B-147# আমার বায়ুসেনার দিনগুলি (পঞ্চম ভাগ)

আমার বায়ুসেনার দিনগুলি (পঞ্চম ভাগ)


জীবন আমাদের  প্রতিনিয়ত শেখায়, বাল্যকালে মা বাবাদের সাহচর্য্য, তারপর স্কুলের গন্ডির মধ্যে শিক্ষা  সমাজ থেকে, একটু বড় হলে বেপরোয়া ভাব সবেতেই, আর এয়ারফোর্স এর  মত সংস্থায় আসলে একটা পরিমিত কাঠামোর মধ্যে নিয়মানুবর্তিতার সাথে নিজেকে আবার করে ঝালিয়ে নেওয়া যেটা  আগামী জীবনে অভ্যাসে পরিণত করা যেটা কারো কারো ক্ষেত্রে রয়ে যায় আজীবন আমার ক্ষেত্রে সেটা হয়ে ওঠেনি,অভ্যাসে পরিণত হওয়ার আগেই আমি এজীবন থেকে বিদায় দিয়েছি ।এয়ারফোর্সকে  ভালো লাগেনি মনকে একটা দ্বন্দে ফেলেছি বারবার, শেষমেশ মনের কাছে হেরে গিয়ে চলে আসতে বাধ্য হয়েছিবুঝেছিলাম হয়তো জীবনটা এক একটা নতুন প্রতিশ্রুতি,কিন্ত বাধ্যতামূলক -তাই আমায় বাধ্য করতে পারেনি।নিয়মের আষ্টেপৃষ্টের জীবন যেখানে,নির্দিষ্ট পরিমিত ঘেরাটপের পরিধির গন্ডি যেখানে,জীবন আমাকে সেখানে আটকে রাখতে পারেনি,সেটা আজও নয়তাই এই লেখার প্রথমেই নিজেকেকেষ্টাবলে ভেবে বিশ্বনিখিল দর্শন করতে গিয়েছিলামজীবনের আশা গুলো জীবনেই পূর্ণ করে ফেলতে হয় সেটাই আমার ভবঘুরে মন সারাক্ষন বলে


 যাক আসি সে সব দিনের কথায় স্টাডি রুমে গিয়ে অনেক বই পত্র পেলাম সবই এয়ারক্র্যাফট সংক্রান্ত ফিরে এলাম ছোটবেলার কু ঝিক ঝিক রেলগাড়ির মত লাইন করে বিলেটে কিছুটা সময় পাওয়া গেলো চটপট চিঠি লিখতে বসলাম দিদিকে,পৌঁছ সংবাদ দেওয়া হয়নি আর এমনিতেই অনেক কথা জমে আছে যা তাদের অজানা যে এক অন্য জীবন প্রতিটা মুহূর্ত ধরে রাখার মত তা নিয়ে বিশদ বিবরণ দেওয়া চলে পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে কিছুক্ষন পরে কয়েকজন  লোক এলেন বুকের উর্দির উপর নেম প্লেটে কি নাম হবে তা জানতে সঙ্গে বেশ কিছু কাগজপত্র নিয়ে হাজির বুঝলাম ওগুলো আমাদের আগামী জীবনে কাজে লাগবে যতকাল থাকবো এইমাত্র একদিনেই যেন সব কিছুই হয়ে গেলো মুহূর্তে এয়ারফোর্স একটা সার্ভিস নম্বর আছে, তা অবশ্য সবখানেতেই আমার নম্বর টা শেষের তিনটে অক্ষর মনে পড়ে 101, প্রথম তিনটে মনে নেয় শুনেছি তা দিয়েই বোঝা যায় কে কোন সালে চাকুরীতে প্রবেশ করেছে নেম প্লেট, সার্ভিস নম্বর, কাগজপত্র, সই সব শেষ হোলো কিন্তু চিঠি লেখা আর হোলো না অসমাপ্ত রয়ে গেলো টি টাইম হতেই  চললাম চা খেতে,চা হাতে দেখি সকলে সামনের  জঙ্গলের দিকে যাচ্ছে, আমিও গেলাম বেশ ভালো লাগছে মনে হোলো কলেজ জীবনের আড্ডায় বসেছি গাছের ডালে রবিবারটা উপভোগ করছিলামকিচ্ছুক্ষন কাটতে না কাটতেই কর্পোরাল বেবির ডাক এলো আচমকা ফল ইনের, কি না একটা ইমারজেন্সি ঘোষণা


এখানের সমস্ত এয়ারক্র্যাফট গুলো ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে চলেছে আকাশে কেন ঠিক বুঝলাম না ঘোষণায় কর্পোরাল বেবি বললেন কাছেই শ্রীলংকা LTTE উপদ্রবটা ইদানিং বেড়েছে ।তাই  হতে পারে জঙ্গলে কোনো জঙ্গি যদি লুকিয়ে থাকে, বা যেকোনো সন্দেহ ভাজন লোক মনে হলেই তাঁকে যেন অবগত করানো হয় কি ভাবে তা জানানো হবে কিছু কৌশল বলে দিলেন চুপিসারে মনে মনে ভাবলাম জঙ্গি শুনেছি কিন্তু কেমন হয় দেখতে মনে উৎকণ্ঠা আর বুকে ভয়ের  একটা সুস্পট চাপ নাড়া দিলকি মুশকিল রে বাবা,ভাবতে ভাবতে কর্পোরাল বেবি নিয়ে গেলেন রানওয়ের পাশে একটু দূরে কিছু হেলিকপটার দেখাতে দূর থেকে দেখলাম বেশ কিছু জওয়ানকে সেখান থেকে নামানো হচ্ছে স্ট্রেচার করে কাছেই কম্যান্ড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য তাদের মধ্যে কেউ যখম পায়ে, কেউ গুলিবিদ্ধ হাতে


দেখে তো চোখ ছানাবড়া! গোল গোল চোখে নিজেকে দেখছিলাম সেখানে তাহলে আমারও কি একই দশা হবে ভাবলে গা শিউরে উঠছিলো কর্পোরাল বেবি আশ্বস্ত করলেন আমাদের ভয় নেই তোমাদের যুদ্ধে যেতে হবে না তোমরা সৈনিক নও কিন্তু যদি দেশে এমন কিছু পরিস্থিতি হয় সেক্ষেত্রে তোমাদের ডাক পড়বে, তাই একটু দেখালাম তোমাদের এই জায়গার সম্বন্ধে অবগত করলাম বলতে বলতে বললেন FOLLOW ME, নিয়ে গেলেন আর্মরী তে লাইন করে ঢুকলাম কি বিশাল আর্চারি বন্ধুকের লম্বা লাইন, স্টেনগান, রিভালভার, হ্যান্ড গ্রেনেড , আরো  কতকিছু কিন্ত সেগুলোতে হাত দেওয়া মানা আজকের জন্য, শুধুই দেখাতে নিয়ে এসেছেন


বললেন এর  প্রত্যেকটার ট্রেনিং হবে তোমাদের গ্রাউন্ড নিয়ে গিয়ে, বিশেষ প্রশিক্ষন দরকার তবেই তো দক্ষ সুটার হবে, শত্রুপক্ষকে এক নিমেষেই নামিয়ে দেবেভাবলাম যে ছেলেটা এতকাল সাইকেলের চেন লাগাতে পারতো না ছুটে যেত পাড়ার কাকুর দোকানে সেই চেন লাগাতে,আজ সেই ছেলে একাধারে এরোপ্লেন ঠিক করবে, বন্দুক  চালানো শিখে শত্রুপক্ষকে নামিয়ে দেবে, দৌড়ে দশ কিলোমিটার অনায়াসে পেরিয়ে যাবে, ব্যায়ামে শরীর চর্চায় সুঠাম দেহ তৈরী করবে, আরো কতকিছু করবে  নিজের প্রতি একটা বিশ্বাস জন্মালো মানুষ সবই পারে উপযুক্ত সুযোগ সুবিধে পেলে আর্মরী থেকে বেড়িয়ে সোজা মাঠে কাল যে অসমাপ্ত সিনেমাটা ছিল আজ তা দেখাবে বলে গিয়ে দেখি অন্য সিনেমা সিলসিলাএই প্রথম মনে ধরলো সিনেমা যে গানটা সারাটা জীবন মনে দাগ কেটে দিয়েছিলো সেটাमैं और मेरी तन्हाई, अक्सर ये बातें...... এমনই এক গান কখন আমার কাছে প্রেম, কখনো বা বিরহের, আবার কখনও বা বিয়োগের কষ্ট হিসেবে ধরা দিয়েছেযে কালে মা, বাবা, দিদি চলে গিয়েছিলো বার বার মনে ধরেছিলো এই গানটা মনে হতো তারা আছে, আজও আছেমন হাতছানি দেয় তুমি থাকলে এটা বলতাম, ওটা দেখাতাম...


যাক আসল দিনটা শুরু হোলো পরের দিন থেকে অর্থাৎ সোমবার আগেই বুঝেছি ভোর বেলায় উঠতে হবে তাই ভালো করে রাতে  দাঁত মেজে সকালে ঘুম থেকে ওঠার পরের   কাজ অনেকটাই সেরে রাখতাম,যেমন মোজা পড়ে শুতে যাওয়া P.T ক্লাসে আমাদের নতুন ইন্সট্রাকটর এলেন সার্জান্ট প্রবীর কুমার,বিহারের লোক অধিকটাই হিন্দি কথা বলেন ইংরাজি বলতেন অনেকটাই ঢিলেঢালা, মনে হত  হিন্দি টোনে ইংরাজি বলছেন একটা কথা বেশিরভাগ সময়ে বলতেন Do it fast boys do it fast make it last এত হাসি পেত উনার কথায় একটা বিশেষ তারিখ আমার আজও মনে ধরে আছে সেটা হোলো 13th  july,প্রথম হাতে armour নেবো অর্থাৎ বন্দুক , সেটা অস্ত্রোগার  থেকে নিয়ে যেতে হবে মাঠে  মার্চ পাস্ট শিখতে কারণ পরের মাসে 15 আগস্ট স্বাধীনতা দিবসের কুচকাওয়াজ এত ভারী প্রায় চার পাঁচ কিলো  তো হবেই টানা চার পাঁচ ঘন্টা তাঁকে নিয়ে প্রশিক্ষন করা এক দুরুহ ব্যাপারতাঁর  মধ্যে সেটা নিয়েই কায়দা কানুন কখনো ঘাড়ে, কখনো উল্টো করে সেলামি সস্ত্র, বগলে নিয়ে, আকাশের দিকে তাক  করে ধরা, একেকটা কমান্ডের সাথে একেক ভাবে বন্দুক  ধরা এই করতে গিয়ে একটা সময় হাত থেকে বন্দুক  পড়ে যায় মাটিতে তারপর যা হোলো শাস্তি সেটা বলার নয়, ফ্রগ জাম্প তাও আবার কান ধরে সারাটা মাঠ জুড়ে,তাও আবার দুই পাকএক পাক দিতে না দিতেই হাঁফিয়ে উঠেছি দু চোখ দিয়ে কান্নায় জল গড়িয়েই চলেছে।কর্তৃপক্ষ সদয় হলেন হয়তো আমায় দেখে তাই এক পাক করেই চলে আসতে বললেন।


নিজের প্রতি রাগে ক্ষোভে ফেটে পড়ছিলাম কেন হোলো আমার অমনটা। কিছুটা শুধরে নিয়ে নিজেকে,প্যারেডের পর গেলাম স্টাডি হলে, আজ পড়িয়ে আজই পরীক্ষা নেবেন, বিষয় এয়ারক্র্যাফট সম্বন্ধে একটা বিশদ বিবরণ।কারণ আগামী কাল আমাদের পরীক্ষার উপর ভিক্তি করে আমাদের trade allocation হবে কে কোন trade পাবে। সমস্ত কিছু ভুলে গিয়ে বেশ মন দিয়ে instructor যা পড়ালেন সেটা শুনলাম প্রয়োজনে আবারও করে জিজ্ঞাসা করলাম, বোঝাতে যেন ভুল না থাকে। আজকের এই trade allocation খুবই গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা, মনে মনে ইচ্ছে ছিল engine বা air frame trade যেন পাই। পরের দিন রেজাল্ট বের হোলো আমার মনের বাসনা পূর্ণ হোলো আমি air engine পেলাম। এখানে প্রশিক্ষন পাবো aircraft এর engine মেরামতির কাজ। মনটা হাল্কা হোলো একটা ভালো trade পাওয়াতে। মনে তখন স্বপ্ন দেখছি আমি নিজে হবো একজন প্রশিক্ষনপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার যার হাতে ঠিক হবে ফাইটার এয়ারক্র্যাফট যেমন Mig  21,  আরো কত দেশ বিদেশের যেমন রাশিয়া, আমেরিকা, ফ্রান্স থেকে আনা সমস্ত ফাইটার এয়ারক্র্যাফট ।


এমনকি আগামী জীবনে রিটায়ারমেন্ট হওয়ার পর HAL এ চাকরি বাধা জীবনটা শুধু চলে যাবে না দৌড়োবে, দেশে তো বটেই প্রয়োজনে বিদেশেও।


                         ক্রমশঃ.........

 

 

 

 

 

Comments

sadamata101.blogspot.com

B-47#বিশ্বকর্মা_পূজো

সন্তোষ ঢাকি

B-71#GANESH_PRASADAM. ( গনেশজির ভোগ নিবেদন মোদক ও পূরণ পুলি)