B-148#success behind the story of Madhu (শুভ সুমেধার ঊনবিংশ ও শেষ অধ্যায়)
success behind the story of Madhu (শুভ সুমেধার ঊনবিংশ ও শেষ অধ্যায়)
মাধু,এক দমকা হাওয়ার মতন শুভ সুমেধাদের জীবনে এসেছিলো তাও আবার এক শিশু পরিচারিকা হিসেবে । আরেক ঝড় মাধুর জীবনকে তছনছ করে ফিরিয়ে নিয়ে গিয়েছিলো বাস্তবের কাছে, তখন শুরু আগামী জীবনকে সমঝে বোঝাপড়ার উদ্দেশ্যে নতুন ভাবে জীবনকে দেখা।শুভ সুমেধা তাঁদের স্বাভাবিক ছন্দে ফিরে এসেছে, আর মাধু ফিরে গেছে জীবন সম্পর্কে এক বাঁচার দ্বন্দে,আর লড়াlকু মানসিকতার প্রতিদ্বন্দিতার দ্বন্দে।বাস্তব কে দেখা, ও বাস্তবের সাথে যুঝে প্রতিনিয়ত পরিস্থিতির সাথে মোকাবিলা করা, সকলে হয়তো পারে না, মাধু পেরেছিলো।
তালদি স্টেশনে দিদির সাথে ঝুপড়ির দোকানে জীবন শুরু হয়েছিল পরোটা তারকারি বিক্রি করে এ যেন “এক আদর্শ হিন্দু হোটেল”,দুটো পরোটা সঙ্গে তরকারি প্লেট পিছু দাম সাত টাকা। পড়াশুনা সে কোনোদিন করেনি কিন্তু অংকের হিসেব সে কানা গন্ডায় খদ্দের থেকে বুঝে নিত। অতিরিক্ত আরেকটা পরোটা নিলে দাম দশ টাকা সঙ্গে সবজি প্রয়োজনে দুই হাতা। ঝুপড়ির দোকানে না ছিল কোনো দেবদেবীর ছবি না কোনো ফিল্মি তারকাদের যেটা ছিল সেটা হোলো হৃষ্টপুস্ট বাচ্চাদের ছবিতে ভরা। শ্যামল প্রতিদিন মাসোহারা খায় এই দোকানে, উদ্দেশ্য মাধুর সুস্বাদু তরকারি আর মাধুর লড়াকু মন শ্যামল কে উদ্বুদ্ধও করতো।
মাধু তোর দোকানে কেন আসি জানিস?তালদিতে তো অনেক দোকান আছে,তাও এখানে আসি তোকে দেখতে, কেমন কষ্ট করে তু্ই সারাদিন খাটিস, খদ্দের সামলাস, অসুস্থ ভাইকে দেখিস, আচ্ছা মাধু এতগুলো বাচ্চার ছবি কেন রে? বুঝেছি তু্ই চাস তোর ভাইও একদিন উঠে দাঁড়াবে ও বাচ্চাগুলোর মত, তু্ই যদি বলিস আমি যেখানে গাড়ি ধোওয়ার কাজ করি ওখানে একটা মস্ত বড় বাচ্চাদের ডাক্তার আছে, আমি কথা বলতে পারি।
এই শোন্ শ্যামলদা মাসের কয় তারিখ আজ আট তারিখ, গেলো মাসের টাকাটা দে দেখিনি আর কেটে পর। তোর মত মানুষ ভোলানো পুরুষ অনেক দেখেছি, আবার দরদ দেখাচ্ছিস, শালা বাচ্চা মেয়ে দেখলি আর অমনি ফুসলাতে আসলি। ভাবলি আমিও গইলে যাবো তোর কথায়। আমার মা বাপ টাকে বিশ্বাস কইরেছিল তাই বিহা না হতেই বড়দি হইয়ে গেছে।তোদের মত পুরুষ গুলারে আমি ঢের জানি ছাড় ছাড় রাস্তা ছাড় দোকানদারির সময় বিরক্ত করিস না পাইরলে টেকাটা দে দুই দিন খাস নি তাই দুশো তিন টাকা হয়েছে। আর শোন্ শ্যামলদা সামনের মাস থেকে কোনো ধারবাকি চলবে না। পুরা মাসের টাকা আগে দিবি, পরে যেকদিন খাবি না মাস শেষ হলে, ফেরৎ পাবি। আমার ভাই আমার গতর খাটিয়ে টাকা দিয়ে ভালো হবে, তোর এত সব চিন্তা করতে হবেনি।
শোন্ দুমাসের টাকা দিচ্ছি রাখ, যে কদিন খাই নি সেকদিনের টাকা ফেরৎ দিতে হবে না, এত ঝাল ঝাল কথা আমার সাথে কোয়িস না রে মাধু। তোরে ভালো লাগে তাই কইলাম। দে দেখিনি আর একখান পরোটা সব্জি টা ভালো কইরেছিস আজ, তবে ঝাল একটু দিয়েছিস মাধু, হবে না কেন শোন্ কথায় যার ঝাল তাই সবজিতেও বুঝতে পাইরলাম।
ঝাল লাগে তো আসিস কেন, তালদিতে হইটেলের অভাব আছে। বলেছি না মায়া মানুষ দেখলেই তোগো বুক ক্যাইপা ওঠে আর কথায় পটাস। শোন্ যদি এতোই দরদ থাকে দে দেখিনি কিছু টাকা দুকানটা পাকা করি, ফোকটে নিবো নি সুদ দিবো তোর টেকায়।তাহলেই বুঝবো কেমন মরদের বাচ্চা তু্ই। পাকা হলে দুকানটা ভাতের হইটেল দেবো, বুঝলি।
বলছিস যখন তাও দিবো এখন হবে নি। তাহলে আরো কিছু গাড়ি ধোওয়ার কাজ ধরি মেলা টেকা হলে দিবো তোকে, পঞ্চাশহাজারে হয়ে যাবে বল। এই দেখ কি মিষ্টি লাগছে তোকে, মাধু মিষ্টি দিয়ে কথা ক বুঝলি ভালো লাগে।
এই যা বলছি শ্যামালদা যা না গেইলে তোরে লোক দিয়ে তাড়াবো।কাল থেকে দেখবি তোর পাতে ঝাল দিয়ে দেবো তবে যদি আমার হইটেল ছাড়িস।
চলি আমার মত ওমন লোক পাবি না রে মাধু,কাল থেকে আসবো না বিশ্বাস হচ্ছে না তো, আমি সেদিনই আসবো যেদিন ডাক্তার বাবুকে সঙ্গে করে আনতে পারবো।
শ্যামল মাধুর হোটেলে আসে দিন পনেরো পরে সঙ্গে ডাক্তারবাবুকে নিয়ে । lএকটা গাড়ি এসে থামে মাধুর হোটেলের সামনে, মাধু অবাক সে না বুঝে শ্যামল কেl কত কথা বলে। শ্যামল মাধুর ভাইকে দেখাতেই সে বুঝে ফেলে ইনিই সেই ডাক্তার। ডাক্তার কোনো খদ্দের নয় ।মাধুর একটা আত্মঅহংকার আছে সে তার ভাইকে বিনা পয়সায় দেখাতে রাজি নয় ।ডাক্তার মাধুর এই কথায় কিছুটা বিস্মিত হলেও মনে মনে হাসতে থাকেন ও বলেন সে না হয় দেবে ক্ষণ এর পর ওর ট্রিটমেন্ট এর জন্য টাকা লাগবে তখন না হয় দিও । মাধু নিমরাজি সে ডাক্তারের ফিস ও দেয় এমনকি ডাক্তার তার হোটেলের পরোটা খাওয়ার সম্মতি জানালে, সে টাকাও সে নিতে বিন্দুমাত্র কুন্ঠা বোধ করে না।
অবশেষে মাস তিনেক পর ভায়ের অপারেশনের দিন ধার্য হয়, ডাক্তার জানান তার সর্বসাকুল্যয়ে খরচ প্রায় এক লক্ষ্ টাকা, মাধুর মাথায় বাজ ভেঙে পরে কি করে সে এত টাকা জোগাড় করবে। কে দেবে তাঁকে, কোথা থেকে আসবে। মন আর আর্থিক চিন্তা তাকে সারাক্ষন গ্রাস করতে থাকে। যেখানে ঈশ্বর সহায় সেখানে ভাবনা কিসের কেউ একজন আছেন যিনি নেপথ্যে, মাধুর অজান্তে মনের আর্জি শোনেন। সেখানে ইস্টদেবতায় হোক বা গভীর মনের কাংক্ষিত ইচ্ছেই হোক তাকে সামনের দিকে এগোতে সাহায্য করে।
শুভ সুমেধা বহুদিন পর মাধুর হোটেলের সামনে গাড়ি নিয়ে এসে দাঁড়াতেই মাধু বুঝে ফেলে তার চিন্তার দিন শেষ, বড়মা ন মা যখন এসেছেন একটা কিছু বিহিত তো হবেই।
আচ্ছা মাধু তোর তো ব্যাংকে কোনো খাতা নেই তাই না? চল দেখি আমাদের সাথে তোর আধার কার্ড, রেশন কার্ডটা নিয়ে একটা একাউন্ট খুলে দেই তোর বড়বাবার সাথে।
মাধু তার সমস্ত কথা জানাই শুভ সুমেধাকে, সে নিজেও জানে না কত টাকা তাঁরা রেখে গেছেন মাধুর একাউন্টে। শুধু বড়মা কে যাওয়ার সময় প্রণাম করতে গিয়ে সে বলে, “এতগুলাই যখন করলে ভাইয়ের অপারেশনের সময় আইসো, তুমরা না থাকলে আমি একা পারবো নি গো তুমরাই তো আমার আসল মা বাবা ”।
এতদিনে মাধুর হোটেলের বেশ খদ্দের ও বেড়েছে। মাধু শ্যামলের বাড়ি জানে না সে লোক মারফৎ শ্যামলকে খবর দেই একবার যেন আসে।এদিকে এক সুদর্শন একটি ছেলে মাধুর দোকানে আসে নাম সোহম। সোহম একটা NGO চালায় ও নানান সামাজিক গঠনমূলক কার্যকলাপে যুক্ত, সোহম আসে তালদির গ্রামের এক স্কুলে প্রায় দেড়শো বাচ্চাদের খাওয়ানোর উদ্দেশে মাধুর দোকানে পরোটা তরকারির অর্ডার দিতে, সে অগ্রিম পুরো টাকাটাই মাধুর হাতে তুলে দেই।
মাধু মনে মনে ভাবতে থাকে না চাইতেই এত কিছু এবার ভাইয়ের অপারেশনের আর দেরি নয় প্রয়োজনে সে মাস খানেকের মধ্যেই অপারেশন করাবে, তাই সে শ্যামলদা কে খবর দেই।
কি রে দেখলি তো আমাকে ছাড়া তোর চলবে না কেন খবর দিয়ে ডাকলি আমায়, আমি এমনিতেই আসতাম কথা দিয়েছিলাম তরে পঞ্চাশহাজার দিবো এই দেখ আনছি তোর লগে এবার তো দুকানটা পাকা কর?
শোন্ শ্যামালদা ভাইয়ের অপারেশন সামনের মাসে করাবো, টেকা জোগাড় হয়েছে তু্ই ডাক্তারবাবুকে গিয়া কইস, হেই জন্য তরে ডেকে পাঠালাম। আর ঐ টেকাটা তোর কাছে থুয়ে রাখ শ্যামলদা, না পারিস তো আমার একাউন্টে রাইখা আয় আমারে জমা কাগজটা দেখাস তাহলেই হইবো।
বাবা কোথায় পাইলিরে এত টেকা,
তোর আবার ব্যাঙ্ক একাউন্ট ও আছে মাধু? দেখলি হেই লিগাই তরে মনে ধরেছে মাধু তোর বুদ্ধি এত ভালো অবাক লাগে রে মাধু। দেখবি একদিন তোর হইটেল অনেক বড় হবে কোনো কষ্ট আর হবে না।শোন্ শ্যামলদা তু্ই বড় বলে গালি দিতে পারিনা, তা না হলে সেটাও খাইতিস আমার থেইকা।আমার ভালো হবে বুঝিস বইলা তরে কিছু কৈ না, একটা কথা মনে রাখিস শ্যামলদা আমার ভালো হইলে তোর ও ভালো হইবো, বুঝলি। অখন যা ব্যাংকে গিয়া টাকাটা জমা করে দে, কাজের সময় আর কথা বলাস না।
শ্যামলের মনে মাধুর প্রতি একটা অনুভূতির প্রেমের ছাপ প্রকাশ পায় তার চোখে মুখে।
আচ্ছা যাচ্ছি বাবা, শোন্ মাধু তোর তরকারিটা আজ ভালো হয়েছে, তবে ঝালটা এখনো কমে নাই।
দেখতে দেখতে ভাইয়ের অপারেশনের সময় ঘনিয়ে আসে, সেটা হয়েও যায় ভালোমতন, ভাইকে নিয়ে মাধুর পরীক্ষার দিন শেষ। জীবনে যেন সমস্ত কিছুই আয়ত্ত করে সে একে একে। মন বলে ঘুরে তাকাতে হবে না সেই কঠিন সংগ্রামের দিনগুলিতে এবার দোকান সাজানোর পালা, ভাইকে মানুষ, দিদির বিয়ে,একে একে যেটা করতে হবে বোঝা না ভেবে একটা আগাম সংকল্প ঠিক করে ফেলে। কঠিন পরিশ্রম আর সামনের দিকে এগিয়ে চলা এটাই মাধু বোঝে। দেখতে দেখতে বছর পাঁচ ছয়েক পেরিয়ে যায়, এদিকে শ্যামল মাধুর পিছু ছাড়ে না। একদিন মাধুর খোলামেলা মনে সে শ্যামল কে দেখা করতে বলে জরুরি কথা বলতে।
শ্যামলদা দেখ আর কতদিন এই কাজ করবি, তু্ই আমার দোকান চালা, এতকাল আমাদের জন্যে তো অনেক করলি, এবার তোর ও একটা উপায় করে দেই। দাদা তরে কোনোদিন বিশ্বাস করি নাই যে তু্ই আমাদের লিগা এতটা করবি, সত্যি কথা কই । তরে আজ দুইটা কথা কইমু শ্যামলদা প্রথম টা তোর পঞ্চাশ হাজার টেকাটা আর পরের কথাটা যেটা কমু উটা রাখতে হবে। দে দেখিনি তোর পায়ছুঁয়ে একটু প্রণাম করি শ্যামলদা তু্ই তো আমার কেউ, কতদিন তরে কত আজেবাজে কথা কইছি আর কমু না রে দাদা। পরের কথাটা তরে আমার মাথায় হাত দিয়া দিব্যি করতে হইবো, দিব্যি করলে তু্ই ফেরাতে পারবি নি আগে বল করবি কিনা, রাখবি কিনা ।
মাধু এইটা কি করছিস আমায় প্রণাম করস কেন? এমন কি কথা মাধু তরে ছুঁইয়া দিব্যি করতে হইবো। তোর লগে আমি সব পাড়ি মাধু এই তোর মাথায় হাত দিয়া দিব্যি করছি, ক।
তাহলে শোন্ শ্যামলদা আমি তোর শালী হইয়া থাকতে চায়। তু্ই দুকানে যতবার আসতিস দিদি তোর জন্য কত ভালো করে পরোটা বানাইতো, তু্ই চইলা গেলে দিদি তোর যাওয়া পর্যন্ত পিছন থাইকা দেখতো। দিদি তরে কোনোদিন কইতে পারে নাই, দিদির সেই কষ্ট আমি বুইঝাছিলাম। যখন তু্ই আসতিস না দিদি তোর কথা বইলাই যেত। তু্ই আমারে মন দিয়াছিস আর দিদি তরে। আমি তো তরে কোনোদিন শ্যামলদা ছাড়া ভাবিই নাই। শোন্ দাদা তু্ই কাল খাইতে আসলে হইটেলে দিদির হাত দুখান ধরিস আমার সামনেই ধরিস। আমার আর কিছু চাইনা রে শ্যামলদা তুরা সুখী হো। যে কষ্ট দেখসি আর যেন দেখতি না হয়। দিদি তরে ভালোবাসে আমি তাতেই খুশি। যে কষ্ট দেকসি মা বাবার সে গুলা মনে করলে কান্না পায়।
মাধু আমারে তো কোনো খানে রাখলি না রে, মনে মনে যে স্বপ্ন দেকসি তরে লইয়া তু্ই তো সে স্বপ্নে পানি ঢাইলা দিলি। ঠিক আছে, তাই সই আমি পারুলেরে লইয়া ঘর বাধুম। তু্ই ও তো আমার লগে কম করলি না, আমারে তোর সাধের হইটেলে মালিক কইরা দিলি। তোর ও এই ঋণ আমার চুকাইতে লাগবো। আমি তোর জামাইবাবু হয়েই রইলাম।
অবশেষে শ্যামল পারুল বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হোলো।মাধুর জীবনের দায়িত্ব একে একে শেষ হোলো, আগামী জীবনে একটাই শেষ স্বপ্ন ভাইকে মানুষ করতে পারলেই হোলো। অভাবে স্বভাবের পরিবর্তন হয় সেটা সে বোঝে তাই স্বভাব কে হাতিয়ার করে খেটে যাওয়াই যে গরিবত্বের একমাত্র সমাধান মাধু অল্প বয়সেই সেটা বুঝে ফেলেছে।
বেশ কিছুদিন পর
মাধু তোকে ডাক্তারবাবু খবর দিয়েছেন,ডেকে পাঠিয়েছেন কাল, শিগগির যাস। কেন ডেকেছেন জানিনে তবে বলেছেন তাড়াতাড়ি আসলে ভালো হয়। শরীর টাও বিশেষ ভালো নেই উনার। আচ্ছা হ্যাঁ যাওয়ার সময় পরোটা নিয়ে যাস তোর হাতে বানানো, দেখিস আবার টেকা চাসনি কো।
কি যে কউ শ্যামল দা আমি কাল সকালেই যাবো। এতকাল ডাকে নাই, কেনই বা আমায় ডেকে পাঠালেন বুঝলাম না হয়তো ভাইয়ের ব্যাপারে কিছু কইবেন।
পরের দিন সকাল
ডাক্তার বাবু আমারে খোঁজ দিছেন? শ্যামলদা কইলো, তা কন কি ব্যাপারে খোঁজ দিছেন। আমারই আসার কথা ছিল হইটেলে এত কাজ সে সময় আর হয়না। এই দেখেন আপনার লগে পরোটা আনসি। আগে খান তারপর না হয় খেতে খেতে সে কথা বলবেন।
মাধু তোমায় তো দেখছি সেই কবে থেকে ভাইয়ের অপারেশন, তারপর দিদিকে বিয়ে দিলে সে তখন কতটুকুই বা তোমার বয়স সবই তো করলে নিজের জন্য কিছু ভেবেছো কি? নাকি বিয়েই করবে না বলে ঠিক করেছো? তোমার এখন বয়সই বা কত মাধু? পরোটা টা কিন্ত মাধু খাসা হয়েছে। সোহম,সোহম, একটু বাইরে এসো।
ডাক্তারবাবু এই দাদাটা কে গো অনেক দিন আগেই আমার দুকানে আসছিলো মেলা পরোটা কিনতে, মাঝে মাঝেই তো সে যায় দুকানে কোনোদিন তো কয় নাই সে আপনার সাথে থাকে।
মাধু ও আমার ছেলে সোহম তোমার হোটেলে আমিই ওকে পাঠিয়েছিলাম আগে। মাঝে মধ্যে যাই বুঝি তোমার দোকানে খাওয়ার কিনতে। ও অনেক রোজগার করে তবে সবই সমাজসেবায় বিলোয়। আমিই ওকে বলি তোমার থেকে শিখতে জীবন সংগ্রাম কি জিনিস তা তোমার থেকে শিখতে। অবশ্য তোমার কথা তোমার শ্যামলদা আমায় বলেছে যদি তোমায় কোনো ভাবে পাত্রস্থ করা যায় । বাহ্ তরকারিটা খাসা হয়েছে মাধু একটু জল দাও দেখিনি। শোনো যে ব্যাপারে তোমায় আলাপ করতে ডেকে পাঠালাম। যদিও আমার উচিৎ কিনা জানি না, তোমার অভিভাবক বলতে ঐ শ্যামল, তাই বলি কি মাধু আজ থেকে আমায় ডাক্তারবাবু না বলে বাবা বলে যদি ডাকো অবশ্য তোমার যদি আপত্তি না থাকে। আমারও বয়স হয়েছে মাধু আগামী দিন তোমায় আমার পুত্রবধূ করতে চাই, আর আমার ছেলেও চায় আগামী দিনে তোমায় জীবন সঙ্গিনী হিসেবে পেতে। কি কিছু বলছো না যে চুপ করে শুনেই যাবে।
আমি কি বলি বলতেই পারছি না এসেছিলাম কি ভেবে,কি নিয়ে যাচ্ছি এত সুখ কি আমার কপালে আছে। ভগবান আছেন শুধু অপেক্ষায় থাকতে হয়। যখন ভালো সময় আসে এত ভাবে আসে কোনদিক থেকে আসে নিজের ও ভয় হয় কি জানি এত সুখ কি কপালে আছে। নাকি আমার এতদিনের কষ্টের ফল আসছে একেক করে। আজ আসি পরে না হয় শ্যামলদা সব জানাবে।
মাধুকে দূর থেকে আসতে দেখেই শ্যামল জানে সে কি বোলবে একটু নিজেকে সামলে শ্যামল এগিয়ে গিয়ে বলে মাধু সানাই কি বাজবে তাহলে। আমার জন্য এতটা করলি মাধু।
শ্যামলদা তোমার উপকারের শোধ যে তুমি এভাবে দেবে বুঝিনি। একদিন বলেছিলে তুমি ঋণী ছিলে তাই শালীর ঋণ শোধ করলে শ্যামলদা। সবই ঠিক আছে কিন্তু ভাই আমার সাথে থাকবে। বিয়ে করতে পারি থাকবো কিন্তু এই তালদিতে সবাই এক সাথে।
দিনক্ষণ দেখে মাধু ও সোহম সাত পাকে বাঁধা পড়লো।
বিয়ের পর সে শুভ সুমেধার শেষ উপকার টুকু চোকাতে সোহম কে নিয়ে চললো তাঁদের বাড়ি।তাকে দেখেই সুমেধা কান্নায় ভেঙে পড়লো। মাধু এলি এতদিন পর?তোর বড়োবাবা তোকে কত করে দেখতে চেয়েছিলো জানিস।সে নেই, গেলো মাসে সেরিব্রাল অ্যাটাকে চলে গেছে। প্রায় ছয় মাস সে হাসপাতালে ছিল মাধু। তোকে আর নতুন করে কি বলি সব শেষ হয়ে গেছে আমার হাতেও যে আর কিছুই নেই মাধু তোদের মেয়ে জামাইকে আশীর্বাদ করি।মাধু তোরা সুখী হোস। মলি সে বিদেশে রয়ে গেলো জানিস, সেখানে সে বিয়েশাদি করে সংসার পেতেছে। বাবা মারা যাওয়ার পর সে আসতেও পারিনি।
এত কিছু হয়ে গেলো বড়মা জানতেও পারলাম না। দোষটা তো আমারই তোমাদের খোঁজখবর নেওয়া হয়নি, একে একে করে সবটাই শেষ করে বড়মা অবশেষে সংসার পাতলাম। তোমরা সেদিন কাছে না আসলে আমি এতদিনে কোথায়? তোমাদের মাধু হয়তো মুখ তুলে দাঁড়াতেই পারতো না। আমি বলি কি বড়মা এই চেকটা তোমায় দিলাম তুমি না কোরোনা। একদিন তোমার সময় ছিল তুমি দিয়েছো আজ আমার সময় হয়েছে আমি দিলাম তোমায়। ভেবো না তোমার টাকাটা ফেরৎ দিতে এসেছি, এই সামান্য তিনলাখ টাকা দিয়ে গেলাম তোমায় প্রয়োজনে আমি আছি। একটা কথা বলি-চলো না বড়মা বাকি জীবনটা আমার সাথে কাটাবে।
জীবনটা এক অদ্ভুত শিক্ষা দিয়ে যায় । এ এমন এক চড়াই উৎরাই চলে প্রতিনিয়ত কেউ জানে না। মাধু নিজে কি জানতো সারাটা জীবন উৎরাইয়ের সাথে সমঝোতা করতে করতে তার জীবনেও চড়াই আসতে পারে তাও আবার এত প্রতিকূলতার সাথে লড়াই করে। সুমেধা কি কখনো জানতো নিজের পেটের সন্তান একদিন দূরে চলে যাবে আর শেষ বয়সটার সঙ্গী হবে তাদেরই পরিচারিকা মাধু।
সুধী পাঠকগণ কে বেশি সুখী হোলো এ জীবনে এ প্রশ্ন রাখলাম আপনাদের কাছে, অভিমত জানাবেন আপনাদেরও। লেখায় কোনো খাদ থেকে গেলে সেটাও জানাবেন। প্রসঙ্গত বলি মাধু সত্যি সত্যিই আমাদের বাড়িতে একটা সময় শিশু পরিচারিকা ছিল আর তার বাড়িও ছিল ক্যানিং লাইনে তালদিতে।
আমার সকল পাঠকগণের উদ্দেশ্যে রইলো শুভ সুমেধার গল্পের একটা সুবিধে। নিচের লেখায় ক্লিক করলেই পাবেন প্রথম গল্পের শুরু আর প্রতিটি গল্পের শেষে থাকছে পরের গল্পের লিংক যাতে আপনাদের কোনোরূপ অসুবিধে না ঘটে সম্পূর্ণ কাহিনীটি জানতে। শুভ সুমেধার বাল্যকালের প্রেম দিয়ে শুরু আর শেষটা পরিচারিকা দিয়ে সবার সাথে মিলন।
https://sadamata101.blogspot.com/2020/07/b-12-kite.html
Comments
Post a Comment
always