B-17 DREAM (স্বপ্ন). ( শুভ সুমেধার চতুর্থ ভাগ)

                                                                                  ... স্বপ্ন.... 
সুমি, সুমি কোথায় গেলে? আচ্ছা আরেক কাপ চা দেবে? মলি তুই যেন কি বলছিলিস সেদিন?  আবার বললি পরে বলবো?   না ঠিকই বলছো সুমি, তুমি না করেছিলে তাও তো আমি ঘুড়ি ওড়াতে গেলাম, আবার সেটাও তুমি বুঝিয়ে দিলে কত সুন্দর করে বিকেলে। কি গো আমি কার সাথে কথা বলে চলেছি?  
                        শুভ,  আমি ছাদে, পারলে তুমিও এসো। কাপড় গুলো মেলতে এসেছি, আর শোনো শোনো ছাদ থেকে একটা জিনিস দেখায় তোমায়, আকাশে মেঘগুলো কেমন পেঁজা তুলোর মত এক জায়গায় জমে আছে, আর তোমার স্বপ্নের ঘুড়িগুলো, ওই তুলোর সাথে মাঝে মাঝে মিশে যাচ্ছে।  ইসস, শুভ দেখো কি খারাপ লাগছে তোমার দোবাজ ঘুড়িটা দূরে কেটে গিয়ে,  মাঠে কাশ ফুলের উপরে পড়ছে , আর দেখো দোবাজ কে বাঁচাতে গিয়ে লেজঝোলা ঘুড়িটা,  কেমন ঢিল দিয়ে যাচ্ছে সমানে, এই শুভ,  আসো না,  এতো সুন্দর দৃশ্য তোমায় দেখাতে না পারলে যে মিস হয়ে যাবে।
                      সুমি,  আমি তো তোমার পেছনে সেই কখন থেকেই দাঁড়িয়ে। আমি চুপ করে তোমার কথা গুলো শুনছি,   তোমার চোখ দিয়ে আমি সেটা উপলব্ধি ও করছি যে সুমি।  আচ্ছা সুমি , একটা ঘুড়ি যদি তোমার আমার জীবন বদলে দিতে পারে, আমাদের আবদ্ধে আটকে দিতে পারে, সে তো জড় বস্তু, কিন্তু তাও কেন সুমি? আমাদের সন্তানেরা কেন বোঝে না আমাদের feelings গুলো। প্রতিটা ক্ষেত্রে ওদের আঙ্গুল দিয়ে বোঝাতে হয়,  এখনো কি বোঝাতে হবে সুমি? 
                     শুভ, কি যা তা বলছো?   ওদের ক্যরিয়ার আছে, ওরা কিন্ত অনেক আধুনিক তোমার আমার থেকে, অনেক বেশি বোঝে?  Unnecessary ওদের blame দিয়ো না। 

                     সুমি, আমি এতদিন হাসপাতালে ছিলাম , সেই প্রথম দিন আর পরপর দুদিন এসেছিলো, ব্যস তারপর থেকে কোনোদিন ও এসেছে একবারও, আমার খোঁজ নিতে,  বাবা কেমন আছে? 
                    শুভ প্লিস, এসব আর বলো না,  ও তো রোজ খবর নিয়েছে, আর বেশি কিছু আশা কোরো না,  কেন এতো কষ্ট নিচ্ছ?  আমি তো নিজেই ওকে না করেছি, যতবার আসতে চেয়েছে। 
                      শোনো সুমি শাক দিয়ে মাছ ঢেকো না প্লিস, আমি যা বলতে চাইছি কিছুই কি বুঝতে পারছো না? তোমারও মনে যা কষ্ট,  সেই একই কষ্ট তো আমার মধ্যেও সুমি ?  আসলে কি বলতো আমরা সমানে লুকোয় , আর ভুল করি ওদের আসল পথটা দেখাতে? একটা ভাবনা নিয়েই কাটিয়ে দিলাম “কিছু বললে ওরা যদি কিছু করে বসে, তাই সমানে ওদের মূল্য দিয়ে গেছি এতকাল “। কেউ কিছু জিজ্ঞাসা করলেই হোলো ছেলেমেয়েদের কথা,  আমরা বড় বড় বিদেশী কোম্পানির নাম, বিদেশে কোথায় থাকে,  বিশাল বাড়ি, আর এখন দুজনেই ব্যস্ত, তাদের দেখা সাক্ষাৎ ওই রবিবারে,  এই তো আজকের গল্প  সমাজের মা বাবাদের । বাড়িতে লোকজন আসলে তো কথাই নেই তাদের একটার পর একটা ছবি, আমরা কবে গিয়েছিলাম সে দেশে তার ছবি, ব্যস এই তো আমিও খুশ আর অতিথিও খুশ  কারণ দুজনেই তো একই পথের যাত্রী।  তবে হ্যাঁ যেখানে দুজনেই আটকে যায় সেটা হোলো তাদের সন্তান, পাঁচ পাঁচটা বছর হোলো একটাও ইস্যু নেই, কেন?,  আর যাওয়ার সময় একটাই ভীতি নিয়ে চলে যায় কি জানি ওদের সম্পর্কটা থাকবে তো? এটা কিন্তু একে অপরকে শেয়ার করতেও ভয় পায়, লজ্জা পায়,  নাকি পরিণতি ডিভোর্স, তাই হয়তো সন্তান চাই না।  বিশ্বাস করো সুমি, এই চিন্তাধারা প্রতিটা ঘরে ঘরে আজকের মা বাবার কাছে।
 সুমি অনেক দেরি হয়ে গেছে,  এটাই বোধহয় generation gap।  জানো ওরা বোঝে অনেক টাকা পয়সা দিয়ে,  বাবা মা কে ঠান্ডা করে দেবে,  বিদেশে গিয়ে, কিন্ত আদৌ কি বোঝাতে পারলাম সম্পর্ক গুলোর  কথা ?  তুমি থাকো ওই অমূলক মূল্যবোধ নিয়ে, আমি পারলাম না হেরে গেলাম। জানো সুমি,  সৌমিত্রের একটা ইন্টারভিউ দেখছিলাম সেদিন উনি বলছেন যে মুহূর্তে তুমি বাড়ির বাইরে পা রাখবে, মনে রেখো পৃথিবীটা তোমার মত হবে না,  তোমাকে নিজেকে পৃথিবীর মত হতে হবে, তবেই তো তোমার acceptance, তা না হলে তোমার অস্তিত্ব শুধুই আমিত্বতেই থেকে যাবে।  তাই না সুমি, কি কিছু ভুল বলেছেন সৌমিত্র বাবু । তোমায় একটা কথা বলি সুমি,  আমার ছোড়দি, বিয়ের পর তার শ্বশুরবাড়িটা খুব একটা সুখের ছিল না, যদিও স্বামী নামক মানুষটা ভালোই। দিদি যতবার আসতো মায়ের সেই একই দুটো কথা আজও ভুলিনি
মায়ের  এই দুটো কথা,  ছোড়দি কে সংসারটা, আরো আঁকড়ে ধরতে সাহায্য করেছিলো। এটা কি জীবনের মূল্যবোধ নয় সুমি ?  
              শুভ এসব নিয়ে এতো কেন ভাবো?  কি লাভ ভেবে শুধু শুধু কষ্ট পাওয়া নয়? তুমি কি ভাবো,  যে তুমি তোমার সম্পর্ক গুলো কে নিয়ে যে ভাবে মূল্য দাও, ঠিক ততটাই মূল্য তোমার সন্তান দেবে,  এটা কি তোমার প্রতিদান চাওয়া নয়?  কালের সাথে গা ভাসিয়ে দাও না, দেখবে আর কষ্ট পাবে না। 
                সুমি,  সেটাই তো করে চলেছি এখন। তোমার সাথে আমার এখানেই ফারাক জানো।  আসলে আমরা  ভুলটা কোথায় করেছি,  সেটাই বোঝাতে চাইছি, আর তুমি বলছো স্রোতের টানে গা ভাসিয়ে দাও।  অনেকটা উত্তম বাবুর সেই বিখ্যাত ডায়লগের মত
 জানো সুমি, ভুল টা হল, কোনোদিন যেকোনো স্কুলের ক্লাস সিক্স বা সেভেনের আর নার্সারির ছেলেমেয়েদের একটু লক্ষ্য কোরো, যখন তারা স্কুলে ঢুকছে, পারলে দূর থেকে একটা বেশি জুম্ ওয়ালা ক্যামেরা নিয়ে যেও,  বুঝতে পারবে, হয়ে যাওয়া ভুল গুলো । বুঝলে না তো?  
          আরে বাবা শুভ, খোলসা করে না বললে কি করে বুঝি, আমি একেবারে সাদামাটা বুঝি, যেটা দেখছি সেটাই, অতো তলিয়ে দেখি না বা ভাবতেও পারিনা। 
           বলছি দাঁড়াও, সকালে যে বাচ্চা গুলো নার্সারি ক্লাসের ওরা কি সুন্দর লাইন দিয়ে,  রেলগাড়ির কামরার মত, একজন আরেকজন পিটের ব্যাগে হাত রেখে এগিয়ে যেতে থাকে স্কুলের দিকে, আর তার পাশে তাদের মা বাবারা দাঁড়িয়ে হাত নাড়তে থাকেন। পারলে এটার একটা ছবি নিয়ো।
এই বাচ্চারাই যখন সিক্স বা সেভেনে পড়ে, তখন তাদের কাছে মা বাবারা হয়ে যায় দুরকমের, একজন হল গাড়িওয়ালা মা বাবা, আর আরেকজন বাসওয়ালা মা বাবা। খেয়াল করে দেখো, বাসওয়ালা মা বাবারা এখন আর স্কুলের গেট পর্যন্ত আসেন না। সেখানে একটু “না “ আছে, ছেলেমেদের কাছ থেকে, দূর থেকে পারলে, বেশ কিছু মা বাবার ছবি নিয়ো। আসলে  generation gap এর চিত্রটা একেবারে পরিষ্কার হয়ে যাবে। গাড়িওয়ালা মা বাবারা তারা স্বভাবতই জামা কাপড়ের একটা চাকচিক্ক থাকে, হাতে থাকে এন্ড্রোইড মোবাইল, তারা গেটের মুখ অব্দি ছাড়তে আসেন, তাদের সন্তানেরা সেটা বেশ উপভোগ করে, দশটা বন্ধু বান্ধব কে দেখায় দূর থেকে ওটা তাদের মা বাবা। আর বাসওয়ালা মা বাবাদের আলুথালু পোশাক, বাবার এক হাতে স্থানীয় কোনো দোকানের এক হাতল ছেঁড়া প্লাস্টিক, আরেক হাতে অক্ষর উঠে যাওয়া নোকিয়া 1810 টেপা মোবাইল। এদের সন্তানেরা কিন্তু বেশ লজ্জা পায়, অনেকটা পরিচয় দিতে। এই একই ছেলেমেয়েদের কাছে সেই একই বাবা মা রা নার্সারিতে গ্রহণ যোগ্যতা পেতেন সম্পর্কের, পোশাকের নয়।  আজ সেটা হারিয়ে যাচ্ছে কেন সুমি?  এটা কি আমাদের ভুল নয়? 
আমরাই তো, যা চেয়েছে তাই হাতের সামনে তুলে দিয়েছি, এটাই তো ভুল? এই ভুলটাই তো শোধরাতে পারিনি এতকাল, একটা বা দুটো সন্তান বলে। সমানে দিয়ে দিয়ে আমরা ওদের কাছ থেকে  দূরে চলে যাচ্ছি না?  তাই তো এখনো তালে তাল মিলাচ্ছি। আচ্ছা সুমি তোমরা করেছো কিনা জানিনা আমাদের ছোটবেলায় বেশ করতাম, যদিও এখন বুঝি ওটা ভালো করিনি। এক ক্লাস থেকে আরেক ক্লাসে উঠলে আমরা আমাদের বই পত্তর হাফ দামে বেচে দিতাম, আর ঐ টাকা দিয়ে পরের ক্লাসের বই কিনতাম,  সেটাও হাফ দামে। যদিও বাবা অবশ্য কোনোদিনই বলেননি,  অহেতুক উনাদের কেন দোষারোপ করবো। আসলে মনের কোথাও যেন ভাবতাম বাবাকে একটু আর্থিক ভাবে রিলিফ দেওয়ার কথা, একে তো এতগুলো ভাই বোন উনিও বা কোথা থেকে পারবেন, হয়তো শিশুমনে সেটা ভেবেই এই কাজ করতাম।  অবশ্য এই শিক্ষাটা পেতাম আমার বড়দির থেকে সে আমার থেকে একেবারে গুনে গুনে প্রায় দশ বছরের বড় । আমি আসলে বলতে চাইছি আমাদের feelings গুলো কিন্ত বেশ জোরালো ছিল,  একটা কর্তব্যপরায়ণ মনোভাব ছিল। তাবলে কখনোই বলবো না আমাদের সময়ে সবই ভালো ছিল, old is gold, সুমি আমি এখন  কি বলি জানো  but present is platinum। কেনই বা বলবো না,  এই generation যে, কোনো কাজ  চটপট করে দিতে পারে, ধরতে পারে, আধুনিক টেকনোলজিতে একেবারে পুরোটাই অভ্যস্ত। কিন্তু আবারো বলবো মূল্যবোধ টা পারে না হয়তো বুঝতে, তাই এদের কাছে live together টাই হয়তো অনেক সহজ। 
                   বাবা, বাবা ওঠো , আরে কটা বাজে?  কি বকে যাচ্ছ ঘুমের মধ্যে, এটা হাসপাতাল বাবা, বাড়ি নয়?  যে জোড়ে জোড়ে কথা বলছো। 
                    কে কে?  ও মলি?  দেখতো ইসস কতক্ষন ধরে ঘুমোচ্ছি, আরে বাবা,  সুমি তুমিও দেখছি?  কি ব্যাপার আজ এত সকাল সকাল? 






Comments

sadamata101.blogspot.com

B-47#বিশ্বকর্মা_পূজো

সন্তোষ ঢাকি

B-71#GANESH_PRASADAM. ( গনেশজির ভোগ নিবেদন মোদক ও পূরণ পুলি)