B-149#রাতের স্বপ্ন কিন্তু শিক্ষা

রাতের স্বপ্ন কিন্তু শিক্ষা

 

আজ এক সুন্দর স্বপ্নের গল্প বলবো, স্বপ্নটা আমার কাছে সুন্দর আপনার কাছে নাও হতে পারে এটাই বাস্তব সকালে উঠেই ভেবেছিলাম এটা কি লেখার মত?নিজের একটা বিদঘুটে অনুভূতির কথা লিখবো?কিন্তু মন মানলো না, তাই লিখেই ফেললাম শুনেছি যা দেখেছো সেটা সত্যি না হলেও যদি বলা যায় ও বলার মাধ্যমে অন্যকে যদি আনন্দ দেওয়া যায় তাহলে মনের অনুভূতির প্রকাশ টা ঠিক সেই সময় কেমন ছিল সেটা নিশ্চয় শেয়ার করা যায় অন্যের সাথে ঠিক যেটা দেখেছি সেটার একটা পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ দিলাম


গল্পটা প্যারাসুট নিয়ে আপনারা অনেকেই দেখেছেন কালীপুজোর রাতে যেই রকেটটা আমরা অমাবস্যার রাতের অন্ধকারে আকাশে পাঠাই সেটা অনেক দূর ওঠার পরে একটা বাজি বা পটকার আওয়াজ হয় আর ঠিক তার পরেই একটা ছোট্ট সাদা প্লাস্টিকের প্যারাসুট রকেট টাকে নিয়ে নিচে নেমে আসে


 একটা জিনিস নিশ্চয় লক্ষ্য করেছেন যখন রকেটটা নিচের দিকে নামতে থাকে ঠিক পাশে একটা বাতি জ্বলতে থাকে অনেকক্ষন ধরে, এ যেন প্যারাসুট টাকে নিচে আসার জন্য পথ দেখায়, যাতে আমরাও অন্ধকার আকাশে প্যারাসুটের গতিবিধি উপভোগ করি ।


এতগুলো কথা কেন বললাম ভাবছেন তাই তো? আসলে আমার স্বপ্নের প্যারাসুটটাও এত ছোটো ছিল সেটা বোঝানোর উদ্দেশে

সকালে বাজারে যাচ্ছি হেঁটে হেঁটে হাতে বাজারের ব্যাগ হঠাৎ দেখি একজন বিদেশী ভদ্রলোক তার ছেলেকে নিয়ে সেই একই আকৃতির একটা প্যারাসুট নিয়ে কি জানি কি করছে


একটু অবাক হয়ে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে দেখছি কি হয় একটু উৎকণ্ঠার মনোভাব নিয়ে রাস্তার লোকজন তাঁরা অবাক হয়ে দেখছেন ভদ্রলোকের কার্যকলাপ,  কারণ বেশির ভাগ লোক ধরেই নিয়েছেন আর নতুন কি দেখবো বাচ্চার সাথে হাল্কা খেলাধুলোয় ব্যস্ত আছেন বরং তাঁরা দেখছেন একজন বিদেশীকে কলকাতা শহরে বাজারের সামনে ফর্সা লোক সঙ্গে আদরের টুকটুকে ফর্সা বাচ্চা তাঁকে দেখেই সকলে অবাক ঘুরে ঘুরে দেখছে আমাদের একটা অভ্যেস আছে একটু বিদেশী পুরুষ বা নারী হলেই আমরা কৌতূহলের বশে দেখি কারণ একটাই ওরা ফর্সা বা কুচকুচে কালো আর আমরা খুবই শ্যামবর্ণ


আমি অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে দেখছি কিছু একটা হবে নিশ্চয় হবে দেখি বাচ্চাটির হাতে প্যারাসুট আর তার বাবার হাতে একটা রিমোট কন্ট্রোল, বাচ্চাটি প্যারাসুটের ঠিক নিচটা যেখানে সুতো গুলো এসে একসাথে হয়েছে সেই জায়গায় শক্ত করে ধরে আছে আর প্যারাসুটটা তার হাতের উপর নেতিয়ে আছেবাচ্চাটির বাবা রিমোটে একটা বোতাম টিপতেই দেখলাম প্যারাসুটটা খুলে গেলো আর ছোট্ট প্যারাসুটটা নিমেষেই বাচ্চাটিকে নিয়ে ধীরে ধীরে উঠতে লাগলো আমি তো অবাক এর পর দেখি রাস্তার লোকজনও অবাক সকলে সমানে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে দেখি কতদূর যায় বাচ্চাটা বেশ মজা আর আনন্দ উপভোগ করছে সেই মুহূর্তের সে চীৎকার করে বলে চলেছে বাবা আরো আরো উপরে নিয়ে যাও আমায় ততক্ষন পর্যন্ত আমায় নামিও না যতক্ষণ পর্যন্ত আমি নীল আকাশে মেঘের ভিতর ঢুকে না যায় ব্যাপারটা আমায় খুব অবাক করেছিলো,স্বপ্নে আমি এগিয়ে গিয়ে সেই বিদেশীর সাথে আলাপ করি, আর জিজ্ঞাসা করি এটা কি, কেমন করে হচ্ছে?এমন গ্যাজেট আমরা কখনোই দেখিনি ভদ্রলোক আমায় বললেন দাঁড়াও সব বলবো আগে ছেলেটাকে নামিয়ে আনি, এমন মেঘের মধ্যে ঢুকে গেছে দেখাই যাচ্ছে না


বাচ্চাটা নামতেই আমায় বললেন চেষ্টা করবে নাকি তুমিও? আমি একটু ইতস্তত করে বলি, কি বলছো?ওটা কি সম্ভব?কোথায় বাচ্চার ওজন তাও আমায় অবাক লাগছিলো টুকুন প্যারাসুট কি ভাবে টেনে নিয়ে গেলো আর আমি তো কতই বড় সেটা কোনোভাবেই সম্ভব নয়আমি বলাতে উনারও জেদ চেপে গেলো, আমায় বলেন, আহাঃ ধরো তো, ধরেই দেখো না সুতোটা কি হয়?বড়জোর উঠতে পারবে না তোমায় নিয়ে প্যারাসুটটা, এর বেশি তো নয়

যাক আমি রাজি হয়ে গেলাম তাঁর কথায়,এদিকে হাসছি কি বোকা বোকা কাজ করছি, এটা ছেলেমানুষি ছাড়া কিচ্ছু নয়, যদি উপরে উঠি সেটা জাদু তার বেশি কিছুই নয়সুতো ধরতেই দেখি প্যারাসুট ফুলে উঠলো আমায় নিয়ে খুবই ধীরে ধীরে উঠতে থাকলো প্রথমে পায়ের তলার মাটির থেকে শরীর আলগা তারপর রাস্তার পাশের ফ্ল্যাটের একতলা ছাড়ালাম দেখতে দেখতে দেখতে দোতলা এমনকি নিমেষেই দশ তলাততক্ষনে ফ্ল্যাট  তার আশেপাশের সকলে আমার ভিডিও করছে মুহূর্তের সাক্ষীর প্রমান দিতে অন্যের কাছে তাও আবার এত ছোটো প্যারাসুট দিয়েযাক কিছুক্ষন পরে নেমে এলাম মাটিতে বেশ ভালো লাগছিলো। সেই  বিদেশী ভদ্রলোককে জিজ্ঞাসা করেই ফেললাম কি ব্যাপার ভালোই তো উঠছিলাম কেন নিচে নামিয়ে আনলেন।


স্বপ্নে ভদ্রলোকটি বেশ কিছু কথা বললেন যেটা আমার এই সত্যিকারের গল্পের সারমর্ম, তিনি বললেন,আসলে  আপনার ও আমার ছেলের মধ্যে একটা এক সুতোর চিন্তাধারার পার্থক্য তাই আপনাকে নামিয়ে আনলাম।

আমার ছেলে যখন উঠছিলো উপরের দিকে সে সমানেই চাইছিলো নিজেকে নীল আকাশে মেঘের মধ্যে হারিয়ে যেতে, সে শুধু ঐ মুহূর্তটাকে উপলব্ধি করছিলো তা নয়, বরং সে মনে মনে হয়তো অনেক স্বপ্নের জাল বুনছিলো যা আমার অজানা। আমি নিজেই পিতৃস্নেহে তার অজানা ইচ্ছে টাকে বুঝতে না দিয়ে বা বুঝতে না পেরে, ভয়ে তাকে নামিয়ে এনেছিলাম যদি সে মাঝ আকাশে হারিয়ে যায়। ওটা আমার দোষ ছিল কেন জানেন? একটাই কারণ,কন্ট্রোল ছিল আমার হাতে । ছেলে নিঃসন্দেহে উপরে উড়ছিল সে জানে নিজের উপর বিশ্বাস যে আমি হারাবো না, হারালেই বাবা আমায় টেনে নিচে আনবেন সেটা ছিল তার ভরসা বাবার প্রতি।

বাকি থাকলো আপনার কথা আপনি প্রথমেই নিজের ওপর তো নয়ই, এমনকি প্যারাসুটের উপর ও কোনো বিশ্বাস ছিল না তাই আপনি মন থেকে সেটাকেও অস্বীকার করেন।কিন্ত যেই মুহূর্তে আপনি উঠতে শুরু করলেন প্রথম কিছুটা আপনি অবাক এমনও হতে পারে। যেই মুহূর্তে আপনি ফ্ল্যাট ছাড়িয়ে উঠতে শুরু করেন তখন দেখতে পান আপনার ছবি সকলেই নিচ্ছে, সত্যি করে বলুন তো আপনি কি আদৌ ওঠার আনন্দ টা উপভোগ করছিলেন নাকি আপনাকে দেখে যাঁরা ছবি নিচ্ছিলেন তাঁদের কাছে আপনি একজন হিরো হিসেবে নিজেকে গর্ববোধ করছিলেন। আসল কথা টা হলো যেখানেই নিজেকে গর্ব অনুভব করবেন সেখানেই আপনার পতন তাই আপনাকে নিচে নামিয়ে এনেছিলাম। একটা শিশুর মাথায় ওসব কিছুই কাজ করে না সে শুধুই অন্যের থেকে আলাদা কিছু করে আলাদা কিছু ভাবে আর যে সকল শিশু এটা করতে পারে পরবর্তীকালে তারাই বড় হয়ে একটা নজির গড়ে তোলে। আপনি প্রথমে ঠিকই ভেবেছেন এই ছোট্ট প্যারাসুটটা একটা নিছক উপমা যা আপনাকে নিয়ে কোনোদিনই উড়তে পারে না কিন্ত বিশ্বাস টা করতে হবে নিজের উপর উড়িয়ে দেবেন না।

কি গো আজ শনিবার কালরাতেই তো বলেছিলে আজ বাজারে যাবে, কি ভাবছো এত বিছানায় বসে বসে অনেকক্ষন তো উঠেছো। এই নাও চা আর শোনো বাজারের ব্যাগটা রেখে গেলাম শিগগির যাও অনেক বেলা হয়ে গেলো।

সুধী পাঠকবৃন্দ বিশ্বাস করুন আমার এই কাহিনীটা বিন্দুমাত্র কোনোখান থেকে নেওয়া নয়, বা চুরি করা নয়। আজ 20শে ফেব্রুয়ারী 2021 সনের এক টাটকা ভোরের স্বপ্ন যা আপনাদের শোনালাম।

শেষমেশ বাজারে গেলাম সেই থলি হাতে এক অতিকায় ফ্ল্যাটের নিচে দাঁড়িয়ে বাজারও করলাম। মাঝে মধ্যেই স্বপ্নের ঘোরটা কাটেনি হয়তো তাই ফ্ল্যাটের উপরের দিকে দেখছিলাম, কেন দেখছিলাম জানি না। এসে এসেই স্ত্রী ও কন্যাকে কাহিনীটি শোনায় ও তাদের অনুপ্রেরণায় এই অবাস্তব কিন্তু সত্যি স্বপ্ন আপনাদের কাছে জানালাম। জানিনা কে কি ভাবে নিলেন।



Comments

sadamata101.blogspot.com

B-47#বিশ্বকর্মা_পূজো

সন্তোষ ঢাকি

B-71#GANESH_PRASADAM. ( গনেশজির ভোগ নিবেদন মোদক ও পূরণ পুলি)