B-145# মা বাবার ভুলু ছেলে, মেয়ে লক্ষীবাই
মা বাবার ভুলু ছেলে, মেয়ে লক্ষীবাই
গতকাল অর্থাৎ 31শে জানুয়ারী, রবিবার মেয়ের পরীক্ষা ছিল KVPY এর, সল্টলেকে সেক্টর ফাইভে TCS গীতবিতানে। বিধাননগরে অটো তে উঠেছি ফাঁকা অটো আর দুজন হলেই ছাড়বে। দেখি এক বাবা ও তারই ছেলে এসে বসলো। বাবার বেশ বয়স হয়েছে বোঝা গেলো প্রায় ষাট ছুঁই ছুঁই। অমনি ছেলেকে বলেন, বাবা তু্ই পড়ে যাবি, পেছনে বস, আমি সামনে বসছি।
মনে মনে ভাবলাম হায়রে বাবা দিলেন তো জোয়ান ছেলেটার মনে ভয় ঢুকিয়ে। ছেলে নিমরাজি, তাই সামনেই বসলো। বাবার সারাটা রাস্তা জুড়ে সে কি টেনশন ছেলেকে নিয়ে । সবে সল্টলেকে ঢুকছি হরিয়ানা বিদ্যামন্দির ছাড়িয়ে PNB স্টপেজে বাবা পেছন থেকে একটু ছেলেকে নেড়ে দিলেন “কি রে ঘুমোচ্ছিস কেন”। আমি তা দেখে অবাক ভুলু ছেলেটা প্রকৃতি দেখতে দেখতে চলেছে, বা হয়তো অঙ্কের ফর্মুলা মনে করতে করতে চলেছে, মনে মনে বললাম” দিলেন তো ভুলুর মনসংযোগ ঘটিয়ে, দিব্যি ছেলেটা হ্যান্ডেল ধরে বসে আছে “। যাক অটো চলছে ছেলের মায়ের ফোন -মা ছেলের সাথে বোধহয় কথা বলতে চাইছিলেন, অমনি ভুলুর বাবা বলে উঠলেন এখন ছেলে কথা বলতে পারবে না ও সামনে বসে আছে । ফোন রাখতেই বাবা ভুলুর টি শার্ট এর কলার ঠিক করে দিলেন পেছন থেকে, ছেলেকে পিছন থেকে স্মার্ট করে দিয়ে বললেন “আচ্ছা বাবা ভুলু মাফলার টা কি ব্যাগে রাখার জন্য এনেছো?” মনে হলে অটোওয়ালা কে দাঁড় করিয়ে বলি , ভুলু আগে মাফলার বার করুক তারপর না হয় অটো আবার করে চালাবেন। দেখতে দেখতে গন্তব্যে পৌঁছে গেলাম।
আধা ঘন্টা আগে পৌঁছেছি, এক কোনায় মেয়েকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি কান্ড কারখানা দেখছি দেখা যাক আর কোনো ভুলু ও বাবাকে দেখা যায় নাকি।উপভোগ করছি বেশ মজাদার লাগছে দেখে।
পরীক্ষা দুটো শিফ্টে হচ্ছে যে সমস্ত ছেলে মেয়েরা ক্লাস ইলেভেনে পড়ে তাদের নটার থেকে শুরু হয়েছে বারোটায় শেষ। অমনি দেখছি ক্লাস ইলেভেনের একটি লক্ষীবাঈ আসছে, সঙ্গে বাবা। ভালো কথা,
মেয়ে হনহন করে হাটছে, বাবা পাল্লা দিয়ে পেরে উঠছেন না মেয়ের সাথে। বাবার পিঠে মেয়ের ব্যাগ হাতে জলের বোতল। বাবা মেয়েকে কোন কোন প্রশ্ন ছেড়েছে তাই জিজ্ঞাসা করতে করতে আসছে। মেয়ের সাথে হাটায় পাশাপাশি পাল্লা দিতে না পেরে বাবা নেমেই পড়লেন রাস্তায় আর মেয়ে ফুটপাথ ধরে হাটছে, মেয়ের হাতে লম্বা ট্যাব। সে হাঁটতে হাঁটতে হোয়াটস্যাপ করছে।
বাবার কোনো কথার উত্তর দিচ্ছে কোনোটা দিচ্ছে না, বাবা রীতিমতো দৌড়োচ্ছেন।আমি আমার মেয়ে লক্ষীবাঈ কে বলেই ফেললাম দেখবি এখুনি একটা মজা হবে। রাস্তার পাশে টেলিফোনের পোস্ট আর তার ঠিক নিচে একটা সরু লোহার রড বেরিয়ে আছে। বাবার কি আর তর সয়?মেয়েকে এখুনি জিজ্ঞাসা করতে হবে সব কথা, বাড়ি পৌঁছে গিয়ে করতে পারেন। অমনি ঠক মাথায় বারি, উফফ বলে উঠলেন। দেখি তখনও থামেননি, হাঁটা, বাবা মাথা চুলকোতে চুলকোতে একটু পেছিয়ে পড়েছেন। অমনি মেয়ে বলে উঠলো দেখে চলতে পারো না।
এইবারে যে দৃশ্য ধরা পড়লো তা দুই ভুলুকে নিয়ে মা। মা মাঝে দুই পাশে দুই ভুলু। শুধু N95 মাস্ক পরে হচ্ছে না তার উপর চাপিয়েছে পাতলা কাঁচের বেস্টনি অনেকটা মাথায় যেন হেলমেট পড়েছে, চলেছে যুদ্ধ নামক এক পরীক্ষা দিতে। ততক্ষনে ভিড়ের মধ্যে চোখে পড়েছে আমার এক বন্ধু সুজয়, সে নিয়ে যাচ্ছে তার শালীর মেয়েকে নিয়ে। আমাকে সে বললো আমি আসছি, এখানেই থাকিস আগে লিস্টটা দেখে আসি। পরীক্ষার্থী হাজার চারেক আর অভিভাবক আরো হাজার পাঁচেক। সব মিলে এক হই হই অবস্থা মেইন গেটে। অভিভাবক কিছুতেই মেইন গেট ছাড়বেন না এদিকে তাঁর ছেলে কিংবা মেয়ে ঢুকে পড়েছে বহু আগেই, একটাই উদ্দেশ্য দাঁড়িয়ে থাকার যদি বেড়িয়ে আসে আবার করে। আমি সুজয় কে বললাম ওরে বাবা তু্ই লিস্টটা দেখতে পারবি না ওটা মেইন গেটের ভিতরে, একমাত্র পরীক্ষার্থীরাই ভেতরে গিয়ে দেখতে পারবে, কে কার কথা শোনে? এমনিতেই Tcs গীতবিতানের ব্যবস্থা অসম্ভব ভালো কারোর কোনো অসুবিধে হওয়ার কথা নয়। কিন্তু বেশিরভাগ অভিভাবক ছেলেমেয়েকে ঠোকরই খেতে দেন না। মেয়েরা কিন্তু সত্যিই রানী লক্ষীবাঈ তারা কি সুন্দর একা একা চলতেও পারে, বাবারা অতিরিক্ত করেন বলে মেয়েরা রেগে যান।
"সাতকোটি সন্তানের হে মুগ্ধ জননী ,
রেখেছো বাঙালী করে মানুষ করোনি"।
কিন্তু ভারী অদ্ভুত লাগলো দেখে অধিকাংশ অবাঙ্গালী ছেলেমেয়েরা দিব্যি একা একা এসে পরীক্ষা দিয়ে বেরিয়েও গেলো। আমাদের এই একই বয়সে আমরা তো কত জায়গায় একা একা পরীক্ষা দিতে গেছি তখন নিজেরা কি ভাবে পারতাম। আমরা কেন পারিনা, কারা বেশি আধুনিক আমরা না আমাদের মা বাবারা।
Comments
Post a Comment
always