সন্তোষ ঢাকি

"সন্তোষ ঢাকি "




জীবনে এক কৃতিবান লোকের সাথে পরিচয় হয়েছিল, বয়সটা বোধকরি পঞ্চাশ বা তার থেকে তিন চার বছরের বেশি। পেশাগত ভাবে সে ঢাকি।  সে প্রথম এসেছিলো আমাদের পাড়ায় ঢাক বাজাতে সম্ভবত 2000 সালে। প্রথম যখন তার সাথে আলাপ, সে বলেছিলো প্রতিবছর সে দুর্গোপূজোই বোম্বে যায় ঢাক বাজাতে, কখনও রানী মুখার্জীর বাড়িতে কখনো গায়ক অভিজিতের বাড়িতে, শুনে একটু চমকে উঠেছিলাম,  তাই সে বিশ্বাস করানোর জন্য কিছু ছবি দেখিয়েছিল।একটু উদগ্রীব  হয়ে জিজ্ঞাসা করেছিলাম অভিজিতের বাড়িতে কারা কারা এসেছিলেন সন্তোষ? সে সাবলীল ভাবে গ্রামের ভাষায় বলেছিলো " হ্যামা আসছিলো, অমিতাভ, নানা, সলমন, শারুখ, আমার ঢাকের বোলে সলমন তো কত নেচেছিল ". বলতে বলতে সে আরেকটা ছবি বার করে আমায় দেখাতে শুরু করে। তখন থেকেই একটা শ্রদ্ধা তার উপর হয়ে গিয়েছিলো মনে মনে।এভাবেই প্রতি বছর সে আসে, আর আমার কৌতূহল দিন কে দিন বাড়তেই থাকে তার প্রতি। একবছর তাকে জিজ্ঞাসা করেই ফেলেছিলাম " আচ্ছা সন্তোষ যখন তুমি হেমামালিনী, অমিতাভ কে সামনা সামনি দেখো তুমি কি অবাক হও না বা তোমার ঢাকের তাল একটুও কেঁপে যায় না?" বলতে বলতে সে যে বিশ্বাসের দৃষ্টিতে আমায় বলেছিলো সেদিন বুঝেছিলাম সন্তোষরা এই রকমেরই হয়, সে বলেছিলো " আমি আপনি হেমা কে চিনি সে বসন্তী হয়েছিল বলে তাও  আবার তার অভিনয় শিল্পে, সন্তোষকে হেমা চিনবে তার ঢাক শিল্পে, আর আমি যদি আমার শিল্প দেখাতে না পারি,  পরের বছর থেকে আমি কোথায়?"

 কথাটা এতো কানে লেগেছিলো মনে হচ্ছিলো সহজ কথা সহজ ভাবে বলাই সে হয়তো লোকের কাছে আসতে পেরেছিলো, সুদূর বোম্বাই যেতে পেরেছিলো সেও আবার তারকাদের মাঝে। ভারত উৎসবে যোগদান করেছিল মমতা শঙ্করের সাথে সুদূর আমেরিকায়, সন্তোষ যেদিন আমায় তার passport টা দেখিয়েছিলো আমি অবাক হয়েছিলাম প্রায় সারা পৃথিবী জুড়ে তার পাসপোর্ট এ স্ট্যাম্প, খানিকটা চমকে উঠে সামলে নিয়েছিলাম নিজেকে।  বছর চারেক আগে সে zee টিভির সা রে গা মা তে তার ঢাক নিয়ে মাতিয়েছিলো  অদিতি মুন্সির সাথে। কি অদ্ভুত লাগে যখন ক্যামেরা সারাক্ষন তাক করেছিল অদিতিকে, অদিতি রাতারাতি সেলেব্রেটি হয়ে গেলো পশ্চিমবঙ্গে, অথচ এই মানুষটা অর্থাৎ সন্তোষ সে সারা বোম্বেতে সেলেব্রেটিদের মন জয় করে নিয়েছিল বহু আগে তার ঢাকের দক্ষতায়।বোম্বায়ের  তারকারা তাকে নামে চেনে, অদিতি কে হয়তো কোনো কোনো তারকারা চিনতেও পারে আবার নাও চিনতে পারে। বলার উদ্দেশ্য একটাই সন্তোষরা হয়তো বা হারিয়ে যাবে একদিন তাদের শিল্প কে সঙ্গে নিয়ে।কারণ " যো দিখতা হে ওহী বিকতা হে ".  বর্তমানে সন্তোষ মুর্শিদাবাদে বেলডাঙ্গায় থাকে যখন তার কাছে কাজ থাকে না সে রিকশা চালায়, বর্ষাকালে সে ধান চাষ করে, আর যখন অনুষ্ঠান থাকে সে বাইরে যায়। সন্তোষরা কিন্তু কখনো তাদের সন্তুলান হারায় না।অভিজিতের অনুষ্ঠানে গিয়েও কি, আবার ধান কাটা বা রিকশা চালানোর সময়তেও বা কি, সে সন্তোষ. এথেকে একটা বড় শিক্ষা পাওয়া যায়  জীবনে যত বড়ই  হও না কেন, মাটিতে পা রাখতে আমরা যেন ভুলে না যাই।  সে তার সত্বা থেকে আজও বিন্দুমাত্র বিচলিত হয় নি.



দেবপ্রিয় সেন  12/11/2019


Comments

sadamata101.blogspot.com

B-47#বিশ্বকর্মা_পূজো

B-71#GANESH_PRASADAM. ( গনেশজির ভোগ নিবেদন মোদক ও পূরণ পুলি)