B-66 #মিতুর চিঠি( বড়দি গল্পের সপ্তম ভাগ)

                      মিতুর চিঠি
 শ্রীচরণকমলেষু বাবা ও মা,

                          
            আজ বহুদিন পরে তোমাদের চিঠি লিখছি। এখান থেকে পোস্টঅফিস অনেক দূরে আমার ননদ মানে বাণী সে শহরে থাকে মানে কাঁথিতে, সেখানে সে পড়াশুনার জন্য থাকে। সপ্তায়ন্তে আসে, আজ শনিবার তাই আসার সময় আমার জন্য একটা ইনল্যান্ড লেটার এনেছে। বহুদিন তাকে বলেছি, সে ভুলে যায়,আজ তাই তোমাদের এই চিঠিখানি লিখছি। বাবা দোতলার ঘরে ছোট্ট জানালা, বাইরে তাকালেই বিস্তীর্ণ অঞ্চল শুধু ধান খেত, আর দূরে অস্পষ্ট বাঁধ দেখা যাচ্ছে, আমার জানালা থেকে।
ঠিক বাড়ির পূর্বপাড়ে যেখানে কলাবন, তার পাশেই বড় রাস্তা। কিছুদিন যাবৎ কলকাতা গামী একটা বাসের পরিষেবা চালু হয়েছে। বাসের কন্ডাক্টর টা সমানে চীৎকার করে বলেই চলেছে – “হাওড়া, হাওড়া, ধর্মতলা ধর্মতলা “ তার সে ডাকে কানটা ঝালাপালা হয়ে উঠেছে, মনে হচ্ছে কতদিন সে ধর্মতলা ও দেখিনি আর সেই হাওড়া স্টেশন,যেখানে একটা সময় হারিয়ে গিয়েছিলাম  সেই পাকুড় থেকে আসার সময়।আসলে গ্রাম বাংলার জীবনটা আমার জীবনের সাথে ওতোপ্রতো ভাবে জড়িয়ে গেলো। সবই মা ভবিতব্য, এগুলো তোলা থাকে, সে যতই চেষ্টা করিনা কেন একচুল এদিক ওদিক হওয়ার জো নেই। মা গো মেয়েদের জীবনটা তো সেই পুরাতন ভৃত্য “ কত হেরিলাম মনোহর ধাম, কত মনোরম দৃশ্য!” বাবার ট্রান্সফার জীবনে তো কত জায়গায় গেছি, কোথাও তো সে মন দিতে পারিনি, শেষে এই গ্রাম্য জীবনে এসে পড়লাম, এটাই ভবিতব্য। 
                   যাক ছাড়ো সে কথা কাল শাশুড়ির সাথে রামায়ণ লীলা  শুনতে গিয়েছিলাম। ছেলেরা মেয়ে সেজে সে পাঠ করছিলো, ভারী অদ্ভুত।
ছোটবেলায় সে কথা শুনেছি বাবা তোমার থেকে, কোথাও যেন তোমার সেই আওড়ানো কথাগুলোর সাথে মিল পাচ্ছিলাম । সীতার অগ্নি পরীক্ষা, বাঁশি ওয়ালার করুন সে বাঁশি, হারমোনিয়ামের একপেশে সুর, আর ছেলেগুলো মেয়েদের মত করে একটার পর একটা সংলাপ বলেই চলেছে। শাশুড়ি মা দেখলাম শাড়ির আঁচল দিয়ে চোখ মুছেই চলেছেন। আমারও যে হয়নি তা নয়, সেটা অন্য কারণে এ দৃশ্য একমাত্র এই গ্রাম বাংলা বলেই হয়তো সম্ভব হয়েছে, শহরাঞ্চলে হলে সেটা উপলব্ধিতে হয়তো আসতো না। চারিদিকে ধূ ধূ মাঠ তারই মাঝে টিম টিম বাতি সঙ্গে হ্যাজাকের আলো, জোনাকির আলো, ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাক  একটা তুলসী মঞ্চ তার সামনেই একটা মাটির লম্বা উঠান  তাকে ঘিরেই রামলীলা।

কখনো তো মনে হচ্ছিলো রাবন এই বুঝি সীতাকে হরণ করে এই নাট্যমন্দিরের উপর দিয়েই মা সীতা কে উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। আর তুলসী তলায় ভগবান রাম এক মনে তাঁর ইষ্টদেবতাকে স্মরণ করে চলেছেন। সত্যি সত্যিই একজন রাম সেজে বসেছিল তুলসী তলায়, কপালে দুই হাতে তাঁর তিলক কাটা, কাঁধে এক সুসজ্জিত ধনুর্ব্বান। বাঁধ সারলো যখন মুহূর্তে আলো চলে গেলো, তাই আজ আবার হবে পরবর্তী অংশটা। তবে রাবন টাকে একেবারেই মানায় নি একটা সুটকা পেট্যাং যতবার দেখেছি ততবার হেসেছি তাকে দেখে মনে মনে।
     বাবা এখন সমস্ত কাজগুলোই করতে পারি, শাশুড়ি মা যদিও করতে দেন না, ইচ্ছে করেই করি সকালে উঠে দালান ঝাড় দেওয়া, গোবর দিয়ে নিকই না অবশ্য সেটা উনিই করেন। উনুনে আঁচ তোলা, ঢেঁকিতে মসলা গুঁড়ো করা, পুকুর থেকে তোলা মাছ গুলো আবার সেখানে গিয়েই ধোওয়া। আর হ্যাঁ আরেকটা জিনিস শিখেছি দারুন লাগে সেটা হোলো বড়ি বানানো, মসলা বড়ি, নকশা বড়ি, ছোটো বড় ডালের বড়ি বেশ মজাদার।
 সঙ্গে আচার তেঁতুল, কুল, আমের, লেবুর, এগুলো সব ওদের গাছের । পাঁপড় টাও জানি তবে ভালো হয়না। জানো ডালের খেত, শস্যের খেত দেখতে গিয়েছিলাম, গেলো সপ্তাহে। সেটা দেখা যে কি উপলব্ধি গ্রামে না থাকলে বোঝা খুবই কঠিন।
নারকোল থেকে নারকোল তেল, শস্য থেকে সর্ষের তেল, গরুর দুধ থেকে ঘি, পনির, কোনোটাই কিনতে হয়না তোমার জামাইদের বাড়িতে। বাবা, ভাবছি আরো কিছুদিন থাকবো। তোমাদের জামাই, গিয়েছে তার কাজের জায়গায় ঘাটশিলাতে আগামী মাসে আমায় নিয়ে যাবে সেখানে। বাড়ি ঠিক করেছে, ভাবছি যখন ঘাটশিলাতে যাবো তখন এক ফাঁকে কলকাতায় ঘুরে আসবো, তোমাদের দেখেও আসবো।
 বাবা আগাম বলি আমায় একটা আগফা ক্যামেরা কিনে দেবে বেশি না বারো রিলের ছবি তোলা গেলেই হোলো।
কেন বলছি জানো?এ চিঠি লিখতে লিখতে সন্ধ্যে নেমে এল, বহুদিন ধরে জানালা দিয়ে দেখছিলাম, প্রতিদিন গ্রামের মহিলারা সূর্য ডোবার আগেই মাটির কলসি কোমরে নিয়ে লাইন দিয়ে সেই বাঁধে জল আনতে যায়, আমারও ভারী ইচ্ছে করে তাদের সাথে একদিন যেতে। বাবা তোমার দেওয়া ক্যামেরা দিয়ে আমি তো এই গ্রাম বাংলার ছবি নেবো তোমায় পাঠাবো দেখো কেমন লাগে, 
বোনেরা, ভাই তোমরা সবাই ভালো থেকো আমি অনেক সুখে আছি,তফাৎ টা শুধুই গ্রাম্য জীবন।

“নমঃনমঃনমঃ সুন্দরী মম জননী বঙ্গভূমি!
গঙ্গার তীর, স্নিগ্ধ সমীর, জীবন জুড়ালে তুমি।
অবারিত মাঠ, গগনললাট চুমে তব পদধূলি
ছায়াসুনিবিড় শান্তির নীড় ছোটো ছোটো গ্রামগুলি।

পল্লবঘন আম্রকানন রাখালের খেলাগেহ,
স্তব্ধ অতল দিঘি কালোজল-নিশীথশীতল স্নেহ।
বুকভরা মধু বঙ্গের বধূ জল লয়ে যায় ঘরে-
মা বলিতে প্রাণ করে আনচান, চোখে আসে জল ভরে”।

ভালো থেকো তোমরা ও,

ইতি,
তোমাদের আদরের মিতু।


Comments

sadamata101.blogspot.com

B-47#বিশ্বকর্মা_পূজো

সন্তোষ ঢাকি

B-71#GANESH_PRASADAM. ( গনেশজির ভোগ নিবেদন মোদক ও পূরণ পুলি)