্তু বেশ সারাটা দিন স্কুলে মনমরা হয়ে থাকতো, ইংরাজি মাস্টারমশায়ের কাছে পড়তে গেলেও তারা  প্রায় দুজনেই উল্টো দিক করে  বসতো, কারণ তারা যেন সবসময় সামনা সামনি দুজন  দুজনকে দেখতে পায় , এক অর্থে তারা  ছিল বেশ ভালো বন্ধু ।  শুভজিৎ  বা তাদের অনেক বন্ধুরা মাধ্যমিক বা তার আগের থেকেই কোথাও যেন মনে মনে মন দিয়েছিলো প্রিয়াঙ্কাকে ।  কারণ প্রিয়াঙ্কা  ছিল ক্লাসের ফার্স্ট লেডি তার উপর তার গায়ের রং ছিল ভারী উজ্জ্বল, তাই প্রিয়াঙ্কার অজান্তেই ক্লাসের বেশ কিছু বন্ধুরা প্রিয়াঙ্কা  কে চাইতো সেটা হয়তো প্রিয়াঙ্কা  বেশ বুঝতে পেরেছিলো।  মাধ্যমিকের পর বহুকাল কেটে গেছে প্রায় চৌত্রিশ টা বছর, হঠাৎ একদিন শুভজিতের  বাল্যকালের বন্ধু দীপের  ফোন আসে।
দীপ  :- শুভজিৎ,  আমাদের রিইউনিয়ন হতে পারে একটা গ্রুপ করেছি আমাদের স্কুলের নামে,  তোর নামটা ওই গ্রুপ এ ঢোকাচ্ছি তুই রাজি তো ? অবশ্য অলকা হলো আমাদের এই গ্রুপের আসল উদ্যোক্তা  ,  তোর অলকা কে মনে আছে তো, আচ্ছা হ্যাঁ,  তোর এটাই কি হোয়াটস্যাপ নম্বর, তাহলে অ্যাড করছি তোকে। শোন্ এখন রাখছি  রে অনেক কথা আছে পরে বলছি। 
শুভজিৎ  :- আরে আগে বল কে কে আছে ?  বাহ্ ভালোই তো কতদিন দেখিনি দীপ  স্কুলের বন্ধুদের কে কেমন আছে, কোথায় আছে, দীপ  আমাদের ক্লাসের সবাই আছে, অলকা কিন্তু এই কাজটা ভালোই করেছে বল ?  ভাগ্যিস উদ্দ্যোগী হয়েছিল, আচ্ছা, অলকা এখনোও ঘমণ্ডি আছে, ক্লাসে বেশ কিন্তু দেমাগ নিয়ে চলতো, এখন হয়তো সেটা বোধকরি কমেছে কি বলিস । 
দীপ  :- তুই কথা বললেই  বুঝতে পারবি, ওই দেখ হোয়াটস্যাপ টা খোল বোধহয় তুই অ্যাড হয়েছিস ।  আমি রাখছি রে সবাইকে ফোন করে অ্যাড করছি তো, তবে হ্যাঁ এই নিয়ে পঁচিশ জন হয়েছে, তুই ছাব্বিশ নম্বর, আর একজন বাকি তাহলেই সবাইকে অ্যাড করা  শেষ, রাখছি রে।
শুভজিৎ :- হ্যালো, আমাদের একটা গ্রুপ হয়েছে এই নম্বরটা সেভ করা নেই আমার মোবাইলে আমি শুভজিৎ মানে তোদের শুভ,  আপনার নাম মানে sorry তোমার নাম ধুত্তোর তোর নাম টা কিরে, বলবি ? 
মাধুরী   :- আরে শুভ  কেমন আছিস, কোথায় আছিস, কেমন দেখতে হয়েছিস, তোর ছেলেমেয়ে কটা রে, তুই তো দিল্লিতে এ থাকিস তাই না ? দীপ  থেকে তোর খবর পাই, আচ্ছা শোন্ তুই বুড়ো হয়েছিস, তোর মাথার চুল গুলো সব সাদা হয়ে গেছে নিশ্চয়, আচ্ছা তোর বৌয়ের সাথে পরিচয় করাস প্লিস,  তোকে না ছাড়তেই ইচ্ছে করছে না । আর হ্যাঁ ক্লাসে খুব ভালো গাইতিস, এখনো গান করিস নিশ্চয়, শোন্ চর্চাটা রাখিস, তোর গানের গলা ছিল বেশ ভালো । এই কাকু কাকিমা কেমন আছেন রে ?  আমার প্রণাম জানাস, আর হ্যাঁ আবার মা বাবা সে তো কবেই চলে গেছেন, সেই মাধ্যমিকের পর পরই, সে ও আরেক কাহিনী জানিস শুভ, ও তোকে সাক্ষাতে সব বলবো  । 
শুভজিৎ  :-  হ্যালো হ্যালো হ্যালো তুই কে রে?  তুই একটু নাম টা বলবি প্লিস, কত কিছু বলেই গেলি সমানে  চিনতে পারছি না তো। 
মাধুরী  :- আন্দাজ কর দেখি, বলবো না, তুই ফার্স্ট রো তে বসতিস,  একেবারে ডানদিকের কোনায় ,ক্লাসে তোর সাথে আমার বেশ ঝগড়া হতো, তুই আমার নামে স্যারেদের  কাছে সবসময় নালিশ করতিস, কতবার তোর জন্য ক্লাসে শাস্তি পেতাম  মনে পড়ে ? এবার বল তো আমি কে ?  আচ্ছা একটা ক্লু দিচ্ছি, তুই আমাকে তোদের বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিলিস, তারপর আমায় বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছিলিস মনে পড়ে ?  আমাকে সাইকেল করে সেবার তো নালায় ফেলে দিয়েছিলিস, একেবারে আমার বাড়ির সামনে এসে , তারপর থেকে ঠিক করেছিলাম আর কখনো তোর সাইকেলে উঠবো না ।  এই শোন্ তুই খুব বেঁটে ছিলিস, এখনো ও তাই রে? 
শুভজিৎ  :- ধুর ব্যাঙ , তোর নামটা বলবি নাকি বকে যাবি, যা বললি আমার ব্যাপারে তা  আমার  কিন্তু মনে পড়ছে না  । সাইকেলের ঘটনাটাও জানিস একেবারে মনে নেই , হবে হয়তো......। 
মাধুরী   :- ক্লু দিলাম তাও বুঝলি না, আরে আমাদের এই গ্রুপ টা দুমাস হয়ে গেছে, আমিই তো সবার  প্রথমে অ্যাড হয়েছি তুই আমায় চিনতে পারলে তোকে আমি তোর পার্সোনাল হোয়াটস্যাপ এ লিস্টটা দিয়ে দেবো নাম্বার গুলো পাশে নাম ও থাকবে, তোর বুঝতে এতটুকু ও অসুবিধে হবে না। এবার বল দেখি আমি কে ?  তোর গলাটা একই রকম আছে শুভ , তুই যতক্ষণ না বলবি আমি আমার নাম ও বলবো না আর লিস্টটাও পাঠাবো না ।  তুই নম্বর ধরে ধরে কষ্ট করে ফোন করতে থাক,  আমায় যদি চিনতে পারিস  জানাস।  আমি এখন রাখছি বিকেলে ফোন করবো,  আচ্ছা তোর ফাঁকা সময়টা বল না কটা? মানে কখন তুই ফ্রি থাকিস ?

শুভজিৎ   :- হ্যালো হ্যালো রাখিস না আচ্ছা শোন্  এই গ্রুপে কি সুমেধা ও আছে নাকি ? 
মাধুরী   :- সুমেধা  টা কে রে চিনতে পারলাম না তো, ওটা বোধহয় ওঁর ডাক নাম স্কুলের নাম টা বল ? 
শুভজিৎ  :- আরে বাবা ওটাই তো ওর  ভালো নাম। 
মাধুরী  :- তাহলে ওর ডাক নাম টা বল, যে নামে ওকে ডাকতাম, শোন্ এখন রাখছি আমি ছেলের ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে এসেছি ওকে এডমিশন করাতে, লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে আছি, ফাঁকা হলে  ফোন করছি কেমন। 
শুভজিৎ (মনে মনে ভাবে ) এতো হুড়োহুড়ি করলো কিছুতেই নামটা বললো না, দেখি নিজে থেকে ফোন করে বাকিদের পাওয়া যায় কিনা।
:- হ্যালো হ্যালো আমি শুভজিৎ বলছি তোর স্কুলের বন্ধু, মানে যে নামে স্কুলের গ্রুপ টা হয়েছে,  তোর নাম টা বলবি,  প্লিজ । 
রঞ্জন  :- আরে শুভ  কেমন আছিস গুরু  আমি রঞ্জন  বলছি, চিনতে পারছিস আমাকে, কাটিং পাড়ায় থাকতাম, এখন আহমেদাবাদে থাকি, কতদিন পরে যোগাযোগ হলো বল, আমি তো তোকে একনামেই চিনতে পেরেছি, কি করে  বলতো ?  তুই বিকেল হলেই আমার সাথে সাইকেল চালাতে যেতিস, সাইকেল টা তো আমিই শিখিয়েছিলাম । আরে আমাদের টালির ঘর ছিল মনে পড়ে? তোর থেকে বই নিয়ে এসে পড়তাম, বুঝেছি ভুলে গেছিস। শোন্ সেন্টু কে মনে আছে? আরে আমার ডাক নাম, গোল কিপার ছিলাম স্কুলে? এবার চিনতে পেরেছিস নিশ্চয়। আসলে কি বলতো শুভ আমাদের আর্থিক সামর্থ ওতো ছিল না তো তাই সবার সাথে ঠিক মিশতাম না রে।
শুভজিৎ  :- আচ্ছা আচ্ছা বুঝেছি, তুই সেই সেন্টু, এবার মনে পড়েছে।দাঁড়া  তোকে বিকেলে ফোন করছি।তোর নামটা সেভ করে রাখছি রঞ্জন বলে।  ( রঞ্জন কে আমি চিনতে পেরেছি, ছেলেটা ভালো ছিল, কিন্তু ও নাকি আমায় সাইকেল চালানো শিখিয়েছিলো, আমি তো সাইকেল শিখি আমাদের অঙ্ক স্যারের কাছে, কে জানি দেখি  পরের নম্বর টা)
:-  হ্যালো হ্যালো আমি শুভজিৎ তোর স্কুলের বন্ধু হোয়াটস্যাপ এ নম্বর দেখে ফোন করছি , হ্যালো কথা বলছিস  না কেন? 
সরি রং নম্বর হয়ে গেলো বোধহয় (কি যে একটা ভাষায় কথা বলছিলো বুঝতেও পারলাম  না)। 
:- হ্যালো, হ্যালো একটু আগেই ফোন করেছিলাম, নম্বরটা রং হয়ে গিয়েছিল বোধহয় , আচ্ছা আমি না শুভজিৎ যেই স্কুলের নামে এই গ্রুপ টা হয়েছে আমি মানে তুই কি ওই স্কুলের ছাত্র বা ছাত্রী । কিছু মনে করবেন না, আবারো কি রং নম্বর হলো নাকি, কিন্তু লাইন টা তো ধরে আছে এখনো ছাড়ছে না, হ্যালো হ্যালো হ্যালো, তবে কথা বলছে না কেন । 
সুমেধা  :- হ্যালো,হ্যা  শুনতে পারছি না পরিষ্কার করে,  লাইন এর ডিসটার্ব আছে কয়েকদিন ধরে ঝড়ে BSNL টাওয়ার পরে গেছে, তোর কথা আসছে বেশ হালকা, তবে তোকে চিনতে পেরেছি তুই শুভ তো নাকি  একমিনিট একটু পড়ে ফোন করি, শাশুড়ি অসুস্থ তাই উনাকে খাওয়াচ্ছি ।  আমি ছাদে গিয়ে ফোন করছি কেমন,  ওখান থেকে পরিষ্কার শোনা যায় ।
শুভজিৎ  মনে মনে ভাবতে থাকে উফফ কি ভালো লাগছে, সেই একই রকমের গলা, গলার টানটা একেবারে ছোটবেলার মতো, কিন্তু বেশ ভার ভার লাগছিলো, হতে পারে বয়সের জন্য, ইসস আবার  ফোন করবে তো? এমনিতেই কথা গুলো পরিষ্কার আসছিলো না, কিন্তু ও যে সুমেধা সেটা বিলক্ষণ বুঝতে পেরেছি, এতটা বছর পেরিয়ে গেলেও চিনতে ভূল করি কি করে।
শুভজিৎ :-  এই শুনছো তোমায় বলেছিলাম না আমাদের এক ছোটবেলার বান্ধবী সুমেধা,  আজ তার নম্বর পেলাম এক্ষুনি কথা হলো, তোমার সাথে কথা বলাবো । আবার বলেছে ফোন করবে একটু পরে, জানো সুমেধা আমাদের বাড়ির উলটো দিকে থাকতো প্রায় সকাল থেকে রাত্রি পর্যন্ত তো আমাদের বাড়িতেই থাকতো । 
শুভজিতের  স্ত্রী (রিনি ) :- ব্যাস আজ তো তাহলে একেবারে সোনে  পে সোহাগা, সুমেধা কে  নিয়ে থাকো, কত স্মৃতি তোমাদের আমি বলছি তুমি শোনো আমার শুনে শুনে কানটা তো পচে গেলো।
ছোটবেলায় ঘুম থেকে উঠে একসাথে চা খাওয়া তাও আবার বাসি রুটি দিয়ে চিনি লাগিয়ে, সেটাও আবার চায়ে ডুবিয়ে, তারপর ওই খাঁচা গাড়িতে স্কুল যাওয়া,  স্কুল থেকে এসে বিকেলে কিত্ কিত্ বা সাতগুটি খেলা, আবার সন্ধ্যে  হলেই টিউশন পড়তে বসা তাও আবার তোমাদের বাড়িতে।  রাতে দুজনেই দুজনের বাড়িতে চিলেকোঠার ঘরে পড়তে বসা, রাতে পড়াশুনা নিয়ে লোহার শিক দিয়ে পড়াশুনার আদান প্রদান করা। আরো কিছু  বাকি আছে কি, ওর সাথে কথা বলে যদি মনে পরে, তা বলেই ফেলো ?  আমার তো পুরোটাই মুখস্থ।  এই শোনো, এতকাল যা বলতে  পারোনি তোমার হারিয়ে যাওয়া সুমেধা কে আজ মনের ইচ্ছা বাসনা কে উগলে দিয়ো বুঝেছো । 
শুভজিৎ  :- ধুর তোমার যতসব উল্টোপাল্টা কথা, এই আমি বাথরুমে, কোনো ফোন আসলে ধরো, এক্ষুনি আসছি । 
 রিনি :- দেখেছো, মিস্টারের কি অবস্থা কখন থেকে বাথরুমে যাবে বলছে  ,যেতে আর পারছে  না  আরে বাবা কি একটা গান আছে না “ সখী ভাবনা কাহারে বলে সখী যাতনা কাহারে বলে তোমরা যে বলো দিবস রজনী ভালোবাসা কারে কয় সে কি  কেবলই যাতনাময়" । হয় গো হয় আজ মনমে লাড্ডু ফুটা, বুঝি সব আরে বাবা রাগ করছো কেন কালই তো তোমায় বলছিলাম শারদীয়া পূজাবার্ষিকীতে এক মধ্য বয়সীর ছোটবেলার প্রেম বা বন্ধুত্ব নিয়ে সে কি  কি ক্লাইমেক্স পড়তে পড়তে তো কত রাত হয়ে গেলো । ভাগ্যবান বাবু পুরানো প্রেম জেগে উঠেছে, 
ওই দেখো আবার কার ফোন আসছে, আরে আস্তে আস্তে  হুমড়ি খেয়ে পড়ে যাবে তো ফোন ধরতে গিয়ে , আস্তে  আস্তে যাও ।
শুভজিৎ :- কৈ কৈ দেখি, ধুর আবার রঞ্জন , আজ সকালে ফোন করেছিল, আচ্ছা তুমি ধরো,  বলো আমি বাথরুমে আছি ।  আর তা  না হলে ধোরো  না কেমন।  ধুর বাবা আবার ফোন করছে,  এই শোনো,  এবার  ধরে বলো আমি সত্যি সত্যিই বাথরুমে। 
রিনি  :- ধরবে কেন,  এখন তো সুমেধা আর সুমেধা, যতই কাছের বন্ধুরা ফোন করুক না কেন, আরে বাবা ধরবো কিনা বলো unknown no শেষ টা 0917। 
শুভজিৎ :- ধোরো  না আমি চলে এসেছি, তুমি unknown no বলাতেই আমি ছুটে এলাম যা পায়জামাটা দরজার কোনায় পেরেকে লেগে কতটা ছিঁড়ে গেলো ।  ইসস, আসতে আসতে ফোন টাও কেটে গেলো  । 
আবার  ফোন, দাঁড়াও  ধরছি ।
সুমেধা :-  হ্যালো শুভ ,  তখন কথা বলতে পারিনি আমার শ্বশুর শাশুড়ি  দুজনেই অসুস্থ তো তাই, তখন থেকে ভাবছি তোকে ফোন করবো একটার পর একটা কাজ এসে পড়ছে, তোর সাথে সময় নিয়ে কথা বলতে হবে তো, তাই সব সেরে  ফোন করছি ।  কেমন আছিস রে শুভ? সেই স্কুল ছাড়লি পরীক্ষার পর আর দেখা হলো না, অথচ তোর আমার কত মিল ছিল, খাঁচা গাড়িতে যখন যেতাম আমি শেষে বসতাম আর মাঝখানটা ফাঁকা থাকতো, তুই এসে একেবারে ওখানেই বসতিস মনে পড়ে শুভ? আর হ্যাঁ যেদিন তুই যেতিস না স্কুলে জায়গাটা আমি তাও ফাঁকা রাখতাম, মনে হতো তুই আমার পাশেই বসে যাচ্ছিস।  আসলে তোকে কি বলি বলতো আমি তোর ভীষণ, মানে কাছের বন্ধু ছিলাম। কতটা বছর আগের কথা প্রায় চৌত্রিশ বছর পেরিয়ে গেছে, জানিস আমার বর যেদিন দেখতে এসেছিলো আমায় সেদিন ও আমার শ্বশুর  শ্বাশুড়ির  বসার জায়গার পাশে আমার জন্য জায়গা রেখেছিলো আমি যেন ওঁর পাশে গিয়ে বসি।আর হ্যাঁ বসেও ছিলাম তখন কি মনে হচ্ছিলো জানিস শুভ , যেন আবার চলেছি খাঁচা গাড়িতে বসে একেবারে স্কুলে, কিন্তু যখন বাস্তবটা দেখলাম বেশ বুঝেছিলাম, জীবনে স্কুল থেকে যে শিক্ষা পেয়েছি এখন তারই বহিপ্রকাশ একেবারে বাস্তবে আসল জীবন গড়তে যাওয়া এই খাঁচা গাড়িতে।  যেদিন গাড়িটা চলবে না সেদিন আমার জীবন পথের যাত্রাটাও থমকে যাবে। দেখতো কেমন মন টা ভার করে দিলাম তোর ও, যাক তোর কথা বল। একটু ধর তো শ্বাশুড়ি বাথরুমে যাবেন তাই ডাকছেন,  এ বাবা ওনাদের ওষুধ গুলো ও খাওয়াতে ভুলে গেছি, শুভ একটু রাখি আবার ফোন করছি । 
রিনি :- কি হয়ে গেলো কথা এতো তাড়াতাড়ি রেখে দিলো, বাবা বান্ধবীর কথাই তো বিভোর, আমার কোনো কথা কানেই যাচ্ছে না, দেখো বাবা সংসার করেছো পুরোনো প্রেম নিয়ে এসো না আবার।
শুভ  :- ধুর কি যে সব বলো না, ওঁর শ্বশুর শ্বাশুড়ি আছে তো, তাই আবার একটু পরে  বলেছে ফোন করবে।   দাঁড়াও একটু অলকার সাথে কথা বলি,  শত হোক ওঁর জন্যই তো আমাদের গ্রুপ টা হয়েছে। 
:- হ্যালো অলকা কেমন আছিস, আমি শুভ মানে শুভজিৎ রায় চিনতে পারছিস, তোকে কি বলে যে ধন্যবাদ জানাবো, শুনলাম তুই ই নাকি এই রিইউনিয়ন এর উদ্যোক্তা, বেশ ভালো লাগলো রে । 
অলকা :- কেমন আছিস শুভ?  কতদিন পর কথা হলো, আসলে তোরা হয়তো পাল্টে গেছিস আমি কিন্তু পাল্টায়নি, যেমন আগে ছিলাম এখনো সেরকমই আছি।স্কুলে আমিই তো সমস্ত অনুষ্ঠানে আগে যেতাম, আগে থাকতাম যে কোনো স্কুলের অনুষ্ঠানে টিচার রা আমাকেই আগে ডাকতো মনে পড়ে ?  এখনো ও একই অভ্যেস টা রয়ে গেছে, সবাইকে নিয়ে চলতে চাই ।
শুভ :- বুঝেছি, তুই একটুও পাল্টাস  নি, একেবারে আগের মতন আছিস, কথাবার্তা গুলো ও পাল্টায়নি । একেবারে সেই স্কুলের অলকা, তুই ঠিক ই বলেছিস, আমরা পাল্টে গেছি তুই পাল্টাস নি। মাঝে শুনেছিলাম তুই কোনো সরকারী সংস্থার সাথে যুক্ত আছিস, এখনো ও নিশ্চয় চাকরি করছিস। 
অলকা :- হ্যা আমি পাল্টাই নি আর পাল্টাবোও  না, শুধু কর্মক্ষেত্রে পজিশন  পাল্টেছে, আমি এখন কলকাতায় সল্টলেকে জল সম্পদ ভবনের ডেপুটি ডিরেক্টর, কিন্তু কাউকে বুঝতে দিই না আমার পজিশন , আর হ্যাঁ  আমার বর মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ার ও অবশ্য মিউনিখ জার্মানি তে থাকে, দুবছরে একবার আসে, আসলে অভ্যাস হয়ে গেছে বুঝেছিস তো একা একা থাকা । আচ্ছা আরেকটা কথা আমাদের ক্লাসে একটা মেয়ে ছিল না কি জানি নাম তার, আচ্ছা মনে পড়েছে প্রিয়াঙ্কা বোস, দেখতে ভালো ছিল তোরা ছেলেরা তো ফিদা ছিলিস ওর উপর মনে পড়ে ?  আমার সাথে বেশ কম্পিটিশন হতো ক্লাসে, যদিও পারতো না অবশ্য । 
শুভ :- আসলে তোদের একটা সুবিধে আছে, কিছু মনে করিস না,তাই না অলকা?প্রোমোশনের ক্ষেত্রে, সেটা বা কতজন পায় বল।  না প্রিয়াঙ্কার সাথে আমার কথা হয়ে ওঠেনি, দেখি সন্ধ্যে বেলায় বলবো।
অলকা :- প্রোমোশনের ক্ষেত্রে যেটা বলতে চাইছিস সবটা কিন্তু সে অর্থে হয় না, ট্যালেন্ট থাকতে হয় বুঝলি।  হ্যাঁ আমার কথা হয়েছে প্রিয়াঙ্কার সাথে ও নাকি BARC এর SCIENTIST, আর ওর বর ও একই,  কি জানি সত্যিই না মিথ্যে কি বললো বুঝলাম না । তবে হ্যাঁ  দেখা নিয়ে এখনো ঘমন্ড কমেনি, আর যাই বল শুভ সেটা ওর কথাই বোঝা যায় এখনো । 
শুভ :- কি জানি, হবে হয়তো, আচ্ছা এখন রাখছি, একটা ফোন আসছে পরে কথা বলছি। (বাবাঃ আজও একই, এতটুকু বদলায়নি, তার উপর যত বোকা বোকা কথা, আমি কি করি সেটা জিজ্ঞাস করার প্রয়োজন ও মনে করে না, বন্ধু বন্ধুর সাথে এতবছর পর কথা এখনো ও অর্থের আর পজিশনের অহংকার, আসলে এদের ক্ষেত্রে এরকমই হয়, বিশাল পরিশ্রম করে কিছু পেতে হয়নি তো, তাই এতো..... )। 
:- হ্যালো হ্যাঁ  আমি শুভজিৎ বলছি, তুই কে  ?
সোহম বল কোথায় আছিস , কি করছিস, কাকু কাকিমা আছেন, তোর ছেলে মেয়ে কয়টা?  এতক্ষন অলকার সাথে কথা বলছিলাম, তোর ফোন আসছিলো দেখেছি, নম্বরটা সেভ করা নেই তো, তবুও বুঝেছি আমাদের 85 গ্রুপের কোনো বন্ধু বা বান্ধবী হবে। 
সোহম :- আরে শুভ, আমি তো দিল্লি তে আছি মানে নয়ডা তে থাকি সেক্টর 25 এ, তুই কোথায়?
শুভ :- আরে আমিও তো দিল্লিতে থাকি প্রায় চব্বিশ বছর হলো, আমার office cannaught place এ চল না একদিন দেখা করি, Friday evening, around সাতটা ঠিক দিল্লি কালীবাড়িতে, আসলে আমি প্রতি শুক্রবার যাই সন্ধ্যা আরতি দেখতে, প্রায় এগারোটা পর্যন্ত থাকি, ওখানে দেখা হবে, আর শোন্ Friday মানে তো কাল, একেবারে সব কথা হবে বুঝলি সামনা সামনি । 
সোহম :- ঠিক আছে, এমনিতেই কাল ছুটি নিয়েছি মেয়ের পরীক্ষা আছে, সেটাও আবার new Delhi তে, তাহলে তো ভালোই হয়, আর শোন্ প্রিয়াঙ্কার কোনো খবর আছে তোর কাছে? সেই কবে শেষ দেখা । 
শুভ :-  আছে আছে এতো উতলা কেন রে, এখনো ভুলিস নি নাকি ?  কাল দেখা হচ্ছে সব বলছি। সত্যি বলতে কি প্রিয়াঙ্কার সাথে এখনো আমার কথা হয়ে ওঠেনি । রাতে ফোন করবো, শুনেছি scientist মানুষ, ওর বর ও নাকি scientist, সোহম বেশি ফোন আর করোনা গুরু তোমায় science বুঝিয়ে দেবে, বুঝলে বাবু । এই রাখছি তাহলে কাল দেখা হচ্ছে। 
রিনি :- কি গো তোমার ছোটবেলার সুমেধার  কি হলো আর ফোন করলো না তো?  ফুঁস হয়ে গেল নাকি ? 
শুভ :- আহ কি যা তা বলছো, ফুঁস হবে কেন ? হয়তো রাতে ফোন করবে ।
এই দেখো হোয়াটস্যাপ এ যে মেয়েটা সব বন্ধুদের লিস্ট আর ফোন no পাঠিয়েছে, বিকেলে যে সমানে আমায় ফোন করছিলো সে হলো মাধুরী, এতক্ষনে চিনতে পারলাম, বাবাঃ এতো সাতাশ জনের নাম আর ফোন no, অর্ধেকের নামই মনে পড়ছে না, যাই হোক আগে ফোন no ধরে সেভ তো করি পরে না হয় কথা বলবো। ঐ দেখ আবার মাধুরী ফোন করছে।
মাধুরী :- কি রে চিনলি এবার আমাকে, সবার no তো পাঠালাম। 
শুভ :- ইসস এতো খারাপ লাগছে রে মাধুরী তোকে চিনতে এতো ভুল করলাম, কিছু মনে করিস না ।  তুই না স্কুলে যেমন ছিলিস এখনো ওমনিই আছিস, তা ভালো, পাল্টাস নি যখন আর পাল্টাস না। একজনের সঙ্গে কথা হলো সে তো এখনো তাই, আরো লম্বা লম্বা কথা বলছে । 
মাধুরী :- আমি বলবো কার কথা বলছিস, অলকা তো?  প্রথম প্রথম দু তিন বার কথা বলেছি, আর বলিনা, কি ঠিক বলেছি তো নামটা ?,  আসলে ছোটবেলার বন্ধু হলেও সবাই ঠিক বন্ধু হতে পারে না, এদের কাছে এখনো ও বন্ধুত্বের  ডেফিনেশন টা হলো  শুধু টাকা, পজিশন, এর বাইরে কিছুই বোঝে না । শুভ THREE IDIOTS দেখেছিস নিশ্চয়, চতুর কোনোদিন রাঞ্চো হতে পারবে না, রাঞ্চো যতই চেষ্টা করুক না কেন। 
শুভ :- একদম ঠিক বলেছিস মাধুরী, তোর মধ্যে ছোটবেলায় যে সরলতা ছিল এখনো আছে, ওই বাচ্চা শিশুটাকে কোনোদিন মরতে দিস না । যতদিন তুই আছিস, ততদিন ওই বাচ্চাটা আছে, মরে গেলে তুই ও শেষ ।  ওটা যে বুঝবে না, সে বন্ধুত্বের আসল সংজ্ঞাটা ও খুঁজে পাবে না , যাক রাখি পরে কথা হবে। দেখি একটু প্রিয়াঙ্কাকে ফোন করবো, এখন প্রায় আটটা বাজে এতক্ষনে বাড়িতে চলে এসেছে নিশ্চয় । 
- হ্যালো আমি শুভজিৎ,  প্রিয়াঙ্কা আছে?
প্রিয়াঙ্কার স্বামী :- এই শুনছো তোমার ফোন, শুভজিৎ বলছে, বোধহয় আসাম থেকে শুভজিৎ বড়ুয়া, তোমার সেই প্রজেক্ট নিয়ে কিছু বলবেন, কথা হলে আমায় ফোন টা দিয়ো আমারও উনার সাথে কথা আছে আমার প্রোজেক্টটা নিয়ে যদি একটু হেল্প করতে পারেন। 
প্রিয়াঙ্কা :- হ্যালো, হ্যাঁ বলছি, আমি প্রিয়াঙ্কা বোস। 
শুভ :- বাবাঃ তোদের বাড়িতে ফোন করা বেশ মুশকিল, সারাক্ষন প্রজেক্ট নিয়ে কথা হয় । আমি হলাম শুভজিৎ, তোর স্কুলের বন্ধু। 
প্রিয়াঙ্কা :- বুঝেছি বল, তোকে ভুলি  কি করে ? আসলে সকাল থেকে একটার পর একটা ফোন আসছে সব বন্ধুদের, ও ভেবেছে আমার প্রজেক্টের কলিগ, শুভ তোদের ছাড়তে ইচ্ছে করে না যখন ই কেউ ফোন করে মনে হয় ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলি, এই তো সবে ঢুকলাম, এখনো সারাদিনের কাপড় চোপড় ও ছাড়া হয়নি। 
শুভ :- ও আচ্ছা তাহলে ডিসটার্ব করলাম বল? 
প্রিয়াঙ্কা :- একদমই নই, এই শোন্ যবে থেকে গ্রুপ টা হয়েছে আমি সবাইকে বলেছি একটা রিইউনিয়ন করতে একেবারে আমাদের স্কুলে, ব্যাপারটা মাথায় রাখিস,  আর হ্যাঁ,  সোহমের কি খবর রে ? সেই কবে শেষ দেখা । 
শুভ :- আরে আগামীকাল ওর সাথে দেখা হবে, বলবো তুই জিজ্ঞাসা করছিলিস। ফোন করতে বলবো কেমন। তোর সবার সাথে কথা হয়েছে? 
প্রিয়াঙ্কা :- হ্যাঁ, তবে সোহম বাদে, যদিও গ্রুপ এ দেখেছি, মাধুরী তো লিস্ট আর ফোন no পাঠিয়েছে আমায়, তা  দেখে আমি সেভ ও করেছি,  দেখি পারলে ওকে আমি ফোন করবো,  যদিও ওর সাথে আমার দেখা, কথা সবই হয়েছিল ব্যস ওই পর্যন্ত, তাও বহুবছর আগে। তবে হ্যাঁ  সবাই আমায় ফোন করে।
শুভ :- আসলে তোর মধ্যে একটা ব্যাপার ছিল সেই স্কুল জীবন থেকে, সবাই বেশ পছন্দ করতো, আমরা তো তোকে কত খুঁজেছি, তবে হ্যাঁ  প্রিয়াঙ্কা আজ  বলতে কোনো বাধা নেই আমি নিজেও তোকে বেশ চাইতাম, কিছু মনে করলি না তো ।
প্রিয়াঙ্কা :- আজ কিছটা হলেও আঁচ করতে পারি, তখন যদি জানতাম তাহলে.......... , যাক ফোন করিস, বেশ ভালো লাগলো। 
সুমেধা :- শুভ কতক্ষন থেকে চেষ্টা করছি, তোর ফোন সমানে এনগেজ, বুঝলাম ক্লাসের বন্ধুদের সাথে কথা বলছিলিস, এই শোন্ না রিউনিয়নের ডেট টা তাড়াতাড়ি ঠিক করনা শুভ, সত্যি কথা বলতে কতদিন তোকে দেখিনি, বেশ দেখতে ইচ্ছে করছে। 
শুভ :- দাঁড়া,  কনফারেন্স কল করছি সঙ্গে দীপ কে নিচ্ছি কেমন। ও বলতে পারে কবে ঠিক করছে। হ্যালো দীপ লাইনে সুমেধা আছে,  আমরা চাইছি একটা গেট টুগেদার করতে, এটা নিয়ে কিছু ভেবেছিস তোর?
 দীপ,  সুমেধা বলছি, কর না রে সামনেই তো শীতকাল আগে থেকে বলছি, ওই সময় করলে বেশ ঠান্ডা ঠান্ডা থাকবে,  ভালোই হয় বল ? 
দীপ :- আরে আমার একার কথাই  হয় নাকি ,তাহলে একটা গ্রুপ কনফারেন্স কর সামনের রবিবার সেখানে সবার সাথে কথা বলে ঠিক করা যাবে।শুভ তুই আর  সুমেধা  শোন্ আমার বৌয়ের সাথে কথা বল ওর নাম কিরণ,  সবার সাথে কথা হয়েছে শুধু তোরা দুজন বাদ ছিলিস। 
সুমেধা  :- কিরণ, তোমার সাথে এই প্রথম আলাপ, শোনো তুমি বলছি বলে কিছু মনে কোরো না, দীপ আমরা একই বেঞ্চে বসতাম, খুব শান্ত ছিল জানো,  মেয়েদের সাথে তো কথাই বলতো না এতো লাজুক ছিল। জানো তোমার বর কিন্তু খুব ভালো ফুটবল খেলতো।  আচ্ছা শোনো, রিইউনিয়ন হলে কিন্তু তোমায় থাকতেই হবে, এটা কিন্তু বন্ধু বান্ধবীরা নই,  একেবারে ফ্যামিলি রিইউনিয়ন বুঝেছো। 
কিরণ :- সুমেধাদি দীপের মুখে খুব শুনেছি আপনাদের কথা, এতো শুনেছি যে এখন কল্পনাও করতে পারি, কে কি রকম, আর শুভ দা তো মাঝে মাঝেই ওকে ফোন করে, আমার সাথেও কথা হয়। 
সুমেধা :- শুনেছি তুমি একটা দারুন  চাকরি করো, দীপ বলেছে, এবারে গেলে কিন্তু হাতের রান্নাও খেয়ে আসবো , দীপ বলেছে তুমি খুব ভালো রান্না করো,  শুধু নিজের বর কে খাওয়ালে হবে না, আমাদের ও খাওয়াতে হবে বুঝেছো। 
কিরণ :- দিদি এবারে আসলে আমাদের এখানে উঠবেন,  আগে থেকে জানিয়ে আসলে আমি ছুটি নিয়ে রাখবো, আর আপনাদের যার যা ইচ্ছে আমি রান্না করে খাওয়াবো। তবে হ্যাঁ যদি শীতকালে আপনাদের রিইউনিয়ন হয় তবে সবার জন্য আমার তরফ থেকে একটা  স্পেশাল surprise থাকবে। 
সুমেধা  :- শোনো খাবার দাবারে কোনো surprise রেখো না আমি একটু বেশী লোভী। 
কিরণ :- আসলে বলতে চাইছিলাম না, খাবেন কিনা কিজানি। 
সুমেধা   :- আরে অতো  কিন্ত কিন্তু করছো কেন?  বলেই ফেলো না । 
কিরণ :- ওটা হল গুড় দিয়ে তৈরী মানে গুড়পিঠা।
 সুমেধা :- আরে ব্বাস সে তো দারুন খাবার আমার তো দারুন পছন্দ, শুভ তোর পছন্দ? 
শুভ :- সেটা আর বলতে,  কত খেয়েছি। 
কিরণ :- দিদি শুভ দা কিন্ত যখনই আসে বার বার আপনার কথা বলে। 
সুমেধা :- ও এখন তুমি শুভর হয়ে কথাটা convey করছো তাই না ?কি রে শুভ লজ্জা পেয়ে গেলি নাকি, কিরণ জানো তো ওর কোনো মুরোদ নেই,  ইংলিশ টিউশন এ একসাথে পড়তাম, একসাথে বড় হলাম, ছোট্ট থেকে আমরা একসাথে, কোনোদিন সাহস হয়নি আমায় বলার, কত ভেবেছিলাম ও অন্তত একবার বলুক আমায়, ভীতু কোথা কারে। 
শুভ :- আচ্ছা দীপ রাখছি, কনফারেন্স  টা করিস, ওই দিন ফাইনাল করবো । কি রে ফোন টা কেটেছে দেখ তো। 
কি সব বললি যা তা   তবে অবশ্য............আমারও যে ইচ্ছে ছিল না তা নয় , আসলে বলতে পারিনি তোকে । এখন যদি বলি তাহলে তো একটা বাজে সম্পর্ক হবে তাই না, তাও তোকে মানে তোমায় কোনোদিন পাবো না জানি, তাতে কি হয়েছে।
সুমেধা  :- বাবা : কি রোমান্টিক দেখো, ছেলের সাহস বলিহারি,  শুভ এতটা বছর লাগলো তুই থেকে তুমি তে আসতে। শুভ ভাবতে পারছি না তোমায় এই বয়সে এসেও  এভাবে পাবো, আমার না আবার করে রোমান্স করতে ইচ্ছে করছে জানো। আবার করে ইচ্ছে করছে স্কুলে যেতে, খাঁচা গাড়িতে আবার করে তোমার পাশে বসে, এবারে আর ভুল  হবে না আমাদের দুজনের। শুভ এতটুকুও কি বুঝলে না, বা এতকাল কখনো মাথায় আসেনি ,যে  খাঁচা গাড়িতে তোমার জন্য জায়গা রাখা থাকতো, আমিই তো রাখতাম শুভ হ্যাঁ আমি সুমেধা ! জানো আজও বাচ্চারা যখন খাঁচা গাড়ি করে স্কুলে যায়, আমি সমানে ফ্যাল ফ্যাল  করে ঘুরে ঘুরে  তাকায়, সমানে খুঁজি জানো আর কোনো শুভ, সুমেধা আছে কিনা ওই গাড়িতে। মনে মনে আশীর্বাদ করি,  হতে পারে তারা  শিশু। জানো শুভ,  শিশু  মন যে স্বপ্ন দেখে, তাদের কল্পনায় তারা ভবিষ্যৎ ও গড়ে, আমরা বড়রা সেই স্বপ্ন গুলো গুঁড়িয়ে দিই , মনটাকে দিক পরিবর্তন করাই অন্যদিকে। স্বপ্নটা তাদের অধরাই রয়ে যায়, বাস্তবতা পাই তোমার আমার মতো এই পঞ্চাশে এসে, তখন যেটা বেঁচে থাকে তা শুধুই স্মৃতি আর আফসোস। আচ্ছা  শুভ, ইংলিশ টিউসোনে সামনা সামনি বসা তোমায় এতটুকু  নাড়া দেয়নি কেন? তখন তো তুমি বেশ বড় হয়ে ছিলে,  ভালো ভালো কথা বলতে। আজও কি তোমায় ভাবায় না? শুভ তোমার এই তুই থেকে তুমি জানো আমায় কত সাহস যোগাবে , কত পজিটিভ ভাবাচ্ছে আমায়। 
শুভ :- সত্যি বলছো সুমেধা?  আমারও না মনটা বেশ হালকা হলো।   জানো তোমার দুটো ব্যবহারের জিনিস আমি এখনো যত্ন করে আমার কাছে রেখেছি। তোমার বেশ কিছু ভোঁতা ছোটো হয়ে যাওয়া নটরাজ পেন্সিল গুলো যা তুমি ফেলে দিতে বেঞ্চির নিচে, আমি ক্লাসের পর সেগুলো দিনের পর দিন কুঁড়িয়ে সযত্নে রেখে দিতাম আমার কাছে, যা দিয়ে আমি একটার পর একটা জুড়ে জুড়ে, আমার টেবিলে কলমদানি করেছি। আর অঙ্ক না পারার সময় সেই দাঁত দিয়ে আফসোসের কামড়ে হাফ করে চিবিয়ে রাখা অর্ধেক রাবারটা, সেটাও রেখেছি,আমার কাছে, এটা কি কম বড় নই তোমাকে মনে রাখার সুমেধা?
আসলে তুমি আমার মনের অনেক ভিতরে ছিলে,  আসল হয়ে, সুদ হয়ে এলে এতদিন পরে,  আসলে কি বলতো যার মধ্যে মেধা আছে তার সুদ ও পাওয়া যায় সময় তো  লাগে তাইতো তুমি সুমেধা । আরেকটু খোলসা করে বলি যেমন ধরো এক আনা, দু অনা করেই তো ষোলো আনা হয়, ষোলো আনা মানে  তো একটাকা,  পুরোটাই প্রাপ্তি, তাইতো যে কোনো পুজোয় এক টাকা লাগে মানে ষোলো আনা দিতে হয় ।   বুঝলে কিছু, না বুঝলে পরে বলবো যখন দেখা হবে রিইউনিয়ন এ  তখন। রাখি এখন,   তুমি  না এখনো ও পাগলই আছো ।
সুমেধা   :- আচ্ছা হ্যাঁ , রবিবারে তাহলে ঠিক সন্ধ্যে সাতটায় কথা হচ্ছে  । 
শুভ :- রাখছি tata। 
দীপ  হোয়াটস্যাপ মেসেজে জানায় – (শোন্ সবাইকে বলছি আগামী রবিবার আমাদের রিউনিয়নের জন্য একটা ফোনে কনফারেন্স করতে চাই ঠিক সন্ধ্যে  সাতটায় ।  সেখানেই দিনটা ঠিক করবো কবে হবে, কারো যদি অসুবিধে থাকে তাহলে গ্রূপে জানাস, তাহলে তাকে ফোন করা হবে না, পরে হলে আমায় মিস কল দিস, আমরা তখন কেউ গ্রূপে অ্যাড করে নেবো কেমন) । 
ইতিমধ্যেই প্রত্যেকে হোয়াটস্যাপ এ ম্যাসেজটা পাওয়ার পর বেশ বিচলিত, তাই মনে মনে  সবাই ভাবে আমাদের বহুপ্রতিক্ষিত রবিবার দিনটাতেই আমাদের ডেট ঠিক হবে,  কতদিন দেখিনি, এতটা বছর পর দেখা হবে, ব্যাপারটা ভাবলেই গাঁয়ে কাঁটা দেয় । 
অবশেষে সন্ধ্যে সাতটা বাজতেই সবাই মোবাইলের কাছে এই বুঝি ফোন এল,  সবাই তাঁদের দৈনন্দিন কাজ কর্ম যেন সকাল থেকেই সেরে ফেলে, প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে শুরু হয় কনফারেন্স কল। 
দীপ :- কি রে সবাই শুনতে পারছিস, উফফ তোরা একটু চুপ করবি মেয়েরা সমানে কথা বলেই যাচ্ছিস,  আসল কথা আর হবেই  না। সীমা, রেবা তোদের বলছি  কি ড্রেস পড়বি সেটা নিজেরা ফোন করে পড়ে ঠিক করিস। ঝুনু, মুনমুন,  শুভ্রা একসাথে- দীপ খাওয়া দাওয়াটা কিন্তু high class যেন হয় বুঝলি,  বাজেট যাই হোক না কেন।
 শ্যাম- গুরু নো চিকেন, মটন না হলে কি রিইউনিয়ন জমে নাকি। তনু, বানু -এই শোন্ গাড়ির ব্যবস্থা করিস কিন্তু আমাদের দুই বোনের হাঁটু ব্যাথা, গাড়ি ছাড়া অসম্ভব। 
মাইতি :- I can give you all a very good suggestion, better to prefer ordering food from a restaurant . 
সোহম :- so nice of your idea maity . Can I suggest one more option, we can book a banquet hall at JW MARIOT, Since budget is not the main constraints,  moreover we will get unlimited buffet.
প্রিয়াঙ্কা :- সোহম একটা কথা বলি, আগে দিনটা ঠিক কর,  আর হ্যাঁ  এতো high budget করলে অনেকেরও তো অসুবিধা থাকতে পারে, সেটা একবার ভেবে দেখিস। 
সুরজিৎ :- সোহম, ভাগ বে, জোন টা ঠিক ছিল সোন টাই কর,  আনখাই বাড়াচ্ছিস, উখানে করলে দোমে পয়সা খরচা হবেক । 
গ্রুপ :- হা, হা হা সুরজিৎ তুই ঠিকেই বলছিস বে।
শুভ :- ঠিক বলেছিস, সবার যেটা  মত আমারও একই। আরে বাবা দিনটা তো ঠিক কর। শোন্ আগামী জানুয়ারিতে রাখছি দুদিনের জন্য  ধর 20 আর 21শে জানুয়ারী করলে কেমন হয়,  পরপর শনিবার আর রবিবার। 
শুভ্রা :- আমার তাতে আপত্তি আছে,  তোরা করতে পারিস, আমি কিন্ত 21শেই আসবো, আসলে জানিস আমি একা একা ঠিক চলাচল করি না, আমার বর ও আসবে তো, ওতো এতো ছুটি পাবে না রে। 
মাধুরী :- আমার কিন্ত কোনো অসুবিধে নেই, যদি চার দিন করিস তাতেও আমি আছি, আসলে এতগুলো বন্ধুরা আসবে, আলাপ করতে করতেই দুদিন চলে যাবে, বাকি দুদিন তো ঘোরাঘুরি আর খাওয়া দাওয়া, আড্ডা, বেশ কাটবে কি বল,  আর এই কে কি শাড়ি পড়বি রে,  আমি তো প্রথম দিন জিন্স আর টপ, দ্বিতীয়দিন.. 
দীপ :- মাধুরী, একটু চুপ করবি,  মাইরি পারিস ও  একটু সুযোগ পেলেই হোলো কে কি পড়বি তোরা নিজেদের মধ্যে পরে  আলোচনা করিস। শোন্ তাহলে ওটাই ঠিক হোলো আগামী 20 এবং 21 শে জানুয়ারী আমাদের রিইউনিয়ন হচ্ছে সেটা পাকা তাহলে, ধরতে পারি,  কেমন, জানিস রিউনিয়নের সানাই কিন্তু সত্যি সত্যিই বেজে উঠলো কি বলিস। 
সুমেধা  :- দীপ,  ঠিকই বলেছিস  সত্যিই সত্যিই  সানাই যেন বেজে উঠেছে,  এ যেন এক হারিয়ে যাওয়া  বন্ধুত্বের সানাই।  (মনে মনে ভাবে  সে  আমারও, শুভর সাথে দেখা হওয়ার এক সানাই যেন বাজছে )। 
এভাবে চলতে থাকে তাদের বন্ধুত্বের বাঁধন, কখনও গ্রুপে আবার কখনও একে অপরের  personal এ সৌহার্দ্য বিনিময়। 
প্রায় রিউনিয়নের একমাস আগে –
সুমেধা :- শুভ কি শুনলাম, আমার গা হাত পা তো ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে, আচ্ছা এটা কি সত্যিই খবর শুভ ,  যদি সত্যিও হয় শুভ, পরের টা যেন সত্যি না হয় ।  বড় ভার লাগছে নিজেকে, কেনই বা পরিচয় হয়েছিল কিরণের সাথে, শুভ তুমি খবরটা আমায় দিও, একেবারে সত্যি খবরটা, আমাদের  গুড়  পিঠেটা যেন সত্যি সত্যিই খাওয়া হয় শুভ।  জানিও  আমি ফোন টা ধরে বসে আছি। 
শুভ :- কি সব যা তা বলছো,  রাখো দেখি, আমি খবরটা টা তো নি ।   পরে না হয় জানাচ্ছি। শোনো রাখছি, দেখি,  সোহম, মাধুরী,  প্রিয়াঙ্কা কেন ফোন করছে, তাহলে কি খবরটা সত্যি, হে ঠাকুর পুরোটা যেন সত্যি না হয়,  আমিও তো নিতে পারবো না। 
মাধুরী :- শুভ কখন থেকে তোকে চাইছি, তোকে সমানে এনগেজ পাচ্ছি, তখনই বুঝেছি তুইও খবর টা পেয়েছিস। 
শুভ :- কি খবর আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না রে। 
মাধুরী :- আরে দীপের Mrs. কিরণ আজ শেষ........ আর পারছি না বলতে , খুব কষ্ট হচ্ছে, এভাবে চলে যাওয়া তাও আবার ট্রলারের নিচে সেকেন্ডে সব শেষ, আর আসছে না মুখে.....  হাত কাঁপছে ।
শুভ :- মাধুরী তাহলে সত্যি এটা,  অনেক ক্ষণ  থেকে আমার মোবাইলে সবাই ফোন করেছে প্রচুর মিস কল দেখছি,  আমি রাখছি, গাড়ি মাঝ রাস্তায় সাইড করে কথা বলছি,  আমিও খবরটা শুনে মানসিক ভাবে বিব্রত, মনকে আগে বোঝাই তারপর কথা বলছি। 
সুমেধা :- হ্যালো হ্যাঁ পুরোটাই সত্যি, আমাদের না পাওয়া গুড় পিঠে টা একেবারে গুঁড়িয়ে চিঁড়ে চ্যাপ্টা হয়ে গেছে,  স্বাদটা পাওয়া হোলো না,  আর ইচ্ছেটা না পাওয়ার  সাধের  সাথে শুধুই অতীতের বর্ণনাই  কেমন যেন মিশে  গেলো  । রাখছি। 
সোহম :- শুভ শুনেছিস তো  সবটাই ,  দেবার্য্যর  সাথে কথা হোলো, ও বললো আগামী কাল সকাল সকাল যাবে ইস্পাতে , দশটার মধ্যে পৌঁছে যাবে, দাহ ক্রিয়াকলাপে ও থাকবে বলেছে। আর হ্যাঁ কাজের দিনটা কবে ঠিক হয় সেদিন বোধহয় প্রিয়াঙ্কা, দেবার্য্য , আর অরিন্দম যাবে বলেছে। 
শুভ :- হ্যাঁ যাওয়া তো উচিৎ,  মানুষ যা ভাবে কেন ঠিক তার উল্টো হয় বুঝিনা। আমাদের এতো বছরের একসাথে রিইউনিয়ন  হওয়ার স্বপ্ন সেটাও  অধরাই রয়ে গেলো। শোন্ রিইউনিয়ন যখন হোলো না আর কি করার সবাইকে বলে দে অন্তত যারা যারা পারবে ওই দিন যেন যায়, আমাদের আনন্দের রিইউনিয়ন না হলেও বা দেখা তো হতেই পারে সকলের, যাক রাখি। 
সুমেধা  :- যাক অনেক রাতে তোমায় ফোন করছি অসুবিধে নেই তো,  সব শুনলাম সব জানলাম আর নতুন করে বলছি না,  শুধু বলি আমার আর যাওয়া হবে না ।  আমাদের চোখে দেখার সানাই হয়তো এখনই বাজবে না,  তবে হ্যাঁ  বাজবে তো নিশ্চয়, দীপ আবার করে সংসার বাঁধুক ওটা মনে মনে চাইবো, সানাইটা সেদিন তো নিশ্চয়  বাজবে, দীপের মিলন, আর আমাদের দেখা সেটা না হয় ইষ্ট দেবতার ইচ্ছের  উপর রেখে দিলাম বেশ,  ভালো থেকো। 
   









দেবপ্রিয় সেন       10.05.2020




           

                                   









Comments

sadamata101.blogspot.com

B-47#বিশ্বকর্মা_পূজো

সন্তোষ ঢাকি

B-71#GANESH_PRASADAM. ( গনেশজির ভোগ নিবেদন মোদক ও পূরণ পুলি)